সুলতানা বললেন, রঞ্জুর কোনো খবর জানো?
না তো। ওর কী হয়েছে?
পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে।
জোয়ার্দার বললেন, ও আচ্ছা। বাথরুমে কি টাওয়েল দেওয়া আছে? গোসল করব।
সুলতানা বললেন, এত বড় একটা ঘটনায় তোমার কোনো রি-অ্যাকশন নেই? একবারও জানতে চাইলে না কেন অ্যারেস্ট করেছে? তুমি কি এই জগতে বাস করো?
তুষার মারা গেছে। তার বোন পুলিশের কাছে উল্টাপাল্টা কি সব বলেছে।
মারা গেছে কিভাবে?
ক্লিনিকে অ্যাবরশন করা হয়েছিল, সেখানে মারা গেছে।
ও আচ্ছা।
সুলতানা বললেন, আবার ও আচ্ছা?
জোয়ার্দার বললেন, এক কাপ চা বানিয়ে দাও। চা খেয়ে গোসল করব।
থানায় যাবে না?
থাকায় যাব কেন?
আমার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। টর্চার করছে কি না কে জানে। আর তুমি বলছি চা খেয়ে গোসলে যাবে।
আমি থানায় গিয়ে কী করব? র্যাব-পুলিশ এসব আমি খুব ভয় পাই। রঞ্জুর অনেক টাকা। সে টাকা খরচ করবে, পুলিশ তাকে ছেড়ে দেবে। টাকাওয়ালা মানুষের এ দেশে কোনো সমস্যা হয় না।
সুলতানা বললেন, তুমি একজন অমানুষ। আমার জীবনটা তুমি নষ্ট করেছ। আমি একা থাকব, কিন্তু তোমার সঙ্গে থাকব না। দিস ইজ ফাইন্যাল।
জোয়ার্দার বললেন, আচ্ছা। তিনি বাথরুমে ঢুকলেন। সুলতানা টেলিফোন করলেন। থানায়। ওসি সাহেব বিনয়ী গলায় বললেন, রঞ্জু সাহেব তো কিছুক্ষণ আগে চলে গেছেন। আমরা দু-একটা প্রশ্ন করার জন্য ডেকেছিলাম। প্রশ্ন করেছি, উনি জবাব দিয়েছেন। তার কথাবার্তায় আমরা সন্তুষ্ট। তুহিন নামের একটা মেয়ের কথায় কিছু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। এখন সব ঠিক আছে।
সুলতানা রঞ্জকে টেলিফোন করতে যাবেন তার আগেই রঞ্জু টেলিফোন করল। রঞ্জুর কাছে জানা গেল পুলিশকে সন্তুষ্ট করতে তার দুই লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এখন সব কিছু আন্ডার কনট্রোল।
জোয়ার্দার বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে আছেন। তার সামনে ভীত মুখে অনিক দাঁড়িয়ে আছে। অনিকার কোলে বিড়াল নেই। নতুন রাক্ষুসী চেহারার কাজের মেয়েটি এক কাপ চা দিয়ে গেছে। চা খেতে ভাল হয়েছে।
অনিকা বলল, বাবা তুমি ভালো আছ?
জোয়ার্দার হ্যা সূচক মাথা নাড়লেন।
অনিক গলা নিচু করে বলল, বাবা তুমি এই ফ্ল্যাটে কি কোনো মেয়েকে নিয়ে এসেছিলো? মেয়ের নাম শায়লা।
জোয়ার্দার বললেন, না।
আমি জানি। তোমার খুব ঝামেলা হচ্ছে তাই না বাবা?
হুঁ।
অনিক বলল, বাবা তোমার কি কোনো বিড়াল আছে? রঞ্জু মামা বলছিল তোমার নাকি একটা গুণ্ডা বিড়াল আছে।
জোয়ার্দার বললেন, আছে।
দেখতে পুফির মতো বাবা?
হুঁ।
বিড়ালটার কোনো নাম আছে?
আমি নাম দিয়েছি কুফি।
অনিকা বলল, নামটা বেশি ভালো হয় নি।
জোয়ার্দার বললেন, তুমি একটা নাম দিয়ে দাও।
অনিকা বলল, আমি নাম দিলাম পুফি টু। আমারটার নাম পুফি ওয়ান তোমারটা পুফি টু। নাম পছন্দ হয়েছে বাবা?
হুঁ।
সুলতানা বারান্দায় এসে দাড় কঠিন গলায় বললেন, মেয়ের কানে কি মন্ত্র দিচ্ছ?
জোয়ার্দার জবাব দিলেন না। চিন্তিত মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। অনিকা বলল, মা! তুমি শুধু শুধু বাবাকে বকা দিবে না। বাবাকে বকা দিলে পুফি টু এসে তোমাকে কামড় দিবে।
কি বললি? বাঁদর মেয়ে কি বললি তুই।
অনিকা কঠিন গলায় বলল, আমার সঙ্গে তুই তুই করে কথা বলবে না। আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও পুফি টু তোমাকে কামড়াবে। পুফি টু ভয়ংকর রাণী।
শোবার ঘরের খাটে হেলান দিয়ে
রাত আটটা বাজে। মিসির আলি তার শোবার ঘরের খাটে হেলান দিয়ে বসে আছেন। যথেষ্ট গরম পড়েছে কিন্তু মিসির আলির গায়ে হলুদ চাদর। তার ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। মিসির আলির হাতে স্টিফান কিং এর ভৌতিক উপন্যাস নাম skeletion crew. তিনি অনেকখানি পড়ে ফেলেছেন। কিন্তু ভয়ের জায়গাগুলি ধরতে পারছেন না।
স্যার আসব?
মিসির আলি বই থেকে মুখ তুললেন। শ্যামলা চেহারার মধ্য বয়স্ক এক মহিলা দাঁড়িয়ে। মিসির আলি কিছু বললেন না।
আপনার বাইরের দরজা। হাট করে খোলা। কলিংবেল নেই বলে কড়া নেড়েছি। তারপর সাহস করে ঢুকে পড়লাম।
সাধারণত চাদরে পা ঢাকা থাকলে কেউ চাদর সরিয়ে পা বের করে সালাম করে না। এই মহিলা তাই করল।
মিসির আলি বললেন, আমি কি তোমাকে চিনি?
না স্যার।
তুমি যে ভাবে পা ছুঁয়ে সালাম করলে তা থেকে মনে হয়ে ছিল আমার ছাত্রী। ছাত্র ছাত্রীরাই এ ভাবে আমাকে সালাম করে। সালামের মধ্যে ভক্তির চেয়ে ভয় ভাব প্ৰবল থাকে।
আমার ছিল?
হ্যাঁ ছিল।
স্যার আমার নাম শায়লা। আমি ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিতে Ph.D করেছি। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড। এক সময় আপনি এই ইউনিভার্সিটিতেই পড়াশোনা করেছেন।
মিসির আলি বললেন, শুনে খুশি হলাম। আমার পি এইচ ডি ডিগ্রি নেই।
সবার এই ডিগ্ৰী লাগে না। স্যার। আপনার লাগে না।
মিসির আলি বললেন, শায়লা তোমার সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। সিগারেট ধরাও আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই।
তুমি টেবিলে রাখা সিগারেটের প্যাকেটের দিকে তৃষ্ণার্তের মত তাকাচ্ছ। একটু দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছ ইংরেজীতে একে বলে short breath. নিকোটিনে যারা অভ্যস্ত তাদের সিগারেট দেখলেই নিঃশ্বাস ঘন ঘন পড়তে থাকে।
শায়লা বলল, আমার বিষয়ে আর কি বলতে পারেন?
মিসির আলি বললেন, তুমি লেফট হ্যান্ডার।
শায়লা বলল, আমিতো এমন কিছু করি নি। যা থেকে বুঝা যাবে আমি লেফট হ্যান্ডার। আপনাকে সালাম করার সময়ও ডান হাতে সালাম করেছি।