তিনি এখন কী করবেন? ছবি দেখতে থাকবেন? নাকি উঠে পাশের ঘরে যাবেন?
জোয়ারদার উঠে দাঁড়ালেন।
জামাল বিড়ালটাকে নিয়ে খেলছে। টেনিস বল দূরে ছুড়ে মারছে। বিড়াল মাথা দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে বলটা জামালের কাছে নিয়ে আসছে। একেকবার বল আনছে আর জামাল বলছে, কুফি ভালো। কুফি ভালো।
এমন কি হতে পারে জামাল যে জগৎ থেকে এসেছে, কুফিও সেই জগৎ থেকে এসেছ? কুফি এ পৃথিবীর কোনো বিড়াল না।
জোয়ারদার কাপা কাপা গলায় বললেন, জামাল।
জামাল ফিরে তাকাল। জোয়ারৰ্দারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার খেলায় মগ্ন হয়ে গেল। জোয়ারদার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ছবি দেখতে গেলেন।
ছবির মূল নায়ককে এখন ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে। ছবির মাঝখানে নায়ক ফাঁসিতে ঝুললে বাকি ছবি কিভাবে চলবে কে জানে?
জোয়ারদার ছবিতে পুরোপুরি মন দিতে পারছেন না। জামালের হাসি তাকে বারবার চমকে দিচ্ছে।
এর মধ্যে মোবাইল ফোন বাজছে। সুলতানা ফোন করেছেন। তার গলার স্বরে অপরাধী অপরাধী ভাব।
সুলতানা বলল, এই কী করছ?
ছবি দেখছি।
কী ছবি?
নাম বলতে পারব না। ওয়েস্টার্ন ছবি।
ছবিতে এখন কী দেখাচ্ছে?
বারের দৃশ্য। দুজন মগভর্তি করে বিয়ার খাচ্ছে।
বাচা একটা ছেলের হাসির শব্দ পাচ্ছি। সেও কি বারে?
জোয়ার্দার ইতস্তত করে বললেন, হঁ।
তোমাকে একটা জরুরি বিষয়ে টেলিফোন করেছি। রঞ্জু প্ল্যান চেঞ্জ
করেছে।
ও, আচ্ছা।
রঞ্জু ঠিক করেছে কুমিল্লা যাবে না। সরাসরি কক্সবাজার যাবে। সাইমন হোটেলে বুকিং দিয়ে ফেলেছে। ওযে কেমন পাগল টাইপ তুমিতো জান।
ভালো তো।
সুলতানা বললেন, কয়েক দিন একা থাকতে হবে, তোমার কষ্ট হবে, সরি। আমি রাজি হতাম না। তোমার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছি। সে যে কী খুশি৷ আমি মনে হয় তোমার ছবি দেখায় ডিসটার্ব করছি।
হুঁ।
তাহলে রাখি?
আচ্ছা।
নিয়মের ব্যতিক্রম করে জোয়ার্দার পুরো ছবি দেখলেন। জামালের হাসির শব্দ এখনো পাওয়া যাচ্ছে। জোয়ার্দার ঘুমুতে গেলেন রাত ১২টায়।
জামাল এখন বিড়াল নিয়ে বিছানায় উঠেছে। খেলার ভঙ্গি পাল্টেছে। জামাল বিড়ালের সামনে কোলবালিশ ধরছে। বিড়াল বালিশে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। নখ দিয়ে আঁচড়াচ্ছে। কোলবালিশ থেকে বের হওয়া তুলা ঘরময় ছড়ানো।
জোয়ার্দার বিরক্ত মুখে বললেন, অন্য ঘরে যাও। আমি এখন ঘুমাব।
জামাল সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে নেমে পাশের ঘরে চলে গেল। বিড়ালটা গেল জামালের পেছনে পেছনে।
বিড়াল এবং জামালের বিষয়টা নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলা জরুরী। এটা তার মানসিক রোগ। এইটুকু বুঝার বুদ্ধি তার আছে। মানসিক রোগের কোনো ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলাই ভাল। তার পরিচিত একজন আছে ডাক্তার শায়লা। সে বেশ বড় ডাক্তার। বিলেত বা আমেরিকা থেকে ডিগ্ৰী নিয়ে এসেছেন। এখন এ্যাপোলো হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান।
শায়লা তার দূর সম্পর্কের বোন।
ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে যখন আই এস সি পড়তো তখন শায়লার জোয়ার্দারের সঙ্গে বিয়ে পাকাপাকি হয়। পানচিনি হয়ে যায়। পানচিনি হবার পরদিন দুজন মিলে ব্ৰহ্মপুত্ৰ নদীর পাশ দিয়ে পঁচিশ মিনিট হেঁটেছিলেন। শায়লা লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। কোন কথা না পেয়ে তিনি একবার বললেন, তোমার কি মিষ্টি পছন্দ?
নদীর পাড় দিয়ে হাঁটাহাটির পরদিন বিয়েটা ভেঙ্গে যায়।
জোয়ার্দারের বড় মামা হৈচৈ শুরু করলেন। মেয়ে যার কাছে প্ৰাইভেট পড়ে তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক। একবার সন্তান খালাস করিয়েছে। তার কাছে প্রমাণ আছে। ইত্যাদি।
জোয়ার্দার নির্বিরোধী ভীরু মানুষ। বিয়ে ভেঙ্গে যাবের পর সে কিন্তু ভাল সাহস দেখালো। সে শায়লার সঙ্গে দেখা করলো এবং বলল, বড় মামা খামাখা হৈচৈ করছেন। এটা তার স্বভাব। তুমি কিছু মনে করো না। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তুমি রাজি থাকলে চল কাজি অফিসে যাই বিয়ে করি।
শায়লা কঠিন গলায় বলল, না।
পুরানো দিনের কথা মাথায় রেখে লাভ নেই। শায়লার কাছে যাওয়া যায়। তিনিতো তার প্রেমিকার কাছে যাচ্ছেন না। ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন।
ডাক্তারের ওয়েটিং লাউঞ্জ
ডাক্তারের ওয়েটিং লাউঞ্জে খানিকটা লজ্জিত এবং বিব্রত মুখে জোয়ার্দার বসে আছেন। তার কোলে এক প্যাকেট মাতৃভান্ডারের রসমালাই। হাতে সবুজ রঙের কার্ড সেখানে ইংরেজীতে লেখা Please wait.
এর নিচে লেখা 17.
তিনি অপেক্ষা করছেন। হাসপাতাল হচ্ছে মশা মাছি মুক্ত এলাকা। কিন্তু তার রসমালাইয়ের প্যাকেটের উপর স্বাস্থ্যবান দুটা নীল মাছি উড়াউড়ি করছে। রুগীদের কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে।
রসমালাই সঙ্গে করে আনা মস্ত বোকামী হয়েছে। তিনি সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন নি। ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর রোগ নিয়ে পরামর্শ করতে এসেছেন।
ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্ট জোয়ার্দারের দিকে তাকিয়ে বলল, রেডি হয়ে যান। নেক্সট আপনি।
জোয়ার্দার ভেবে পেলেন না রেডি হবার মানে কি। উঠে দাড়াতে হবে। দরজার সামনে যেতে হবে?
ভিজিটের টাকা দিন। পনেরোশ টাকা। হাইট আর ওজন মাপুন। ব্লাড পেশার মাপুন।
হাতে কি?
মিষ্টির প্যাকেট।
মিষ্টির প্যাকেট টেবিলে রেখে ওজন মাপুন। মিষ্টির প্যাকেট কার জন্যে?
ডাক্তারের জন্যে। আপনারাও খাবেন।
এসিসটেন্ট মুখ বিকৃত করে বলল, ডাক্তারের জন্যে আনবেন ভিজিট। মিষ্টি লাউ কুমড়া এইসব না।
জ্বি আচ্ছা।