লাইলী বলল, মা তুমি চুপ কর। এতরাতে কথা কাটাকাটি করো না। আমার অন্যায় হয়েছে। আর কোনোদিন যাব না। হয়েছে তো বলে নিজের ঘরে চলে গেল। সেলিমদের বাড়িতে সারাদিন যাই ঘটুক না কেন, ফেরার সময় তার মনটা বেশ উৎফুলু হয়েছিল। বাড়িতে ফিরে বকুনি খেয়ে তা খারাপ হয়ে গেল। পরক্ষণে ভাবল, এতে মায়ের কোনো দোষ নেই। কারণ পিতামাতা সন্তানের ভালো চান। আমার ভালোর জন্য মা রাগারাগি করেছে। আরও চিন্তা করল, গার্জেনরা শাসন না করলে ছেলেমেয়েরা প্রথমে ছোট-খাট অন্যায় করতে করতে পরে বড় বড় অন্যায় কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তারপর ঐ সব চিন্তা দূর করে দিয়ে সেলিমের কথা মনে করতে তার মধুর কণ্ঠের গানটা কানের পর্দায় ভেসে উঠল। সেই গান শুনতে শুনতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।
———–
(১) বর্ণায় : হযরত উমর (রাঃ)-তিরমিজী।
(২) সূরা-বাকারা, ২৮৬ আয়াতের প্রথম অংশ, পারা-৩।
০৫. রেহানা বাড়িতে ফিরে
রেহানা বাড়িতে ফিরে লাইলীর কথা যত ভাবতে লাগল, তার প্রতি তত রাগে মনটা ভরে উঠল। তাকে হিংসার আগুনে পুডোতে গিয়ে নিজেই দগ্ধ হতে লাগল। চিন্তা করল, সেলিম এতদিন তাকে ভালবাসত, এখন লাইলীকে পেয়ে অবজ্ঞা করতে আরম্ভ করছে। আবার ভাবল, সেলিম যে তাকে ভালবাসে, এতদিনে তা ঘুনাক্ষরে প্রকাশ করেনি। আর আমিও যে তাকে ভালবাসি তাও তো জানাইনি। কিন্তু আমি তাকে ভালবাসি। সে আমাকে ভালবাসবেনিই বা কেন? আমার কী রূপ নেই? আমি দেখতে কী এতই খারাপ? স্বীকার করি লাইলী আমার থেকে বেশি সুন্দরী। তা বলে একটা সেকেলে আনকালচার্ড মেয়ের দিকে সেলিম বুকে পড়বে আর আমাকে তা দেখতে হবে? না-না, সেটা আমি হতে দিচ্ছি না। আমিও দেখে নেব, সে কেমন মেয়ে? আমার এত দিনের স্বপ্ন কী করে ভেঙ্গে দেয়? পড়ার ঘরে বসে রেহানা ঐ সব চিন্তা করছিল।
তার ভাই মনিরুল এসে বলল, কিরে অমন চুপ করে কি ভাবছিস? রুবীনাদের বাসায় গিয়েছিলি নাকি?
ওরা দুই ভাইবোন। সে রেহানার চেয়ে দু’বছরের বড়। এম, কম, পাশ করে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করে। স্বভাব চরিত্র তেমন ভালো নয়। কয়েকটা মেয়ের সঙ্গে তার ভালবাসা আছে। সাধারণতঃ বড় লোকের ছেলেরা যে স্বভাবের হয়ে থাকে, তা থেকে একটু বেশি বেলাইনে চলাফেরা করে। প্রতিদিন নাইট ক্লাবে যাওয়া চাই। ক্লাবে ফ্লাস খেলে এবং বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে মদও খায়। তবে বংশ মর্যাদার দিকে তার প্রখর দৃষ্টি। কোনো কিছু এমন বাড়াবাড়ি করে না, যাতে বংশের দুর্ণাম হয়।
রেহানা ভাইকে তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে বলল, তুমি যে আজ সন্ধ্যা বেলাতেই ফিরে এলে। ক্লাবে যাওনি?
আজ শরীরটা একটু খারাপ লাগছে, তাই ক্লাব থেকে চলে এলাম। হ্যারে, তুই এত গভীরভাবে কি চিন্তা করছিলি বললি না যে? আজ রুবীনার বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলি বুঝি? আমারও কিন্তু যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। জরুরী কাজ থাকায় যেতে পারলাম না। তারও রুবীনার প্রতি খেয়াল আছে। অপেক্ষা করে আছে স্কুল ছেড়ে কলেজে ঢুকলেই তার পিছু নেবে। আবার জিজ্ঞেস করল, সেলিম সাহেবের খবর কি? এখনও তোকে কিছু বলেনি? মনিরুলও জানে রেহানার সঙ্গে সেলিমের বিয়ের কথা হয়েছে।
রেহানা বলল, দাদা তুমি একটু বেশি বেহায়া হয়ে যাচ্ছ?
আরে এতে বেহায়া হওয়ার কি হল? তোদের বিয়ের কথা হয়েছে, তাই ভাবলাম আগের থেকে হয়তো দুজন দুজনকে জেনে নিচ্ছিস?
হয়েছে হয়েছে আর বেশি কিছু তোমাকে ভাবতে হবে না। তবে একটা কথা না বলে পারছি না, আজ লাইলী নামে একটা মেয়েকে ওদের বাড়িতে দেখলাম। কি একটা বিপদ থেকে মেয়েটাকে নাকি সেলিম উদ্ধার করেছিল।
তাতে আর কি হয়েছে? বড়লোকদের ছেলেরা অমন কত মেয়েকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে। নিশ্চয় মেয়েটা গরিবের আর দেখতেও খুব সুন্দরী?
গরিবের তো বটেই, কিন্তু শুধু সুন্দরীই নয়, অপূর্ব সুন্দরী এবং ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। এত নিখুঁত সুন্দরী আমি একটাও দেখিনি।
তাই বল, এতক্ষণে বুঝতে পারলাম তুই এত গভীরভাবে কি চিন্তা করছিলি। মেয়েটার ঠিকানা জানিস?
কেন, ঠিকানা নিয়ে তুমি কি করবে শুনি? ঠিকানা আমি জানি না।
আহ, অত চটছিস কেন? ঠিকানা পেলে তাকে আমি বুঝিয়ে দিতাম, বড়লোকের ছেলেরা মেয়েদেরকে দুদিনের খেলার সামগ্রী মনে করে। পুরোনো হয়ে গেলে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয়।
থাক তোমাকে আর বোঝাতে হবে না, আমিই ব্যবস্থা করব।
যাকগে, তুই যখন তোর দিকটা সামলাবি বলছিস, তখন আমি আর হস্তক্ষেপ করব না। তবে সামলাতে না পারলে আমাকে বলিস।
সে দেখা যাবে, তুমি এখন যাও তো? শরীর খারাপ বলছিলে, খেয়ে নিয়ে ঘুমাওগে যাও।
তাই যাচ্ছি বলে মনিরুল চলে গেল। ঘুমোবার সময় বিছানায় শুয়ে চিন্তা করল, পুরুষ জাতটার স্বভাবই শালা ঐ রকম, সব সময় নূতন ফুলের মধু খেতে ভালবাসে। এক ফুলে মন ভরে না। রেহানার কথামত মেয়েটা যদি সত্যিই অপূর্ব সুন্দরী হয়, তা হলে তো বেশ চিন্তার কথা। দেখা যাক কত দূরের পানি কত দূরে গড়ায়। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। মনিরুল বিরক্ত হয়ে রিসিভার তুলে বলল, হ্যালো, আমি মনিরুল বলছি, আপনি কাকে চান?
যাকে চাই সেই ফোন ধরেছে।
ও পারভীন বলছ? তা এত রাতে, কি খবর?
তুমি যে আজ ক্লাবে আমার সঙ্গে দেখা না করে চলে গেলে? অবশ্য আসতে আমার একটু লেট হয়েছে। ভাবলাম আমার উপর রাগ করে হয়তো চলে গেছ।