ঘন্টা খানেকের মধ্যে খালেদ এসে গেল। সেলিমের সঙ্গে সালাম ও পরিচয় বিনিময়ের পর সকলে রওয়ানা হল।
ম্যানেজার সেলিমের কাছ থেকে ফিরে এসে অফিসের সমস্ত ষ্টাফকে নিজের রুমে ডেকে পাঠালেন। সকলে এলে ম্যানেজার সাহেব বললেন, আপনাদেরকে একটা আশ্চর্যজনক আনন্দ সংবাদ জানাবার জন্য ডেকেছি। আমাদের এখানে যে মেয়েটা ষ্টেনোর কাজ করছে, সে আমাদের সাহেবের বাগদত্ত। সাহেব এ্যাকসিডেন্ট করে বিদেশে চিকিৎসার জন্য চলে গেলে, মেয়েটি ভাগ্যের ফেরে না জেনে এখানে চাকরি নেয়। সাহেব অফিসে আপনাদের সবার বায়োডাটা দেখার সময় মেয়েটির ফটো দেখে চিনতে পারে। আর আমাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, সে কক্সবাজার বেড়াতে গেছে। তাই সেদিন বিকেলে কক্সবাজারে গিয়ে তাকে নিয়ে ফিরে এসেছে। আজ তার সঙ্গে সাহেবের সন্ধ্যার পর বিয়ে হবে। আপনারা সকলেই বিয়েতে আমন্ত্রিত।
ম্যানেজারের কথা শুনে সকলে আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, আমরা মেয়েটিকে যা-তা বলে খুব অন্যায় করেছি।
তাদেরকে ফিস ফিস করে কথা বলতে শুনে ম্যানেজার সাহেব আবার বললেন, আপনারা এখন যে যার কাজ করুন গিয়ে, সন্ধ্যার পর সকলেই বাসায় আসবেন।
সেলিম সুলাতানা ও খালেদকে নিয়ে ফিরে এল। ওরা ড্রইংরুমে এসে বসল। লাইলী সুলতানাকে নিয়ে বেডরুমে ঢুকে জড়িয়ে ধরে বলল, সই, আমি যে এখনও নিজেকে বোঝাতে পারছি না, এটা বাস্তব না স্বপ্ন।
সুলতানা বলল, আমিও তোর চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে ভাবলাম, এটা বাস্তব না স্বপ্ন। এখন দেখছি সব বাস্তব। আল্লাহ তোদের সুখী করুক ভাই। একটা সোনার নেকলেস ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের করে লাইলীর গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল, এটা আমাদের তরফ থেকে তোকে উপহার দিলাম।
শুধু শুধু এত দামী জিনিষ দিতে গেলি কেন তোর ভালবাসাকে আমি এর চাইতে দামী মনে করি।
সেই ভালবাসার নমুনা স্বরূপই তো এটা তোকে উপহার দিলাম। যাকে ভালবাসি, তাকে কি আর কম দামী জিনিষ দিতে পারি?
তোর খালেদ সাহেবের চেয়েও কি আমাকে বেশি ভালবাসিস? বলে হেসে ফেলল।
দূর পাগলী, তোকে আর তাকে ভালবাসার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
সে আবার কি রকম?
অত ন্যাকা সাজিসনি। তবু বলছি শোন, তুই তো খালাম্মা আর সেলিমকে খুব ভালবাসিস। কেউ যদি তোকে জিজ্ঞেস করে, দুজনের মধ্যে কাকে বেশি ভালবাসিস, তখন কি বলবি?
বলব দুজনকেই বেশি ভালবাসি। এই কথায় দুজনেই হেসে উঠল।
বিয়ে পড়াবার আগে সুলতানা সইকে মনের মত করে সাজাল। তারপর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, দেখতো সই, ঐ মেয়েটিকে চিনতে পারিস কি না?
লাইলী আয়নার দিকে চেয়ে সত্যি নিজেকে চিনতে পারল না। তার মনে হল, আয়নার মেয়েটি অন্য কেউ, লাইলী নয়।
কিরে চুপ করে আছিস কেন তারপর গাল টিপে দিয়ে বলল, সত্যি আল্লাহ তোকে এত রূপ দিয়ে বানিয়েছেন, সে আর কি বলব। তিনি যদি আমাকে পুরুষ করে বানাতেন তা হলে তোকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতাম। সেলিম খুব ভাগ্যবান। তার ভাগ্যকে আমি মেয়ে হয়েও হিংসা করছি।
লাইলী নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জা পেয়ে বলল, তুই বুঝি দেখতে খারাপ, তোর মত রূপ কটা মেয়ের আছে শুনি।
তোর কথা মানি, কিন্তু আমার সই অদ্বিতীয়া।
রাত্রি এগারোটায় বিয়ের কাজ ও খাওয়া-দাওয়া মিটে গেল। আমন্ত্রিত অতিথিরা সব বিদায় নিয়ে চলে গেল। শুধু খালেদ স্ত্রীকে নিয়ে যাবে বলে খালেদ বরবেশি সেলিমের সঙ্গে উইংরুমে বসে বসে গল্প করতে লাগল। সুলতানা বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত। একটু পরে লাইলীকে বাসর বিছানায় বসিয়ে রেখে ড্রইংরুমে এসে সেলিমের হাত ধরে সীত হাস্যে বলল, চল ভাই, তোমার প্রিয়তমা তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে। যাওয়ার সময় স্বামীর দিকে চেয়ে বলল, তুমি একটু অপেক্ষা কর, আমি কপোতকে কপোতীর কাছে দিয়ে এক্ষুণি আসছি। তারপর এক রকম জোর করে সেলিমকে নিয়ে এসে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, আল্লাহপাকের উপর ভরসা করে আমার সইকে তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। দেখবেন, সে যেন কোনো বিষয়ে কষ্ট না পায়। কষ্ট দিলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আল্লাহ তোমাদের সুখি করুন। আজ আসি আবার দেখা হবে। তারপর আল্লাহ হাফেজ বলে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে স্বামীর কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, কি গো, আমার সই-এর বাসর রাত্রির কথা ভেবে তোমারও কী আমাকে নিয়ে বাসর করার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি।
খালেদ হেসে বলল, তোমার অনুমান ঠিক। তবে আমার মন বলছে, তোমার মনের ইচ্ছটা আমার উপর দিয়ে বলে ফেললে। তারপর লাইলীর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে হাসতে হাসতে বাসায় ফেরার জন্য গাড়িতে উঠল।
সেলিম বাসর ঘরে ঢুকে লাইলীর দিকে চেয়ে এতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল। যখন বুঝতে পারল সুলতানা ও খালেদ চলে গেছে, তখন ধীরে ধীরে খাটের কাছে গেল। লাইলী খাটের উপর বসে তার দিকে চেয়ে ছিল। সেলিম এগিয়ে এসে খাটের কাছে দাঁড়াতে খাট থেকে নেমে তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল।
সেলিম তাকে দুহাতে পাজাকোলা করে তুলে নিয়ে তার কপালে চুমু খেয়ে সুবহান আল্লাহ বলে তার দিকে অপলক নয়নে চেয়ে রইল। সে লাইলীর রূপের ঐশ্বর্যের মধ্যে ডুবে গেল। আগেও তো সে কতবার দেখেছে, কিন্তু এখনকার লাইলী যেন অন্য মেয়ে। তার মনে হল, বেহেস্তের হুর আসমান থেকে নেমে এসে তার হাতে ধরা দিয়েছে। বিয়ের পোশাকে ও নানারকম অলঙ্কারে সজ্জিত লাইলী যেন