দুপুরে খাবার খাচ্ছি ছাপড়া হোটেলে। রুটি ডাল গোশত। গরম গরম রুটি ভেজে দিচ্ছে। ডাল গোশত ভয়াবহ ধরনের ঝাল।জিহবা পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু খেতে হয়েছে চমৎকার। আমাকে খাওয়াচ্ছে একলেমুর মিয়া।সে আজ বড়ই চুপচাপ। অন্য সময় নিচু গলায় সারাক্ষণ কথা বলত। উচ্চশ্রেণীর কথাবার্তা। আজ কিছুই বলছে না। কারণ তার মেয়েটাকে সে দুদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছে না। এটা কোনো ব্যাপার না। মেয়েটা পাগলা টাইপের।প্রায়ই উধাও হয়ে যায়।আবার ফিরে আসে।
একলেমুর মিয়া আতিথেয়তার কোনো ত্রুটি করল না।খাওয়ার শেষে মিষ্টি পান এনে দিল, সিগ্রেট এনে নিজেই ধরিয়ে দিল।
একলেমুর মিয়া।
জি।
ভিক্ষা করতে কেমন লাগে বলো দেখি?
ভালো লাগে। কত নতুন নতুন মাইনষের সাথে পরিচয় হয়। এক এক মানুষ এক এক কিসিমের। বড় ভালো লাগে।
একলেমুর মিয়া খিকখিক করে হাসছে।আমি বললাম, হাসছ কেন?
একবার কী হইছে হুনেন ভাইসাব, গাড়ির মইধ্যে এক ভদ্রলোক বহা আছে।আমি হাতটা বাড়াইয়া বললাম, ভিক্ষা দেন আল্লাহর নামে। সাথে সাথে হেই লোক হাত বাড়াইয়া দিছে আমার গালে এক চড়।
কেন?
এইটাই তো কথা।কী কইলাম আফনেরে—নানান কিসিমের মানুষ এই দুনিয়ায়।এরার সাথে পরিচয় একটা ভাগ্যের কথা। ঠিক কইলাম না?
ঠিক না বেঠিক বুঝতে পারছি না।
এই এক সারকথা বলেছেন ভাইজান। ঠিক-বেঠিক বুঝা দায়।ক্ষণে মনে লয় এইটা ঠিক।ক্ষণে মনে লয় উঁহুঁ এইটা ঠিক না।
চড় দেয়ার পর ঐ লোক কী করল? গাড়ি করে চলে গেলে?
সাথে সাথে যায় নাই। লাল বাত্তি জ্বলতেছিল। যাইব ক্যামনে? সবুজ বাত্তির জন্যে অপেক্ষা করতেছিল।
তোমাকে কিছু বলে নি?
জে না।অনেকক্ষণ তাকাইয়াছিল।কিছু বলে নাই।
তুমি কি করলে?
আমি হাসছি।
সিগারেট শেষ টান দিতে দিতে আমি বললাম, ঐ লোকের সঙ্গে তোমার তো আবার দেখা হয়েছিল, তাই না?
বুঝলেন ক্যামনে?
আমার সেই রকমই মনে হচ্ছে।
ধরছেন ঠিক। উনার সঙ্গে দেখা হইছে।ঠিক আগের জায়গাতেই দেখা হইছে।আমি বললাম, স্যার আমারে চিনছেন? ঐ যে চড় মারছিলেন।
লোকটা কী বলল?
কিছু বলে নাই, তাকাইয়াছিল।তবে আমারে চিনতে পারছে।বড়ই মজার এই দুনিয়া ভাইসাব! লোকে দুনিয়ার মজাটা বুঝে না।মজা বুঝলে—দুঃখ কম পাইত।
উঠি একলেমুর মিয়া।
আমি উঠলাম।একলেমুর ফার্মগেটের ওভারব্রিজে গামছা বিছিয়ে বসে পড়ল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একজন ময়লা এক টাকার নোট ছুড়ে ফেলল গামছায়।
একলেমুর নিচু গলায় বলল, অচল নোট।টেপ মারা,ছিঁড়া।কেউ নেয় না।ফকিরের দিয়া দেয়।এক কামে দুই কাম হয়—সোয়াব হয়, আবার অচল নোট বিদায় হয়।মানুষ খালি সোয়াব চায়, সোয়াব।অত সোয়াব দিয়া হইব কী?
দুপুরে আমার ঘুমের জন্যে নির্দিষ্ট জায়গা আছে—পার্ক।কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কখনো চন্দ্রিমা উদ্যান, কখনো সস্তাদরের কোনো মিউনিসিপ্যালটি পার্ক।যখন যেটা হাতের কাছে পাই।
ফার্মগেট থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দুটাই সমান দূরত্বে।তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমার প্রিয়।সেখানকার বেঞ্চগুলো ঘুমানোর জন্যে ভালো।তাছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ড্রামা অনেক বেশি।দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে মজার মজার সব দৃশ্য দেখা যায়।ক’দিন ধরেই দেখছি স্কুলের ড্রেসপরা একমেয়ে মাঝবয়সী এক লোকের সঙ্গে পার্কে ঘোরাঘুরি করছে।লোকটার হাবভাবেই বোঝা যায় মতলব ভালো না।সুযোগমতো লোকটাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।
আরাম করে শুয়ে আছি। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ফিল্টার হয়ে রোদ এসে গায়ে পড়েছে।আরাম লাগছে—স্কুলের ওই মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে।আচার খাচ্ছে।সঙ্গে মিচকা শয়তানটা আছে।মিচকা শয়তানটা বসার জায়গা পাচ্ছে না।ভালো ভালো সব জায়গা দখল হয়ে আছে। মিচকাটা হতাশ গলায় বলল, পলিন, কোথায় বসি বলো তো?
পলিন মেয়েটা মুখভর্তি আচার নিয়ে বলল, বসব না।হাঁটব।
লোকটা মেয়েটার বগলের কাছে মুখ দিয়ে কী যেন বলল।পলিন মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, কেন শুধু অসভ্য কথা বলেন?
লোকটা হে-হে করে হাসছে।লোকটার কথা শুধু যে অসভ্য তাই নয়—হাসিটাও অসভ্য।ঠাস করে এর গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে আবার নির্বিকার ভঙ্গিতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কেমন হয়?
সভ্য সমাজে আজগুবি কিছু করা যায় না।আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পারাপার – ০৩
কাল সারারাত ঘুম হয় নি।
ঘুম না হবার কোনো কারণ ছিল না। কারণ ছাড়াই এই পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে। দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘুমোতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে চোখভর্তি ঘুম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। ঘুম ভাঙল স্বপ্ন দেখে। আমার বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমার গা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন, এই হিমু, হিমু, ওঠ। তাড়াতাড়ি ওঠ। ভূমিকম্প হচ্ছে। ধরণী কাঁপছে।
আমি ঘুমের মধ্যেই বললাম, আহ, কেন বিরক্ত করছ?
বাবা ভরাট গলায় বললেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো মজার ব্যাপার আর হয় না। ভেরি ইন্টারেস্টিং। এই সময় চোখকান খোলা রাখতে হয়। তুই বেকুবের মতো শুয়ে আছিস।
ঘুমোতে দাও বাবা।
তোর ঘুমোলে চলবে ন। মহাপুরুষদের সবকিছু জয় করতে হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম। ঘুম হচ্ছে দ্বিতীয় মৃত্যু। সাধারণ মানুষ ঘুমায়—অসাধারণরা জেগে থাকে।…
দয়া করে ঝাঁকুনি বন্ধ করো,প্লিজ।
আমার ঘুম ভাঙল। আমি বিছানায় উঠে বসলাম। চৌকি কাঁপছে। দেয়ালে রবীন্দ্রনাথের ছবিওয়ালা এক ক্যালেন্ডার। সেই রবীন্দ্রনাথও কাঁপছেন। আমি বুঝতে পারছি এটাও স্বপ্নের কোনো অংশ কি না। মানুষের স্বপ্ন অসম্ভব জটিল হতে পারে।
না, এটা বোধহয় স্বপ্ন না। বোধহয় সত্যি। কটকট, কটকট শব্দ হচ্ছে। অনেকদিন পর ভূমিকম্প অনুভব করছি। আমি বালিশের নিচে থেকে সিগারেট বের করলাম।
স্বপ্ন সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্যে সিগারেট ধরানো। স্বপ্ন শুধু যে বর্ণহীন তাই না—গন্ধহীনও। সিগারেট ধরাবার পর তার উৎকট গন্ধ যদি নাকে আসে তাহলে বুঝতে হবে এটা স্বপ্ন নয়—সত্য। কেউ একজন আযান দিচ্ছে। এই সময় আযানের অর্থ হলো—বিপদ। মহাবিপদ। হে আল্লাহ, রক্ষা করো।
বিপদ থেকে বাঁচাও।
সিগারেট ধরাতে পরছি না। হাত কাঁপছে—শরীরের প্রতিটি জীবিত কোষের ডিএনএ অণু সুদূর অতীত থেকে ভয়ের স্মৃতি নিয়ে এসেছে। সে ভূমিকম্পের মতো অস্বাভাবিক অবস্থায় ভয় পাওয়াবেই। ভয় পাইতে না চাইলেও ভয় পাওয়াবে।
আগুন দেখলে আমরা তেমন ভয় পাই না। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় ছুটে পালিয়ে যাই না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি কিন্তু ভূমিকম্পের সামান্য তীব্র ইচ্ছা করে ছুটে কোথাও চলে যেতে।
না, ভয় পেলে চলবে না। মনকে শান্ত করতে হবে। স্থির করতে হবে। সিগারেট ধরালাম। তামাকের উৎকট গন্ধ।
এটা স্বপ্ন নয়। এটা সত্যি। ভূমিকম্প হচ্ছে। পরপর দুটা ঝাঁকুনি। ভয় কমছে। মন শান্ত হয়ে আসছে। চারপাশের পৃথিবীকে এখন আর অবাস্তব মনে হচ্ছে না।
পারাপার – ০৪
ছোট্ট একটা ভূমিকম্প হয়েছে।
রিখটার স্কেলে এর মাপ দু-তিনের বেশি হবে না। পরপর দুবার সামান্য ঝাঁকুনি। এতেই হইচই, ছোটাছুটি। আমার পাশের ঘরে তাসখেলা হচ্ছিল। গতকাল রাত এগারটায় শুরু হয়েছিল, এখান সকাল আটটা। এখনো চলছে। ছুটির দিনে পয়সা দিয়ে খেলা হয়। ম্যারাথন চলে। তাসুড়েরা তাস ফেলে প্রথম হইচই করে বারান্দায় এলো, তারপর সবাই একসঙ্গে ছুটল সিঁড়ির দিকে। মনে হচ্ছে,এরা সিঁড়ি ভেঙে ফেলবে।
আমি সিগারেট টানছি। ছুটে নিচে যাবার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে অবহেলার ভঙ্গি করে বিছানায় শুয়ে থাকারও অর্থ হয় না। প্রকৃতি ভয় দেখাতে চাচ্ছে—আমার উচিত ভয় পাওয়া। বাঁচাও বাঁচাও বলে রাস্তায় ছুটে যাওয়া। ভয়ে পেয়ে দল বেঁধে ছোটাছুটিরও আনন্দ আছে। আমি দরজার বাইরে এসে দেখি, বারান্দায় দবির খাঁ বসে নামাযের ওযু করছেন। সকাল নটা কোনো নামাযের সময় না। দবির খাঁ প্রায় সারারাত জেগে থেকে শেষরাতে ঘুমিয়ে পড়েন বলে ফজরের নামায পড়তে বেলা হয়। দবির খাঁ আমার দিকে তাকিয়ে ভীত গলায় বললেন, হেমু,ভূমিকম্প।
আমার নাম হেমু নয়, হিমু। দবির খাঁ কখনো হিমু বলেন না। মনে হয় তিনি ই-কারান্ত শব্দ বলতে পারেন না।
হেমু সাহেব, ভূমিকম্প। নামেন নামেন, রাস্তায় যান।
আপনি বসে আছেন কেন? আপনিও যান।
দবির খাঁ হতাশ চোখে তাকাল। তখন মনে পড়ল—এই লোকের পায়ে সমস্যা আছে। হাঁটতে পারে না। মাটিতে বসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়। তাঁর পক্ষে দোতলা থেকে একতলায় একা নামা সম্ভব নয়।
নিচে নামতে চাইলে আমি ধরাধরি করে নামাতে পারি। নামবেন? নাকি বসে বসে নামায পড়বেন? আপনার ওযু কি শেষ হয়েছে?
দবির খাঁ মনস্থির করতে পারছেন না। আমি বললাম, ধরুন শক্ত করে আমার হাত, নামিয়ে দিচ্ছি।
দবির খাঁ ক্ষীণ গলায় বললেন, যা হবার হয়ে গেছে। আর বোধহয় হবে না।
হবে। ভূমিকম্পের নিয়ম হলো—প্রথম একটা ছোট, ওয়ার্নিঙের মতো। সবাই যাতে সাবধান হয়ে যায়। তারপরেটা বড়। যাকে বলে হেভি ঝাঁকুনি।
বলেন কী?
নামবেন নিচে?
জি নামব, অবশ্যই নামব।
দবির খাঁ গন্ধমাদন পর্বতের কাছাকাছি। আমার পক্ষে একা তাঁকে নামানো প্রায় অসম্ভব কাজের একটি। ডুবস্ত মানুষ যেভাবে অন্যের গলা জড়িয়ে ধরে তিনিও সেভাবে দু’হাতে আমার গলা চেপে ধরেছেন। আমার দুজন প্রায় ফুটবলের মতো গড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি।
কলঘরে মেসের ঝি ময়নার মা বাসন ধুতে বসেছে। ভূমিকম্পের বিষয়ে সে নির্বিকার। একমনে বাসন ধুয়ে যাচ্ছে। আমাদের দৃশ্যে সে খানিকটা আলোড়িত হলো। মুখে আচঁল চাপা দিয়ে হাসছে। দবির খাঁ চাপা গলায় বললেন—মাগির কারবার দেখেন। দেখছেন কাপড়চোপড়ের অবস্থা? এইরকম কাপড় পরার দরকার কী? নেংটা থাকলেই হয়।
ময়নার মার স্বাস্থ্য ভালো, সে দেখতেও ভালো। মায়া-মায়া চোখমুখ। কাজকর্মেও অত্যন্ত ভালো। শুধু একটাই দোষ তার—কাপড়চোপড় ঠিক থাকে না, কিংবা সে নিজেই ঠিক রাখে না। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে সে হাসছে। তার ব্লাউজের সব কটি বোতাম খোলা। এদিকে তার ভ্রূক্ষেপও নেই।
দবির খাঁ চাপা গলায় বললেন,হেমু সাহেব! দেখলেন মাগির অবস্থা! ইচ্ছা করে বোর্ডারদের বুক দেখিয়ে বেড়ায়। শেষ জামানা চলে এসেছে। একেবারে শেষ জামানা। লজ্জা-শরম সব উঠে গেছে। আইয়েমে জাহেলিয়াতের সময় যেমন ছিল—এখনো তেমন।
আমার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভূমির দ্বিতীয় কম্পনের জন্যে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিছুই হলো না। দবির খাঁকে রাস্তার একপাশে বসিয়ে দিয়েছি। তিনি সিগারেট টানছেন। তাঁকে ঘিরে ছোটখাটো একটা জটলা। কেউ বোধহয় মজার কোনো গল্প করছে। আমি দূরে আছি বলে গল্পের কথক কে বুঝতে পারছি না। আমি ইচ্ছা করেই দবির খাঁর কাছ থেকে দূরে সরে আছি। এই পর্বতকে আবার দোতলায় টেনে তোলা আমার কর্ম নয়। এই পবিত্র দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করুক।
হিমু না? এদিকে শুনে যান তো?
আমাদের মেসের মালিক বিরক্তমুখে আমাকে ডাকলেন। এই লোকটা আমাকে দেখলেই বিরক্ত হন। যদিও মেসের ভাড়া আমি খুব নিয়মিত দেই, এবং কখনো কোনোরকম ঝামেলা করি না। আমি হাসিমুখে ভদ্রলোকের কাছে গেলাম। আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করতে করতে বললাম, কী ব্যাপার, সিরাজ ভাই? আমার হাসিতে তিনি আরো রেগে গেলেন বলে মনে হয়। চোখমুখ কুঁচকে বললেন, আপনি কোথায় থাকেন কী করেন কে জানে—আমি কোনো সময় আপনাকে খুঁজে পাই না।
এই তো পেলেন।
এর আগে আমি চারবার আপনার খোঁজ করেছি। যতবার খোঁজ নেই শুনি ঘর তালাবদ্ধ। থাকেন কোথায়?
রাস্তায় রাস্তায় থাকি।
রাস্তায় রাস্তায় থাকলে খামাখা মেসে ঘর ভাড়া করে আছেন কেন? ঘর ছেড়ে দেবেন। সামনের মাসের এক তারিখে ছেড়ে দেবেন।
এটা বলার জন্যেই খোঁজ করছিলেন?
হুঁ।
রাখতে চাচ্ছেন না কেন? আমি কি কোনো অপরাধ-টপরাধ করেছি?
সিরাজ মিয়া রাগী গলায় বললেন, কাকে মেসে রাখব, কাকে রাখব না—এটা আমার ব্যাপার। আপনাকে আমার পছন্দ না।
ও আচ্ছা।
মাসের এক তারিখ ঘর ছেড়ে দেবেন। মনে থাকবে?
হুঁ।
কোনোরকম তেড়িবেড়ি করার চেষ্টা করবেন না। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কী করে বাঁকা করতে হয় আমি জানি।
সিরাজ মিয়া তর্জনী বাঁকা করে আমাকে বাঁকা আঙুল দেখিয়ে দিলেন। আমি সহজ গলাতেই বললাম—এটাই আপনার কথা, না আরো কথা আছে?
এইটাই কথা।
আমি বললাম, কঠিন কথাটা তো বলা হয়ে গেল।এখন সহজ হন। সহজ হয়ে একটু হাসুন দেখি।
সিরাজ মিয়া হাসলেন না। তবে দবির মিয়াকে ঘিরে যে দলটা জটলা পাকাচ্ছিল সে দলটার ভেতর থেকে হো-হো হাসির শব্দ উঠল।
হাসির অনেক ক্ষমতার ভেতর একটা ক্ষমতা হলো—হাসি ভয় কাটিয়ে দেয়। এদের ভয় কেটে গেছে। এরা কিছুক্ষণের মধ্যে মেসবাড়িতে ফিরে যাবে। তাসখেলা আবার শুরু হবে। দবির খাঁ ওযু করে তার ফজরের কাজা নামায শেষ করবেন।