আমরা নারায়নগঞ্জের বাসে উঠে পড়লাম। জহির বলল, আজ সত্যি সত্যি জ্যোৎস্না তো।
‘সত্যি জ্যোৎস্না। পঞ্জিকা দেখে বের হয়েছি।’
ব্যাপারটা যেন কল্পনা করে রেখেছিলাম তেমন হল না। দেখা গেল ড্রেজার কলোনি জায়গাটা জনবহুল। বাড়িঘর গিজ গিজ করছে। এর মধ্যেই একটা ফাঁকা জায়গায় রফিক দু’টা গর্ত খুঁড়ে বিরস মুখে বসে আছে। সে একা না, তার সঙ্গে আরো লোকজন আছে। লোকজন তাকে বিরক্ত করে মারছে। প্রশ্নে প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলছে—
‘এইখানে বিষয় কি ভাইজান? লাশ পুঁতা হবে?’
‘লাশ কি দুইটা?’
রফিক সব প্রশ্নের জবাবে হাই তুলছে। আমাদের দেখে নিশ্চিত হয়ে উঠে দাঁড়াল। যন্ত্রের মত গলায় বলল, মা’র শরীর খারাপ, আমি চলে যাব।
কি ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই।
জহির শুরু থেকে না না করছিল—গর্ত দেখে তার উৎসাহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সে আমার কানে কানে বলল, নিয়মটা কি? নেংটো হয়ে ঢুকব, না আন্ডারওয়্যার থাকবে?
‘নেংটো হয়ে ঢোকাই নিয়ম। তুই ইচ্ছা করলে আন্ডারওয়্যার রাখতে পারিস।’
‘কোন প্রয়োজন দেখছি না। করব যখন নিয়ম মাফিকই করব। নাচতে নেমে ঘোমটা দেয়ার কোন মানে হয় না। হু কেয়ারস?’
আমরা তৎক্ষণাৎ গর্তে ঢুকলাম না। রাত এগারোটার দিকে লোকজন কমে যাবার পর ঢুকলাম। রফিক বিরস মুখে কোদার দিয়ে বালি ফেলতে ফেলতে বলল, তোদের মাটিচাপা দিয়ে বাসায় চলে যাব। মা’র শরীর খুবই খারাপ। আমার মো্টেই ভাল লাগছে না। মনে হচ্ছে লোকজন জমে একটা কেলেঙ্কারি হবে।
জহির বলল, তুই চলে যা। আমরা ম্যানেজ করে নেব। শুধু ভোরবেলা এসে আমাদের মাটি খুঁড়ে বের করিস।
রফিক বলল তোদের শার্ট-প্যান্ট কি করব? বাসায় নিয়ে যাব না পাশে রেখে দেব?
জহির বলল , শার্ট-প্যান্ট আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দে। আমার এই সবের দরকার নেই। আমি প্রকৃতির সন্তান। মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসে থাকা যে এমন এক্সাইটিং আগে জানতাম না। গায়ে কাটা দিচ্ছে।
রাত বারোটার মধ্যে আমাদের চারপাশে হাজার খানিক লোক জমে গেল। শুধু মানুষ না, পশুরাও ব্যাপারটায় খুব উৎসাহ পাচ্ছে। দু’টা কুকুর আমাদের ঘিরে ক্রমাগত ঘেউ ঘেউ করছে। লোকজনের প্রশ্নেরও কোন সীমা নেই।
‘ভাই সাহেব, আপনারা কে?’
‘এইখানে কি করতেছেন?’
‘জিন্দা কবর নিয়েছেন?’
‘আপনারা থাকেন কোথায়?’
আমি কোন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি না তবে জহির প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। উচ্চশ্রেণীর দার্শনিক জবাব। রাত একটার দিকে মনে হল পুরো নারায়নগঞ্জের মানুষ জড়ো হয়েছে। বিকট হৈ চৈ। জহির বলছে—আপনারা হৈ চৈ করছেন কেন? নিরবতা কাম্য। দয়া করে নিরব থাকুন। প্রকৃতি নিরবতা পছন্দ করে।
দেড়টার দিকে পুলিশ চলে এল। ওসি সাহেব দু’জন কনস্টেবল নিয়ে নিজেই এসেছেন। ওসিরা সহজভাবে কোন কথা বলতে পারেন না। ইনিও পারলেন না। হুংকার দিলেন—কি হচ্ছে এসব? আপনারা কে?
জহির শীতল গলায় বলল, অত্যন্ত জটিল প্রশ্ন? মানুষ এই ফিলসফিক প্রশ্নের মীমাংসা গত দু’হাজার বছর ধরে করার চেষ্টা করছে। মীমাংসা হয়নি।
‘আপনারা আন্ডার এ্যারেস্ট। উঠে আসুন।’
জহির হিমশীলতল গলায় বলল, আন্ডার অ্যারেস্ট মানে? মশকরা করছেন? আমরা দেশের কোন আইনটি ভঙ্গ করেছি দয়া করে বলুন। বাংলাদেশ পেনাল কোডের কোন ধারায় আছে যে গর্ত খুঁড়ে মাটিতে বসে থাকা যাবে না? আমরা যদি পানিতে শরীর ডুবিয়ে থাকতে পারি, তাহলে মাটিতেও পারি।
ওসি সাহেব যুক্তি-তর্কে গেলেন না। কনস্টেবল দু’জনকে হুকুম দিলেন আমাদের টেনে তুলতে। জহির হুংকার দিয়ে বলল, আমি কে পরিচয় দিলে আপনি কিন্তু ভাই প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবেন্ প্যান্ট পাঠাতে হবে ধোপার কাছে। ডবল চার্জ নেবে।
ওসি সাহেব সেপাইকে বললেন, এই পাগলার গালে একটা চড় দাও। সেপাই সঙ্গে সঙ্গে ঝেড়ে লাথি বসিয়ে দিল।
জহির হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিল। বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, বুঝলেন ভাই সাহেব, আপনাকে এমন জায়গায় ট্রান্সফার করা হবে যে এক পয়সা ঘুষ পাবেন না। হালুয়া টাইট হয়ে যাবে। একটা টেলিফোন নাম্বার দিচ্ছি। টেলিফোন করে জেনে নিন আমি কে? পরিচয় জানার সঙ্গে সঙ্গে আদরে আদরে প্রাণ অতিষ্ঠ করে ফেলবেন।
ওসি সাহেব বিরক্ত মুখে বললেন, পুলিশের আদর কত প্রকার ও কি কি—কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারবেন।
আমরা থানার দিকে রওনা হলাম। উৎসাহী জনতার বড় একটা অংশ আসছে আমাদের পিছু পিছু। জহির আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, যতটা এক্সাইটিং হবে ভেবেছিলাম তারচে’ দশগুন এক্সাইটিং হয়েছে। এই জাতীয় প্রোগ্রাম আরো ঘন ঘন করতে হবে। নেক্মট পূর্ণিমা কবে? পূর্ণিমাগুলি একমাস পর পর আসে, না পনের দিন পর পর? সিস্টেমটা কি?
তেল ও জ্বালানী মন্ত্রী ব্যারিষ্টার মোবারক হোসেন সত্যি সত্যি জহিরের বাবা এই পরিচয় পাওয়ার পর ওসি সাহেবের মুখের হা তেলাপিয়া মাছের মত বড় হতে লাগল এবং ছোট হতে লাগল। তারপর উনি যখন শুনলেন মোবারক হোসেন সাহেব নি্জেই ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে আসছেন তখন অধিক শোকে ওসি সাহেব পাথরের মত হয়ে গেলেন। খানিকক্ষণ জহিরের দিকে তাকান, খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকান। জহির বলল, আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন ওসি সাহেব, আমার বাবা বাইরের মানুষের কাছে অত্যন্ত মাই ডিয়ার ধরণের লোক। আপনাকে উনি কিছুই বলবেন না। তাছাড়া আপনাকে কিছু বলার প্রশ্নও আসে না। আপনি আপনার কর্তব্য পালন করেছেন। এর উত্তরে ওসি সাহেব চাপা গলায় বিড়বিড় করে কি যেন বললেন, যার কিছুই বোঝা গেল না।
জহির বলল, ওসি সাহেব, চা খাওয়াতে পারেন?
এতেও ওসি সাহেবের হতভম্ভ ভাব গেল না। সেকেন্ড অফিসার লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, এক্ষুণি চা-কেক নিয়ে আসছি স্যার। এক্ষুণি আনছি। জিলিপী খাবেন? এখানে গরম গরম জিলিপী পাওয়া যায়।
জহির বলল, জিলিপী খাওয়া যায়। আপনারা কেউ যদি কাইন্ডলি রফিকের বাসা থেকে আমাদের কাপড়গুলি এনে দেন তাহলে খুব ভাল হয়। বাবা এসে যদি দেখেন আমরা আন্ডারওয়্যার পরে থানায় বসে আছি, উনি কিছুটা বিরক্ত হতে পারেন। মন্ত্রী মানুষ তো, সামান্যতেই বিরক্ত হন।
সেকেন্ড অফিসার বললেন, আমি ব্যবস্থা করছি। স্যার, আপনারা গা ধুয়ে নেন। শরীর ভর্তি বালি। বাথরুমে সাবান আছে।
গা ধোয়ার আগেই তেল ও জ্বালানী মন্ত্রী ব্যারিস্টার মোবারক হোসেন উপস্থিত হলেন। সঙ্গে তার পি. এ., দুজন পুলিশ গার্ড। মোবারক হোসেন সাহেব হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমাদের দিকে।
আমি বললাম, স্যার ভাল আছ্নে?
তিনি জবাব দিলেন না। মনে হচ্ছে তিনিও ওসি সাহেবের মত অধিক শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন।
সমস্ত থানা জুড়ে এক ধরণের আতংক। পুলিশরা সব এ্যাটেনশন হয়ে আছে। ব্যারিস্টার সাহেব ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, এরা কি করেছিল বললেন, গর্ত খুঁড়ে বসেছিল?
‘জ্বি স্যার। শুধু মাথা বের হয়ে ছিল। আমি খবর পেয়ে দু’জন কনস্টেবল নিয়ে উপস্থিত হলাম।’
‘আই সি।’
‘আমি স্যার পাগল ভেবেছিলাম—মানে স্যার, ঠিক বুঝতে পারি নি।’
‘বুঝতে পারার কথাও না। আমি নি্জেই কিছু বুঝতে পারছি না। যাই হোক, আপনাকে ধন্যবাদ। ঘটনাটা থানায় জিডি এন্ট্রি করে রাখুন। মন্ত্রীর ছেলে বলে পার পেয়ে যাবে, তা হবে না। আর এই ছেলে, যার নাম সম্ভবত হিমালয়, একে ভালমত জিজ্ঞাসাবাদ করুন। সে-ই বুদ্ধি দিয়ে এইসব করিয়েছে বলে আমার ধারণা। ড্রাগ এডিক্ট হবার সম্ভাবনা। খুব ভালমত খোঁজ-খবর করবেন।’
‘অবশ্যই করব স্যার।’
‘আমি জহিরকে নিয়ে যাচ্ছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে টেলিফোন করবেন।’
‘তার কোন প্রয়োজন হবে না স্যার।’
‘প্রয়োজন হবে না বলবেন না। মন্ত্রীর ছেলে বলে সে কোন আলাদা ফেভার পাক তা আমি চাই না। মন্ত্রী জনগণের সেবক। এর বেশি কিছু না।’
সেকেন্ড অফিসার আমাদের কাপড় এবং চা-নাশতা নিয়ে এসেছেন। মন্ত্রী দেখে তার ভিরমি খাবার উপক্রম হল।
জহির বিরস মুখে শার্ট গায়ে দিল, প্যান্ট পরল।
মোবারক সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি গলায় বললেন, চল বাবা, যাওয়া যাক। ভঙ্গিটা এমন যেন ছ’সাত বছরের একটা ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে কথা বলছেন।
যে ছেলে না বুঝে দুষ্ট বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সামান্য অপরাধ করে ফেলেছে, যে অপরাধের শাস্তি বকাঝকা না—আদর। যাবার আগে খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি এই জিনিসই চাচ্ছি। আমাকে যেন চিনে রাখেন। দ্বিতীয়বার দেখা হলে আমাকে যেন বলতে না হয়—আমি হিমু, হিমালয়।
তাঁরা চলে যাবারও আধঘণ্টা পর থানার অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক হর। এই আধঘণ্টায় আমি দু’কাপ চা এবং তিন পিস কেক এবং ছ’টা জিলিপী খেলাম। অর্ধেকটা সিগারেট খেলাম। পুরোটা খাওয়া গেল না। কারণ সেকেন্ড অফিসার সাহেব কঠিন গলায় বললেন, সিগারেট ফেলুন। নো স্মোকিং।
একটা পিরিচে আট দশটা খিলি পান। দু’টা নিয়ে একসঙ্গে মুখে দিলাম।
আমার এইসব কর্মকান্ড সবাই দেখছে। বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখছে। তাদের ভাল লাগছে কিনা বুঝতে পারছি না। মনে হয় লাগছে না। চেয়ারে পা উঠিয়ে পদ্মাসনের ভঙ্গিতে বসেছিলাম—সেকেন্ড অফিসার কঠিন ভঙ্গিতে বললেন, পা নামিয়ে বসুন।
আমি পা নামিয়ে বসলাম। হাত বাড়িয়ে পিরিচ থেকে আরো দু’টা পান নিয়ে মুখে দিয়ে সহজ স্বরে বললাম, পানের পিক কোথায় ফেলব স্যার?
ওসি সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। টেবিল থেকে আমার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে বললেন, এবার বলুন আপনি কে?
‘আমার নাম হিমালয়। ডাক নাম হিমু।’
‘কি করেন?’
‘কিছু করি না।’
‘কিছু যে করেন না তা বুঝতে পারছি। এটা বোঝার জন্যে শার্লক হোমস হতে হয় না। থাকেন কোথায়?’
‘একটা মেসে থাকি।’
‘ঢাকায় আপনার আত্নীয়স্বজন আছেন?’
‘আছেন।’
ওসি সাহেব ড্রয়ার থেকে কাগজ এবং পেনসিল বের করলেন। থানায় এই এক মজার জিনিস দেখলাম। সব কাজকর্ম পেনসিলে। সম্ভবত ইরেজার ঘসে লেখা মুছে ফেলার চমৎকার সুযোগ আছে বলেই পেনসিল। ওসি সাহেব শুকনো মুখে বললেন,—এক এক করে আত্নীয়স্বজনদের নাম বলুন, ঠিকানা বলুন। টেলিফোন থাকলে টেলিফোন নাম্বার। সব লিখে নেব। আমি বললাম, যেসব প্রশ্নের উত্তর লেখার দরকার নেই সেগুলি আগে করুন।
‘সেগুলি আগে করব কেন?’
‘কারণ আপনার পেনসিলটা ভোঁতা। শার্পনার দিয়ে শার্প করতে হবে। এখন কোন শার্পার খুঁজে পাবেন না।
ওসি সাহেব পেনসিলের দিকে তাকালেন। পেনসিলটা সত্যি ভোঁতা। তিনি অত্যন্ত গম্ভীর মুখে শার্পনার খুঁজতে লাগলেন। খুঁজে পাওয়া গেল না। ড্রয়ার ঘাঁটাঘাঁটি করা হল। ফাইলপত্র উল্টানো হল—শার্পনার নেই। ওসি সাহেব একা না, অন্যরাও শার্পনার খোঁজায় যোগ দিল। ওসি সাহেব গর্জনের মত শব্দ করে বলতে লাগলেন, একটা পুরানো ব্লেড ছিল, সেটা গেল কই? এত বিশৃঙ্খলা। এত বিশৃংখলা! আমি বললাম, একটা বল পয়েন্ট দিয়ে লিখলে কি চলে?’
তিনি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন। যেন এমন অদ্ভুদ কথা তিনি তাঁর ওসি জীবনে শুনেন নি। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত এরকমই হয়। আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত একটা শার্পনার না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত সব কাজকর্ম বন্ধ থাকবে। একজন কাউকে দোকানে পাঠিয়ে একটা শার্পনার আনিয়ে নিলেই হয়, তা আনা হবে না। খোঁজা চলতেই থাকবে এবং সবার রাগ বাড়তে থাকবে। ধমকা-ধমকি হতে থাকবে।
হোটেল থেকে একটা ছেলে টিফিন ক্যারিয়ারে কি যেন নিয়ে এসেছে। রাত প্রায় শেষ হতে চলল। এ সময়ে খাবার কার জন্যে? ওসি সাহেব নিতান্ত অকারণে তার উপর ঝাঁঝিয়ে উঠলেন এই হারামজাদা, হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন—এইটা কি রং দেখার জায়গা?
কেউ আমার দিকে লক্ষ্য করছে না, কাজেই আবার পা উঠিয়ে বসা যাক। ওসি সাহেব আমার দিকে তাকালেন, বলুন আপনি কি করেন।
‘আগে একবার বলেছি কিছু করি না। ঘুরে বেড়াই।’
‘কোথায় ঘুরে বেড়ান?’
‘পথে ঘাটে ঘুরি।’
‘ভবঘুরে?’
‘তা বলতে পারেন।’
‘দেশে ভবঘুরে আইন বলে যে একটা আইন আছে তা কি জানেন? এই আইনে ভবঘুরেদের ধরে ধরে জেলে ঢুকিয়ে ফেলা যায়।’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ভাগ্যিস এই যুগে কোন ধর্ম প্রচারক নেই। ধর্ম প্রচারক থাকলে সমস্যা হয়ে যেত। জানেন বোধহয় ধর্মপ্রচারকরা সবাই বলতে গেলে ভবঘুরে। গৌতম বুদ্ধ, গুরু নানক, যিশ খৃষ্ট…’
‘আপনি কি ধর্মপ্রচারক?’
‘জ্বি না। তবে এই লাইনে চিন্তাভাবনা করছি। টাকা-পয়সা যোগাড় করতে পারলে একটা আশ্রম চালু করার ইচ্ছা আছে। মহাপুরষ হবার একটা ক্ষুদ্র চেষ্টা বলতে পারেন।’
‘মহাপুরষ হবার চেষ্টা করছেন?’
‘জ্বি।’
‘কেন জানতে পারি?’
‘সত্যি সত্যি জানতে চান?’
‘হ্যাঁ চাই।’
আমি শান্ত ভঙ্গিতে বললাম, আমার নিজের দিক থেকে মহাপুরুষ হবার তেমন আগ্রহ নেই, তবে আমার বাবার খুব শখ ছিল ছেলেকে মহাপুরষ বানাবেন। সাধারণ বাবারা ছেলেমেয়েকে ডাক্তার, ইনজিনীয়ার, ব্যারিস্টার এইসব বানাতে চায়। কেউ মহাপুরুষ বানাতে চায় না। আমার বাবা চেয়েছিলেন।
‘আমার সঙ্গে ফাজলামি করছেন?’