রহমান সাহেব বললেন, তুমি আমাকে অনেক দুঃশ্চিন্তা থেকে বাঁচালে বাবা। আল্লাহ তোমার মনের নেক মকসুদ পুরা করুন। তবে বাবা জেনে রেখ, বিয়ে সাদি তকদিরে লেখা থাকে। আল্লাহ যার সঙ্গে যার জোড়া তৈরি করে রেখেছেন, তার সঙ্গে তা হবেই। কেউ আটকাতে পারবে না।
লাইলী বারান্দা থেকে এবং তার মা পাশের রুম থেকে তাদের সব কথা শুনতে পাচ্ছিল। লাইলী সব শুনে খুব লজ্জা পেয়ে চিন্তা করতে লাগল, এরপর সেলিমের সঙ্গে বেড়াতে যাব কি করে? আর তার মা ভাবছিলেন, কোটিপতির ছেলেকে কি সত্যি জামাই হিসেবে পাব? মেয়ের কপালে কি অত সুখ আছে?
একটু পরে সেলিম রহমান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে লাইলীকে দেখতে পেয়ে বলল, চল নিচে গিয়ে আগে আসরের নামায পড়ে নিই, তারপর বেড়াতে যাব।
সেলিম নামায পড়বে শুনে লাইলী আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলল, আলহামাদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার।) তাঁর দরবারে জানাই কোটি কোটি শুকরিয়া, যিনি অধম বান্দীর দোয়া কবুল করেছেন। ততক্ষণ তার চোখ দিয়ে আনন্দে অশ্রু পড়তে শুরু করেছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সেলিম বলল, তুমি অধম হলে তোমার দোয়া কবুল হত না। তুমি তার প্রিয় বান্দী। তাইতো তিনি তোমার দোয়া কবুল করেছেন।
ড্রইংরুমে সেলিমের নামায পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে লাইলী ভাবির সঙ্গে নামায পড়ে নিল। তারপর সেলিমের কাছে এসে বলল, চল কোথায় বেড়াতে যাবে বলছিলে।
সেলিম বলল, এখানে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পাঁচটার পর আমাদের বাড়িতে বোর্ডের মিটিং আছে। সন্ধ্যার পরে সেই উপলক্ষে একটা ফাংশানও হবে। আমি তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই।
লাইলী বলল, বেশতো চল। তুমি যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানেই যাব।
রহিমা আসরের নামায পড়ে লাইলীর কাছে সেলিম ও খালুজানের সব কথা শুনেছে। সেও খুব খুশি হয়ে ড্রইংরুমে ঢুকে হাসতে হাসতে বলল, কি ভাই, দিল্লী এখন দুরে, না কাছে?
লাইলী ভাবির গাল টিপে দিয়ে বলল, অ্যাভি ভি দূর হ্যায়, (এখনও অনেক দূরে)।
সেলিম বলল, ভাবি, আমি লাইলীকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি, রাত্রে দিয়ে যাব। আপনিও চলুন না ওর সঙ্গে, মা আপনাকে দেখে খুব খুশি হবেন।
রহিমা বলল, তোমার দুলাভাই এর অনুমতি না নিয়ে তো আমি কোথাও যেতে পারি না, অনুমতি নিয়ে অন্য একদিন না হয় যাব।
গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে সেলিম জিজ্ঞেস করল, বেড়াতে যাওয়ার কথা বলতে তোমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল কেন?
লাইলী বলল, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করে তোমাকে নামায পড়ার তওফিক দিয়েছেন জেনে আনন্দে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। আজ কিন্তু আমি তোমাদের ফাংশানে কিছু গাইতে পারব না, সে কথা এখন থেকে বলে রাখছি। সেদিনের কথা মনে হলে আজও আমার যে কি হয়, তা বলতে পারছি না।
সেলিম বলল, সেদিন রেহানা তোমাকে অপমান করার জন্য গাইতে বলেছিল। আজ আর হয়তো সে কিছু বলবে না। তবে যাই বল তোমার গলা কিন্তু অদ্ভুত। আমি তো তোমার গলা শোনার জন্য সেই থেকে পাগল হয়ে আছি। আজও একটা গজল গেয়ে শোনাবে?
লাইলী জোড়হাত করে বলল, মাফ কর। অত লোকের সামনে আমি কিছুতেই গজল গাইতে পারব না।
তা হলে আমার মনের বাসনা মনেই থেকে যাবে?
তোমাকে সময় মত একদিন শোনাব। প্লীজ, আমাকে আর কিছু বল না। তোমার কথা রাখতে না পারলে আমার বড় কষ্ট হয়।
সেলিম বলল, ঠিক আছে তাই হবে। পথে গাড়ি থামিয়ে নানারকম ফল ও মিষ্টি কিনল।
বাড়ি পৌঁছাতে রুবীনা বলল, তুমি এত দেরি করে ফিরলে কেন? মা তোমাকে খুঁজছে। তারপর লাইলীর দিকে চেয়ে বলল, কেমন আছেন।
লাইলী বলল, ভালো আছি।
সেলিম লাইলীকে সঙ্গে করে একেবারে মায়ের কাছে গিয়ে বলল, তুমি নাকি আমাকে খুঁজছিলে?
সোহানা বেগম লাইলীকে দেখে খুশি হয়ে বলে উঠলেন, এদের বাড়িতে গিয়েছিলি বুঝি? তারপর লাইলীকে বললেন, তুমি এসেছ ভালই হয়েছে। এখন মিটিং হবে এবং রাত্রে ফাংশান আছে। অফিসাররা সব এসে গেছেন। এস তো মা, তুমি আমাকে একটু সাহায্য করবে।
সেলিম বলল মা, একটু ওঘরে চল, তোমাকে একটা কথা বলব।
কি কথা এখানেই বল না।
লাইলীর দিকে একবার আড় নয়নে চেয়ে সেলিম বলল, সব কথা কি সকলের সামনে বলা যায়?
পাগল ছেলে, আচ্ছা চল বলে লাইলীকে বললেন, তুমি এখানে বস আমি আসছি। পাশের রুমে গিয়ে সেলিম মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কথাটা শুনে তুমি রাগ করবে না বল?
আজ তোর কি হয়েছে বলতো? ছাড় ছাড়, তোর কথায় আমি আবার কোনো দিন রাগ করেছি?
সেলিম মাকে ধরে রেখেই বলল, আমি লাইলীর বাবাকে আজ কথা দিয়ে এসেছি, ওকে আমি বিয়ে করব। তুমি হয়তো রেহানাকে আমার জন্য ঠিক করে রেখেছ? তোমার মনে আঘাত দেওয়ার মোটেই আমার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখেছি রেহানাকে আমি সুখী করতে পারব না। আর লাইলীকে পেলে আমিও সুখী হতে পারব না।
সোহানা বেগম ছেলেকে সামনে এনে বললেন, কথা দেওয়ার আগে মাকে তো একবার জিজ্ঞেস করতে পারতিস? যাক, যা হওয়ার হয়েছে। আর রেহানার ব্যাপারে দাদাকে একবার বলে ছিলাম। তোর সুখের জন্য না হয় দাদার কাছে থেকে কথাটা ফিরিয়ে নেব। এখন চল বোর্ডের মেম্বাররা সব তোর অপেক্ষায় বসে আছেন।
আসমা এতক্ষণ রান্নাঘরে ছিল। সে সোহানা বেগমের খোঁজে এসে লাইলীকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি কখন এলেন? কেমন আছেন?