জাভেদ মালপত্র গাড়ি থেকে নামাবার সময় ভাবল, সাহেব গেলেন একা, এলেন তিনজন। উনারা কে হতে পারে যেই হোক না কেন তাতে আমার কি ভেবে মালপত্র নিয়ে উপরে এল।
উপরে পাঁচ কামরা ঘর। একটাতে সেলিম আর একটাতে জাভেদ থাকে। বাকি রুমগুলো খালি পড়ে থাকে। জাভেদ মালপত্র উপরে নিয়ে এলে সেলিম তাকে বলল, তুমি পাশের রুমটা পরিষ্কার কর, আর শেষের রুমটায় তুমি থকবে। তোমার মালপত্র নিয়ে সেখানে রেখে এস। আমার রুমের পাশেরটা উইংরুম আর তার পাশেরটা আর একটা বেডরুম করবে। আমি সেই মত আসবাবপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোমার এখন অনেক কাজ। দেখছ না, মেহমান এসেছে। বাজার করে এনে ভালো করে রান্না করবে। তারপর কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বলল, যাও তাড়াতাড়ি কর। আর শোন, এখন আগে আমাদের নাস্তার ব্যবস্থা কর।
নাস্তা খেয়ে সেলিম হামিদা বানুকে বলল, মা, আপনি বিশ্রাম নিন। আমরা একটু বাইরে যাব। তারপর লাইলীকে সাথে করে মার্কেটে গিয়ে ঘরের প্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কিনে দোকানের ম্যানেজারকে ঠিকানা দিয়ে পাঠিয়ে দিতে বলল। তারপর কাপড়ের দোকানে গিয়ে কয়েকটা দামী শাড়ী ও গহনার দোকানে গিয়ে কয়েক সেট সোনার অলঙ্কার কিনে বাসায় ফিরল।
ততক্ষণে জাভেদ ফার্নিচারগুলো পাশের দুটি রুমে সাজিয়ে দিয়ে রান্নার কাজে লেগে গেছে। হামিদা বানু রান্নাঘরে এসে তার সঙ্গে রান্নার তদারক করছেন।
সেলিম ম্যানেজার সাহেবকে উপরে ডেকে পাঠালে তিনি সেলিমের ঘরে এসে লাইলীকে দেখে অবাক হলেন।
ম্যানেজার সাহেবকে বসতে বলে সেলিম বলল, আপনি বোধ হয় শুনে থাকবেন, আমার পছন্দ করা মেয়েকে আমার মা পুত্রবধূ করবেন বলে আমাদের বাড়ির এক ফাংশানে তাকে বালা পরিয়ে সকলের সামনে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ আমরা তাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেই মেয়েটি ভাগ্যের অন্বেষণ আমদের এই অফিসে না জেনে চাকরি নেয়। তারপর লাইলীকে দেখিয়ে বলল, আপনার ষ্টেনোকে নিশ্চয় চিনতে পারছে। অফিসে ওর ফটো দেখে কক্সবাজার থেকে অনেক কষ্ট করে নিয়ে এসেছি। কারণ এই সেই মেয়ে, যার সঙ্গে আমার বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। গতকাল কক্সবাজারে কাবিন করেছি। আপনি আমার বাবার বয়েসী। আজকেই আমাদের বাকি কাজগুলো আপনাকে সেরে দিতে হবে। আর চাচি মাকে এক্ষুণি আনার ব্যবস্থা করুন।
এতক্ষণ লাইলী লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিল। এবার আস্তে আস্তে এসে ম্যানেজার সাহেবের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল।
ম্যানেজার সাহেব বললেন, থাক মা, বেঁচে থাক। আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি, তিনি তোমাদেরকে সুখী করুন। তারপর সেলিমের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি নিশ্চিন্ত থাক, আমি সব ব্যবস্থা করছি।
ম্যানেজার সাহেব চলে যাওয়ার উপক্রম করলে সেলিম বলল, আর একটা কথা, আজ রাত্রে সব অফিস স্টাফকে বিয়ের দাওয়াত দিবেন।
ম্যানেজার সাহেব সম্মতি জানিয়ে চলে গেলেন।
ম্যানেজার সাহেব চলে যাওয়ার পর লাইলী সেলিমকে বলল, আমার প্রাণের সই সুলতানা এখানে আছে। তার স্বামী এখানকার মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের পফেসর। তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনার ব্যবস্থা কর। তা না হলে সই ভীষণ মনে কষ্ট পাবে।
সেলিম বলল, তোমার সই তো আমাকে চেনে না। তুমি বরং একটা চিঠি লিখে দাও।
তা দিচ্ছি, তবে আমার সই তোমাকে চেনে।
তা চিনতে পারে। কত মেয়েই তো আমাকে চেনে। অথচ আমি তাদের অনেককে চিনি না।
লাইলী একটা চিঠি লিখে সেলিমের হাতে দিল।
সেলিম চিঠি নিয়ে ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে দরজা নক করল।
খালেদ মেডিকেলে চলে গেছে। সুলতানা ময়নার মাকে রান্নার আইটেম বাতলে দিয়ে এসে একটা গল্পের বই পড়ছিল। অসময়ে দরজায় আওয়াজ শুনে বিরক্তির সঙ্গে দরজা খুলে সেলিমকে দেখে অবাক হয়ে বলল, সেলিম ভাই তুমি? এতদিন কোথায় ছিলে? এস ভিতরে এস।
সেলিম ভিতরে এসে ভাবল, লাইলীর কথাই ঠিক। মেয়েটি আমাকে চেনে অথচ আমি তাকে চিনি না। কিন্তু এ কেমন করে হয়? শেষে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাকে চিনলেন কেমন করে? অথচ আমি আপনাকে তো চিনি না।
সুলতানা বলল, তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন? আমি ছেলেবেলা থেকে তোমাকে চিনি। আর সঙ্গে কয়েকবার তোমাদের বাসায় গেছি। তোমার আর সঙ্গে আমাদের দূরের কি রকম একটা সম্পর্ক ছিল। সে তো ছোটকালের কথা। বড় হয়ে ভার্সিটিতে তোমাকে অনেক দেখেছি। তা ছাড়া আমার সই এর লাভার হিসাবে তোমাকে আরও বেশি চিনি।
সেলিম বলল, এখন বুঝলাম। তারপর লাইলীর চিঠিটা বের করে সুলতানার হাতে দিল। এবার সুলতানার অবাক হওয়ার পালা। চিঠি খুলে পড়তে লাগল—সই, আল্লাহপাকের দরবারে লক্ষ লক্ষ শুকরিয়া জানিয়ে তোকে জানাচ্ছি যে, এক্ষুণি আমাদের শুভ কাজ হতে যাচ্ছে। তুই চিঠি পেয়েই সয়াকে সাথে নিয়ে ওর সঙ্গে চলে আসবি। সাক্ষাতে সব কিছু বলব।
ইতি–
তোর সই লাইলী।
চিঠি ভাঁজ করে সেলিমের দিকে চেয়ে বলল, সুবহান আল্লাহ। আল্লাহ তোমার কুদরত বোঝা মানুষের অসাধ্য। যাই হোক, সই এর যখন হুকুম তখন অমান্য করতে পারি না। চা পাঠিয়ে দিচ্ছি খাও, আমি ততক্ষণে তৈরী হয়ে নিই। কথা শেষ। করে কিচেনে গিয়ে ময়নার মাকে মেহমানকে চা দিতে বলল। তারপর স্বামীকে ফোন করে সংক্ষেপে সব কিছু বলে এক্ষুণি বাসায় আসতে বলল। তারপর পোশাক পরিবর্তন করে সেলিমের কাছে এসে তার অতীত জীবনের সমস্ত কথা শুনতে লাগল।