তাকে কাঁদতে দেখে মহিম কপটতার আশ্রয় নিয়ে বলল, আমি ঠিক এতটা চাইনি। উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে করে ফেলেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।
রুবীনা বেশ কিছুক্ষণ কাঁদল। তারপর চোখ মুছে বলল, মহিম ভাই, একটা কথা বলব রাখবে?
মহিম বলল, বল কি কথা?
রুবীনা বলল, এরপর আমি আর অন্য কাউকে এই দেহ দিতে পারব না। যদি তুমি আমাকে বিয়ে না কর, তবে আমি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব।
মহিম বলল, সে কথা আমিও এখন ভাবছিলাম। কথা দিলাম, আমি তোমাকে বিয়ে করব। তবে তোমাকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
রুবীনা মহিমের কপটতা বুঝতে পারল না। বলল, যতদিন অপেক্ষা করতে বলবে ততদিন অপেক্ষা করব।
আরও কিছুক্ষণ দুজনে গল্প করে বাড়ি ফিরে এল। এরপর প্রায়ই তাদের দৈহিক মিলন হত। মহিম খুব চালাক, সে প্রেগনেন্টের ভয়ে সব সময় কন্ডম ব্যবহার করে। কিন্তু দুর্ঘটনা যা ঘটবার প্রথম বারে ঘটে গেছে। মাস শেষ হওয়ার পর যখন রুবীনার ঋতুস্রাব হল না তখন বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল। মনে করল, তার তো মাসিকের একটু দোষ আছেই। আগেও কয়েকবার এরকম হয়েছে। কিন্তু যখন দুমাস কেটে গেল অথচ মাসিক হল না, তখন সে মহিমকে সব কথা জানাল।
রুবীনার কথা শুনে মহিম প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেল। তারপর সামলে নিয়ে রেগে উঠে বলল, আমি সব সময়।
এ রকম ( পারে না। তারপর রুবীনাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, আমি তোমার গর্ভের সন্তানের জন্মদাতা নই, অন্য কেউ। যাও আর কোনোদিন এস না। মহিমের তখন অন্য চিন্তা মাথায় ঘুরছে। সে ফিজিক্সে উচ্চ ডিগ্রী নেওয়ার জন্য বিদেশ যাবে। বিদেশী যুবতীদের চিন্তায় তার মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে এখন রুবীনাকে থোড়াই কেয়ার করে।
রুবীনার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বলল, মহিম তুমি এতবড় নীচ কথা বলতে পারলে? এত বড় পাষান্ড তুমি? আমি যে কিছুই ভাবতে পারছি না।
মহিম বলল, দেখ বেশি বাড়াবাড়ি করো না, যা বলছি শোন, লক্ষ্মী মেয়ের মত ঘরে ফিরে যাও। তারপর তোমার গর্ভে যার ঔরসে সন্তান এসেছে তাকে ভয়ে দেখিয়ে বিয়ে করে ফেল।
রুবীনা রাগে ও অপমানে আর কোনো কথা বলতে পারল না। কেমন করে সেদিন বাড়ি ফিরেছিল তার মনে নেই। সেই থেকে মহিমের খোঁজ আর করেনি। কয়েকদিন পরে এক বান্ধবীর কাছে শুনেছে, সে বিদেশ চলে গেছে।
এই ঘটনার কিছুদিন পর মনিরুল তার পিছনে লাগল। রুবীনা দু একদিন তার সঙ্গে বেড়িয়ে বুঝতে পারল, সেও তাকে চায়। রুবীনা এখন চালাক হয়ে গেছে। বিয়ের আগে দেহ দিলে সে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইবে না। তাই মনিরুল যখন সুযোগ পেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেল তখন রুবীনা নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে বলেছিল, বিয়ের আগে এসব হলে বিয়ের পর আর মজা থাকবে না। বিয়ের পর যা কিছু করো আমি আপত্তি করবো না।
রুবীনা এত তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব দিবে মনিরুল ভাবেনি। সে তখন তাকে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। সেইজন্য ঐ দিন তাকে নিয়ে কাবিন করতে যাবে বলে বলেছিল। জানাজানি করে বিয়ে করতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই গোপনে এই ব্যবস্থা করেছিল। এই সমস্ত চিন্তা করতে করতে রুবীনা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। এরপর আর কি করে সকলের কাছে মুখ দেখাবে? কদিন ধরে কিছু খেতে পারছে না, শুধু বমি পায়। একদিন তো ভাবির সামনেই ওকি করতে করতে শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে বেঁচেছে। তাকে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। এই বুঝি ভাবির কাছে ধরা পড়ে গেল? এভাবে আর কত দিন পাপকে লুকোতে পারবে? মনিরুলকে বিয়ে করে পূর্বের পাপটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাকেও মহিমের মত দেখল। সে তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল। সেইদিন সন্ধ্যার পর দুটো চিঠি লিখল। একটি মাকে আর
অন্যটা থানার দারোগাকে।
মায়ের চিঠি- মা, আমি তোমার কলঙ্কিনী মেয়ে। আমার আর এ দুনিয়াতে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুমি জেনে খুব দুঃখ পাবে, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমি মা হতে চলেছি। আমি অনেক চিন্তা করে দেখেছি, দুনিয়ার কোনো কিছু দিয়ে এ পাপ ঢাকতে পারব না। তাই আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম। আমার এই পরিণতির জন্য আমি কাউকে দায়ী করলাম না। শুধু তুমি দুনিয়ার সব মায়েদের বলে দিও, তারা তাদের মেয়েদের যত লেখাপড়া করাক না কেন, ছেলেদের সঙ্গে যেন ফ্রীভাবে মেলামেশা করতে না দেয়। যুবক যুবতীরা এক সঙ্গে ফ্রী মেলামেশা করলে কোনো এক দূর্বল মুহূর্তে অপকীর্তি করে ফেলবেই। ভাবির কাছে শুনেছিলাম, এই জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দঃ) ছেলেমেয়েদের এক সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছেন। মেয়েদের কাজের ও থাকার স্থান আলাদা করে দিয়েছেন। এই সব শিক্ষা তুমি আমাকে দাওনি। তুমি আমাকে ধর্মেরও কোনো জ্ঞান দাওনি। এই সমস্ত জ্ঞান আমি ভাবির কাছে পেয়েছি। বিয়ের আগে প্রথম যখন ভাবি আমাদের বাড়িতে আসে তখন আমি তাকে সেকেলে আনকালচার্ড মেয়ে মনে করে এড়িয়ে চলেছি। যখন তাকে পরশ পাথর বলে চিনলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভাবি ও দাদাদেরকে আমার জন্য দোয়া করতে বলো। তোমাকে আর কি দোষ দেব। এটাই আমার তকদীর। পারলে এই কলঙ্কিনী মেয়েকে ক্ষমা করো। ইতি- রুবীনা।
দারোগার চিঠি-দারোগা সাহেব, আমি আমার দুস্কর্মের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। এর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি এক ভাগ্য বিড়ম্বনা চরিত্রহীন মেয়ে। আমার মত মেয়ে এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো মনে করে এই পথ বেছে নিলাম। আপনারা আমার মা, ভাই, ভাবি এবং অন্য কাউকে সন্দেহ করবেন না। আমি নিজে স্বেচ্ছায় সকলের অগোচরে চলে যাচ্ছি। আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ, আমার লাশ ময়না তদন্ত করবেন না। আশা করি, আপনি একজন মৃত্যুপথ যাত্রীর অনুরোধ রক্ষা করে তাড়াতাড়ি দাফনের অনুমতি দিবেন। নিজের মেয়ে বা বোন মনে করে আমার এই অনুরোধ রাখার জন্য আবার অনুরোধ করছি। ইতি-রুবীনা।