ফতে বলল, কীভাবে?
আমি এক ঘণ্টা লঞ্চঘাটে দাঁড়িয়ে ছিলাম না। আমি পুলিশে খবর দিয়েছি।
আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।
ফতে আমি তো বোকা না। তুমি আমাকে বোকা ভাবলে কেন? তোমার মতো ক্ষমতা আছে এমন একজন রোগীর আমি চিকিৎসা করেছিলাম, সেও আমাকে বোকা ভাবত। এখনো ভাবে। এজাতীয় ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের প্রধান দুর্বলতা হল এরা অন্য সবাইকে বোকা ভাবে! তুমি কি এখনো আমাকে বোকা ভাবছ?
ফতে শীতল গলায় বলল, আপনি মিথ্যা কথা বলছেন, আপনি পুলিশকে খবর দেন নাই।
মিসির আলি বললেন, ফতে তুমি বোধ হয় লক্ষ কর নি। ইয়াসিনের হাতে যে বোতলটা ছিল-সে বোতলটা এখন আমার হাতে। পুলিশের বাঁশির আওয়াজ তুমি এক্ষুনি শুনবে।
মিসির আলির কথা শেষ হবার আগেই-পরপর দুবার বাঁশি বেজে উঠল। নৌকা দুলে উঠল। ফতে ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে উঠল।
মিসির আলি বললেন, এটা পুলিশের বাঁশির শব্দ না। লঞ্চ ছাড়ছে-ভেঁপু দিচ্ছে। ফতে তুমি ভয়ঙ্কর ভয় পেয়েছ।
ফতে কঁপা কঁপা গলায় বলল, আপনি পুলিশে খবর দেন নাই।
মিসির আলি বললেন, তুমি ঠিকই বলছ। আমি পুলিশে খবর দেই নি। পুলিশের কথা বলেছি তোমার ভিতর ভয়ের বীজ ঢুকিয়ে দেবার জন্যে। ভয়ের বীজ ঢুকে গেছে। সত্যি করে বল ফতে তোমার ভয় লাগছে না?
না।
মিথ্যা কথা বলার দরকার নেই ফতে। আমি যেমন সত্যি কথা বলছি তুমিও সত্যি কথা বল। তীব্ৰ ভয়ে অস্থির হলে মানুষের যেসব শারীরিক পরিবর্তন হয় তার সবই তোমার হচ্ছে। তোমার শরীর কাঁপছে। তোমার চোখের মণি বড় বড় হয়ে গেছে। পুলিশকে তো আমি খবর দেই নি। তুমি কাকে ভয় পাচ্ছ?
আপনাকে।
আমার হাতে এসিডের বোতল এই জন্যে ভয় পাচ্ছ? শোন ফতে আমার পক্ষে কোনো অবস্থাতেই কারো গায়ে এসিড ছুড়ে ফেলা সম্ভব না। এই দেখ বোতলটা আমি পানিতে ফেলে দিচ্ছি। তাতেও কিন্তু তোমার ভয় কমবে না।
ফতে ঢোক গিলল। মিসির আলি নামের মানুষটা সত্যি সত্যি বোতলটা ফেলে দিয়েছে। মানুষটার দুর্দান্ত সাহস। এত সাহস সে পেল কোথায়। ফতে যেখানে বসেছে তার নিচেই বড় একটা ধারালো ছুরি আছে। হাত নামিয়ে সে কি ছুরিটা নেবে।
ফতে!
জি।
তুমি ভয়ঙ্কর অসুস্থ একজন মানুষ। তোমার চিকিৎসা হওয়া দরকার। প্রতিমার সাহায্য নিয়ে আমি তোমার চিকিৎসা করার চেষ্টা করতে পারি। তুমি কি চাও আমি তোমার চিকিৎসা করি?
না।
তোমাকে তো ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। ফতে। তোমাকে ছেড়ে দিলে তুমি ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করবে। আমি তা হতে দিতে পারি না।
লুনা আরেকটা লজেন্সের খোসা ছাড়িয়ে ফতের দিকে ধরে আছে। মিসির আলি বললেন, ফতে লজেন্সটা ওর হাত থেকে নাও। লজেন্স না নেওয়া পর্যন্ত সে হাত উঁচু করেই রাখবে।
ফতে লজেন্স নিল। মিসির আলি বললেন, চল নৌকার পাটাতনে গিয়ে দাঁড়াই। তুমি বলেছিলে মাঝনদীতে সিগারেট টানতে খুব মজা-দেখি আসলেই মজা কি না। ফতে কোনোরকম আপত্তি করল না, মিসির আলির সঙ্গে নৌকার পাটাতনে এসে দাঁড়াল।
মিসির আলি বললেন, ফতে তুমি কি পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার কথা চিন্তা করছ?
ফতে চমকে উঠে বলল, আপনি কীভাবে বললেন?
মিসির আলি বললেন, অনুমান করে বলছি। আমার কারো মাথায় ঢোকার ক্ষমতা নেই। তবে আমি খুব ভালো অনুমান করতে পারি। সেই অনুমানটা মাথায় ঢোকার মতোই। ফতে তুমি পানিতে ঝাঁপ দিও না। পানি অতিরিক্ত ঠাণ্ডা হবার কথা। আর স্রোতও বেশি। তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
মিসির আলি সিগারেট ধরলেন। ফতে ঠিকই বলেছে মাঝনদীতে সিগারেট ধরাধোর আনন্দই আলাদা। আনন্দের সঙ্গে তিনি গাঢ় বিষাদও অনুভব করছেন। বিষাদের কারণটা তিনি ধরতে পারছেন না। নৌকার ভেতরে লুনা মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। আশ্চর্য প্রতিমাও ঠিক এ রকম করেই হাসে।