লাইলী আর কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে একটা নীল রং-এর শাড়ী ও ব্লাউজের উপর বোরখা পরল। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে বলল, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।
হামিদা বানু মেয়ের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেলিম চলে গেছে?
আমি তো তারই সঙ্গে যাচ্ছি।
হামিদা বানু অবাক হয়ে রাগের সঙ্গে বললেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি।
লাইলী নীচে এসে সেলিমকে বলল, চলুন।
সেলিম প্রথমে বেশ অবাক হলেও পরক্ষণে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে তার সঙ্গে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠল। ষ্টার্ট দিয়ে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবে?
আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন?
তুমি কিন্তু এখনও আপনি করেই বলছ। সেদিনের কথা নিশ্চয় মনে আছে, আমাকে আগে যেতে বলে তুমি পিছু নেবে বলেছিলে?
মনে ঠিক আছে তবে কি জানেন……
সেলিম তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আবার বলে তার ডান হাতটা ধরে তালুতে চুমো খেয়ে বলল, এরপর থেকে যদি ঐভাবে কথা বল, তা হলে আমি মনে কষ্ট পাব।
লাইলী কেঁপে উঠল। তারপর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চুমো খাওয়া হাতটা নিজের ঠোঁটে চেপে ধরল।
সেলিম আড়চোখে তা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল, কি কথা বলছ না কেন?
এবার থেকে চেষ্টা করব।
আর একটা কথা, তুমি যতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ মুখটা খোলা রাখবে।
লাইলী মুখের নেকাবটা সরিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে রইল।
বেশ কিছুক্ষণ শহরের নানান রাস্তা ঘুরে একটা হোটেলের সামনে গাড়ি পার্ক করে সেলিম বলল, খিদে পেয়েছে কিছু খাওয়া যাক চল। ভিতরে নিয়ে গিয়ে কেবিনে বসে জিজ্ঞেস করল, কি খেতে মন চাচ্ছে বল?
আমি এখন কিছু খাব না, তুমি খাও।
তোমাকে কিছু খেতেই হবে বলে বেয়ারাকে ডেকে লুচি, মুরগীর মাংস ও মিষ্টির অর্ডার দিল। শেষে দুটো কোক খেয়ে গাড়িতে উঠে সেলিম বলল, আমাদের বাড়িতে যাবে? মা তোমার কথা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে।
লাইলী বলল, চল, খালা আম্মার সঙ্গে দেখা করে আসব।
যদি বলি আর আসতে দেব না, চিরদিন বন্দী করে রাখব।
লাইলী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল, তোমার বিবেক যদি তাই বলে, তা হলে আমার আপত্তি নেই।
সেলিম তাদের বাড়িতে এসে গাড়ি থামাতে লাইলী বলল, কাদের বাড়িতে নিয়ে এলে?
কেন ভয় লাগছে বুঝি? বাড়িটা চিনতে পারলে না? ভিতরে চল, বাড়ির লোকদের নিশ্চয় চিনতে পারবে?
রুবীনা হলরুমে বসে দুজন বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করছিল। এই হলরুমটাই ড্রইংরুম। এখান থেকে ভিতরে যাওয়ার রাস্তা। দাদার সাথে লাইলীকে দেখে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন?
লাইলী সালাম দিয়ে বলল, ভালো আছি।
সেলিম রুবীনাকে জিজ্ঞেস করল, হারে মা কোথায়?
মা উপরে আছে বলে লাইলীর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলল, আমার বান্ধবী জেসমীন ও সামসুন্নাহার। আর ওদের বলল, ইনি লাইলী, ভার্সিটিতে পড়ে।
সেলিম বলল, তোমরা গল্প কর আমি আসছি।
সোহানা বেগম নিচে আসছিলেন। ছেলের গলার আওয়াজ পেয়ে সেখানে এসে বললেন, সেই সকালে যে নাস্তা না খেয়ে বেরিয়ে গেলি, খিদে পাইনি? তারপর লাইলীকে দেখতে পেয়ে বললেন, মা মণিকে কোথা থেকে ধরে আনলি রে?
লাইলী উঠে গিয়ে সোহানা বেগমকে কদমবুসি করে বলল, কেমন আছেন খালা আম্মা?
সোহানা বেগম মাথায় চুমো খেয়ে বললেন, বেঁচে থাক মা, ভালো আছি। তোমার বাবা মা ভালো আছেন।
জ্বি ভালো আছেন।
সেলিম তা হলে তোমাদের বাসায় গিয়েছিল?
লাইলী মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
সেলিম বলল, জান মা, আমি ওদের বাড়িতে গিয়ে যখন বললাম, চল একটু বেড়াতে যাই তখন কত হাদিস কালাম শুনিয়ে দিল। শেষে কি জানি কি মনে করে আবার চলে এল।
সোহানা বেগম লাইলীকে বললেন, তুমি এখন আর যেতে পারবে না। আজ রুবীনার জন্মদিন পালন করা হবে। ওর অনেক বন্ধু-বান্ধবী ও আত্মীয়-স্বজন আসবে, একেবারে রাত্রে খাওয়া-দাওয়া সেরে যাবে। আমি ড্রাইভারকে দিয়ে তোমাদের বাসায় খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি।
রুবীনা সেলিমের কাছে এসে তার হাতে একটা লিষ্ট দিয়ে বলল, এগুলো তাড়াতাড়ি কিনে আন।
এক্ষুণি যাচ্ছি বলে সেলিম গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। সোহানা বেগম লাইলীকে ঘরে নিয়ে এসে বোরখা খুলে ফেলতে বললেন।
আয়াকে নাস্তার অর্ডার দিতে শুনে লাইলী বলল, আমি এক্ষুণি খেয়ে এসেছি, কিছু খেতে পারব না।
সোহানা বেগম বললেন, তা হোক, তবু দুটো মিষ্টি খাও।
নাস্তা খেয়ে লাইলী রুবীনাদের কাছে এসে বসল। ততক্ষণ আরও দুতিনজন তার সমবয়সী মেয়ে এসেছে। তারা সব বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু লাইলীর রুপ তাদেরকে ম্লান করে দিল।
এমন সময় রেহানা এসে রুবীনার পাশে সাধারণ পোশাকে লাইলীকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কে রে রুবীনা?
রুবীনা বলল, ইনি লাইলী, ভার্সিটির ছাত্রী। দাদার সঙ্গে এসেছে।
রেহানা এবার লাইলীকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কিসে পড়েন?
ইসলামিক হিষ্ট্ৰীতে অনার্স।
রেহানা কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে দৃষ্টিটা ফিরিয়ে নিয়ে রুবীনাকে বলল, তোর দাদা কোথায়?
এইতো কয়েক মিনিট আগে মার্কেটে গেল, তোমার সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়নি? কোনো কিছু না বলে রেহানা ফিরে চলে গেল।
বিকেলে রুবীনার ও সেলিমের অনেক বন্ধু ও বান্ধবী এল। যখন সবাই মিলে চা খাচ্ছিল তখন রেহানা তার বান্ধবী সালমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এল। সালমাকে সেলিম চিনে। ভার্সিটিতে একদিন বেঁচে তার সঙ্গে আলাপ করতে এসে সুবিধে করতে না পেরে আর মিশবার চেষ্টা করেনি। তাকে আজ রেহানার সংগে দেখে সেলিম জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন?