সব ব্যবস্থা করে ওরা গাড়িতে উঠল। সামনের সীটে সবাই বসেছে।
গাড়ি চলতে শুরু করার পর রফিক বলল, আব্বু এটা তোমার গাড়ি? সে মাঝখানে বসেছে।
গাড়ি চালাতে চালাতে মনিরুল ছেলের গালটা আলতো করে টিপে আদর করে বলল, হ্যাঁ আব্বু, এটা তোমার আরুর গাড়ি। ওরা যখন ঘরে পৌঁছল তখন বিকেল পাঁচটা।
মনিরুলের বাবা জাহিদ সাহেব তখন বাড়ির সামনের লনে স্ত্রী ও মেয়েসহ বৈকালিক জলযোগ করছিলেন। মনিরুলের গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে সেদিকে সকলে একবার চেয়ে খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। তিনি গত রাত্রে রেহানার কাছে ছেলের অপকীর্তির সব কথা শুনেছেন।
মনিরুল গাড়ি পার্ক করে নেমে ছেলের একটা হাত ধরে আসমাকে সঙ্গে করে একবারে তাদের কাছে এসে বলল, আব্বা, আমি আসমাকে বিয়ে করেছি। আজ সকালে মনিরুল যাওয়ার সময় কাজি অফিস থেকে আসমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসবার কথা রেহানাকে বলেছিল। রেহানা চা খেতে খেতে একটু আগে মা-বাবাকে সেকথা বলেছে।
জাহিদ সাহেব কয়েক মুহূর্ত গম্ভীর হয়ে বসে থেকে রাগে ফেটে পড়লেন। বললেন, তুমি একটা স্কাউণ্ডেল। তোমার মত চরিত্রহীন ছেলের আমি বাবা, এ কথা মনে করলে নিজের প্রতি ঘৃণা হয়। একটা মেয়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে তার সর্বনাশ করে এতদিন ভুলে ছিলে। মেয়েটার যদি কোনো অঘটন ঘটে যেত, তা হলে তোমাকে আমি দূর করে তাড়িয়ে দিতাম। লেখাপড়া করে তুমি একটা জানোয়ার হয়েছ।
রফিক জাহিদ সাহেবের রাগ দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। তারপর সে
সকলের অলক্ষ্যে জাহিদ সাহেবের সামনে গিয়ে বলল, কে আপনি? আমার আন্ধুকে বকছেন কেন?
জাহিদ সাহেব চমকে উঠে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, অবিকল মনিরুলের অবয়ব। তিনি তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন, আমি তোমার দাদু। তোমার আব্বু তোমাদের এতদিন আনেনি বলে বকলাম। তোমার নাম কি ভাই?
আমার নাম রফিকুল ইসলাম। আমাকে সবাই রফিক বলে ডাকে।
বাহ বেশ সুন্দর নাম তো। রফিক মানে বন্ধু। তা হলে আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু হলে। এবার থেকে আমরা দু’বন্ধুতে মিলে খুব গল্প করব, কি বল?
আপনি গল্প জানেন? কি মজা! আমি কিন্তু আপনার কাছে ঘুমাব। সেই সময় আপনি গল্প বলবেন।
তাই হবে ভাই। তারপর আমার মুখের দিকে চাইতে অনেক দিন আগের একটা আবছা মুখ মনে পড়ল। সে দিন বোধ হয় এই মেয়েটাই মনিরুলের খোঁজ। করে অনেক কথা বলেছিল? তাকে অপমান করে টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল। মেয়েটা টাকা তার পায়ের কাছে ফেলে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিল। আজ সেকথা মনে হতে খুব অনুতপ্ত হলেন। বললেন, বৌমা, তোমাকে সেদিন ভুল বুঝে অনেক অপমান করে তাড়িয়ে দিয়ে অন্যায় করেছি। বুড়ো ছেলে মনে করে আমাকে। ক্ষমা করে দাও মা।
আসমা বসে পড়ে শ্বশুরের পায়ে হাত দিয়ে বলল, আপনি ক্ষমা চেয়ে আমাকে গোনাহগার করবেন না। সবকিছু তকদিরের লিখন। যার তকদিরে যতদিন বিড়ম্বনা থাকে, তাকে ততদিন সেটা ভোগ করতেই হবে। আমাকে আপনি পূত্রবধূ হিসাবে। পায়ে ঠাই দিয়ে ধন্য করেছেন। সেই জন্য আল্লাহপাকের দরবারে জানাই লাখো শুকরিয়া। তারপর ফুঁপিয়ে উঠল।
জাহিদ সাহেব তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আল্লাহ তোমাদের সুখি করুন। তারপর মেয়ে ও স্ত্রীর দিকে চেয়ে বললেন, বৌমাকে ঘরে নিয়ে যাও। তোমরা দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন?
আসমা উঠে এসে শাশুড়ীকে কদমবুসি করল।
তার দেখাদেখি মনিরুলও মা-বাবাকে কদমবুসি করল।
রেহানা আসমার হাত ধরে বলল, এস ভাবি আমরা ঘরে যাই।
১১. ঐদিন রুনীনা বাড়ি ফিরে
ঐদিন রুনীনা বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিছানায় শুয়ে রইল। চিন্তা করতে লাগল, এখন কি করবে। যদি মায়ের কথামত মহিমের সঙ্গে মেলামেশা না করত, তা হলে এই অঘটন ঘটত না। তখন তার মনে অনেক কথা ভেসে উঠল। মহিম তাদের পাড়ার বড় লোকের ছেলে। দেখতে সুন্দর। লেখাপড়াতেও ভালো। কিন্তু সে চরিত্রহীন। বড় লোকের সুন্দর মেধাবী ছেলের বান্ধবীর অভাব হয় না। সে প্রত্যেককে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মধু খেয়েছে। অনেকে তার আসল রূপ জানতে পেরে সরে গেছে। রুবীনা পাড়ার মেয়ে বলে এতদিন পরিচয় থাকলেও কোনো অশ্লীল কাজ তার সঙ্গে করেনি। কিন্তু ইদানীং বান্ধবীর অভাবে রুবীনার পিছনে লেগেছিল।
স্কুল জীবন থেকে তাদের পরিচয়। কলেজে ঢুকে সেটা গাঢ় হয়। প্রায় প্রতিদিন গভীর রাতে মহিম এসে সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রুবীনার সঙ্গে গল্প করত। একদিন তার মা সোহানা বেগম জানতে পেরে মেয়েকে রাগারাগি করেন। কিন্তু রুবীনা শোনেনি। গোপনে গোপনে তার সঙ্গে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াত। এক ছুটির দিনে কাউকে কিছু না বলে সে মহিমের গাড়িতে করে ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে যায়। সেদিন মেঘলা ছিল। সেখানে পৌঁছাবার কিছুক্ষণপর ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ হল। দিনের বেলাতে সন্ধ্যার মত অন্ধকার হয়ে এল। ওরা বেড়াতে বেড়াতে ছুটে এসে ডাক বাংলোতে উঠল। খুব জোরে ঝড় হচ্ছিল বলে একটি কামরার মধ্যে ঢুকে লাইট জ্বেলে দুজনে দুটো চেয়ারে বসল। তখন আর কেউ সেখানে ছিল না। ঝড়ের দাপট এক সময় কারেন্ট অফ হয়ে গেল। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠে কাছাকাছি কোথাও বাজ পড়ল। রুবীনা ভয় পেয়ে ছুটে এসে মহিমকে জড়িয়ে ধরল। মহিম তাই চাচ্ছিল। রুবীনাকে সে বুঝিয়ে সুজিয়ে নিজের মনস্কামনা চরিতার্থ করার জন্য এখানে এনেছে। সুযোগ পেয়ে সেও রুবীনাকে জড়িয়ে ধরল। রুবীনার নরম তুলতুলে যৌবন পুষ্ট শরীরের স্পর্শে মহিমের শরীরের অনুকণাগুলো সতেজ হয়ে উঠল। ভাবল, আজ তার মনের ইচ্ছা পূরণ হবে। সে একটা হাত দিয়ে রুবীনার মুখটা নিজের মুখের কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে বলল, এত ভয় পাচ্ছ কেন? আমিতো রয়েছি। তারপর তার নিচের ঠোঁট চুষতে লাগল। রুবীনা প্রথমে ভয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল, কিন্তু মহিম যখন তার ঠোঁট চুষতে লাগল তখন তার যৌবন জোয়ার উত্তাল তরঙ্গের মত প্রবাহিত হতে লাগল। সে সব কিছু ভুলে গেল। সমস্ত শরীর তার থর থর করে কেঁপে উঠল। ঘন ঘন গরম নিঃশ্বাস পড়তে লাগল। তার অবস্থা দেখে মহিম তখন পাগলের মত বুকে চেপে ধরে পীষে ফেলার চেষ্টা করল। রুবীনা বলল, প্লীজ মহিম, অতজোরে চাপ দিয়ো না, আমার লাগছে। মহিম মনে করল, রুবীনার তা হলে এসব ভালো লাগছে। সে তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। সুযোগ পেয়ে আদিমতায় মেতে উঠল। একসময় দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলতে পারল না। একটু পরে রুবীনা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। নিজের ভুলের অনুশোচনায় সে তখন জর্জরিত।