বেবিট্যাক্সি বের করা। তোর মামিকে হাসপাতালে নিতে হবে। হঠাৎ তার পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। ব্যথায় হাত-পা নীল হয়ে যাচ্ছে! বুঝলাম না। কী ব্যাপার।
ফতে বলল, কোন হাসপাতালে যাবেন মামা?
আরো গাধা গাড়ি বের কর আগে। বেহুদা কথা বলে সময় নষ্ট।
ফতে বলল, ব্যথা থাকবে না মামা। কমে যাবে।
বদরুল ক্ষিপ্ত গলায় বললেন, তুই কি গণক এসেছিস? গান গুনে বলে দিলি ব্যথা কমে যাবে। কথা বলে সময় নষ্ট। গাড়ি স্টার্ট দে।
ফতে গাড়ি স্টার্ট দিল। বদরুল তার স্ত্রীকে হাত ধরে নিচে নিয়ে এলেন। তারা গাড়িতে ওঠার পরপরই ফতের মামি বলল, ব্যথা কমে গেছে।
বদরুল বললেন-কতটুকু কমেছে?
অনেক কম। বলতে গেলে ব্যথা নাই।
একটু আগে কাটা মুরগির মতো ছটফট করছিলে এখন বলছ ব্যথা নাই।
হাসপাতালে যাব না।
আবার যদি শুরু হয়?
শুরু হলে তখন যাব।
বদরুল স্ত্রীকে হাত ধরে নামালেন। ফতের দিকে তাকিয়ে বললেন-তুই ঘুমাবি না। তোর মরণ ঘুম। একবার ঘুমালে কার সাধ্য তোকে ডেকে তোলে। তুই জেগে বসে থাকিবি। তোর মামির ব্যথা আবার উঠবে বলে আমার ধারণা।
ফতে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ুল। এবং ফজরের আজান না পড়া পর্যন্ত জেগে বসে রইল। অনেকের রাত জগতে কষ্ট হয়। ফতের কখনো হয় না। বরং রাত জাগতে তার ভালো লাগে। রাতে নানান চিন্তা করতে তার ভালো লাগে। এই চিন্তা দিনে কখনো করতে ভালো লাগে না। দিনে অবিশ্যি চিন্তাগুলি মাথায় আসেও না। চিন্তাগুলি রাতের। রাত যত গভীর হয় চিন্তাগুলিও গভীর হয়।
ফতের আশপাশের সব মানুষকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করে। কাকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায়-এই চিন্তা। যেমন মামা বদরুল আলম। তাকে নানানভাবে শাস্তি দেওয়া যায়-নরম শাস্তি, নরমের চেয়ে একটু বেশি-কঠিন শাস্তি। তবে মামার মানসিক অবস্থা এইরকম যে-যে কোনো শাস্তিই তার জন্যে কঠিন শাস্তি। ফতে একেক সময় একেক ধরনের শাস্তির কথা ভাবে। গতরাতে ভেবেছে সে তার মামিকে নিয়ে কিছু আজেবাজে কথা লিখে বেনামে মামার কাছে একটা চিঠি লিখবে। এই শাস্তিটা হবে খুবই কঠিন। কারণ তার মামার অসংখ্য দোষ থাকলেও তিনি তাঁর স্ত্রীকে পাগলের মতো ভালবাসেন। ভালবাসেন বলেই সন্দেহের চোখে দেখেন। স্ত্রীকে একা কোথাও যেতে দেবেন না। সব সময় নিজে সঙ্গে যাবেন। তার স্ত্রীকে কেউ টেলিফেন করলে তিনি তৎক্ষণাৎ একতলায় চলে যাকেন। অতি সাবধানে একতলার টেলিফোন রিসিভার কানে নিয়ে শুনবেন কে টেলিফোন করেছে। একতলাক্স টেলিফোন এবং দোতলার টেলিফোন প্যারালাল কানেকশন আছে। তার স্ত্রীর নামে যেসব চিঠি আসে তার প্রত্যেকটা তিনি আগে পড়ে তারপর স্ত্রীর হাতে দেন। এই যখন অবস্থা তখন যদি তার কাছে একটা চিঠি আসে যার বিষয়বস্তু ভয়াবহ তখন কী হবে? চিঠিটা এরকম হতে পারে–
জনাব বদরুল আলম সাহেব, সালাম, পর সমাচার, জ্যোমি আপনাকে কিছু গোপন বিষয় জানাইবার জন্য এই পুত্ৰ লিখিতেছি। বিষয়টি অত্যধিক গোপন বুলিয়া আমি আমার নিজের পরিচয়ও গোপন রাখলাম। এই ক্ৰটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবুল-ইহাই আমার কামনা। যাহা হউক এখন মূল বিষয়ে আসি–আপনার স্ত্রী তসলিমা খানম বিষয়ে কিছু কথা। তসলিমা খানম যখন বিদ্যাসুন্দরী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাষ্ট্রে তখন জনৈক তরুণের সঙ্গে তাহার অতীব ঘনিষ্ঠত হয়। য়ে ঘনিষ্ঠতার কথা ভাষায় বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নহে। উক্ত তরুণ দুষ্ট প্ৰকৃতির ছিল, সে তসলিমা খানমের সহিত তাহার ঘনিষ্ঠতার কিছু ছবি গোপনে তাহার আরেক দুষ্ট বন্ধুর সহায়তায় তোলে। ছবির সর্বমোট সংখ্যা একুশ। এই একুশটি ছবির মধ্যে পাঁচটি ছবি এতই কুরুটিপূর্ণ যে, যে কোনো মানুষ শিহরিত হইবে। জনাব আপনাকে উত্তেজিত এবং ছবির কারণে ভীত হইতে নিষেধ করিতেছে। কারণ আমি সমুদয় ছবির নেগেটিভসহ সঞ্চগ্ৰহ কারয়া নষ্ট কবিয়া দিয়াছি। কাজেই উক্ত ছবি দেখাইয়া কেহই অৰ্থ সংগ্রহের জন্যে আপনাকে চাপ দিতে পারিবে না। আপনাকে এই তথ্য জানাইয়া রাখিলাম। এখন কেহ যদি ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ছবির কথা বলিয়া আপনার নিকট হইতে অর্থ গ্ৰহণের চেষ্টা করে আপনি ইহাকে মোটেই আমল দিবেন না।
হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগিতেছে আমি এই কাজটি কেন করলাম? আমি কাজটি করলাম। কারণ আমার কাছে মনে হইয়াছে ইহা একটি সৎকর্ম। ইহকালে আমি সৎকর্মের কোনো প্রতিদান আশা করি না। কিন্তু পর্যুকালে আমি এই সৎকর্মের প্রতিদান অবশ্যই পাইব।
এখন জনাব আপনার নিকট আমার একটি আবদার—আমি আপনার মঙ্গলের জন্যে একটি কঠিন কর্ম কবিয়ছি। আমি আশা করি তাহার প্রতিদানে আপনি আমার একটি আবদার রক্ষা করিবেন। আবদারটি হইল—এই বিষয়ে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা করিবেন না। উঠতি বয়সে তিনি একটি ভুল করিয়াছিলেন-সেই ভুল ক্ষমা করবেন। আল্লাহপাক ক্ষমা পছন্দ করেন।
আরজ ইতি
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী জনৈক মাদান।
এই এক চিঠিতেই চৌদ্দটা বেজে যাবার কথা। শাস্তির শুরু। তারপর আস্তে আস্তে শাস্তির ডোজ বাড়াতে হবে।
ফতে ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল। মিথ্যা চিঠি মানুষ বিশ্বাস করে না। মিথ্যা কখনো টেকে না। খুব বেশি হলে সাত দিন। মিথ্যার আয়ু অল্প। শাস্তি দিতে হলে সত্যি দিয়ে শাস্তি দিতে হবে। সেই ধরনের সত্য কিছু বিষয় ফতে জানে। অন্যভাবে জানে! এমনভাবে জানে যার সম্পর্কে ধারণা করা মানুষের জন্যে কঠিন। বেশ কঠিন। ফতে ক্ষমতাধর মানুষ। তার ক্ষমতা অন্য রকম ক্ষমতা।