তোর মতলব হচ্ছে আশার সঙ্গে কিছুক্ষণ লটরপটর করা। তার মাথাটা আরো খারাপ করে দেওয়া। মেয়েটাকে হকচাকিয়ে দিতে হবে। রাত দুটার সময় বিলের টাকা চাইলে সে হকচাকিয়ে যাবে। ঠিক বলছি না?
হুঁ।
তুই চলিস পাতায় পাতায়— আমি চলি— শিরায় শিরায়। আমাকে হাইকোর্ট দেখাবি না। আমি বাস করি হাইকোর্টের ভিতরে।
গলা নামিয়ে কথা বল খালা— তুমি সবার ঘুম ভাঙাবে।
তুই বাসা থেকে বের হবি কি না সেটা বল।
ভাত খেয়ে যাই— ক্ষুধার্তা মানুষকে না খাইয়ে বিদেয় করলে— তুমিই পরে অনুশোচনায় দগ্ধ হবে। তোমার অনিদ্রা হবে। অনিদ্রা থেকে পেপ্যাটিক আলসার…সেখান থেকে…
চুপ থাক। একটা কথাও না চুপ।
আমি চুপ করলাম আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আশা দরজা ধরে দাঁড়াল। দেখে মনে হচ্ছে সে সেজেণ্ডজে আছে। চুল আঁচড়ানো। গায়ে ইন্ত্রি করা শাড়ি। ইন্ত্রি করা শাড়ি পরে রাত দুটার সময় কেউ বসে থাকে না। ঠোঁটে লিপস্টিকও থাকার কথা না। আশার ঠোঁটে টকটকে লাল রঙের গাঢ় লিপস্টিক। আশা আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল— আমার ঘরে আসুন।
খালার দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, খালা যাব?
খালা জবাব দিলেন না। চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলেন।
আশা বলল, দাঁড়িয়ে আছেন কেন আসুন।
খালার মুখ রাগে থমথম করছে। এই রাগ সহজে যাবার না। আমি বললাম, খালা তুমি ভাত-ডিমভাজির ব্যবস্থা কর আমি এই ফাঁকে আশার সঙ্গে কথা বলে আসি। পেমেন্টটাও নিয়ে আসি।
বিদেশিনী মেয়ের ঘর খুব গোছানো থাকবে, সুন্দর করে বিদেশী কায়দায় সাজানো থাকবে। ব্যাপার সেরকম না, আশার শোবার ঘরের খুবই এলেমেলো অবস্থা। খাটেক্স বিছানায় রাজ্যের ম্যাগাজিন; মেঝেতেও বালিস চাদর পাতা। ঘরময় কাপড়াচোপড় পড়ে আছে।
আপনি যে আজ আসবেন আমি জানতাম। তাই নাকি? সন্ধ্যা সাতটার সময় হঠাৎ মনে হল আপনি আসবেন। আমি আপনার খালাকে বললাম— আজি হিমু সাহেব আসবেন, রাতে খাবেন। আপনি উনার ফেভারিট আইটেম রান্না করুন। আপনার খালা বললেন— ও আসবে তোমাকে কে বলল? আমি বললাম, কেউ বলে নি কিন্তু আমি জানি উনি আসবেন।
তোমার মাথা থেকে কি Fruit Flower দূর হয়েছে?
না হয় নি— যখন চুপ করে থাকি তখন হয়। যখন কথা বলি তখন থাকে না। এই যে কথা বলছি এখন নেই। কথা বন্ধ করে চুপ করে থাকলেই আবার চলে আসবে। এই জন্যে কথাও বেশি বলছি। আমার কথা শুনে আপনার হয়তো কান ঝালাপালা করছে। কিন্তু উপায় নেই। যখন বেলটা বাজল তখনই বুঝেছি আপনি এসেছেন। বের হতে দেরি করেছি। কেন জানেন?
না জানি না।
আন্দাজ করুন।
আন্দাজও করতে পারছি না।
খুব গরম লাগছিল। এইজন্যে পুরোপুরি নগ্ন হয়ে শুয়েছিলাম। আমার এই অভ্যাস আছে। ঘুমুতে যাবার সময় গায়ে কাপড় থাকলে দমবন্ধ লাগে। আমার কথা শুনে আপনি হয়তো আমাকে খুব খারাপ একটা মেয়ে ভাবছেন। ভাবলেও কিছু করার নেই। আমি যা তাই। বেল শোনার পর কাপড় পারলাম, চুল আঁচড়ালাম। ঠোঁটে লিপস্টিক দিলাম। আপনার কি মনে হচ্ছে। আমি খুব খারাপ টাইপ একটা মেয়ে।
না মনে হচ্ছে না।
যার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে সে আমার রাতে ঘুমুবার এই অভ্যাস জানলে আমাকে খুবই খারাপ চোখে দেখবে। এই জন্যে আমি কি ঠিক করেছি। জানেন? আমি ঠিক করেছি। যার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে তাকে আমি আমার এই অভ্যাসের কথা আগে ভাগেই বলে দেব।
এটা তো ভালো।
আমি কি কথা বেশি বলছি?
সামান্য বেশি বলছি। এটা খারাপ না। তোমার বয়েসী মেয়েরা বেশি কথা না বললে ভালো লাগে না। মনে হয় কোথাও কোনো গণ্ডগোল আছে।
আমি ঠিক করেছি। খুব শিগগিরই বিয়ে করব। কেন বিয়ে করব জানেন? বিয়ে করলে যখন-তখন স্বামীর সঙ্গে বক বক করা যাবে; মাথার অসুখটা নিয়ে তখন আর বেশি ভাবতে হবে না। কী ধরনের স্বামী আমার পছন্দ বলি?
হ্যাঁ বল।
হাইট হবে পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি। আপনার হাইট—কত?
জানি না তো— কখনো মাপি নি।
আপনার ধারণা আপনার হাইট পাঁচফুট সাত। আমার কাছে গজ ফিতা আছে। আমি এক্ষুনি মেপে আপনার হাইট বলে দিচ্ছি। আমার স্বামীর চোখ খুব সুন্দর হতে হবে। চোখে স্বপ্ন থাকতে হবে। মায়া থাকতে হবে। আচ্ছা হিমু সাহেব শুনুন— কেউ কি আপনাকে বলেছে আপনার চোখ খুব সুন্দর?
না বলে নি।
আমি বললাম। পুরুষ মানুষের এত সুন্দর চোখ এর আগে আমি দেখি নি। আমার কথা শুনে কি মনে হচ্ছে। আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি?
হুঁ মনে হচ্ছে।
আমার অনেক দিন থেকেই ক্ষীণ সন্দেহ হছিল–আজ আমিও নিশ্চিত হয়েছি যে আমি পাগলের মতো আপনার প্রেমে পড়ে গেছি—। কীভাবে নিশ্চিত হলাম জানেন? আপনাকে দেখার পর থেকে আমার কান্না পাচ্ছে। Strange type কান্না। মনে হচ্ছে সারা শরীরে কান্নাটা ছড়িয়ে আছে। ব্যথার মতো অনুভূতি। ব্যথাটা দলা পাকিয়ে ঢেউ এর মতো গলা পর্যন্ত ওঠে আসছে। সরি অনুভূতিটা আপনাকে বুঝাতে পারছি না।
আমি বুঝতে পারছি।
কী বুঝতে পারছেন?
বুঝতে পারছি যে তোমার শরীরটা খুব খারাপ। মাথার ভেতর ফুল-ফল ঘুরছে, কড়া ঘুমের অষুধ খোচ্ছ— সব মিলিয়ে অবস্থাটা ভালো না। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা তোমার নষ্ট হয়ে গেছে। মাথায় মধ্যে এলোমেলো ব্যাপার চলে এসেছে। এলোমেলো ভাবটা চলে গেলেই তুমি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমাকে দেখে তখন আর কোন ব্যথা দিলা পাকিয়ে উপরের দিকে উঠবে না। গজ ফিতা দিয়ে আমার হাইট আমার ইচ্ছাও করবে না।