মনিরুল আর সহ্য করতে পারল না। একেবারে ভেঙ্গে পড়ল। সে ভূলে গেল বারান্দায় তার সঙ্গীরা থাকতে পারে। ঝুকে পড়ে আসমাকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, আসমা, তুমি আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছ। আমি তোমার কাছে চরম অন্যায় করেছি। মাফ করে দিয়ে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দাও। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমার অন্যায়ের জন্য লজ্জিত ও দুঃখিত হৃদয়ে তোমার কাছে মাফ চাইছি। বল আসমা বল, মাফ করে দিয়ে আমাকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিবে।
আসমাও মনিরুলকে আঁকড়ে ধরে ফোঁপাতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আসমা নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে এসে কাপড়টা ঠিক করে বলল, আল্লাহ কি এত সুখ আমার কপালে রেখেছেন? আমার স্বপ্ন কি সফল হবে? তুমি যা বলবে তাই করব। এখন বাথরুম থেকে চোখে-মুখে পানি দিয়ে ধুয়ে এস। ওরা সবাই আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে।
মনিরুল বাথরুম থেকে এসে বলল, তুমি এখানে থাক, আমি আসছি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ওরা সবাই তখন গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছিল। সে তাদের কাছে এসে লাইলীর দিকে দু’হাত বাড়িয়ে বলল, ভাবি, ওকে আমার কাছে দিন। আপনারা তো সবকিছু জানেন। আপনারা যান, ওর সঙ্গে আমার আরও কথা আছে।
লাইলী ছেলেটাকে কোল থেকে নামাতে নামাতে বলল, যাও সোনামনি তোমার আন্ধুর কাছে যাও।
মনিরুল আর কোনো কথা না বলে ছেলেকে বুকে তুলে নিয়ে আসমার কাছে ফিরে এল।
সেলিম সবাইকে নিয়ে গাড়িতে উঠল।
রুবীনা বলল, ভাইয়া আমার ভীষণ মাথা ধরেছে, আমাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে তোমরা যেখানে খুশি যাও।
রেহানা বলল, আজ বেড়াবার মুড নষ্ট হয়ে গেছে, তোমরা যাও। আমি বাড়ি চললাম বলে নিজেদের গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিল।
মনিরুল ছেলেকে বুকে করে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, এর নাম কি রেখেছ?
ছেলেসহ মনিরুলকে আসতে দেখে আমার চোখে আবার পানিতে ভরে গেল। ধরা গলায় বলল, রফিকুল ইসলাম।
রফিকুল মনিরুলের বুকে থেকেই বলল, আম্মা, মামী বললেন, ইনি আমার আব্বু। তুমি এতদিন আমাকে আন্ধুর কাছে নিয়ে যাওনি কেন? মা কিছু বলছে না দেখে সে মনিরুলের মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি আমার আব্বু?
ছেলেকে আদর করে বুকে চেপে ধরে মনিরুল বলল, হ্যাঁ সোনা, আমি তোমার আব্বু। রফিক মায়ের কাছে ছাড়া এত আদর আর কারও কাছ থেকে পায়নি। সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, এতদিন আসেননি কেন? আম্মা কত কাঁদে।
এইতো এসেছি বাবা আর তোমার আম্মা কাঁদবে না। তারপর আসমাকে বলল, চল একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
আজ আমি বড় ক্লান্ত। তুমি বস, আমি চা করে নিয়ে আসি। পাশেই রান্না ঘর। সেখান থেকে কয়েকটা বিস্কুট বের করে মনিরুলকে খেতে দিল।
রফিক বলে উঠল, আমিও চা খাব আম্মা।
মনিরুল ছেলের দুহাতে চারটে বিস্কুট দিয়ে বলল, আগে এগুলো খেয়ে নাও, পরে চা খাবে।
চা খাওয়ার সময় মনিরুল বলল, তুমি আগামীকাল ছুটি নেবে। আমি ঠিক দশটার দিকে আসব। তুমি রেডী থাকবে। কালকেই বিয়ের কাজটা সারতে চাই। আসমা বলল, বেশ, তাই হবে। মনিরুল বিদায় নিয়ে চলে গেল।
মনিরুলকে বিদায় দিয়ে আসমা চোখের পানি ফেলছিল। রফিক মাকে কাঁদতে দেখে বলল, আব্বু চলে গেছে বলে তুমি কাঁদছো? আবার কখন আব্বু আসবেন?
আসমা চোখ মুছে ছেলেকে চুমো খেয়ে বলল, তোমার আন্ধু আবার কালকে আসবেন।
পরের দিন ঠিক দশটায় স্কুলের গেটের কাছে মনিরুলকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে আসমা এগিয়ে এসে সালাম দিল।
মনিরুল সালামের উত্তর দিয়ে বলল, তুমি তৈরি?
আসমা মাথা নেড়ে সায় দিল।
রফিক কোথায়?
তাকে রিজিয়া নামে আমার এক সহকর্মির তত্বাবধানে রেখে এসেছি।
তা হলে এস বলে মনিরুল গাড়িতে উঠে পাশের গেট খুলে দিল।
মনিরুল তাকে নিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে কাবিন ও বিয়ের কাজ সারল। তারপর বেলা দুটোর সময় ফিরে এল। রিজিয়াকে রফিক বড় বিরক্ত করছিল। তার মায়ের জন্য খুব কান্নাকাটি করছিল। মার সঙ্গে আব্বাকে দেখতে পেয়ে কান্না থামিয়ে ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আমি তোমার জন্য কাঁদছিলাম। তারপর মনিরুলের দিকে চেয়ে বলল, আপনি আম্মাকে নিয়ে গেলেন, আমাকেও নিয়ে গেলেন না কেন?
মনিরুল ছেলেকে কোলে নিয়ে চুমো খেয়ে বলল, আমরা একটা কাজে গিয়েছিলাম। এবার আর কখনো তোমাকে ফেলে কোথাও যাব না। তারপর আসমাকে বলল, তুমি সব গুছিয়ে নাও, আমি তোমাদের হেড মিস্ট্রেসের সঙ্গে দেখা করে এখনই আসছি।
হেড মিস্ট্রেস একজন অচেনা লোককে রফিককে কোলে নিয়ে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কাকে চান?
মনিরুল রফিককে দেখিয়ে বলল, ওর মা আসমা আমার স্ত্রী, তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। তাই আপনার অনুমতি নিতে এসেছি।
হেড মিস্ট্রেস বসতে বলে বললেন, স্বামীর বাড়ি তো মেয়েদের নিজের বাড়ি। নিয়ে যাবেন ভালো কথা। আসমা কী চাকরি রিজাইন দিয়ে একেবারে চলে যেতে চায় নাকি? তা হলে কিন্তু আমার আপত্তি আছে। কারণ ওর মত মেয়ে পাওয়া মুশকিল। বাচ্চারা আসমা আপা বলতে অজ্ঞান। এতদিন আমি শাসন করে যা পারি নি, মাত্র কয়েক মাস হল এসে সে তার থেকে অনেক বেশি করেছে।
মনিরুল বলল, দেখুন চাকরি করবে কি না করবে সে কথা ও আপনাকে পরে জানাবে।
সেলিম সাহেব আপনার কে হন?
ফুপাতো ভাই।
ঠিক আছে ওকে নিয়ে যান। যাওয়ার আগে একটা ছুটির দরখাস্ত দিয়ে যেতে বলুন।