লাইলী বলল, যেদিন জানতে পারলাম ওরা বড়লোক, সেদিন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ওকে ভুলে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারিনি। গতকাল সেলিম লাইব্রেরী থেকে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
তার অবস্থা কি রকম দেখলি?
আমার তো মনে হল সেও আমাকে খুব ভালবাসে। তারপর সেই প্রথম দিনের ঘটনা থেকে গতকাল পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে সব খুলে বলল।
যা বললি তা যদি সত্যি হয়, তা হলে ভালই। কিন্তু জেনে রাখ, বড়লোকের ছেলেরা নারীদেরকে খেলার সামগ্রী মনে করে। দুদিন খেলা করে তারপর ভালো না। লাগলে আবার নুতনের পিছনে ছুটে। এমনি তো পুরষেরা ভ্রমরের জাত। বিভিন্ন ফুলের মধু খেতে ভালবাসে।
তা হলে তোর তিনিওতো বিলেতে বিভিন্ন ফুলের মধু খেয়ে বেড়াচ্ছেন? তুই তো আর এখান থেকে দেখতে পাচ্ছিস না।
তোর কথাকে মিথ্যা বলতে পারছি না। তবে একটা কথা ভুলে যাচ্ছিস কেন? যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারা তাঁর আইন অমান্য করে না। খালেদ ভাইয়ের প্রতি আমার এইটাই দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, সে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর আইন মেনে চলে। এর বেশি আমি বলতে পারছি না। ঘণ্টার আওয়াজ শুনে বলল, চল, ক্লাস আরম্ভ হয়ে যাবে। তারপর দুজনে এক সাথে ক্লাসরুমে ঢুকল।
০৪. আজ তিন দিন খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে
আজ তিন দিন খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। লাইলী ভার্সিটি যেতে পারেনি। দুপুরে শুয়ে হয়ে একটা বই পড়ছিল। রহিমা ভাবি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পর্দা ফাঁক করে বলল, “মে আই কাম ইন সিস্টার?”
লাইলী না তাকিয়ে বলল, “নো, নট নাউ।”
রহিমা ভাবি ঢুকে পড়ে খাটে লাইলীর পাশে বসে বলল, কি ভাই, কিছু দিন যাবত আমাকে এড়িয়ে চলছ, জানি না কি অপরাধ করেছি। আমার সঙ্গে ভালো করে কথাও বলছ না। মনে হচ্ছে তোমার কিছু একটা হয়েছে।
লাইলী বলল, তোমাকে আসতে নিষেধ করলাম না।
কখন করলে ইংরেজীতে দুটো নো মানে হাঁ, তাই তোমার নো নট শুনে হ্যাঁ মনে করে চলে এলাম। আর নিষেধ করেছ তো কি হয়েছে? এখানে তো আর নন্দাই নেই যে, কোনো অশোভন দৃশ্য দেখতে পাব।
ভাবি ভালো হবে না বলছি বলে লাইলী উঠে বসে কিল দেখাল।
কিল দেখাও আর যাই দেখাও, কথাটা শুনতে খুব ভালো লাগল তাই না কথা শেষ করে পালাতে গেল।
লাইলী তার আঁচল ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল, হঠাৎ এসময়ে কি মনে করে?
রহিমা আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে বলল, ভয়ে ভয়ে বলব, না নির্ভয়ে বলব?
আজে বাজে কথা না হলে নির্ভয়ে বলতে পার।
এই বৃষ্টির দিনে ঘুম আসছিল না। ভাবলাম, ননদিনীর মনের খবর একটু নিয়ে আসি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি যদি ছেলে হতাম, তবে যেমন করে হোক তোমাকে বিয়ে করতামই করতাম। আল্লাহপাক এতরূপ তোমাকে দিয়েছে কি বলব ভাই, আমি মেয়ে মানুষ হয়েও তোমাকে দেখে তৃপ্তি মিটে না। তোমার নাগর যে কি করবে ভেবে কুল পাইনে।
নিজের রূপের প্রশংসা শুনে লজ্জা পেয়ে লাইলী বলল, পুরুষ যখন আল্লাহ তোমাকে করেনি তখন আর আফশোস করে লাভ নেই। তারপর একটু রাগতস্বরে বলল, তুমি কি আর অন্য কথা খুজে পেলে না। যতসব বেহায়াপনা কথা। যাও, তোমার সঙ্গে আমি আর কোনো কথা বলব না বলে মুখ গোমড়া করে অন্য দিকে ঘুরে বসল।
রহিমা তার চিবুক ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, আহা দুঃখিনীর মান ভাঙ্গাবার কেউ নেই গো। এমনভাবে কথাটা বলল, দুজনেই জোরে হেসে উঠল। তারপর রহিমা জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা সখি, সেলিম সাহেবের খবর কি?
ভালো, উনি দিব্বি ক্লাস করছেন, তার প্রিয়তমাকে নিয়ে বলে জিব কেটে চুপ করে গেল।
কি হল থেমে গেলে কেন। সেলিম সাহেবের প্রিয়তমাকে তুমি চেন নাকি?
লাইলী লজ্জারাঙা চোখে বলল, আমি কি করে জানব তার প্রিয়তমা কে।
তুমি তো নিজেই বলতে গিয়ে চুপ করে গেলে। আর এদিকে তোমার ভাইয়া বলছিল, ওর একজন কলিগ ওকে একটা শিক্ষিতা, সুন্দরী ও পর্দানশীন খানদানি ঘরের মেয়ে দেখতে বলেছেন। কোনো দাবিদাবা নেই। ছেলেটা নাকি খুব ধার্মিক। শুনে আমার তো মনে হয়েছে তোমার সঙ্গে ভালো মানাবে। খালুজানের সঙ্গেও তোমার ভাইয়া ঐ ব্যাপারে কিছু কথাবার্তা বলেছে।
লাইলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
রহিমা এতটা আশা করেনি। বলল, আরে কর কি? কাঁদছ কেন? কি হয়েছে ব্যাপারটা খুলেই বল না। আমি তো তোমার শত্রু নই।
লাইলী তাকে ছেড়ে দিয়ে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল, আমরা দুজনে দুজনকে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু…
কিন্তু কি, বল না।
কিন্তু ওরা খুব বড়লোক। ওদের কাছে ধর্মের কোনো নাম গন্ধ নেই। তাই খুব ভয় হয়।
তুমি শিক্ষিতা মেয়ে। তার কাছে যা নেই তা দিয়ে ভরিয়ে দাও। আল্লাহ ও রাসূলের (দঃ) তাই-ই হুকুম। তোমার কাছে যে জ্ঞানের আলো আছে তা দান করে অন্যের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে দাও। তা যদি পার, তা হলে তোমাদের দুজনের মধ্যে আর কোনো বাধা বা ভয় থাকবে না।
তুমি ঠিক বলেছ ভাবি, আমি তাই চেষ্টা করব, তুমি দোয়া কর।
রহিমা মৃদু হেসে বলল, তোমার জন্য সব কিছু করব নিশ্চয়, কিন্তু পুরস্কার দেবে তো? লাইলী ও মৃদু হেসে জবাব দিল, আগে কাজ পরে মজুরী, তারপর পুরষ্কার। আব দিল্লী বহুৎ দূর হ্যায়।
ঠিক আছে দিল্লী দূরে না কাছে সে দেখা যাবে, তোমার ভাইয়ার ফিরবার সময় হয়ে গেছে। এখন যাই বলে রহিমা নীচে চলে গেল।