জ্বি।
এখন তা হলে আসি? আপনার মা কী আমার সামনে আসবেন না?
একটু বসুন, এক্ষুণি আসছি বলে লাইলী চলে গেল। অল্পক্ষণ পরে একটা কাগজে সোহানা বেগমের জামা-কাপড় মুড়ে এনে টেবিল রেখে বলল, দয়া করে এটা নিয়ে যাবেন।
এতে কি আছে
আমি আপনাদের বাড়ি থেকে যেগুলো পরে এসেছিলাম।
আপনার মা বুঝি আসবেন না? লাইলী কিছু বলার আগে হামিদা বানু দরজার বাইরে থেকে বলে উঠলেন, আল্লাহপাকের দরবারে আপনার জন্য দোয়া করছি বাবা, তিনি যেন আপনাকে সহিসালামতে রাখেন, সব সময় সৎপথে চালিত করেন, সুখী করেন। আপনি আমার মেয়েকে গুন্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করে তার জান ও ইজ্জৎ বাঁচিয়েছেন। সে জন্য আপনার কাছে আমরা চিরকাল ঋণী থাকব। একদিন এসে ওর আর ও ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। আমরা আরও খুশি হব। আজকের আবহাওয়া খারাপ। তাই বেশিক্ষণ আপনাকে আটকে রাখতে চাই না। আর একদিন আসবেন, বলে চুপ করে গেলেন।
সেলিম বলল, আপনার কথা রাখার চেষ্টা করব। তারপর লাইলীর দিকে তাকিয়ে বলল, আসি।
লাইলী অনুচ্চস্বরে সালাম দিয়ে বলল, আল্লাহ হাফেজ।
নিজের অজান্তে জীবনের এই প্রথম সেলিমের মুখ দিয়ে বেরল আল্লাহ হাফেজ।
লাইলী গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল। কাপড়ের প্যাকেটটা যে টেবিলের উপর রয়ে গেল, বিদায় মুহূর্তে সেদিকে কারুর খেয়াল রইল না। সেলিম গাড়িতে উঠতে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল।
গাড়ি বাঁক নিয়ে অদৃশ্য হতে লাইলী গেট বন্ধ করে ফিরে এল।
তাকে দেখতে পেয়ে রহিমা ঘর থেকে ডাক দিল, একটু শুনে যাও মিস লাইলী আরজুমান বানু।
রহিমা যখন তার সঙ্গে রসিকতা করার ইচ্ছা করে তখন তাকে তার পুরা নাম ধরে ডাকে। তাই ঐ নামে ডাকতেই শুনেই লাইলী ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারল। সেও কম যায় না, জবাব দিল, পরে, এখন বাথরুমে যাব বলে তাড়াতাড়ী করে উপরে উঠে গেল।
রাত্রি দশটায় নিরাশ হয়ে রহমান সাহেব ও জলিল সাহেব ফিরে এসে সবকিছু শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করে সবাই দু’রাকাত শোকরানার নামায আদায় করলেন।
০৩. পরের দিন লাইলী সারা শরীরে ব্যথা
পরের দিন লাইলী সারা শরীরে ব্যথা নিয়ে উঠে ফযরের নামায পড়ে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করল। তারপর প্রতিদিনের মতো রান্না ঘরে এসে মাকে সাহায্য করতে লাগল। আব্বা নাস্তা খেতে এলে বলল, আমার বোরখা কিনে আনবে। তা না হলে আমি ভার্সিটি যাব কেমন করে।
আজ তো হবে না মা, মাসের শেষ। হাত একদম খালি। বেতন পেয়ে কিনে দেব।
তোমার বেতন পেতে তো এখনও চার পাঁচ দিন বাকি। এতদিন ক্লাস কামাই করব?
দেখি কারও কাছ থেকে যদি জোগাড় করতে পারি, তা হলে নিয়ে আসব।
হামিদা বানু বললেন, ওর আর পড়াশোনা করার দরকার নেই। মেয়ে কি চাকরি করে আমাদের খাওয়াবে যে, লেখাপড়া করতেই হবে?
লাইলী মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তাই না হয় আমি চাকরি করে তোমাদের খাওয়াব। আর অমত করবে না তো?
হয়েছে হয়েছে, তোর ভাইয়া ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। আর তুইও একদিন পরের ঘরে চলে যাবি বলে হামিদা বানু আঁচলে চোখ মুছলেন। এবার ছাড়, নাস্তা খেয়ে নে। বড় হলি এখনও ছেলেমানুষি গেল না।
লাইলী মাকে ছেড়ে দিয়ে নাস্তা খেতে লাগল।
গত পাঁচদিন লাইলী ভার্সিটি যায়নি। কারণ তার আরা বোরখা কিনে দিতে পারেনি। আজ ছুটির দিন তার ধারণা হল, সেলিম আজ নিশ্চয় আসবে। সকালে রান্নাঘরে মায়ের কাছে গিয়ে বলল, আজ ভার্সিটির সেই ছেলেটা আসতে পারে।
হামিদা বানু বললেন, ভালো কথা মনে করেছিস। হারে, ওরা খুব বড়লোক না? হ্যাঁ, বলে লাইলী নিজের রুমে চলে গেল। হামিদা বানু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে স্বামীর কাছে এলেন।
উনি তখন একটা হাদিসের বই পড়ছিলেন। স্ত্রীকে কাছে এসে দাঁড়াতে দেখে হাদিসটা বন্ধ করে বললেন, কিছু বলবে নাকি?
লাইলী বলছিল, ইউনিভার্সিটির সেই ছেলেটা, যে লাইলীকে সেদিন বিপদ থেকে উদ্ধার করে দিয়ে গিয়েছিল, সে আজ আসতে পারে। তোমাকেওতো সেকথা বলে ছিলাম। এখন বাজার থেকে কিছু মিষ্টি, ময়দা আর ফল নিয়ে এস। কিছু ব্যবস্থা করতে হবে তো?
রহমান সাহেব বললেন, খুব ভালো কথা মনে করেছ। আমি তো একদম ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর তাড়াতাড়ি করে বাজারে গেলেন। মুরগী, মাছ ও নাস্তার সবকিছু এনে বললেন, ছেলেটাকে দুপুরে খেয়ে যেতে বলা যাবে। যদি রাজি হয়, তাই মুরগী ও মাছ আনলাম। তুমি ভালো করে রান্না কর। আর বৌমাদেরও বলে দিও, তারাও আজ দুপুরে আমাদের এখানে খাবে। তারপর নিজেই নিচে এসে হাঁক দিলেন, সাদেক দাদু ঘরে আছ নাকি?
দাদুর গলা পেয়ে সাদেক ও ফিরোজা পড়তে পড়তে বইখাতা ফেলে রেখে ছুটে এসে রহমান সাহেবকে জড়িয়ে ধরল।
সাদেক জিজ্ঞেস করল, আজকে নাকি একজন মেহমান আসবেন, আম্মা বলছিল।
রহমান সাহেব প্রতিদিন বাজার থেকে ফেরার সময় ওদের জন্য চকলেট নিয়ে আসেন। আজও এনেছেন। সেগুলো দুজনকে ভাগ করে দিয়ে বললেন, হ্যাঁ ভাই, আসার তো কথা আছে। তবে সে আসুক আর নাই আসুক, তুমি মাকে গিয়ে বল, এবেলা তোমরা সবাই আমাদের ওখানে খাবে। তারপর ওদেরকে নিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলেন।
এক কাপ চা ও বিস্কুট নিয়ে রহিমা ঘরে ঢুকে বলল, খালুজান, আপনারা এত ঝামেলা করতে গেলেন কেন?
ঝামেলা আর কি মা, তোমরাও তো এবাড়ির লোক। হাতের কাজ সেরে একটু উপরে যাওতো মা, তোমার খালা আম্মাকে সাহায্য করবে।