না-না, তা নয়। শরীরটা ভালো নেই। তাই মনটাও খারাপ। কিছু ভালো লাগছিল না, সেই জন্য চলে এলাম। এবার রাখি তা হলে?
আগামীকাল নিশ্চয় আসছ?
শরীর ভালো থাকলে যাব বলে মনিরুল ফোন ছেড়ে দিয়ে চিন্তা করতে লাগল, শালা এই মেয়েটা জেঁকের মত পিছু লেগেছে। ওকে যতই এড়িয়ে চলতে চাই, ততই যেন জড়িয়ে ধরতে চায়। অথচ সে বড়লোকের শিক্ষিতা সুন্দরী ও স্বাস্থ্যবতী মেয়ে। তবে বড় গায়েপড়া স্বভাব। নিজের কোনো পার্শনালিটি নেই। ক্লাবে যার তার সাথে বড় বেশি মাখামাখি করে। অথচ তাকে কয়েকবার বলেছে, আমি তোমাকে প্রাণ অপেক্ষা বেশি ভালবাসি। তুমি আমাকে কি মনে কর জানি না, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। প্রথমে পারভীন যখন এই কথা মনিরুলকে বলে তখন তার প্রতি মনিরুলের মনটা ঘৃণায় ভরে গিয়েছিল। তার হাবভাব দেখে মনে হয়েছে, সে এই রকম কথা হয়েতো আরো অনেকের কাছে বলেছে। সেদিন মনিরুল তার কথার উত্তরে শুধু বলেছিল, এব্যাপারে আমি এখনও কোনো চিন্তা করিনি। পরে ভেবেচিন্তে দেখা যাবে। সেই থেকে মেয়েটা ওর পিছু লেগেছে। সে যা বলে মেয়েটা তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে যায়। অবশ্য এরকম আরও চার পাঁচটি তার বান্ধবী আছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবল, কম্পারেটিভলি পারভীনই সব বান্ধবীদের চেয়ে ভালো। একে বিয়ে করলে নেহাৎ খারাপ হবে না। সঙ্গে সঙ্গে রুবীনার কথা মনের পর্দায় ভেসে উঠল। ভাবল, যদি কবীনাকে বাগাতে না পারি তখন দেখা যাবে। দূর কি সব ভাবছি, তার চেয়ে ঘুমোলে শরীরটা চাঙ্গা হয়ে যাবে। তারপর চিন্তা দূর করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
দীর্ঘ দেড় মাস বন্ধের পর আজ ভার্সিটি খুলেছে। সেলিম ঠিক দুটোর সময় লাইব্রেরীতে এসে লাইলীকে দেখতে না পেয়ে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে চেয়ে তাকে খুঁজতে লাগল।
মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পর একটা বোরখা পরা মেয়েকে আসতে দেখে মনে করল, নিশ্চয় লাইলী।
মেয়েটি একদম কাছে এসে মুখের নেকাব খুলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে স্মীত হাস্যে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছ?
লাইলী যখন মুখের নেকাব সরিয়ে তার সামনে দাঁড়াল তখন সেলিমের মনে হল, মেঘের ভিতর থেকে চাঁদ বেরিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়েছে। সে তন্ময় হয়ে তার পানে চেয়ে রইল।
বেশ কিছুক্ষণ কেটে যেতে লাইলী বলল, কি হল কথা বলছ না কেন? ভিতরে চল। এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে অন্যেরা কি মনে করবে? তবুও যখন সেলিমের নড়বার লক্ষণ দেখা গেল না তখন সেলিমের একটা হাত ধরে নাড়া দিয়ে বলল, চুপ করে পথ আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন?
সেলিম যেন ইহজগতে ছিল না। সম্বিত ফিরে পেয়ে ভিতরে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছ?
লাইলী বলল, আমি যে আগেই সে কথা জিজ্ঞেস করেছি, তার বুঝি উত্তর দিতে নেই?
সেলিম বলল, তোমাকে ও তোমার হাসিমাখা মুখ দেখে আমি এতই মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম যে, তোমার কোনো কথা তখন শুনতে ওর মনে হল, আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে এত সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যে, তোমাকে যতবার দেখি ততবারই যেন নূতন দেখি।
আমি সৌন্দর্যের অধিকারী কিনা কোনদিন চিন্তা করিনি। আমাকে তুমি খুব বেশি ভালবাস। আর সেই ভালবাসার চোখে আমাকে দেখ, তাই তোমার কাছে আমি অপূর্ব সুন্দরী। আমিতো নিজের চেয়ে তোমাকে বেশি সুন্দর বলে মনে করি। তোমার মত সুপুরুষ আমি আর দ্বিতীয় দেখিনি। একটা কথা বলব, কিছু মনে করবে না তো?
তোমার কথায় আমি কিছু মনে করব, একথা ভাবতে পারলে? বল কি বলবে। আমার কথা শুনে প্রিয়তম অসন্তুষ্ট হোক, তা আমি চাই না, তাই জিজ্ঞেস করেছি।
যখন যা মনে আসবে কোনো দ্বিধা না করে তৎক্ষণাৎ বলে ফেলবে। অনুমতি নিতে হবে না। বল কি বলবে বলছিলে?
না এমন কিছু কথা নয়, হাদিসের কথা। রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজেব, অর্থাৎ কর্তব্য। না দিলে গোনাহ হয়। তাই বলছিলাম আমি তোমাকে প্রথমে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করছিলাম। তুমি সালামের জবাবও দাওনি, আর কুশলও জানাওনি।
একটু আগেই তো বললাম। তোমাকে দেখে আমার বাহ্যিক জ্ঞান লোপ পেয়েছিল। তাই তখন তোমার কথা শুনতে পায়নি। আচ্ছা, সালাম কি এবং কেন সালাম দিতে হয়? তার ব্যাখ্যাটা আমাকে বুঝিয়ে দাও তো?
লাইলী বলল, রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন, “একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সঙ্গে দেখা হলে বলবে-আসসালামু আলাইকুম।” ইহা বলা সুন্নত। আর দ্বিতীয় জন তার উত্তরে বলবে, ওআলাইকুম আসসালাম। ইহা বলা ওয়াজিব। তার ব্যাখ্যা হল, ‘আপনার প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আপনার প্রতিও আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।’ অর্থাৎ সাক্ষাৎকারীদ্বয় উভয় উভয়ের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি কামনা করবে। যে প্রথমে সালাম দিবে সে উত্তর দাতার চেয়ে নব্বইগুণ বেশি সওয়াব পাবে। বোধ হয় সেই কারণে রসূল পাক (দঃ) কে কেউ কোনো সময় আগে সালাম দিতে পারেনি। এখন বুজেছ?
সেলিম বলল, হ্যাঁ বুঝেছি। ইসলামের রীতি সত্যিই খুব সুন্দর।
লাইলী বলল, ইসলামের সমস্ত আইন এমন বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, মানুষ যদি তা অনুধাবন করত, তা হলে কেউ ইসলামের আইনের বাইরে চলতে পারত না। যাক, পরীক্ষার পড়াশোনা কেমন চলছে বল?