এই জন্যই মহাভারত বলিলেন, “পূর্বে জগতে একমাত্র বর্ণ ছিল, তারপর কর্মক্রিয়াবিশেষবশতঃ চতুর্বর্ণ প্রতিষ্ঠিত হইল।”
একবর্ণমিদং পূর্বং বিশ্বমাসীদ যুধিষ্ঠির।
কর্ম-ক্রিয়াবিশেষেণ চতুর্বর্ণং প্রতিষ্ঠিতম্।।
শান্তিপর্বের ১৮৮ অধ্যায়ে দেখা যায় মহর্ষি ভৃগুরও বর্ণের উৎপত্তি সম্বন্ধে এই একই মত। বিষ্ণুপুরাণে চতুর্থাংশে কয়েকটি অধ্যায়ে দেখান হইয়াছে মনুর নানা পুত্র হইতেছে নানা জাতির উৎপত্তি।
বিভিন্ন প্রদেশের পুরাণে আবার জাতিসৃষ্টি সম্বন্ধে বিভিন্ন রকমের কথা পাওয়া যায়। মহিশূর প্রদেশের একটি পুরাণ কথাতে পাই যে বৈশ্যবংশ নিজপাপে ব্রহ্মার শাপে নির্মূল হইয়া যায়। পরে বল্কল ঋষি কুশনির্মিত সহস্য মানুষকে প্রাণ দান করিয়া সহস্র গোত্রের বৈশ্য সৃষ্টি করিলেন।(১) কাজেই মানুষ ও জাতি সৃষ্টি সম্বন্ধে আমাদের শাস্ত্রে অসংখ্য মত রহিয়াছে। ভাগবতেও দেখিতে পাই,
এক এব পুরা বেদঃ প্রণবঃ সর্ববাত্ময়ঃ।
দেবো নারায়ণো নান্য একাগ্নির্বর্ণ এব চ।।–৯, ১৪, ৪৮
শ্রীধর স্বামীর ভাষ্যানুসারে অর্থ পাই যে পূর্বে সর্ববাঙ্ময় প্রণবই একমাত্র ছিল বেদ। একমাত্র দেবতা ছিলেন নারায়ণ, আর কেহ নহেন। একমাত্র লৌকিক অগ্নিই ছিলেন অগ্নি, এবং বর্ণ ছিল যাহার নাম হংস।
কারণ পুরাণেও আছে,
আদৌ কৃতযুগে বর্ণো নৃণাং হংস ইতি স্মৃতম্।
আদিতে সত্যযুগে মানুষের হংস নামেই একমাত্র জাতি ছিল।
সেই সত্যযুগে পাপপুণ্যের সৃষ্টি হয় নাই, তখন বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা হয় নাই, কাজেই তখন বর্ণসঙ্করও ছিল না!
অপ্রবৃত্তিঃ কৃতযুগে কর্মণোঃ শুভপাপয়োঃ।
বর্ণাশ্রমব্যবস্থাশ্চ ন তদাসন্ ন সঙ্করঃ।।–বায়ুপুরাণ, ৮, ৬০
—————-
১. Nanjun Dayya Ananta Krishna Iyer, ‘Mysore Tribe and Caste’, Vol. IV. P. 403