গোপালগঞ্জ, কোটালিপাড়া, মকসুদপুর সহ পুরো গোপালগঞ্জ জেলায় হিন্দুদের বাড়িতে চুরি, ডাকাতি, লুট, জালিয়াতি, অবৈধভাবে বাড়ি দখল, মিথ্যা মামলা, নারী ধর্ষণ, মন্দির ভেঙে আগুন লাগিয়ে দেওয়া তো আছেই, সঙ্গে পুলিশি নিযাতনও আছে। কোটালিপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান মন্টু কাজির পোষা গুণ্ডাবাহিনী কুশলা ইউনিয়নের মান্দ্রা লাখিরপাড় গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালায়, হিন্দু মেয়েদের নিযতন করে, এরা মাদারবাড়ি, আদায়, দামি জিনিসপত্র লুট করে স্ট্যাম্পে সই নিচ্ছে। এখানকার অনেক হিন্দুই ভয়ে দেশ ত্যাগ করেছে। মাষ্ট্ৰ কাজি কোটালিপাড়া সোনালি ব্যাঙ্কের মিসেস ভৌমিককে ধরে এনে পাশবিক নিযাতন চালিয়েছে। কান্দি গ্রামের মমতা, মধু সহ অনেককে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে উপজেলা কার্যালয়ে আটকে রেখে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
বাগেরহাটের চিতলমারি উপজেলার গরীবপুর গ্রামের অনিলচন্দ্রের বাড়িতে অষ্ট আশির তেসরা জুলাই গভীর রাতে পুলিশ ঢেকে। অনিলচন্দ্র বাড়িতে ছিলেন না, পুলিশ তাঁর বউ আর বাচ্চাকে বেদম পেটায়, ওই রাতে গ্রামের স্কুলমাস্টার অমূল্যবাবুর বাড়িতেও পুলিশ লুটপাট করে। চার তারিখে সুড়িগতি গ্রামের ক্ষিতীশ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায় পুলিশ। বাড়িতে কোনও পুরুষ না পেয়ে ক্ষিতীশ মণ্ডলের স্ত্রী কন্যার ওপর পাশবিক নিযাতন চালায়। পাঁচ তারিখে একই গ্রামের শ্যামল বিশ্বাসের বাড়িতে পুলিশি হামলা চলে। শ্যামলবাবুকে না পেয়ে পুলিশ তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে, এবং ঘরের মূল্যবান জিনিস লুট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনার কয়েকদিন পর চিতলমারি গ্রামের নীরদ বিহারী রায়ের বাড়িতে এক সমাজবিরোধী লোক জোর করে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি। কালাশিরা গ্রামের একজন হিন্দুকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ইউ পি সদস্য মনসুর মল্লিক। সেখানে জোর করে বসবাস শুরু করেছে। নিরাশ্রয় হিন্দু এখন পথে পথে ঘোরে।
গোপালগঞ্জের শিক্ষা কর্মকতা জহুরসাহেব হিন্দু মহিলাদের চাকরির লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন। ডেমাকৈর গ্রামের বিশ্বাস।বাড়ির দুজন মহিলা এভাবে ধর্ষিতা হয়েছে। এই লোক হিন্দু শিক্ষক-শিক্ষিকদের বদলির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।
গোপালগঞ্জের আলতি গ্রামের জগদীশ হালদারের বাড়িতে পুলিশ ও এলাকার সশস্ত্র যুবকেরা একযোগে হামলা চালায়। গোটা বাড়ি তছনছ করা হয়, পরিবারের সদস্যদের মারধোর করা হয় এবং লুটপাট চালানো হয়। ওরা যাবার সময় সবাইকে মেরে ফেলবার হুমকি দিয়ে যায়। ওই বছরের বারেই আগস্ট গ্রামের আরও কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে পুলিশসহ সশস্ত্র যুবকেরা হামলা চালায় এবং কয়েকটি মন্দির ভেঙে ফেলে। আশুতোষ রায়, সুকুমার রায়, মনোরঞ্জন রায়, অঞ্জলি রায়, সুনীতি রায়, বেলা বিশ্বাস তাদের হাতে নিগৃহীত হন। ওরা যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যায় যে এ দেশে কোনও মন্দির থাকতে পারবে না।
গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার উজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খায়ের মোল্লার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৌলবাদীরা ও পুলিশ এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার চালায়। পুলিশ বাসুদেবপুর গ্রামের শিবুর স্ত্রী ও মহাটলি গ্রামের কুমারী অঞ্জলি বিশ্বাসকে ধর্ষণ করে। শিমুলপুর গ্রাম থেকে বারোজনকে সর্বহারা দলের সমর্থক অভিযোগে গ্রেফতার করে প্রচণ্ড নিযাতন চালানো হয়। এরং বড় অঙ্কের টাকা দেবার পর এদের ছাড়া হয়।
বিশে জুন তারিখে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বাস্তুকাঠি গ্রামে পুলিশ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। বাস্তুকাঠি নদীর দুই তীরে পুলিশ হিন্দু সম্প্রদায়ের জমির ফসল। তছনছ করে দেয়। মাঠে যারা কাজ করছিল তাদের আটক করে এবং প্রচুর টাকার বিনিময়ে ছাড়ে। এই গ্রামেই এগারোই জুন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সেবিকা মিনতি রানী তার বৌদি ও ভাইকে নিয়ে বান্ধবী ছবি রানীর সঙ্গে দেখা করতে আদমকাঠি যাওয়ার পথে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে তাদের আটক করা হয় এবং নিযািতনের হুমকি দেওয়া হয়। পরে এক হাজার টাকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বরূপকাঠির পূর্বজলা বাড়ি গ্রামে সুধাংশু কুমার হালদারের মেয়ে চৌদ্দ বছর বয়সের শিউলিকে মামার বাড়ি যাবার পথে রুস্তম আলি নামের এক লোক ধর্ষণ করে। রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে শিউলি। সুধাংশু হালদার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে এ ঘটনার বিচার চাইলে তাকে বলা হয়, ‘এসব সহ্য করতে না পারলে দেশ ত্যাগ করতে হবে। ‘
উনআশি সাতই এপ্রিল তারিখে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ বাজারে ডাঃ শচীন্দ্ৰ কুমার সাহার বসতবাড়ির কাছে মসজিদ নিমণিকে কেন্দ্র করে মসজিদ কমিটির লোকেরা হামলা চালায়, তারা ডাঃ সাহার বাড়ির দরজা জানোলা ভেঙে ফেলে, লুটপাট করে এবং বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা সংলগ্ন মন্দির ভেঙে ধূলিসাৎ করে দেয়। প্রায় দুঘণ্টা ধরে তাণ্ডবলীলা চালিয়ে এগারো লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় ডাঃ সাহার ছেলে কোনও রকমে পালিয়ে গিয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ কর্মকতা পুলিশ ফোর্স নিয়ে গেলে আসামী আলতাফ হোসেন মণ্ডলের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীরা লাঠিসোটা, লোহার রড, ইট পাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়, এতে ক’জন পুলিশ কর্মকতা আহতও হয়। পরে শিবগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা বাদী হয়ে আলতাফ হোসেন মণ্ডল সহ পয়ষট্টি জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, তাদের আটকও করা হয়। কিন্তু উর্ধর্বতন মহলের নির্দেশে আসামীরা ছাড়া পেয়েছে। ডাঃ সাহার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে গোটা এলাকার হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এলাকা ছেড়ে যাবার চিন্তা ভাবনাও করছে।