আমি এক মানুষ আমার প্রয়োজন সামান্য। একদিনের কথা, মধ্য দুপুর। বনের ভেতর থেকে মৌচাক ভেঙ্গে লগা হাউসে ফিরছি। আমার সঙ্গে লিং টেইল নেই। সে খরগোস তাড়া করতে গিয়ে কাটা বিধে ব্যথা পেয়েছে। আমি মধু নিয়ে যাচ্ছি তার ক্ষত স্থানে লাগানোর জন্যে।
দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকে আমি হতভম্ব। সাত আট বছরের একটি কিশোৱী লং টেইলের গায়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। অবিকল কিশোরীর মত দেখতে এক তরুণী ফায়ার প্লেসের সামনে কাঠ জড় করছে। এরা দুজন আমাকে দেখে অবাক হল না বা চমকাল না। মেয়েটি বলল, পাপা মধু এনেছ? লং টেইলের কাটা জায়গায় আমি মধু দিয়ে দেব।
এলিজাবেথের জন্যে ড্রেস কিনতে হবে।
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে এলিজাবেথ নামের এই কিশোরী আমার মেয়ে। তরুণী আমার স্ত্রী এটা কি করে সম্ভব?
হলি ফাদার এবং হোলি ঘোস্টের নামে শপথ আমি যা লিখছি সবই সত্য। এর মধ্যে কোনো অতিরঞ্জন নেই।
অবিবাহিত মানুষের লগ হাউস আর বিবাহিত মানুষের লগ হাউসে কিছু পার্থক্য থাকে। এখন আমার লগ হাউস বিবাহিত মানুষদের ঘর ভর্তি মেয়ে এবং তার মেয়ের জিনিষ।
আমি এদের কাছে নিজের কথা কিছুই বললাম না। এদেরকে আমি সঙ্গে সঙ্গে গ্ৰহণ করে নিলাম। আমার স্ত্রীর নাম মার্থ। তার গর্ভে আমার একটি পুত্ৰ সন্তান হল। পুত্রের নাম দিলাম মার্শাল।
এক শীতের রাতের কথা। প্রচুর বরফ পড়ছে। মার্শাল তার বোনের কোলে এলিজাবেথ ফায়ার প্লেসে আগুন দিয়েছে। আগুনের পাশে লং টেইল থাবা মেলে বসে আছে। লং টেইল জীবনের শেষ প্রান্তে উপস্থিত।
সে মৃত্যুর অপেক্ষায়। আমার সঙ্গে শিকারে যাওয়া বন্দুক! আমি বন্ধুক নিয়ে বের হচ্ছি। ঘরে মাংস নেই। হরিণ পাওয়া গেলে হরিণের মাং বরফের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে হবে। শীতের খাদ্য সঞ্চয়।
মার্থী বলল, যে ভাবে বরফ পড়ছে তুমি যেও না। ফায়ার প্লেসের সামনে মার্শলিকে কোলে নিয়ে বস। এসো আমরা গল্প করি।
আমি তার কথা শুনলাম না। বন্দুক নিয়ে বের হলাম। একটা বন্য ছাগল মেরে ঘরে ফিরে দেখি কেউ নেই। শুধু লং টেইল মরে পড়ে আছে। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে না। আমার ছেলে মেয়ে এবং তাদের মার কোনো কাপড় চোপড়ও নেই। আমি ফিরে গেছি। অবিবাহিত পুরুষের জীবনে।
এর পত্নী আমি আর পরিবারের দেখা পাই নি। বৎসরের পর বৎসর অপেক্ষা করেছি। কোনো একদিন লগা হাউসে ঢুকে দেখব সবাই আছে।
শায়লা পড়া শেষ করে বলল, জন স্মিথের এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা কি কেউ দিয়েছে?
মিসির আলি বললেন, একটা ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, জন স্মিথ ছিলেন নিঃসঙ্গ মানুষ। তিনি তার পরিবার কল্পনা করে নিয়েছেন। কল্পনাকেই রিয়েলিটি ভেবেছেন। এই রিয়েলিটির একটা নাম আছে SCR অর্থাৎ Self Created Reality.
শায়লা বলল, এই ব্যাখ্যা আমার কাছে যথেষ্টই যুক্তি যুক্ত মনে হচ্ছে।
মিসির আলি বললেন, ভুল ব্যাখ্যা। লং টেইলের মৃত্যুর পর জন স্মিথ আরো নি:সঙ্গ হয়েছে। এই অবস্থায় কল্পনার পরিবার তার কাছে ফিরে আসার কথা কিন্তু আসে নি।
শায়লা চুপ করে রইল। মিসির আলি বললেন, আমার ধারণা লং টেইল কুকুরটা জন স্মিথের ডাবল রিয়েলিটির সঙ্গে যুক্ত। কুকুর নেই ডাবলী রিয়েলিটিও নেই।
শায়লা বলল, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন জোয়ার্দারের পুফি বিড়ালটা তার ডাবল রিয়েলিটির সঙ্গে যুক্ত? পুফি না থাকলে ডাবল রিয়েলিটি থাকবে না?
ঢাকা শহর বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল
রঞ্জু সুলতানার ফ্ল্যাটে এসেছে। তার হাতে ব্যান্ডেজ, চোখের নিচে ব্যান্ডেজ। রঞ্জর ভাবভঙ্গিতে প্ৰবল অস্থিরতা। সুলতানা বললেন, তোকে আবার বিড়াল কামড়েছে?
হুঁ।
কখন কামড়েছে?
রাতে। চোখে আঁচড় দিতে চেয়েছিল। নখ দিয়ে থাবা দিতে গিয়েছে। আমি খপ করে পা চেপে ধরায় রক্ষা। অনিকা কোথায়?
স্কুলে।
তার বিড়ালটা আছে না?
আছে।
গুড ভেরি গুড। পুফি পুফি। কাম হিয়ার লিটল ডার্লিং।
পুফি ঘরে ঢুকল। সুলতানার পায়ের কাছে বসল। রঞ্জ বলল, বিড়ালটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে লক্ষ করেছ?
হ্যাঁ।
রঞ্জ বলল, এতদিন ধারণা ছিল দুলাভাইয়ের বিড়াল আমাকে কামড়ায়। ঘটনা তা না। কাল রাতে বুঝতে পেরেছি। পুফি আমাকে কামড়ায়। পুফিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে কনফার্ম হলাম। গত রাতে তার একটা পা ভেঙে দিয়েছি।
সুলতানা বললেন, পাগলের মত কথা বলছিস বিড়াল কেন? এই বিড়াল রাতে গুলশানে যায় তোকে কামড়ে ফিরে আসে?
রঞ্জু বলল, হ্যাঁ। বিড়াল কি ভাবে যায় কি ভাবে ফিরে আসে তা আমি জানি না। বিড়াল যে এই পুফি সে ব্যাপারে। আমি নিশ্চিত। তাকিয়ে দেখ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাচ্ছে! কি ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে দেখা। মনে হচ্ছে না। এক্ষুনি আমার উপর ঝাপ দিয়ে পড়বে?
তোর ভাবভঙ্গি আমার কাছে ভাল লাগছে না। তুই করতে চাস কি?
খুন করতে চাই। মানুষ খুন না, বিড়াল খুন। বুরু বাসায় হাতুড়ি আছে? আমাকে একটা হাতুড়ি দাও।
তুই চুপ করে বোস। মাথা ঠাণ্ডা কর।
রঞ্জু বলল, মাথা ঠাণ্ডা করে তুমি বসে থাক। আমাকে আমার কাজ করতে দাও। আজ এই বিড়ালটা না মারলে সে আমার দুই চোখ তুলে নিবা। এটা কি ভাল হবে?
রঞ্জু খাবার ঘরে ঢুকল। তার হাতে মাংস কাটার বড় ছুরি। রঞ্জু মধুর গলায় ডাকল, পুফি পুফি! কাম হিয়ার লিটল ডার্লিং।
সন্ধ্যা থেকে ঢাকা শহরে বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া। বঙ্গোপসাগরে ডিপ্রেসন হয়েছে। মানুষ তার ডিপ্রেসন্ন অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে না, সাগর পাড়ে। সাগর তার ডিপ্রেসন্ন স্থলভূমিতে ছড়িয়ে দেয়।