কুকুরটা আমার পাশে বসে আছে। মাঝে মাঝে মাথা তুলে আমাকে দেখছে। পশুদের ভেতর কি কৃতজ্ঞতাবোধ আছে? থাকার কোনো কারণ নেই, কিন্তু এ এত নরম চোখে কেন আমাকে দেখছে? আমি বললাম, আয় আয়।
সে লাফ দিয়ে আমার কোলে উঠল। কোলে উঠেই কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। তার অবচেতন মন বলছে, তার আর কোন ভয় নেই।
কী সুন্দর এই কুকুরছানা! সাদা উলের বলের মতো। দেখলেই হাত দিয়ে ছুঁতে ইচ্ছা করে। সে বড় হবে পথে পথে। খাবারের আশায় হোটেলের চারপাশে ঘুরঘুর করবে। একদিন হোটেলের কোনো কর্মচারী তার গায়ে গরম মাড় ফেলে দেবে।
অনেক অনেক শতাব্দী আগে এই পশু মানুষের সঙ্গে অরণ্য ছেড়ে চলে এসেছিল। আজ আর তার অরণ্যে ফিরে যাবার পথ নেই। তাকে আশ্রয়ের জন্যে অনুসন্ধান করে যেতে হবে। আধুনিক মানুষ সেই আশ্রয় আজ আর তাকে দেবে না। কুকুরের প্রয়োজন তার ফুরিয়ে গেছে। খেলার জন্যে আজ আর তার কুকুর-বেড়ালের প্রয়োজন নেই। তার আছে কম্পিউটার।
স্যার কুত্তা কই পাইলেন?
ড্রাইভার ফিরে এসেছে। পান খাচ্ছে। পানের রসে মুখ লাল। হাতে করে একটা পান সে আমার জন্যেও নিয়ে এসেছে।
কুত্তা কই পাইলেন স্যার?
কিনলাম।
নেড়ি কুত্তা পয়সা দিয়া কিননের জিনিস না।
দেখতে সুন্দর।
দেখতে সুন্দর জিনিসের কোনো উবগার নাই।
উচ্চশ্রেণীর ফিলসফি করে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিল। খুশি খুশি গলায় বলল, স্যার কই যামু?
সেক্রেটারিয়েটে চলো। দেখি মুনশি বদরুদ্দিনকে পাওয়া যায় কি
না।
সেক্রেটারিয়েটে ঢোকার আমার পাস নেই। তবে আজ পাস লাগবে না। এত দামি গাড়িকে কেউ আটকায় না।
মুনশি বদরুদ্দিনকে আজো পাওয়া গেল না। তার মেয়ে অসুস্থ, সে নাকি মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। আমি বললাম,এসেছি যখন চা খেয়ে যাই। দু’কাপ চা আনানোর ব্যবস্থা করুন। আমার জন্যে এক কাপ, আমার কুকুরটার জন্যে এক কাপ। সেও চা খায়।
অফিসের সব কটা লোক এমনভাবে তাকাচ্ছে যাতে মনে হয় এরা আজ আমাকে ছাড়বে না। দরজা বন্ধ করে শক্ত মার দেবে। মার দিলে দেবে—কী আর করা! আমি বেশ আরাম করেই বসলাম। আমার কালো কুকুরছানা। এর নাম একটা দেয়া দরকার। দুই অক্ষরের নাম। কুকুরের নাম দুই অক্ষরের বেশি হলে ভালো লাগে না।
কই ভাই চায়ের কথা বলছেন?
আমাকে অবাক করে দিয়ে একজন সত্যি সত্যি চায়ের কথা বলল। এরা আমাকে মারার সাহস পাচ্ছে না। মনে হয় কিছুটা ভয়ও পাচ্ছে। অসৎ মানুষ ভীরু প্রকৃতির হয়।
চা এসেছে।
শুধু চা না। চায়ের সঙ্গে বিসকিট। একজন একটা সিগারেটও বাড়িয়ে দিল। চা খেতে খেতে আজকের প্রোগাম ঠিক করে নিলাম—লালবাগ থানায় যাব। সেকেন্ড অফিসারকে পাওয়া যায় কিনা দেখব। ফার্মগেটে একলেমুর মিয়াকে খুঁজে বের করব। তার মেয়েটা কি ফিরে এসেছে?
রূপার সঙ্গে কথা বলতে হবে। কথা বলব, নাকি চলে যাব তাদের বাড়িতে?
লালবাগ থানার সেকেন্ড অফিসারকে পাওয়া গেল না। তিনি বদলি হয়ে গেছেন মুন্সীগঞ্জে। লালবাগ থানার ওসি সাহেব আমাকে চিনতে পারলেন। চিনতে না পারার কোনো কারণ নেই—তিনি তাঁর থানা হাজতে আমাকে এক সপ্তাহের মতো আটকে রেখিছিলেন। আমি ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে মধুর ভঙ্গিতে বললাম, ঘুস ইদানীং কেমন আসছে স্যার?
ওসি সাহেব কথায় রাগ করলেন না। বরং আনন্দিত গলায় বললেন, বসুন। আপনি আজকাল করছেন কী?
কিছু করছি না। পবিত্র মানুষ খুঁজছি। আপনার সন্ধানে কোনো পবিত্র মানুষ আছে?
পবিত্র মানুষ খোঁজার জন্যে তো ভাই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট না। আমাদের কাজ অপবিত্র মানুষ নিয়ে। যদি কোনোদিন অপবিত্র মানুষের প্রয়োজন হয়, আসবেন। সন্ধান দেব। আপনার মাথায় দোষ এখনো সাড়ে নাই?
আমি হাসলাম।
বুঝলেন হিমু সাহেব, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধপত্র খান। পীর-ফকিরের তাবিজ নেন। ব্রেইন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে বিপদে পড়বেন। মহা বিপদে পড়বেন।
স্যার উঠি?
আচ্ছা যান। আরেকটা উপদেশ শুনে যান—পুলিশ এভয়েড করে চলবেন। আমি আপনাকে চিনি বলে ছেড়ে দিচ্ছি—অন্যরা তো চিনবে না—মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে। টাকি মাছের ভর্তা। খেয়েছেন কখনো টাকি মাছের ভর্তা?
জি খেয়েছি।
খেতে ভালো না?
অতি উপাদেয়।
দুপুরে তেমন কোনো কাজ না থাকলে বসে থাকুন। টাকি মাছের ভর্তা দিয়ে ভাত খাবেন। স্ত্রীকে বলেছি টাকি মাছের ভর্তা করতে।
মুরগি খেতে খেতে মুখে অরুচি হয়েছে?
ওসি সাহেব তো হেসে উঠলেন। আমি উঠে পড়লাম। টাকি মাছের ভর্তা খাওয়ার সময় নেই।
আমার ড্রাইভার ছামছু আকাশ থেকে পড়েছে। সে কল্পনাও করতে পারছে না আমি কী করে রাস্তায় একটা ফকিরের সঙ্গে বসে ভাত খাচ্ছি। ছামছুকে খেতে ডেকেছিলাম, সে ঘৃণার সঙ্গে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে মুখ কালো করে গাড়িতে বসে আছে।
একলেমুর মিয়ার মেয়েটা ফিরে এসেছে। সে খাচ্ছে আমাদের সাথে। মেয়েটা বিচিত্র ধরনের—ভাত ছাড়া আর কিছু খেতে পারে না। কপ কপ করে শুধু ভাত খায়। ভাতের উপর খানিকটা লবণ ছিটিয়ে দিতে হয়। আর কিছু লাগে না।
একলেমুর মিয়া।
জি ভাইজান?
এই জীবনে পাপ কী কী করেছ?
প্রত্যেক দিনেই তো পাপ করি ভাইজান। মাইনষের কাছে ভিক্ষা চাই…মাইনষে বিরক্ত হয়। মাইনষেরে বিরক্ত করা মহাপাপ।
এই জাতীয় পাপের কথা বলছি না। বড় পাপ।
পাপের কোনো বড় ছোট নাই। ছোট পাপ, বড় পাপ সবই সমান—
তাই নাকি?
জি। তার উপরে দুই কিসিমের পাপ আছে। মনের পাপে, আর শরীরের পাপ। ধরেন আমি একটা জিনিস চুরি করলাম। এইটা হইল শরীরের পাপ। চুরি করছি ডান হাত দিয়া। আবার ধরেন মনে মনে ভাবলাম চুরি করব। এইটা মনের পাপ।চুরি না করলেও মনে মনে ভাবার কারণে পাপ হইল। এই পাপও কঠিন পাপ।
তার মানে কি এই দাঁড়াচ্ছে যে নিষ্পাপ মানুষ পাওয়া যাবে না?
দুই একজন আছে। তবে পাওয়া জটিল।
তোমার সন্ধান আছে?
আছে, আমার সন্ধানে একজন আছে।
যদি দরকার হয় তাকে আমার কাছে এনে দিতে পারবে?
একলেমুর মিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল, পারমু। আপনে বললেই আইন্যা দিমু।
গুড।
আমি একলেমুর মিয়ার মেয়েটাকে বললাম, এই গাড়ি চড়বি?
চড়মু।
আয় আমার সঙ্গে ।
মেয়ে তৎক্ষণাৎ ভাতের থালা ফেলে উঠে এলো। গাড়ি দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেল।
এই গাড়ি আফনের?
হুঁ। আপাতত আমার। যা ওঠ।
বাপজানরে লইয়া উঠুম। আইজ আমি আর বাপজান গাড়িত কইরা ভিক্ষা করুম।
এটা মন্দ না।
আমি ছামছুকে বললাম, ছামছু গাড়িতে তেল আছে?
জি স্যার আছে।
এরা দুইজন আজ গাড়িতে করে ভিক্ষা করবে। তুমি এদের ভিক্ষা করতে নিয়ে যাও।
ছামছু তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে তার ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাকের মতো হয়েছে। কপাল ঘামছে। সে ক্ষীণ গলায় বলল, গাড়িতে বইস্যা ভিক্ষা করব?
হুঁ। গ্রামে আমি ফকিরদের ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে দেখেছি। ঘোড়ায় চড়ে যদি ভিক্ষা করা যায় গাড়িতেও করা যায়। রাত নটা পর্যন্ত তুমি এদের নিয়ে ঘুরবে, তারপর চলে আসবে আমাদের মেসের সামনে, ঠিক সামনে যে গ্রীন ফার্মেসি সেখানে।
জি আচ্ছা স্যার।
মুখ এরকম করে রেখেছ কেন ছামছু?
আমার গাড়িতে বইস্যা ভিক্ষা করব, লোকে আমারে ধইরা মাইর দেয় কি না, এইটা নিয়া চিন্তিত আর কিছু না।
চিন্তা করবে না। মনে সাহস রাখ ছামছু।
জি আচ্ছা, সাহস রাখব।
মুখ কালো করে ছামছু গাড়ি স্টার্ট দিল। ছোট মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। এত সুন্দর হাসি অনেক দিন শুনি নি।
পারাপার – ০৬
রূপা ঘুম-ঘুম গলায় বলল, হ্যালো।
আমি বললাম,কেমন আছ রূপা?
সে জবাব দিল না। চুপ করে রইল। আমি আবার বললাম, কেমন আছ রূপা?
রূপার ছোট্ট একটা শ্বাস নেবার শব্দ শুনলাম। তারপর পরিষ্কার গলায় বলল, ভালো আছি।
ঘুম-ঘুম গলায় কথা বলছ কেন?
ঘুমোচ্ছিলাম। ঘুম ভেঙে টেলিফোন ধরছি, এই জন্যেই ঘুম-ঘুম গলায় কথা।
আজ এত সকাল-সকাল শুয়ে পড়লে যে? মাত্র দশটা বাজে।
আমার জ্বর, এই জন্যেই সকাল-সকাল শুয়ে পড়েছি।
জ্বর! তাহলে কেন বললে, আমি ভালো আছি?
ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দাও।
আমি হেসে ফেললাম। রূপা হাসছে না। এমনিতে সে খুব হাসে। কিন্তু টেলিফোনে আমি তাকে কখনো হাসতে শুনি নি।
রূপা!
শুনছি।
তোমার জন্যে একটা উপহার পাঠিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ড্রাইভার উপস্থিত হবে।
তোমার ড্রাইভার মানে?
কিছুদিনের জন্যে একটা গাড়ি এবং ড্রাইভার পেয়েছি।
শুনে সুখী হলাম।
উপহার পেয়ে আরো সুখী হবে। উপহারটা হলো একটা কুকুরছানা।
তোমার কাছে আমি কি কুকুরছানা কোনোদিন চেয়েছি?
না।
তাহলে এই রাতদুপুরে কুকুরছানা পাঠাবার অর্থ কী?
রূপা, তুমি কি রাগ করলে?
না, রাগ করি নি, তার সঙ্গেই রাগ করা চলে যে রাগের অর্থ বোঝে। রাগ, অভিমান, ঘৃণা, ভালোবাসা এর কোনো মূল্য তোমার কাছে নেই। কাজেই আমি তোমার উপর রাগ করা ছেড়েছি। শুধু রাগ না, অভিমান ঘৃণা, ভালোবাসা কোনো কিছুই আর তোমার জন্যে নেই।
তোমার জ্বর কি খুব বেশি?
কেন,আমার কথাগুলো কি প্রলাপের মতো লাগছে?
না। খুব স্বাভাবিক লাগছে, এই জন্যেই জিজ্ঞেস করছি। তোমার জ্বর কত?
এক শ’ দুই পয়েন্ট ফাইভ।
অনেক জ্বর। যাও শুয়ে থাক।
আমি শুয়েই আছি। কথা বলছি শুয়ে শুয়ে।
আর কথা বলতে হবে না, বিশ্রাম করো।
রূপা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, আমার বিশ্রাম নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার নিজের বিশ্রাম নিয়ে ভাবো। আজকাল কী করছ জানতে পারি?
কিছুই করছি না। ঘুরে বেড়াচ্ছি বলতে পারো।
মিথ্যা কথা বলছ কেন? আমি তো যতদূর জানি তুমি পবিত্র রক্ত খুঁজে বেড়াচ্ছ।
ও আচ্ছা, হ্যাঁ, ঠিকিই বলেছ।
পেয়েছ?
উঁহুঁ। তবে পেয়ে যাব।
তোমাকে একটা কথা বলি, খুব মন দিয়ে শোন—তুমি কোনো একজন ভালো সাইকিয়াট্রিস্টকে তোমার বিখ্যাত মাথাটা দেখাও। প্রয়োজন হলে শক ট্রিটমেন্ট করাও, নয়তো কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যাবে পুরোপুরি দিগম্বর হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছ এবং ট্রাফিক কনট্রোলের চেষ্টা করছ।
তোমার জ্বর কদিন ধরে?
এই তথ্য জানার তোমার কি কোনো প্রয়োজন আছে?
না।
তাহলে কেন জিজ্ঞেস করলে?
কথার পিঠে কথা বলার জ্ন্য।
কথার পিঠে কথা বলার জন্যে আর ব্যস্ত হতে হবে না। আমি টেলিফোন নামিয়ে রাখছি।
এক সেকেন্ড। একটা জরুরি কথা তোমাকে বলা হয় নি। কথাটা হচ্ছে—কুকুরছানাটা একটা নাম আছে। আমিই নামটা দিয়েছি। তুমি যদি নতুন নাম দিতে চাও, দেবে। আর নতুন নাম খুঁজে না পেলে আমারটা রেখে দিতে পারো। বলব নামটা?
বলো।
মেয়ে কুকুর তো, কাজেই আমি নাম রেখেছি কঙ্কাবতী। আদর করে তুমি ওকে কঙ্কাও ডাকতে পার। কঙ্কা ডাকলেই সে কান খাড়া করে।
রূপা খট করে টেলিফোন নামিয়ে রাখল। গ্রীন ফার্মেসির ছেলেটা বিরক্ত মুখে বলল, কথা শেষ হয়েছে? এতক্ষণ কেউ টেলিফোনে কথা বলে? কত জরুরি কল আসতে পারে…..
আমি হাসলাম। ছেলেটি আরো বিরক্ত হলো। আমি বললাম, ভাই, আরেকটা কল করতে হবে। ভয়ানক জরুরি । না করলেই নয়। কুড়ি মিনিটের বেশি এক সেকেন্ডও কথা বলব না।
আপনি কি ঠাট্টা করছেন ?
না, ঠাট্টা করছি না।
আমি এখন দোকান বন্ধ করে বাসায় যাব। যাত্রাবাড়িতে থাকি, আর দেরি করলে বাস পাব না।
বাসের জন্য চিন্তা করতে হবে না। আমার গাড়ি আছে। গাড়ি পৌঁছে দেবে।
গাড়ি আছে ?
অবশ্যই গাড়ি আছে। এসি বসানো গাড়ি।
কেন এইসব চাল মারেন ?
তার কথার জবাব দেয়ার আগেই গাড়ি এসে উপস্থিত হলো। গ্রীন ফার্মেসির ছেলে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। আমি বললাম, ভাই, করব একটা টেলিফোন ?
করুন।
আরেকটা কথা বলে রাখি—এর মধ্যে যদি আপনার গাড়ির কখনো দরকার হয়—ছেলেমেয়ে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবেন বা এই জাতীয় কিছু—তাহলে আমাকে বলবেন। গাড়ি এখন আর কোনো সমস্যা না।
টেলিফোন করলাম বড় খালার বাসায়। বড় খালা টেলিফোন ধরলেন।
বড় খালা, স্নামালিকুম।
কে, হিমু ?
জি।
হারামজাদা, জুতিয়ে আমি তোর বিষদাঁত ভাঙব।
কী হয়েছে খালা ?
তোর এত বড় সাহস ! ফিচকেল কোথাকার!
খালা,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না বলে অস্বস্তি বোধ করছি—ব্যাপারটা কী?
গালাগালি করার আগে ব্যাখ্যা করো কেন গালাগালি করছ।
তুই কি এর মধ্যে তোর খালুর অফিসে গিয়েছিলি?
হুঁ।
অফিসে গিয়ে তাকে বলেছিস যে সে পুণ্যবান লোক?
জি খালা। আমি একটা লিস্ট করেছি। লিস্টে তাঁর নাম আছে।
তোর কথা শুনে ঐ গাধা পুণ্যবান সাজার চেষ্টা করছে। আমাদের এই বাড়ি সে এতিমখানা বানানোর জন্যে দিয়ে দিতে চায়।
বলো কী!
এত কষ্টের পয়সায় বাড়ি, এটা নাকি হবে এতিমখানা! এতিমখানা তার পাছা দিয়ে ঢুকায়ে দেব।
খালা, প্লিজ, আরেকটু ভদ্র ভাষা ব্যবহার করো।
হারামজাদা, ভদ্র ভাষা আবার কী রে? গাধা পুণ্যবান সাজে। উকিল-মোক্তার নিয়ে বাসায় উপস্থিত। আমি ভাবলাম কী না কী, পরে শুনি এই ব্যাপার। আমাকে ডেকে বলে—সুরমা, তুমি কিন্তু সাক্ষী। সাক্ষী আমি বুঝায়ে দিয়েছি।
মারধর করেছ?
ইয়ারকি করিস না হিমু। ইয়ারকি ভালো লাগছে না।
খালুজানকে দাও। কথা বলি।
ওকে দেব কোথেকে? ও কি বাসায় আছে? জুতিয়ে বের করে দিয়েছি না?
স্যান্ডেল-পেটা করেছি।
স্পঞ্জ স্যান্ডেল, না চামড়া?
হারামজাদা, রসিকতা করিস না। তোকেও জুতা-পেটা করব।
খালুজানকে কখন থেকে বের করলে? আজ?
হ্যাঁ, সন্ধ্যাবেলা। উকিল-মোক্তার সব নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ঘর থেকে বের হয়েছে। মোক্তার ব্যাটা ফাইল নিয়ে হুড়মুড় করে রাস্তায় গড়িয়ে পড়েছে।
তুমি কি সত্যি সত্যি স্যান্ডেল-পেটা করেছ?
অবশ্যই।
রাখি খালা?
শোন হিমু, গাধাটার সঙ্গে তোর যদি দেখা হয় তাহলে গাধাকে বলবি সে যেন আর ত্রিসীমানায় না আসে…
জি আচ্ছা, আমি বলব। তবে বলার দরকার হবে বলে মনে হয় না।
কত বড় সাহস! আমার জমি, আমার বাড়ি সে দান করে দিচ্ছে, আর আমাকে বলছে সাক্ষী হতে। মদ খেয়ে খেয়ে মাথার বারোটা বেজে গেছে সেই খেয়াল নেই।
খুব খাচ্ছেন বুঝি?
অফিসে গিয়েছিলি, কিছু টের পাস নি? রাত-দিন তো ওর উপরই আছে। গাধার চাকরিও চলে গেছে।
বলো কী!
অনেক আগেই যাওয়া উচিত ছিল।
আমাকে টেলিফোন ছাড়তে হলো না। আপনা আপনি লাইন কেটে গেল। আমি ফ্যাকাসে ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করলাম। ভালো যন্ত্রণায় পড়া গেছে। আমার ধারণা, মেসে ফিরে দেখব বড় খালু বসে আছেন। আমার ইনট্যুশন তাই বলছে। কিছুদিন পালিয়ে থাকার জন্যে আমার আস্তানা সর্বোত্তম। গ্রীন ফার্মেসির ছেলেটাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে দু’প্যাকেট ডানহিল সিগারেট কিনলাম। বড় খালুর এই হচ্ছে ব্র্যান্ড। আমার ধারণা, মেসে পা দেয়ামাত্র বড় খালু বলবেন, হিমু, সিগারেট এনে দে।