আসমান জমিনের সব রূপ কেড়ে নিয়েছে। সেলিম সেই রূপের সাগরে তলিয়ে গিয়ে। বাহ্যিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
অনেকক্ষণ ঐভাবে তাকে নিয়ে সেলিমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাইলী তার পূর্ব অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারল, সেলিম নিশ্চয় বাহ্যিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সে তখন দু হাত দিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে মুখে মুখ ঘসে বলল, এই, তোমার কষ্ট হচ্ছে না? হাত ব্যাথা করবে তো, আমাকে নামাও না। তবু যখন সেলিমের হুঁস হল না তখন সেলিমের ঠোটু নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে আস্তে কামড়ে ধরে রইল।
এবার সেলিম সজ্ঞানে ফিরে এল। তারপর সে লাইলীর সারা মুখে চুমোয় ভরিয়ে দিয়ে শেষে তার লাল গোলাপী ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ফিস ফিস করে বলল, তুমি আমার ঠোঁট কামড়ে দিয়েছ, আমি তার শোধ তুলে নিই?
লাইলী মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। সেলিম তার নরম তুল তুলে ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দিয়ে একটু চাপ দিয়ে বলল, সেই আল্লাহপাকের দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া জানাই, যিনি তোমাকে আমার সহধর্মিণী করেছেন। তারপর খাটে বসে লাইলীকে কোলের উপর রেখে জিজ্ঞেস করল, বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আমার প্রতি তোমার খুব রাগ হয়েছিল তাই না?
লাইলী অপূর্ণ চোখে তার দিকে চেয়ে বলল, আমার অন্তর্যামী জানেন, আমি তোমার কখনো দোষ খুঁজেছি কি না বা তোমাকে দোষী মনে করেছি কি না। ভেবেছি, আমার মত হতভাগিণী তোমার অযোগ্য, তাই এইরূপ হয়েছে। আজ যদি আব্বা বেঁচে থাকতেন, তা হলে সব থেকে বেশি খুশি হতেন।
সেলিম তার টস টসে রক্তিম গোলাপী ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলল, চুপ। তোমাকে একদিন বারণ করেছিলাম না, নিজেকে কোনোদিন হতভাগিণী বলবে না? তারপর অধরে অধর ঠেকিয়ে বলল, প্রতিজ্ঞা কর, আর কখনও একথা বলবে না।
লাইলী আস্তে করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
সেলিম লাইলীকে পাশে বসিয়ে বলল, এস চাচাজানের রূহের মাগফেরাত কামনা করে আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া চাই। মোনাজাত শেষে লাইলী স্বামীর দুটো হাত নিজের মাথায় রেখে বলল, তুমি দোয়া কর, আমি যেন কখনও তোমার প্রেমের অমর্যাদা না করি।
সেলিম দোয়া করে বলল, আমি সত্যি তোমাকে নিজের করে পেয়েছি, না এখন ও স্বপ্ন দেখছি।
লাইলী তার বুকে মাথা রেখে বলল, আল্লাহপাক যেন সারাজনম আমাদের এই স্বপ্ন না ভাঙ্গেন।
সেলিম লাইলীর কাছ থেকে সব ঘটনা জেনে নিয়ে বলল, ঐ রকম একটা চিঠি মাও পেয়েছে। মা যেদিন চিঠি পায়, সেদিন আমি এ্যাকসিডেন্ট করি। তাই সে তোমাকে অপয়া ভেবে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমি মায়ের সে ভুল ভাঙ্গিয়ে দেব। তুমি মায়ের উপর মনে কোনো কষ্ট রাখনি তো?
লাইলী বলল, আব্বা যেদিন গহনা ফেরৎ দিয়ে এলেন, সেদিন রাত্রেই হার্টের ব্যাথায় মারা যান। তখন খালা আম্মাকে দায়ী মনে করে তার উপর আমার মনে কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন আমার বিবেক বলল, কারুর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী হয় না, হায়াত মউত একমাত্র আল্লাহপাকের হাতে। তুমি না তকদীর বিশ্বাস কর? তিনি যদি তোমাকে তার জোড়া করে পয়দা করে থাকেন, তা হলে বিয়ে ভেঙ্গে গেলেও জোড়া লাগতে কতক্ষণ তিনি সর্বশক্তিমান। যখন যা কিছু করার ইচ্ছে করেন, তখন শুধু বলেন, হও, আর তা তখুনি হয়ে যায়। এইসব চিন্তা করার পর থেকে তার প্রতি আমার মনের কষ্ট দূর হয়ে গেছে।
সেলিম লাইলীকে জড়িয়ে ধরে আবার সারামুখে চুমোয় ভরিয়ে দিয়ে বলল, আল্লাহপাক তার এক প্রিয় বান্দীর স্বামী করে আমাকে ধন্য করেছেন। সেই জন্যে আবার তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছি।
লাইলীও তার স্বামীর সোহাগের প্রতিদান দিয়ে বলল, ইয়া আল্লাহ, তুমি তোমার এই নগণ্য বান্দীকে স্বামীর খেদমত করে তাকে সুখী করার তৌফিক দাও।
সে রাত্রে তারা ঘুমোতে পারল না। সারারাত প্রেমালাপ করে কাটাল। দুজনেরই মনে হয়েছে ঘুমিয়ে পড়লে যদি এই মধুময় স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। ফজরের আজান শুনে সেলিম বলল, আল্লাহপাক আজকের রাতটাকে বড় ছোট করে তৈরি করেছেন।
লাইলী মৃদু হেসে বলল, সুখের রাত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তারপর দুজনে একসঙ্গে ফজরের নামায পড়ে সেলিম বলল, এস, এবার একটু ঘুমিয়ে নিই।
লাইলী বলল, উঠতে বেলা হয়ে গেলে মা কি মনে করবেন? আমার লজ্জা করবে না বুঝি?
সেলিম বলল, মা সবকিছু জানেন। উনি কিছু মনে করবেন না। তারপর তারা আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
লাইলীর যখন ঘুম ভাঙল তখন দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং আওয়াজ করে বেলা নটা ঘোষণা করল। দেখল, এখনও সেলিম তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। তার ঠোঁটে আস্তে করে একটা হাম দিয়ে খুব ধীরে ধীরে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে বাথরুমে গেল। ফিরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে সেলিমের পাশে বসে তার পায়ে হাত বুলিয়ে ঘুম ভাঙাবার চেষ্টা করল।
সেলিমের ঘুম ভেঙে গেল। ধীরে ধীরে চোখ খুলে লাইলীকে বুকে টেনে নিল।
কিছুক্ষণ স্থির থেকে লাইলী বলল, এই, এবার উঠে পড়। সাড়ে নয়টা বাজে, আমি এখন মায়ের কাছে যাব কি করে? ভীষণ লজ্জা করছে।
সেলিম তাকে আদর করতে করতে বলল, একজন পুরুষের বুকের উপর শুয়ে থাকতে লজ্জা করছে না বুঝি?
লাইলী বলল, ধ্যেৎ, তুমি পুরুষ হতে যাবে কেন?
তা হলে আমি কি মেয়ে মানুষ?
মেয়ে মানুষও না পুরুষও না। তুমি যে আমার শাহানশাহ। আর আমাকে আল্লাহপাক সেই শাহানশাহর চরণের সেবা করার জন্য আইনের মাধ্যমে বেঁধে দিয়েছেন। তারপর তার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলল, এভাবে অনন্তকাল থাকতে চাই, কিন্তু কর্তব্য বলে তো একটা কথা আছে। সোনা যে, এবার উঠে হাতমুখ ধুয়ে নাও। এখানে মা না থাকলে তোমাকে ছেড়ে উঠতাম না।