সমস্যাতো বটেই। এই সমস্যা আমি নিতে পারছি না। আমি কি করব তাও বুঝতে পারছি না। Is there any one who can help. God of God! Help me please.
মিসির আলি আতংকিত
মিসির আলি আতংকিত গলায় বললেন, তোমার একি অবস্থা! কি সর্বনাশ!
শায়লাকে চেনা যাচ্ছে না। তার ওজন কমেছে আঠারো পাউণ্ড। গালের হাড় বের হয়ে গেছে। চোখ গর্তে ঢুকে গেছে। চোখের চারদিকে কালি। শায়লা কাদো কাদো গলায় বলল, স্যার আমি কিছু খেতে পারছি না। রাতে ঘুমাতে পারছি না। আমার ভার্টিগো হয়েছে। চারদিকে সব কিছু ঘুরছে।
মিসির আলি বললেন, আমি পানিতে ভিজিয়ে টাওয়েল এনে দিচ্ছি। চোখের উপরে ভেজা টাওয়েল চেপে ধরে কিছুক্ষণ বসে থাক এবং মনে মনে বল, আমি ঠিক হয়ে গেছি। আমি ঠিক হয়ে গেছি। ভাটিগোর ক্ষেত্রে অটো সাজেশনে খুব ভাল কাজ করে।
স্যার আমার কোনো কিছুই কাজ করবে না। আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এই যন্ত্রণায় আমি থাকব না।।
কোথায় যাচ্ছ, কবে যাচ্ছ?
মঙ্গলবার বিকেলে আমার ফ্লাইট। যাচ্ছি ইংল্যান্ড। সেখানে আমার বড় চাচা আর চাচী থাকেন। তাদের সঙ্গে থাকব। সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাচ্ছি। তাতেও ভয় কাটছে না।
ভয় কাটছে না কেন?
আমার মনে হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দেখব জোয়ার্দার আমাকে নিতে এসেছে। তার সঙ্গে বের হয়ে দেখব। আরেকজন জোয়ার্দার কালো বিড়াল কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিসির আলি হেসে ফেললেন।
চোখে ভেজা টাওয়েল এবং সেলফ হিপনোসিসে কিছুটা কাজ হয়েছে। শায়লা আগের চেয়ে ভাল বোধ করছে। তার মাথাও ঘুরছে না।
মিসির আলি বললেন, তোমার ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। কিছু তথ্যও জোগাড় করেছি।
শায়লা বলল, স্যার আমি এই বিষয়ে আর কোনো কিছুই শুনতে চাচ্ছি। না। আমি আপনার কাছে এসেছি বিদায় নিতে। আমি সব কিছু থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছি।
মিসির আলি বললেন, তুমি চেষ্টা করলেও হাত ধুতে পারবে না। পালিয়ে গিয়েও লাভ হবে না।
পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমি করব কি?
Reality face করবে।
শায়লা বলল, কোনটা রিয়েলিটি? চিত্র কুমার জোয়ার্দার রিয়েলিটি না-কি স্ত্রী কন্যা নিয়ে নিয়ে যে জোয়ার্দার বাস করছে সে রিয়েলিটি?
তুমি দুজন জোয়ার্দারকে দেখছ তোমার কাছে দুজনই রিয়েলিটি। তোমার শুনলে ভালো লাগবে যে এরকম সমস্যায় তুমি একা পড় নি। অনেকেই পড়েছে।
শায়লা বলল, পাগলা গারদে যারা আছে তারা হয়ত পড়েছে। পাগলদের কাছে রিয়েলিটি বলে কিছু নেই। কিন্তু স্যার আমিতো পাগলা গারদের বাসিন্দা না।
মিসির আলি বললেন, পাগলা গারদের বাসিন্দা না হয়েও অনেকে রিয়েলিটি সমস্যায় পড়েছে। তিনটা ডকুমেন্টেড উদাহরণ আমি তোমাকে দিতে পারি।
শায়লা বলল, স্যার আমি কিছু শুনব না। ডকুমেন্টেড গল্প শুনেতো আমার সমস্যার সমাধান হবে না।
মিসির আলি বললেন, শুনতে না চাইলে শুনবে না। তবে আমি মনে করি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট হিসেবে রিয়েলিটির নতুন ব্যাখ্যা তোমার শোনা উচিত।
শায়লা হতাশ গলায় বলল, আচ্ছা আমি শুনছি। আপনি বলুন।
চা বানিয়ে আনি? চা খেতে খেতে শোন।
আচ্ছা। আর টোস্ট বিসকিট থাকলে আনুন। প্রচণ্ড ক্ষিধে লেগেছে। গালিক টোস্ট উইথ চিজ।
টেস্ট বিসকিট নেই। তুমি তোমার ড্রাইভারকে পাঠাও তোমার জন্যে এক বাটি সুপ নিয়ে আসবে। তোমার খাওয়া দরকার।
শায়লা আধশোয়া হয়ে চেয়ারে বসা। তার চোখে ভেজা টাওয়েল। পুরো এক বাটি সুপ সে কিছুক্ষণ আগে খেয়ে শেষ করেছে। তার সামনে চায়ের কাপ। সে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে না।
মিসির আলি বললেন, তোমার যদি ঘুম পেয়ে থাকে তাহলে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও।
শায়লা বলল, আমি ঘুমাব না। আপনি কি বলবেন বলুন। আমি মন দিয়ে শুনছি।
মিসির আলি বললেন, সারা পৃথিবীতেই গীর্জা হচ্ছে রেকর্ড কিপিং এর জায়গা এটাতো জান?
জানি। গীর্জা জন্ম মৃত্যুর রেকর্ড রাখে।
জন্ম মৃত্যু ছাড়াও বড় বড় ঘটনার রেকর্ডও রাখা হয়। ছয় শ বছর আগে একটা সুপার নোভার এক্সপ্লোশন হয়ে ছিল। রাতের বেলাতেও তখন পৃথিবীতে দিনের মত আলো থাকত। মনে হত আকাশে দুটি সূর্য। এই ঘটনাও আমরা পেয়েছি গীর্জার রেকর্ড থেকে। শায়লা! তুমি শুনছ না ঘুমিয়ে পড়েছ?
শায়লা মুখ থেকে টাওয়েল সরাল। সিগারেট ধরিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, আমি খুব মন দিয়ে শুনছি।
মিসির আলি বললেন, রেকর্ড রাখার দায়িত্ব চার্চের ফাদারের তবে তিনি ছাড়াও কেউ যদি বিশেষ কোনো ঘটনা জানাতে চাইত তাও পারত।
১৮৬৭ সনে আমেরিকার মন্টানা ষ্টেটের চার্চে জন উইলিয়াম স্মীথ নামের এক ভদ্রলোক তার জীবনের একটি বিশেষ ঘটনা লিখে জমা দেন। ঘটনা তিনি যেভাবে লিখে গেছেন সেভাবে পড়ি। না-কি তুমি নিজে পড়বে।
আমি নিজে পড়ব।
মিসির আলি একটি বই এগিয়ে দিলেন। বইটির মাঝামাঝি জায়গায় পেজ মার্ক দেয়া আছে। বইটার নামে The Oxford book of the Supernatural লেখক D. J. Enright. বইটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯০২ সনে, প্রকাশক Oxford University Press.
জন উইলিয়াম স্মীথ লিখেছেন ইংরেজিতে। তার বাংলা ভাষ্য–
আমি জন উইলিয়াম স্টীথ। মন্টনার বনের ভেতর আমার একটা খামার বাড়ি আছে। তিনশ একর জমি ইজারা নিয়ে আমি এই বাড়িতে বাস করি। আমার সঙ্গি একটা কুকুর। কুকুরটার নাম লং টেইল। তার লেজ অস্বাভাবিক লম্বা বলেই এই নাম। আমি লগা হাউসে এক বাস করি। লগ হাউসহদের কাছে ॥হদ থেকে ট্রাউট মাছ ধরি। বনের ভেতরে শিকারের জন্যে প্রচুর প্রাণী আছে। একটা হরিণ মারলে অনেক দিন যায়।