তাহলে কি টেলিফোন ধরব না?
আপনার ইচ্ছা।
জোয়ার্দার ইতস্তত করে বললেন, আমি কি আপনার একটা ছবি তুলতে পারি।
বরকতউল্লাহ বিরক্ত মুখে বললেন, ছবি তোলার প্রয়োজনটা কি? একটা ছবি দেখছি তার মধ্যে বদারেশন। মোবাইলে ক্যামেরা আসায় এমন বাদারেশন হয়েছে সবাই ছবি তুলে।
জোয়ার্দার বললেন, স্যার আপনি বিরক্ত হলে ছবি তুলব না।
বরকতউল্লাহ বললেন, শখ করেছেন যখন তুলে ফেলেন। মাথার ডান দিক থেকে তুলবেন বঁদিকে চুল কম।
জোয়ার্দার ছবি তুললেন। আবার টেলিফোন বাজছে।
জোয়ার্দার টেলিফোন ধরার জন্য শোবার ঘরে গেলেন। টেলিফোন করেছেন সুলতানা। তার গলার স্বরে আতঙ্ক এবং হতাশা।
তুমি কি একটু আসতে পারবে?
কোথায় আসবে?
রঞ্জুর বাসায় আসবে। আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। রঞ্জুর ড্রাইভার তোমাকে নিয়ে আসবে। একটা সমস্যা হয়েছে।
জোয়ার্দার বললেন, ও আচ্ছা।
সুলতানা বললেন, ও আচ্ছা। আবার কী? সমস্যাটা কি হয়েছে জানতে চাইবে না?
কী সমস্যা?
রঞ্জু তার বাসার বেডরুমে আটকা পড়েছে। বের হতে পারছে না।
দরজা লক হয়ে গেছে?
কী হয়েছে আমি জানি না, তোমাকে আসতে বলছি তুমি আসো।
আমি এসে কী করব? আমি তো চাবি বানানোর মিস্ত্রি না। এত রাতে চাবি বানানোর মিস্ত্রি পাওয়াও যাবে না।
তোমাকে আসতে বলছি তুমি আসো। আরো ঘটনা আছে।
আর কী ঘটনা?
রঞ্জুর সঙ্গে তুহিন-তুষারও আটকা পড়েছে। কেলেঙ্কারি ব্যাপার।
কেলেঙ্কারি ব্যাপার হবে কেন?
এত রাতে দুটা কাজের মেয়ে রঞ্জুর শোবার ঘরে। কেলেঙ্কারি না?
চা-কফি কিছু নিশ্চয়ই দিতে গিয়েছিল।
তোমাকে যুক্তি দিতে হবে না। তোমাকে আসতে বলছি আসো। গাড়ি এর মধ্যে পৌঁছে যাবের কথা। রাস্তা ফাঁকা।
জোয়ার্দার বললেন, আমার আসতে সামান্য দেরি হবে। টিভিতে পেঙ্গুইনদের ওপর একটা প্রোগ্রাম দেখছি। প্রোগ্রাম শেষ হলেই রওনা দেব। প্রোগ্রামের মাঝখানে উঠে গেলে উনি হয়তো রাগ করবেন।
উনিটা কে?
ইয়ে আমার এক সহকমী। হঠাৎ চলে এসেছেন।
তোমার কথাবার্তার আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। এত রাতে বাসায় সহকর্মী?
জোয়ার্দার চুপ করে রইলেন।
শায়লা নামের ঐ মাগি চলে এসেছে?
না না, বরকতউল্লাহ সাহেব এসেছেন। আমার কলিগ।
গাড়ি পৌঁছামাত্ৰ তুমি গাড়িতে উঠবে। এ বিষয়ে আমি দ্বিতীয় কোনো কথা শুনতে চাই না।
আচ্ছা।
জোয়ার্দার বসার ঘরে ফিরে গেলেন। বরকতউল্লাহ তার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, আপনি ইন্টারেস্টিং পার্টটাই মিস করেছেন। যেসব পেঙ্গুইন মায়েদের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তারা অন্যের ডিম। চুরি করে।
বলেন কী!
চুপ করে বসে দেখুন। কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না।
জোয়ার্দার লজ্জিত গলায় বললেন, আমাকে রঞ্জুর বাসায় যেতে হবে। রঞ্জু হচ্ছে আমার শ্যালক। ও তার শোবার ঘরে আটকা পড়েছে। বের হতে পারছে না। মনে হয় তাকে দরজা ভেঙে বের করতে হবে। তার সঙ্গে দুটা কাজের মেয়েও আটকা পড়েছে।
বরকতউল্লাহ বিরক্ত গলায় বললেন, এত কথা বলছেন কেন? মন দিয়ে। একটা প্রোগ্রাম দেখছি।
সারি।
বরকতউল্লাহ জবাব দিলেন না। অপলক চোখে টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এখন পেঙ্গুইনরা দল বেঁধে কোথায় যেন যাচ্ছে।
জোয়ার্দার রঞ্জুর শোবার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ানো। সুলতানা তার পাশে। সুলতানার চোখে পানি। তিনি একটু পর পর শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছেন। তাঁর পাশেই অনিকা পুফিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে সে থরথর করে কাঁপছে।
ঘরের ভেতর থেকে বিড়ালের তীক্ষ্ণ মিয়াঁও মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে। জোয়ার্দার নিশ্চিত হলেন তাঁর কাছে যে বিড়াল আসে সেটাই রঙুর ঘরে। বিড়াল যতবার মিয়াঁও করছে ততবারই তুহিন-তুষার চেঁচাচ্ছে, ও আল্লাগো! ও আল্লাগো!
সুলতানা জোয়ার্দারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ভ্যাবদার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? কিছু একটা করো।
কী করব?
দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করো।
আমি কিভাবে দরজা ভাঙব?
শাবল দিয়ে বাড়ি দিয়ে ভাঙো।
শাবল কোথায় পাবো?
রঞ্জু ঘরের ভেতর থেকে বলল, দুলাভাই ভাঙাভাঙিতে যাবেন না। ফ্ল্যাটের সব মানুষ ছুটে আসবে। কেলেঙ্কারি ব্যাপার হবে।
জোয়ার্দার বললেন, কেলেঙ্কারির কী আছে? তুমি আটকা পড়েছ এটা একটা সমস্যা এর মধ্যে কেলেংকারি কেন আসবে?
রঞ্জু হতাশ গলায় বলল, কেলেঙ্কারির কি আছে তা আপনি বুঝবেন না। এত বুদ্ধি আপনার মাথায় নাই।
জোয়ার্দার বললেন, তোমার ঘরে কি কোনো বিড়াল আছে?
হ্যাঁ আছে। পুফি হারামিটা কিভাবে যেন ঢুকেছে। আঁচড়াচ্ছে-কামড়াচ্ছে। ভয়ংকর অবস্থা।
জোয়ার্দার বললেন, পুফি না। এটা অন্য বিড়াল। এ বিড়ালটাকে মনে হয় আমি চিনি। পুফি অনিকার কোলে।
জোয়ার্দার দরজায় হাত রাখলেন। সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে গেল। তুহিন-তুষার দৌড়ে ঘর থেকে বের হলো। তুহিনের গায়ে শুধু পেটিকোট। তুষার সম্পূর্ণই নগ্ন।
সুলতানা জোয়ার্দারকে বললেন, তুমি অনিকাকে নিয়ে অন্য ঘরে যাও। রঞ্জুর সঙ্গে আমি একা কথা বলব। জোয়ার্দার মেয়ের হাত ধরে পাশের ঘরে ঢুকলেন।
রঞ্জু বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। বিড়াল তাকেও কামড়েছে। শরীর রক্তাক্ত।
সুলতানা বললেন, মেয়ে দুটা তোর ঘরে কেন?
রঞ্জু বলল, বুবু শোনো। প্ৰায়োরিটি বলে একটা বিষয় আছে। তুমি প্ৰায়োরিটি বোঝে না। আমি ঘরে আটকা পড়েছি। দরজা খুলছে না। ঘরে ঢুকেছে একটা বুনো বিড়াল। আমাদের কামড়াচ্ছে, আঁচড়াচ্ছে। এ ঘটনা কেন ঘটল সেটাই প্ৰায়োরিটি বিবেচনা করা উচিত। মেয়ে দুটা আমার ঘরে কনে সেটা অনেক পরের আলোচ্য বিষয়।