রফিকের কাছে যাব বলে ভেবেছিলাম তার প্রয়োজন হল না। ভেজা কাপড়ে দোতলায় উঠে দেখি রফিক বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অত্যন্ত সুপুরষ একজন মানুষ। আমার ধারণা, সে ছেঁড়া শার্ট গায়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাকে রাজপু্ত্রের মত লাগবে। সে শেভ করেনি। মুখে খোচা দাড়ি। তার পরেও এত সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি আনন্দিত গলায় বললাম, কি খবর রফিক?
রফিক একবার আমার দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল। জবাব দিল না। চুপ করে রইল। প্রশ্ন করলে সে কখনো জবাব দেয় না। আগে কিছুটা দিত, ইদানীং একেবারেই দিচ্ছে না। ব্যাপারটা যত অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে আসলে তত অস্বাভাবিক না। প্রশ্ন করলে চুপ করে থাকার কারণ সে নিজেই ব্যাখ্যা করছে। সেই ব্যাখ্যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়েছে। স্কুলে পড়ার সময় স্যারেরা তাকে প্রশ্ন করতেন, পড়া ধরতেন। সে যে উত্তরই দিত মার খেতে হত। মার থেতে থেতে প্রশ্নের উপরই তার এক ধরণের ভীতি জন্মে গেছে। প্রশ্ন করলে জবাব দেয় না, গম্ভীর হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে প্রশ্নের উত্তরে ফোঁস রে নিঃশ্বাস ফেলে। তার কাছে কিছ জানতে হলে এমনভাবে জিজ্ঞেস করতে হয় যেন কখনো প্রশ্ন বলে মনে হয় না।
‘দাঁড়া আমি কাপড় ছাড়ি। তারপর চা খেয়ে আসি। তুই কয়েকবার আমার খোঁজ করেছিস। ব্যাপার কি?’
রফিক চুপ করে রইল। চুপ করে থাকবে, জানা কথা। শেষের দিকে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি কাপড় ছাড়লাম। শার্ট-প্যান্ট পরতে পরতে বিরক্ত গলায় বললাম, কাঠের মত দাঁড়িয়ে থাকলে কোন লাভ হবে না। কিছু বলার থাকলে বলে ফেল।
‘তোর কোন মন্ত্রীর সাথে পরিচয় আছে?’
‘কেন?’
রফিক নিঃশ্বাস ফেলল। কিছু বলল না। আমি হতাশ গলায় বললাম, তুই যা বলার বলে যা।আমি নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করব না।
‘চাকরি চলে গেছে। সাসপেনশন অর্ডার হয়েছে।’
‘ও আচ্ছা।’
‘আমি কিছুই করি নি। সুপারিনটেনডেন্ট ইনজিনিয়ার এসেছিলেন। আমাকে প্রশ্ন করলেন্ আমি জবাব দিলাম না। উনি মনে করলেন আমি ইচ্ছা করে বেয়াদবী করছি।’
‘যারা তোকে চেনে, তোর সঙ্গে কাজ করে, তারা তো তোর স্বভাব-চরিত্র জানে। তারা কিছু বলল না? তারা জানে তোকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তুই চুপ করে থাকিস।’
রফিক নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কেউ আমার পক্ষে কিছু বলে নি। আমার সাসপেনশন অর্ডার হওয়ায় সবাই খুশি। কেউ আমাকে দেখতে পারে না।’
‘তোকে দেখতে না পারার তো কোন কারণ নেই।’
‘আমাকে শো কজ করেছিল। শো কজের জবাব দিয়েছি। জবাব ওদের পছন্দ হয় নাই। সবাই বলেছে আমাকে ডিসমিস করে দেবে।’
‘শো কজে কি লিখেছিলি? কথা বল গাধা। তোকে প্রশ্ন করছি না—এম্নি জিজ্ঞেস করলাম।’
রফিক চুপ করে রইল। আমি বিরক্ত গলায় বললাম, ওদের কোন দোষ দিচ্ছি না। আমি তোর বস হলে অনেক আগেই ডিসমিস করে দিতাম। প্রশ্নের জবাব দে যাতে বুঝতে পারি ব্যাপারটা কি। শেষ প্রশ্ন।
‘কবে শো কজ করেছে? কবে জবাব দিয়েছিস?’
এক বাক্যে ডাবল প্রশ্ন। রফিক শুধু ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। আমি জবাবের জন্য অপেক্ষা করলাম না। চা খাবার জন্য রওনা হলাম। রফিক ক্ষীণ স্বরে বলল, অনেক আজেবাজে শো কজে লিখেছে—আমি নাকি কাজ জানি না, কাজের প্রতি আমার আগ্রহ নাই। ইনসাবর্ডিনেশন। মনটা খারাপ হয়েছে। তোর জানাশোনা মন্ত্রী আছে?’
এবার আমি চুপ করে রইলাম। চুপ করে থাকলে রফিক নিজেই বলবে। রফিক বলল, আমার এক খালাত ভাইয়ের আত্নীয় আছে মন্ত্রী। খালাতো ভাইকে বললে হয়। বলতে ইচ্ছা করে না। খালাতো ভাইটা বিরাট বদ। তুই কোন মন্ত্রী চিনিস না, তাই না? চেনার অবশ্য কথা না। ভাল মানুষদের সঙ্গে মন্ত্রীর পরিচয় থাকে না। বদগুলির সঙ্গে থাকে। খালাতো ভাইটা একটা বদ এই জন্যেই…।
রফিক কথা শেষ করল না। মাঝে মাঝে সে দীর্ঘ বাক্য শুরু করে। যেই মূহুর্তে মনে করে অনেক বেশি কথা বলা হয়ে গেল, সেই মুহুর্তে চুপ করে যায়। বাক্যটা শেষ পর্যন্ত করে না।
চায়ের টেবিলে দু’জন মুখোমুখি বসলাম। রফিক নাশতা করে এসেছে কি-না জিজ্ঞেস করা অর্থহীন। জবাব দেবে না। দু’জনের নাশতা দিতে বললেই ভাল।
‘রফিক, এই সপ্তাহেই তোদের বাড়িতে যাব। তোরা তো এখনো নারায়নগঞ্জ ড্রেজার কলোনিতে থাকিস? জবাব দিতে হবে না উপরে নিচে মাথা নাড়, তাহলে বুঝব।’
রফিক মাথা নাড়ল।
‘নদীর কাছে না তোদের বাড়ি?’
রফিক আবার মাথা নাড়ল।
‘তুই এক কাজ করতে পারবি—নদীল তীরে বালির ভেতর দু’টা গর্ত খুঁড়ে রাখতে পারবি? মানুষ-সমান গর্ত। যেন গর্তে ঢুকলে শুধু মাথাটা বের হয়ে থাকে। কাজটা করতে পূর্ণিমার আগের দিন।’
রফিক বিরস গলায় বলল, আচ্ছা।
গর্ত কেন খুঁড়তে হবে, কি ব্যাপার, কিছুই জিজ্ঞেস করল না। এই স্বভাবই তাঁর না। পূর্ণিমার আগের দিন তার বাড়িতে উপস্থিত হলে দেখা যাবে সে ঠিকই গর্ত খুঁড়ে বসে আছে।
পরোটা ভাজি দিয়ে গেছে। রফিক খাচ্ছে না। অর্থ্যাৎ সে বাড়ি থেকে নাশতা করে বের হয়েছে। ভোররাতে রওনা না হলে এত সকালে কেউ ঢাকায় পৌছতে পারে না। এত ভোরে কে তাকে নাশতা বানিয়ে দিয়েছে? তার বউ? বছর খানিক আগে রফিক বিয়ে করেছে। যতদুর জানি, মেয়েটা চমৎকার। আপন-পর বলে তার মধ্যে কিছু নেই। সবাই আপন। প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়ে রফিকের কাছে গিয়েছি। তার স্ত্রীর সঙ্গে সেবারই প্রথম দেখা। সে রাগী গলায় বলল, মাথা ব্যথা করছে আমাকে বলেননি কেন? আমি মাথা ব্যথার এমন একটা ম্যাসেজ জানি দু’মিনিটে ব্যথা উধাও হবে। দেখি মাথা নিচু করুন তো। বৌ-এর সঙ্গে তার মিল হয়নি। বউ বেশিরভাগ সময়ই বাপের বাড়িতে থাকে। জিজ্ঞেস করলে জবাব দেবে না জানি, তবু জিজ্ঞেস করলাম, তোর বউ তোর সঙ্গে থাকে, না বাপের বাড়ি থাকে?
‘বাপের বাড়ি।’
‘আসে না তোর এখানে?’
‘আর আসবে না।’
রফিককে খুব চিন্তিত বা বিষাদগ্রস্ত মনে হল না। কখনো মনে হয় না। দুঃখিত বা বিষাদগ্রস্ত হবার ক্ষমতা সম্ভবত তার নেই। আমি সিগারেট ধরালাম। রফিকের দিকে প্যাকেট বাড়িয়ে দিতেই সে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, সিগারেট খাই না। বউ পছন্দ করে না। তোর চেনা মন্ত্রী নাই? মন্ত্রী ছাড়া কিছুই হবে না।
আমি হালকা গলায় বললাম, একজন মন্ত্রীকে আমি খুব সামান্য চিনি। জহিরের বাবা। জহির আমার সঙ্গে স্কুল পড়ত। দেখি উনাকে বলে কোন ব্যবস্থা করা যায় কি-না। চিন্তা করিস না।
‘আমি চিন্তা করি না।’
‘তবে সমস্যা কি জানিস—আমি একটা কোন কথা বললেই তো মন্ত্রী শুনবে না। তিনি যেন মন দিয়ে আমার কথা শুনেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আরেক কাপ চা খাবি?’
রফিক জবাব দিল না। মাথা নিচু করে বসে রইল। সে মনে হল আরো সুন্দর হয়েছে। বসে আছে কেমন হতাশ ভঙ্গিতে। বড় মায়া লাগছে। রফিকের সঙ্গে আমার পরিচয় কলেজে ওঠার পর। কোন একটা সমস্যা হলেই সে আমার কাছে এসে সমস্যাটা বলে নিশ্চিত হয়ে যায়। এখন সে বাড়ি যাবে পুরোপুরি চিন্তামু্ক্ত হয়ে। পঞ্জিকা দেখে পূর্ণিমার দিন গর্ত খুঁড়ে অপেক্ষা করবে আমার জন্যে। কোন কারণে সেদিন ঝড়বৃষ্টি হলেও সে দমবে না। তার এই আনুগত্য আমার একার প্রতি না, সবার প্রতি। এ ধরণের অন্ধ আনুগত্য শুধু পশুদের দেখা যায়। রফিক পশু না, মানুষ। বুদ্ধিমান সৎ ভালমানুষ ধরণের মানুষ। এমন সুন্দর একজন মানুষ যে দেখলেই মনে হয় প্রকৃতি তার এই সৌন্দর্য কোন এক বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরী করেছে। সেই উদ্দেশ্য কি কে জানে?
‘রফিক।’
‘হুঁ।’
‘তোর মা’র শরীর আশা করি ভালই আছে।’
‘বেশি ভাল না। শিগ্গির মারা যাবেন।কিছু খেতে পারেন না। খুব-না-কি গরম লাগে। সারাক্ষণ তালপাখা পানিতে ভিজিয়ে সেই পাখায় হাওয়া করতে হয়। ফ্যানের হাওয়া সহ্য হয় না।’
‘হাওয়া কে করে? তুই?’
রফিক আমার দিকে তাকাল। কিছু বলল না, পর পর দুটি প্রশ্ন করা হয়ে গেছে। তার জবাব দেবার কথা না।
দরজার ওপাশে – ০২
পিচগলা রোদ উঠেছে।
রাস্তার পিচ গলে স্যান্ডেলের সঙ্গে উঠে আসছে। দু’টা স্যান্ডেলে সমানভাবে লাগলে কাজ হত, তা লাগেনি। ডান দিকেরটায় কম। শুধুমাত্র রোদের কারণে এই মুহুর্তে আমর ডান পা, বাঁ পায়ের চেয়ে লম্বা। আমি ইচ্ছা করে ডান পায়ের স্যান্ডেলে আরো খানিকটা পিচ লাগিয়ে দেড় ইঞ্চি হিল বানিয়ে ফেললাম। এখন আমাকে হাঁটতে হচ্ছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। আমার হাঁটার ভঙ্গি দেখে যে-কেউ মনে করতে পারে—উদ্দেশ্যবিহীন যাত্রা। আসলে তা নয়। দুপুর রোদে অকারণে হাঁটছি না। বিশেষ উদ্দ্যেশ্য আছে, বিশেষ পরিকল্পনা আছে। আমি যাচ্ছি মন্ত্রীর সন্ধানে। সরাসরি মন্ত্রী ধরা যাচ্ছে না। জহিরের মাধ্যমে ধরা হবে। সুক্ষ্ম পরিকল্পনার ব্যাপার আছে।
চৈত্র মাসের ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে আমার গায়ে একটা গরম চাদর। চুল দাড়ি কাটা হয়নি বলে চেহারা হয়েছে ভয়ংকর। দু’টা অসমান পা নিয়ে হাঁটছি। তারপরেও আমাকে দেখে মনে হতে পারে আমি পুরো ব্যাপারটায় বেশ মজা পাচ্ছি। কারণ আমার হাতে জলন্ত সিগারেট। মাঝে মাঝে আয়েশ করে সিগারেটে টান দিয়ে নাকে-মুখে ধোঁয়া ছাড়ছি।
রাস্তাঘাট ফাঁকা। হরতাল হরতাল ভাব। প্রভেদ এইটুকুই—হরতালের সময় রাস্তায় ছোট ছো্ট ছেলেপুলেদের মহানন্দে খেলতে দেখা যায়। এখন দেখা যাচ্ছে না। পথের ধারে বেলের সরবত বিক্রি হচ্ছে। সরবত যারা বিক্রি করে তাদের চোখে-মুখে তৃষ্ণার্তের ভঙ্গি থাকে। এই সরবতওয়ালার মধ্যে সেই ভঙ্গি খুব বেশি মাত্রায়। সে গভীর আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এত আগ্রহ নিয়ে গত তিন বছরে কেউ আমার দিকে তাকায়নি। মানুষের আগ্রহকে উপেক্ষা করা ঠিক না। আমি থমকে দাঁড়ালাম সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে এবং হাসিমুখে বললাম, খবর ভাল?
বেচারা হকচকিয়ে গেল। কি বলবে ভেবে পেল না। তাকাল জগের দিকে। জগভর্তি হলুদ পানীয়,তার উপরে বরফের কুচি ভাসছে। আমার ধারণা, পৃথিবীতে যে ক’টি কুৎসিত পানীয় আছে বেলের সরবত তাদের মধ্যে এক নম্বর। দু’নম্বরে আছে তোকমার সরবত। তোকমার সরবত খাবার সময় মনে হয় ছোট ছোট কেঁচোর টুকরা পানিতে গুলে খেয়ে ফেলছি।
সরবতওয়ালার হকচকানো ভাব কমানোর জন্যে বললাম, বেলের সরবত কত করে?
‘ডবল তিন টেকা। সিঙ্গেল দুই টেকা।’
‘তোকমার সরবত বিক্রি করেন না?’
‘জ্বি না। চলে না। ভাল জিনিসের কদর নাই।’
‘দেখি এক সিঙ্গেল বেলের সরবত।’
‘ডবল খান। ডবল শইলের জন্যে ভাল।’
‘দিন ডবলই দিন।’
সরবতের জগের চারপাশে ভনভন করে মাছি উড়ছে। যে পানিতে সরবত বানানো হয়েছে সেখানে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস কিলবিল করার কথা। বরফে আছে টাইফয়েডের জীবাণু্ । এরা না-কি ঠান্ডায় ভাল থাকে।
দু’টা বড় গ্লাসে সরবত ঝাঁকাঝাঁকি হচ্ছে। লেবু চিপে খানিকটা লেবুর রস দেয়া হল। মনে হচ্ছে, এক চিমটি লবণও মেশানো হল। একটা বোতল থেকে গোলাপজলের পানি ছিটানো হল। সামান্য তিন টাকায় এত কিছু পাওয়া যাচ্ছে। গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে সরবতওয়ালা গম্ভীর মুখে বলল, মধু আর বেল এই দুই জিনিসের মধ্যে আল্লাহপাকের খাস রহমত আছে।
‘তাই না-কি ভাই?’
‘জ্বি। তয় মধু শইল গরম করে, আর বেল করে ঠান্ডা।’
‘দুটা এক সঙ্গে খেলে কি হবে? শরীর চলে আসবে মাঝামাঝি অবস্থায়? ঠান্ডাও না, গরমও না। তাই না?’
সরবতওয়ালা সরু চোখে তাকাচ্ছে। আমি রসিকতা করছি কি-না বোঝার চেষ্টা করছে। তার সমগোত্রীয় কেউ রসিকতা করলে সে হেসে ফেলত। আমাকে সমগোত্রীয় মনে হচ্ছে না। একধাপ উপরের মনে হচ্ছে। উঁচু ক্লাসের রসিকতা অপমান হিসেবে ধরে নিতে হয়। তাই নিয়ম।
একটানে সরবত শেষ করে তৃপ্তির ভঙ্গি করে বললাম, আহ! শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। জিনিস ভাল। অতি উত্তম।
সরবতওয়ালার মুখের অন্ধকার দূর হচ্ছে না। এটাকেও সে রসিকতার অংশ হিসেবেই মনে করছে। আমি চকচকে পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে দিলাম। উদার গলায় বললাম, পুরোটা রেখে দিন। বখশিশ।
এইবার মুখের অন্ধকার একটু কাটল। সরবতওয়ালা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোকমার সরবত খাইতে চাইলে আইসেন। আইন্যা রাখব। ইসপিসাল বানায়ে দিব। খায়া আরাম পাইবেন।
‘কবে আসব?’
‘শুক্কুর বারে আইসেন। বুধবারে দেশে যাব। শুক্কুরবার সকালে ফিরব।’
‘এই খানেই পাওয়া যাবে আপনাকে?’
‘জ্বে।’
‘নিন ভাই একটা সিগারেট খান।’
সরবতওয়ালা হাত বাড়িয়ে সিগারেট নিল। মোটেই অস্বস্তি বোধ করল না। যে অধিকারের সঙ্গে সে নিল তা থেকে বোঝা যাচ্ছে শুক্রবারে যদি আমি আসি সে তোকমার সরবত খাওয়াবে এবং দাম নেবে না। এরা এসব ব্যাপারে খুব সাবধান।
‘নাম কি ভাই আপনার?’
‘এমদাদ মিয়া।’
‘যাই। ভাল সরবত খেলাম।’
‘মনে কইরা আইস্যেন শুক্কুরবারে।