শায়লা নিঃশ্বাস ফেললেন কিছু বললেন না। ছবি থেকে চোখ সরালেন না।
জোয়ার্দার বললেন, এটা কুফির ছবি; আমার কাছে যে বিড়ালটা আসে। আর এটা আমার মেয়ের কোলে পুফি। আমার মেয়ের নাম অনিকা। আপনাকে তার নাম বলে ছিলাম।
আমার মনে আছে। আপনি কি এই সব ছবি আর কাউকে দেখিয়েছেন?
না।
এই ছবি যে বরকতউল্লাহ সাহেবের এটা আমি বুঝাব কি ভাবে?
জোয়ার্দার বললেন, উনাকে চেনেন এমন যে কাউকে দেখালেই হবে। খালেক চিনবে।
খালেক কে?
আমাদের অফিসে কাজ করেন। আমার জুনিয়র কলিগ।
বরকত সাহেব কত দিন হল মারা গেছেন?
দুই সপ্তাহের বেশি হয়েছে।
শায়লা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, বিরাট সমস্যা হয়ে গেল।
জোয়ার্দার বললেন, কি সমস্যা?
শায়লা বললেন, ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। দিন তারিখ সব ছবিতে আছে। দুই সপ্তাহ আগে যিনি মারা গেছেন সেই লোক আপনার বসার ঘরে বসে টিভি দেখতে পারে না।
জোয়ার্দার বললেন, সেটা বুঝতে পারছি। বুঝতে পারছি বলেই আপনার কাছে এসেছি।
শায়লা বললেন, আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনার বুঝতে পারার কথা না।
শায়লার ভুরু কুঁচকে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি গভীর সমুদ্রে °CछCछ्न्म।
জোয়ার্দার বললেন, আপনার এসিসটেন্ট করিম বলছিল। আপনার সুপ্তি নামের কোনো মেয়ে নেই।
শায়লা বলল, এই প্রসঙ্গ আপাতত থাকুক আমি ছবিগুলি নিয়ে চিন্তা করছি। আপনার মেয়ের কোলে যে বিড়াল আর সোফায় শুয়ে থাকা বিড়ালতো একই বিড়াল।
দেখতে এক রকম মনে হলেও এক বিড়াল না। আমার মেয়ের বিড়ালটার নাম পুফি। পুফি খুবই শান্ত। আর এই বিড়ালটার নাম কুফি। এটা ভয়ংকর বিড়াল।
ভয়ংকর কোন অর্থে?
কুফি প্রায় আমার শ্যালকা রঞ্জকে আক্রমন করে। রঙুকে কুফির কারণে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
আমি আপনার শ্যালকের সঙ্গে কথা বলব। তার টেলিফোন নম্বর দেয়া যাবে না? এই নিন। কাগজ তার টেলিফোন নাম্বার ঠিকানা লিখে দিন।
জোয়ার্দার ঠিকানা লিখতে লিখতে বললেন, কুফি তুহিন তুষারকেও এটাক করেছিল।
ওরা কারা।
ওরা দুজন যমজ বোন। আমার বাসায় কাজ করতো। এখন অবশ্যি কাজ করে না।
শায়লা বললেন, আমি এই দুই বোনের সঙ্গেও কথা বলব।
দুই বোন রঞ্জুর বাসায় আছে। রঞ্জুর ঠিকানা লিখে দিয়েছি। আমি কি এখন চলে যাব?
শায়লা জবাব দিলেন না, তিনি একবার ছবি দেখছেন একবার জোয়ার্দারের দিকে তাকাচ্ছেন।
বাড়ির ছাদে শামিয়ানা
বাড়ির ছাদে শামিয়ানা টাঙিয়ে খালেক সাহেবের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। কেক এসেছে হোটেল সোনারগা থেকে। গিফট রাখার জন্য একটা টেবিল সাজানো। টেবিলের পেছনে শুকনো মতো এক লোক খাতা-কলম নিয়ে বসে আছে। যে গিফট দিচ্ছে তার নাম ঠিকানা লিখে রাখছে।
জোয়ার্দার অস্বস্তিতে পড়েছেন। কারণ তিনি খালি হাতে এসেছেন। মেয়েটাকে পরে কিছু একটা কিনে দিতে হবে। মেয়ে কত বড় তাও জানেন না।
জোয়ার্দার খালেক বললেন, আপনার মেয়ে কোথায়? খালেক গলা নিচু করে বলল, বিরাট বেইজত হয়েছি স্যার। মেয়ের মা ঘুষের টাকার উৎসব করবে না বলে মেয়েকে নিয়ে দুপুর বেলায় কোথায় যেন গেছে। মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে বলে বুঝতেই পারছি না তারা কোথায়।
জোয়ার্দার বললেন, এখন গেস্টদের কী বলবেন?
খালেক বলল, সুন্দর গল্প বানায়ে রেখেছি। গোস্টরা সবাই খুশি মনে খাওয়াদাওয়া করে বিদায় হবে। আপনাকে একটা কথা বলি স্যার, সুন্দর মিথ্যা কিন্তু সত্যের চেয়েও ভালো।
ছাদের এক কোনায় জোয়ার্দার বসে আছেন। গোস্টরা আসতে শুরু করেছে। তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসছে। একজন ম্যাজিশিয়ান এসেছেন। ম্যাজিশিয়ানের সহকারী মেয়েটির পোশাক যথেষ্ট উগ্ৰ। জোয়ার্দারের মনে হলো, ঢাকা শহর অতিদ্রুত বদলাচ্ছে। অল্প কিছুদিন আগেও কোনো বাঙালি মেয়েকে এই পোশাকে ভাবা যেত না। খালেক হন্তদন্ত হয়ে আসছে।
স্যার, এক্ষুনি ম্যাজিক শুরু হবে। স্টেজের কাছে চলে যান।
আমি এখান থেকেই দেখব। ভালো কথা, আপনি কি বরকতউল্লাহ সাহেবের বোনকে চিনতেন?
অবশ্যই। উনি স্কুলশিক্ষিকা।
কত দিন আগে মারা গেছেন?
মারা যাননি তো। উনার নাম নাইমা। ইংরেজি একটা স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
ও আচ্ছা।
স্যার, হঠাৎ উনার প্রসঙ্গ কেন?
জোয়ার্দার জবাব দিলেন না। নড়েচড়ে বসলেন। ম্যাজিক শো শুরু হয়েছে। ম্যাজিশিয়ানের সহকারী মিস পপি একটা কাঠের খালি বাক্স সবাইকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখালো। ম্যাজিশিয়ান সেই খালি বাক্সের ভেতর থেকে ধবধবে সাদা রঙের একটা কবুতর বের করলেন। জোয়ার্দার অস্পষ্ট স্বরে বললেন, অদ্ভুত! তাঁর দৃষ্টি বারবার মিস পপির দিকে চলে যাচ্ছে। এ রকম কেন হবে? জোয়ার্দার চোখ বন্ধ করে ফেললেন। ম্যাজিক দেখা যাচ্ছে না, ম্যাজিশিয়ানের কথা শুনে ম্যাজিক কল্পনা করে নেওয়া। ব্যাপারটা যথেষ্টই আনন্দদায়ক।
আমার হাতে আছে কিছু রিং। ভালো করে দেখুন। রিংগুলো স্টিলের তৈরি। কোনো ফাঁকফোকর নেই। এখন দেখুন। কিভাবে একটা রিংয়ের ভেতর অন্যটা ঢুকে যাচ্ছে।
জোয়ার্দার কল্পনায় দেখছেন। রিংগুলো শূন্যে ভাসছে। একটার ভেতর আরেকটা আপনা। আপনি ঢুকছে আবার বের হচ্ছে। ম্যাজিশিয়ানের চোখে কোনো বিস্ময় নেই। কিন্তু মিস পপি চোখ বড় বড় করে এই দৃশ্য দেখছে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ করে জোয়ার্দারের বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। দরজা সুলতানা খুললেন, কিছুই বললেন না। এটা ম্যাজিকের মতোই বিস্ময়কর ঘটনা। স্বামী এত রাত করে ফিরলে বাঙালি সব স্ত্রীর প্রথম প্রশ্ন হবে, এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে?