সুলতানা বললেন, আমি এটাই আগে জানতে চাই।
আগে জানতে চাইলে বলি। মন দিয়ে শোনো। উত্তেজনা একটু কমাও। উত্তেজিত অবস্থায় মানুষ লজিক ধরতে পারে না। আমার লজিক তুমি ধরতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। রাত একটার দিকে পানির পিপাসা পেল। বিছানার কাছে জাগে পানি। পানি গ্লাসে ঢালতে গিয়ে দেখি পিঁপড়া ভাসছে। আমি তুহিনকে বললাম এক বোতল ঠাণ্ডা পানি দিতে। তুমি জানো, ওরা দুজন সব সময় একসঙ্গে চলে। দুই বোন পানির বোতল নিয়ে ঢুকেছে। বোতল রেখে চলে যাবে হঠাৎ দেখে দরজা লক হয়ে গেছে। এর মধ্যে জানালা দিয়ে ঢুকল বিড়াল। তোমার কাছে ঘটনা কি পরিষ্কার?
সুলতানা কিছু বললেন না।
রঞ্জু বলল, জগটা হাতে নিয়ে দেখো, জগের পানিতে পিঁপড়া ভাসছে। আর এই দেখো পানির বোতল। তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ না কাজের মেয়ে দুটিকে আমি অন্য উদ্দেশ্যে ডেকেছি। আমার রুচি এখনো এত নিচে নামে নি। এখন তুমি ঘর থেকে যাও। আমি ঠাণ্ডা মাথায় বিষয়টা চিন্তা করি।
সুলতানা তুহিন-তুষারের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। দুই মেয়ে চৌকিতে জড়সড় হয়ে বসে ছিল। তারা সুলতানাকে দেখে মিইয়ে গেল। দুজনই তাকিয়ে আছে বিছানার চাদরের দিকে। কেউ চোখ তুলছে না।
সুলতানা বললেন, তোদের কী ঘটনা সবই রঞ্জু আমার কাছে স্বীকার করে পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে বলে আমি ক্ষমা করেছি। তোরাও নিজের মুখে যা ঘটেছে বলবি। তারপর পা ধরে ক্ষমা চাইবি। আমি ক্ষমা করে দেব। প্রথমে তুহিন বল।
তুহিন বিড়বিড় করে বলল, উনি যদি আমাদের বলে রাত একটার দিকে সবাই ঘুমায়ে পড়লে চলে আসবি। আমরা কি তখন বলতে পারি না। উনার একটা ইজ্জত আছে না? আপনারেই বা কিভাবে বলি। লজ্জার ব্যাপার। আপনার আপন ভাই।
প্রায়ই তার ঘরে যাস?
উনার এইখানে যখন থাকি তখন যাই।
তুষার এবার মুখ খুলল। সে নিচু গলায় বলল, আজ রাতে কোনো ঘটনা ঘটে নাই। আল্লাহর কিরা। আজ অন্য কারণে গেছি।
কারণটা কী?
তুষার বলল, আমাদের দুজনের পেটে সন্তান এসেছে। উনি বলেছেন, সন্তান খালাসের ব্যবস্থা করে দিবেন। কোনো সমস্যা হবে না। আজ রাতে ওই বিষয়ে আলাপ করতে উনি ডেকেছিলেন।
সুলতানা হতভম্ব হয়ে দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারা যে খুব লজ্জিত বা ভীত তাও মনে হলো না। তুহিনের ঠোঁটের কোনায় হাসির আভাসও চকিতের জন্য দেখা গেল।
জোয়ার্দারকে গাড়িতে করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনিকা ঘুমিয়ে পড়েছে। সুলতানা জেগে আছেন। তিনি বসে আছেন খাবার ঘরের চেয়ারে। তার হাতে চায়ের কাপ। তিনি কাপে চুমুক দিচ্ছেন না।
রঞ্জু এসে তার সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, বুকু চিন্তা করে কিছু পেয়েছ?
সুলতানা জবাব দিলেন না। রঞ্জু বলল, বুনো বিড়ালের বিষয়টা আমি বের করেছি। সে এসেছে পুফির খোজে। টম ক্যাট তো, এদের সঙ্গিনী দরকার। এ সময় এদের মাথাও থাকে গরম।
সুলতানা কঠিন চোখে তাকালেন। রঞ্ছ বলল, বাকি থাকল অটো সিস্টেমে দরজা লক হয়ে যাওয়া। এরও ব্যাখ্যা আছে। মেকানিক্যাল ফল্ট। ভোরবেলা একজন তালাওয়ালা আনিব সে পরীক্ষা করে দেখবে। চায়নিজ তালা কেনটাই ভুল হয়েছে। নেক্সট টাইম সিঙ্গাপুর গেলে তালা নিয়ে আসব। বুবু কথা বলছি না কেন? এত চিন্তিত হবার কিছু নেই। সব কিছুরই ব্যাখ্যা আছে।
সুলতানা বললেন, তুহিন-তুষার যে পেট বঁধিয়ে বসে আছে তার ব্যাখ্যা কী?
এইসব আবার কি বলছ?
তুই ভাল করে জানিস কি বলছি। রঞ্জু বলল, বুবু শোন। কাজের মেয়েরা প্রোগনেন্ট হয় ড্রাইভার, দারোয়নদের কারণে। দোষ দেয় বাড়ির কর্তাদের। উদ্দেশ্য হল বিপদে ফেলে টাকা পয়সা হাতানো। ড্রাইভার দারোয়ান শ্রেণীতো টাকা পয়সা দিতে পারবে না। হা হা হা।
সুলতানা বললেন, হা হা করবি না। চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব বদ কোথাকার।
মেয়ের জন্মদিন
খালেক হাসিমুখে বলল, স্যার, আগামী পরশু আমার মেয়ের জন্মদিন।
জোয়ার্দার ফাইল থেকে চোখ না তুলেই বললেন, ও আচ্ছা।
খালেক বলল, স্যার, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আপনি প্রধান অতিথি।
জোয়ার্দার বিস্মিত গলায় বললেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকে?
প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি সবই থাকে।
জানতাম না তো।
খালেক বলল, অফিস ছুটি হলে আমি আপনাকে নিয়ে যাব। ঠিক আছে স্যার?
হুঁ।
জোয়ার্দার চাচ্ছেন যেন খালেক তাড়াতাড়ি এই ঘর ছেড়ে যায়। তার টেবিলের নিচে পুফি বসে আছে। এই দৃশ্য তিনি অন্যদের দেখাতে চান না। নানান প্রশ্ন করবে। সব মানুষের কৌতূহল এভারেস্টের চূড়ার মতো।
খালেক বলল, স্যার, আপনার এখানে একটু বসি? এক কাপ চা খেয়ে যাই।
জোয়ার্দার আমতা আমতা করে বললেন, একটা জরুরি কাজ করছিলাম।
তাহলে আর বিরক্ত করব না। পরশু দিন ছুটির পর আপনাকে নিয়ে যাব।
খালেক ঘর থেকে বের হতেই জোয়ার্দারের মন সীমান্য খারাপ হলো। তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন এ কারণেই খারাপ লাগছে। তিনি কোনো জরুরি কাজ করছেন না। প্রমোশন পাবার পর তার কাজ কমে গেছে। এসি ছেড়ে ঘর ঠাণ্ডা করে চুপচাপ বসে থাকাই এখন তাঁর প্রধান কাজ।
বিড়ালটা এক অর্থে তাঁর সময় কাটাতে সাহায্য করছে। কাল দুপুরের পর সে একটা ইদুরে ধরেছে। বিড়াল ইদুর ধরে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে না। অনেকক্ষণ তার সঙ্গে খেলে, তারপর মারে। এই কথা তিনি শুনেছেন, আগে কখনো দেখেননি। কালই প্রথম দেখলেন। ইদুরের বুদ্ধি দেখেও চমৎকৃত হলেন। বিড়ালের হাত থেকে একবার ছাড়া পেয়ে ভালো খেলা দেখাল। দৌড়ে সামনে যাচ্ছে হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি টার্ন নিয়ে উল্টা দৌড় শুরু করছে। বিড়াল বিভ্রান্ত। শেষ পর্যন্ত ইদুরটা পার্টিশনের একটা ফাক বের করে পালিয়ে গেল। বিড়াল হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল। জোয়ার্দার বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোকে বুদ্ধিতে হারিয়ে দিয়েছে। তোর মান খারাপ বুঝতে পারছি। হেরে গেলে সবার মন খারাপ হয়। আমি প্রায়ই বুদ্ধিতে আমার মেয়ের কাছে হেরে যাই। আমারও খানিকটা মন খারাপ হয়। আমার মেয়েকে তুই চিনিস? আনিকা তার নাম।