এখন ঢুকে পড়ুন।
ডাক্তারের ঘরগুলি আলো ঝলমলে হয়। রুগীর চোখ মুখ দেখতে হয়।
জিভ দেখতে হয়। অল্প আলোয় সম্ভব না। সাইকিয়াট্রিষ্টের ঘর বলেই হয়তো আলো কম। ডাক্তারী টেবিলের ওপাশে শায়লা বসে আছে। মানুষের চেহারায় বয়সের ছাপা পড়ে। জোয়ার্দার অবাক হয়ে দেখলেন শায়লার চেহারায় বয়সের কোনো ছাপ পড়ে নি। আগে রোগা পটকা ছিল এখন স্বাস্থ্যু ভাল হয়েছে। গায়ের চামড়া উজ্জ্বল হয়েছে। রঙিন স্কার্কে শায়লার মাথার চুল পেছন দিক থেকে বাধা। তাকে খানিকটা ইরানি মেয়ের মতো লাগছে। ডাক্তার শায়লা বললেন, আপনার নাম জোয়ার্দার?
জ্বি।
কি প্রবলেম নিয়ে এসেছেন বলুন। গুছিয়ে বলার চেষ্টা করুন কিছু যেন বাদ না পড়ে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমাদের যখন গুছিয়ে কথা বলা দরকার তখন টেলিগ্রাফের ভাষায় কথা বলি। আর যখন সারা সংক্ষেপ বলা দরকার তখন পাঁচ শ, পৃষ্ঠার উপন্যাস শুরু করি। আপনি কিছু মনে করবেন। না। আমার ধুমপান করার অভ্যাস আছে। আমি সিগারেট টানতে টানতে আপনার কথা শুনিব। আপনার কোনো সমস্যা আছে?
জ্বি না।
জোয়ার্দারের বুক থেকে পাথর নেমে গেছে শায়লা তাকে চিনতে পারে নি। চিনতে না পারারই কথা। অল্প বয়সেই তার চুল পেকেছে। মাথায় টাক পড়েছে।
শায়লা সিগারেটে টান দিতে দিতে বললেন, চুপ করে আছেন কেন? সমস্যা বলুন।
আমার ঘরে একটা বিড়াল ঢুকে।
সমস্যা এই না। আরো আছে?
এইটাই সমস্যা।
ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন?
জ্বি।
একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে বিড়াল ঢুকা সমস্যা হবে কেন? এরা খাদ্যের সন্ধানে ঢুকবে। আরামের সন্ধানেও ঢুকবে। বিড়াল আরাম পছন্দ করে। সে কি মাঝে মধ্যে আপনার পাশে আরাম করে শুয়ে হাই তুলে?
জ্বি।
যখন টিভি চলে। তখন টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে?
জ্বি।
ব্যাপারটা যে খুবই স্বাভাবিক। আপনি বুঝতে পারছেন?
জ্বি।
এমন যদি হতো বিড়ালটা টিভি দেখতে দেখতে টিভির নাটক নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা শুরু করত তাহলে ছিল সমস্যা। তখন আমার কাছে আসার একটা অর্থ হতো। এখন আপনি এসেছেন। শুধু শুধু কিছু টাকা খরচ করবার জন্যে। চা বা কফি কিছু খাবেন। আমার এখানে চা-কফির ব্যবস্থা আছে।
না।
বিয়ে করেছেন নিশ্চয়ই?
জ্বি।
ছেলেমেয়ে কি?
একটাই মেয়ে। নাম অনিকা। আমি এখন যাই?
না। আমি একটা সিগারেট শেষ করেছি। দ্বিতীয় সিগারেট ধরাব। সেটা শেষ করব তারপর যাবেন।
জ্বি আচ্ছা।
শায়লা দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, হাস্যকর বিড়ালের গল্প নিয়ে আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন। এখন আমি সেই ব্যাখ্যা করব। দয়া করে লজ্জা পাবেন না।
আপনার খুবই ইচ্ছা করছিল আমার সঙ্গে দেখা করার। আপনি লাজুক মানুষ কোনো অজুহাত খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিড়ালের একটা গল্প অনেক চিন্তা ভাবনা করে বের করলেন। হয়েছে?
জোয়ার্দার মাথা নিচু করে থাকলেন। কিছু বললেন না। একবার ভাবলেন বলেন, বিড়ালের গল্পটা সত্যি। তারপর মনে হলো থাক।
শায়লা বললেন, আপনি যে মনে করে আমার জন্যে রসমালাই নিয়ে এসেছেন। এতে আমি বেশ অবাক হয়েছি। রসমালাইয়ের অংশটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আপনাকে নিয়ে ব্ৰহ্মপুত্রের পাড় ধরে হাঁটছি। লজ্জায় আমি অস্থির। হঠাৎ কথা নাই বার্তা নাই আপনি বললেন, তোমার কি মিষ্টি পছন্দ? আমি কোনো কিছু না ভেবেই বললাম, রসমালাই। রসমালাই কেন, কোনো মিষ্টিই আমার পছন্দ না।
জোয়ার্দার অস্বস্তির সঙ্গে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, শায়লা যাই?
শায়লা হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে বললেন, আচ্ছা। আবার যদি কোনো কারণে আমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে বা আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে, সরাসরি চলে আসবেন। বিড়ালের কাহিনী ফাদার কিছু নাই।
আচ্ছা।
সঙ্গে ট্রান্সপোর্ট আছে? ট্রান্সপোর্ট না থাকলে বলুন আমার গাড়ি পৌঁছে দেবে।
জোয়ার্দার বললেন, লাগবে না।
প্রচন্ড অস্বস্থি নিয়ে জোয়ার্দার বাড়ি পৌঁছলেন। দরজা খুলে বাড়িতে ঢোকার পর অস্বস্থি কাটল। খালি বাড়ি। বসার ঘরে বাতি জুলছে। সোফায় বিড়ালটা শুয়ে আছে। তাকে দেখে একবার মাথা তুলে আবার আগের অবস্থায় চলে গেল। মনে হয়। ঘুমাচ্ছে। টিভিতে হিন্দি সিরিয়েল হচ্ছে। সিরিয়ালে লম্বা গলার একটা মেয়ে সুন্দর করে কাঁদছে। তার সামনে কঠিন চেহারার একজন যুবা পুরুষ। সে মেয়েলি গলায় কথা বলছে।
টিভি কে ছেড়েছে? বিড়ালটা নিশ্চয়ই না। জামালের কান্ড। জামালের কথাটা শায়লার বলা উচিত ছিল। লাভ হতো না। বিড়ালের ব্যাপারটা শায়লা যে ভাবে উড়িয়ে দিয়েছে জামালেরটাও উড়িয়ে দিবে।
জোয়ার্দার ডাকলেন, জামাল?
জামাল জবাব না দিয়ে শোবার ঘরের মুখে এসে দাঁড়াল।
কখন এসেছিস?
জামাল জবাব দিল না হাসল। জোয়ার্দার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোদের দুজনকে নিয়ে বিরাট দুঃশ্চিন্তায় আছি। দেখা যাবে শেষটায় আমি পাগল হয়ে যাব। আমাকে পাবনা পাগলা গারদে নিয়ে আটকে রাখবে। পাগলা পারদ চিনিস?
জামাল না সূচক মাথা নাড়ল।
জোয়ার্দার উঠে পড়লেন। তাঁকে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সহজ কোনো আইটেমে যেতে হবে। দুই মুঠ ভাত, এক মুঠ ডাল, এক চিমটি লবন আর একটা ডিম দিয়ে জাল। শেষটায় তেল দিয়ে বাগার।
জোয়ার্দার রান্না বসিয়েছেন। তার পাশে জামাল দাঁড়িয়ে আছে। সে উৎসুখ চোখে দেখছে। বিড়ালটা খাবার টেবিলে শুয়ে ঘুমুচ্ছে।
জোয়ার্দার জামালের দিকে তাকিয়ে বললেন, কিছু খাবি?
জামাল না সূচক মাথা নাড়ল। জোয়ার্দার পুফির দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই কিছু খাবি? পুফি মাথা তুলে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে নিলো।