আমি চাই না।
না চাইলেও শোন, তোমাদের প্রধান ত্রুটি হচ্ছে পুরুষ এবং রমণীর ব্যাপারটি। মানুষকে অসম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এক জন পুরুষ মানুষ হিসেবে যেমন সম্পূর্ণ নয়, তেমনি এক জন রমণীও নয়। দুজনকে একত্রিত করে একটি সম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করা যেতে পারে। বংশবৃদ্ধির পদ্ধতিটি তাতে বদলাবে, নতুন ধরনের মানুষ তৈরি হবে। তাকে তুমি মুক্তমানুষ বলতে পার।
মুক্ত-মানুষ?
হ্যাঁ মুক্ত-মানুষ। সম্পূর্ণ মুক্তির জন্যে অবশ্যি তোমাদের শারীরিক প্রক্রিয়াও বদলে দিতে হবে। বিশেষ করে খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া। খাদ্য থেকে তোমরা শক্তি সংগ্রহ কর, অতি নিম্নস্তরের প্রাণী যা করে। তোমাদের সমস্ত চিন্তা-চেতনা খাদ্য সংগ্রহকে ঘিরে। মেধার কী অপচয়! শক্তি সংগ্রহের প্রক্রিয়াটাকে সহজেই বদলে দেয়া যায়। এমন করে দেয়া যায়, যাতে প্রয়োজনীয় শক্তি তোমরা সূর্য থেকে সংগ্রহ করতে পার।
গাছের মতো?
অনেকটা তাই।
মানুষ হয়ে জন্মেছি, গাছ হবার ইচ্ছা নেই।
সব কিছুই তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
সব কিছু আপনাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই হবে, এ রকম মনে করারও কোনো কারণ নেই।
মানুষের দ্বিতীয় ত্রুটিটি হচ্ছে আবেগ নির্ভর যুক্তি প্রয়োগ। যুক্তি এবং আবেগ দুটি ভিন্ন জিনিস। তোমরা দুটিকে মিশিয়ে অদ্ভুত একটা কিছু তৈরি কর, যা যুক্তিও নয়, আবেগও নয়।
আপনারাও তো তাই করেছেন, পুরুষ এবং রমণী দুটি ভিন্ন জিনিস। দুটিকে মিশিয়ে অদ্ভুত কিছু তৈরি করতে চেষ্টা করেছেন যা পুরুষও হবে না, রমণীও হচ্ছে
তুমি আবার একটি আবেগ নির্ভর যুক্তি প্রয়োগ করলে। তোমাদের তৃতীয় ক্ৰটি হচ্ছে…
ত্রুটির কথা শুনতে শুনতে কান ব্যাপালা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সম্পর্কে ভালো কিছু বলার থাকলে বলুন?
সত্যি শুনতে চাও?
হ্যাঁ চাই।
বিস্ময়কর ক্ষমতা দিয়ে তোমাদের পাঠানো হয়েছে কিংবা বলা যেতে পারে বিবর্তন-প্রক্রিয়ায় অদ্ভুত ক্ষমতাসম্পন্ন এক শ্রেণীর প্রাণের উদ্ভব হয়েছে, যারা তাদের সত্যিকার ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। দুটি জগৎ আছে একটি বস্তুজগৎ, অন্যটা পরা-বস্তুজগৎ। মানুষের ক্ষমতা পরাবস্তুজগতে। অথচ তা সে জানে না। সে মেতেছে বস্তুজগৎ নিয়ে। বাধ্য হয়ে মানুষদের তা করতে হচ্ছে, কারণ শারীরিক প্রক্রিয়ার কারণে মানুষ বস্তুজগতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যে জন্যে পরী-বস্তুজগতের বিপুল সম্ভাবনার কিছুই মানুষ জানে না।
পরা-বস্তুজগৎ ব্যাপারটা কী?
বস্তুজগতের বাইরের জগৎ। শক্তিজগৎ?
না। বস্তু এবং শক্তি আলাদা কিছু নয়। পরা-বস্তুজগড়ৎ হচ্ছে মাত্রাশূন্য জগৎ।
কিছু বুঝতে পারছি না।
বুঝতে পারার কথা নয়। তোমরা বাস করছ তিন মাত্রার জগতে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা—এই মাত্রা যেই জগতে বিলুপ্ত তাকে পরা-বস্তুজগৎ বলতে পার।
বুঝতে পারছি না। আরো সহজ করে বলুন।
এর চেয়ে সহজ করে বলতে পারছি না। বরং তোমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে একটি উদাহরণ দিই। তোমরা একটি অভিযাত্রী দল নিয়ে রওনা হয়েছ। তোমাদের যাত্রা অনন্ত নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে। যার জন্যে তোমরা একটা মহাকাশযান তৈরি করেছ। অথচ যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তোমরা ঘরে বসেই যা জানার জানতে পারতে, কারণ তোমরা মাত্ৰা ভাঙতে পার। এই জিনিসটা তোমাদের অজানা।
আমাদের শিখিয়ে দিন।
শেখানো সম্ভব নয়। আমাদের সেই ক্ষমতা নেই। আমরা চতুর্মাত্রিক জীব। ত্রিমাত্রিক জগতের অর্থে আমাদের ক্ষমতা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু পরাজগতে আমাদের কোনো আধিপত্য নেই। যে কারণে তোমাদের দেখে আমরা একই সঙ্গে বির্ষিত ও ব্যথিত হয়েছি। অকল্পনীয় ক্ষমতা তোমাদের হাতের মুঠোয়, অথচ তোমরা কত অসহায়। সামান্য একটি ব্ল্যাকহোলের খপ্পরে তোমাদের মহাকাশযান পড়ল, তোমরা সেই ব্ল্যাকহোলের কবল থেকে বেরুতে পিরছ না। অথচ ইচ্ছা করলেই নিমিষের মধ্যে তোমরা নতুন একটি পৃথিবী তৈরি করতে পার, একটি নক্ষত্রপুঞ্জ তৈরি বা ধ্বংস করতে পার।
আপনি এসব কী বলছেন।
যা সত্যি তাই বলছি। আমরা পরিব্রাজক, আমাদের এক মুহূর্তের জন্যে থেমে থাকার কথা নয়। আমরা থেমে আছি তোমাদের জন্যেই। তোমাদের বিস্ময়কর ক্ষমতা আমাদের অভিভূত করেছে। এই সঙ্গে বিষাদগ্ৰস্তও হচ্ছি। মেধার কী বিপুল অপচয়!
কেন জানি আপনার কথা ঠিক বিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না।
মনে না হবার কোনো কারণ নেই। তোমাদের সঙ্গে এক জীববিজ্ঞানী আছে, যার নাম ইনো। সে নিজেই তার পছন্দমতো একটি জগৎ তৈরি করেছে। অথচ তার ধারণা আমরা তা তৈরি করেছি। আমরা করি নি। আমরা শুধু পরাবস্তু-ক্ষমতার প্রয়োগর জন্যে পরিবেশ তৈরি করেছি। মেয়েটিকে সীমাহীন নিঃসঙ্গতায় ঠেলে দিয়েছি। যে কারণে সে নিঃসঙ্গতা থেকে বাঁচার জন্যে নিজেই নিজের একটি জগৎ তৈরি করেছে। তোমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি দেখেছ।
সেই জগৎ কি মায়া না সত্যি?
সত্যি তো বটেই। এখন কি তুমি বুঝতে পারছ কী পরিমাণ ক্ষমতা তোমাদের আছে?
বুঝতে চেষ্টা করছি।
তুমি বারবার তোমার পৃথিবীতে ফিরে যাবার কথা বলছ। আমাদের বলার তো কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি তো নিজে ইচ্ছে করলেই ফিরে যেতে পার। কিংবা অবিকল সেই পৃথিবীর মতো পৃথিবী তৈরি করতে পার তোমার চারপাশে।
আমার অন্য সঙ্গীরা কী করছে? তারা কি এসব জানে?