মিসির আলি বললেন, তোমার বা হাতের আঙ্গুলো নিকোটিনের দাগ আছে। লেফট হ্যান্ডাররা বঁ হাতে সিগারেট খায়। তুমি শুধু যে নিকোটিনে আসক্ত তা-না, তুমি এলকোহলিক।
শায়লা হ্যান্ডব্যাগ খুলে সিগারেট বের করতে করতে বলল, আমি এলকোহলিক এটা ঠিকই ধরেছেন। কি ভাবে ধরেছেন জানতে চাচ্ছি না। জানা জরুরী না। আমি আপনার কাছ থেকে একটা বিষয় জানতে এসেছি। আমার নিজের না, আমার পেশেন্টের বিষয়। পেশেন্টের নাম আবুল কাশেম জোয়ার্দার। এজি অফিসের বড় কর্মকর্তা। পোষ্টের নাম ডেপুটি একাউন্টেন্ট জেনারেল। তিনি একজন মৃত মানুষকে তার ঘরে ঘুরা ফেরা করতে দেখে। এটা কি সম্ভব?
মিসির আলি বললেন, ভিজুয়েল হেলুসিনেশান অবশ্যই সম্ভব। অনেকেই মৃত মানুষকে দেখেছে তার সঙ্গে কথা বলেছে এমন বলে।
আমার পেশেন্ট মৃত মানুষের তিনটা ছবি তুলেছেন। মানুষটার নাম বরকতউল্লাহ। ছবিতে মৃত বরকতউল্লাকে দেখা যাচ্ছে আগ্রহ নিয়ে টিভি দেখছে। স্যার এটা কি সম্ভব?
মিসির আলি বললেন, সম্ভব না। মানুষের ভ্ৰান্তি হয়। যন্ত্রের হয় না। মৃত মানুষের ছবি তোলা হয়েছে এমন গল্প শোনা যায় না। ট্ৰিক ফটোগ্রাফিতে কিছু ছবি তোলা হয়েছে। সবই লোক ঠকানো ছবি তাও প্রমাণিত হয়েছে। তোমার ছবিগুলি রেখে যাও দেখব।
এখান দেখবেন না।
এখন ছবি দেখতে ইচ্ছা করছে না।
শায়লা বলল, পাঁচটা ছবি খামে ভর্তি করে রেখে যাচ্ছি।
মিসির আলি বললেন, তুমি না বললে তিনটা ছবি।
শায়লা বলল, বরকতউল্লাহ সাহেবের তিনটা ছবি। দুটা আছে বিড়ালের ছবি।
মৃত বিড়াল জীবিত হয়ে ঘুরছে তার ছবি।
শায়লা বলল, বিড়ালের কিছু রহস্য আছে। পরে বলব।
ঠিক আছে। পরে বললেও হবে।
শায়লা বলল, এই ভদ্রলোকের সমস্যা সমাধান আমার নিজের জন্যে খুব জরুরী। তিনি আমাকে বিরাট ধাঁধার মধ্যে ফেলেছেন। ঐ ভদ্রলোককে নিয়ে আমার খুবই ব্যক্তিগত একটা ঘটনা আছে; ঘটনাটা বলব?
মিসির আলি বললেন, আরেক দিন শুনব।
স্যার! আমি কি আজ চলে যাব?
মিসির আলি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।
স্যার আমি কি আরো কিছু সময় থাকতে পারি। কোনো কথা বলব না। চুপচাপ বসে থাকব।
বসে থাকতে চাচ্ছে কেন?
কোন কারণ নেই স্যার।
কারণ অবশ্যই আছে। মানুষ কারণ ছাড়া কোনো কাজই করে না। তুমি কেন বসে থাকতে চাচ্ছ তা আমি জানি।
শায়লা বলল, আপনি জানলে বলুন আমি শুনি। আমার নিজের জানা নেই।
মিসির আলি বললেন, তুমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকতে চাচ্ছ কারণ তুমি আশা করছি তুমি বসে থাকতে থাকতেই আজ ছবি দেখব।
শায়লা বলল, আপনি ঠিকই ধরেছেন। আপনি ছবিগুলি এখন দেখছেন না, পরে দেখবেন। এর পেছনেও নিশ্চয়ই কারণ আছে। কারণটা বলুন আমি চলে যাচ্ছি।
মিসির আলি বললেন, আমি তোমার উপর বিরক্ত বলেই এখন ছবি দেখতে ইচ্ছা করছে না। ডক্টর অব ফিলসফি হয়ে বসে আছ আর বিশ্বাস করছ মৃত মানুষের ছবি তোলা হয়েছে। ছবিতে মৃত মানুষ টিভি দেখছে। হোয়াট এ নুইসেন্স।
শায়লা উঠে দাড়াল এবং লজ্জিত গলায় বলল, স্যার আমি সরি।
রাতের খাবার
জোয়ার্দার মেয়ের সঙ্গে রাতের খাবার খেতে বসেছেন। সুলতানা বসেন নি। কিছুদিন ধরে তিনি স্বামীর সঙ্গে খেতে বসছেন না। অনিক বলল, আমি একটা ধাধা জিজ্ঞেস করছি জবাব দিতে পারবে?
জোয়ার্দার বললেন, না।
চেষ্টা করে দেখা। চেষ্টা না করেই বলছি, পারব না।
জোয়ার্দার বললেন, আমি চেষ্টা করলেও পারব না।
অনিক বলল,
নাই তাই খাচ্ছে থাকলে কোথায় পেতে
কহেন কবি কালিদাস পথে যেতে যেতে।
জোয়ার্দার বললেন, পারব না মা।
কথাবার্তার এই পর্যায়ে খাবার টেবিলের পাশে সুলতানা এসে দাঁড়ালেন। অনিকা বলল, এই ধাঁধাঁটার উত্তর তুমি দিতে পারবে?
সুলতানা বললেন, তোমার খাওয়া শেষ হয়েছে তারপরেও বসে আছ কেন? উঠে হাত মুখ ধোও, নিজের ঘরে যাও। কাল ছুটি আছে এক ঘণ্টা টিভি দেখতে পারবে।
অনিকা উঠে গেল। সুলতানা অনিকার চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, তোমাকে কিছু প্রশ্ন করব আশা করি সত্যি উত্তর দেবে।
জোয়ার্দার বললেন, আমি তো কখনো মিথ্যা বলি না। সুলতানা বললেন, শুরুইতো করলে মিথ্যা দিয়ে। এমন কেউ নেই যে মিথ্যা বলে না।
জোয়ার্দার হতাশ গলায় বললেন, কি জিজ্ঞেস করবে জিজ্ঞেস কর।
সুলতানা বললেন, মিথ্যা বলে পার পাবে না। আমার কাছে সব তথ্য প্রমাণ আছে। রঞ্জু লোক লাগিয়ে রেখেছিল। সে বের করেছে। ঐ মেয়েটার সঙ্গে যে তোমার বিয়ে হয়েছিল তা আমি জানি।
কোন মেয়েটা?
ন্যাকা সাজবে না। খবরদার ন্যাকা সাজবে না। শায়লা মাগির কথা বলছি।
এখন বুঝতে পারছি। গালাগালি করছ কেন? এটা ঠিক না।
তুমি যদি তার সাথে লটরপটির করতে পার আমি গালাগালি করতে পারি।
সুলতানা হাতে মোবাইল নিয়ে বসেছিলেন। মোবাইল বাজছে। তিনি মোবাইল হাতে উঠে গেলেন। যাবের আগে বলে গেলেন, হাত মুখ ধুয়ে বসার ঘরে বসে থাক। আমি আসছি।
টেলিফোন করেছে রঞ্জ। তার গলার স্বরে রাজ্যের ভয়! কথাও ঠিক মত বলতে পারছে না।
বুবু! একটু আসতে পারবে? আজকে মারাই যাচ্ছিলাম। চোখ গেলে ফেলতে চেয়েছিল। অনেক কষ্টে চোখ বাঁচিয়েছি।
কে চোখ গেলে ফেলতে চেয়েছিল?
দুলাভাই এর বিড়াল টা।
তোর দুলাভাই এর আবার কিসের বিড়াল।
রঞ্জু বলল, যে বিড়ালটা আমাকে কামড়ায় সেটা দুলাভাই এর বিড়াল।
তুই এখন কোথায়? স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বুবু গাড়ি পাঠিয়েছি তুমি আসি। তোমার পায়ে পড়ি দুলাভাইকে সঙ্গে আনবে না।