- বইয়ের নামঃ ফুটন্ত গোলাপ
- লেখকের নামঃ কাসেম বিন আবুবাকার
- প্রকাশনাঃ নূর কাসেম পাবলিশার্স
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
০১. লাইলী চমকে উঠল
উৎসর্গ
যাদের মারফত আল্লাহপাক আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেই পুণ্যবান ও পুণ্যবতী আব্বা-আম্মার মোবারক কদমে।
(১) “হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর। এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না। বাস্তবিকই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” –আল-কোরআন, সূরা-বাকারা, আয়াত-২০৮, পারা-২।
(২) “পাঁচ ব্যক্তির সংসর্গ হইতে সর্বদা দূরে থাকিও (ক) মিথুক (খ) আহাম্মক (গ) কৃপণ (ঘ) কাপুরুষ (ঙ) ফাসেক।” –ইমাম জাফর সাদেক (রঃ)
ভূমিকা
বর্তমান সমাজের চরম অবনতি উপলব্ধি করে এই কাহিনী লেখার প্রেরণা পেয়েছি। আমার মনে হয়েছে এভাবে যদি দিন দিন আমরা প্রগতি ও নারী স্বাধীনতার নাম দিয়ে চলতে থাকি, তা হলে ইসলাম থেকে সমাজের মানুষ বহুদূরে চলে যাবে। শুধু মুখে, কেতাবে ও মুষ্টিমেয় লোকের কাছে ছাড়া অন্য কোথাও ইসলামের নাম গন্ধ থাকবে না।
বিদেশী শিক্ষাকে আমি খারাপ বলছি না। পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। কিন্তু বিদেশী শিক্ষার সংগে সংগে তাদের ভালো দিকটা বাদ দিয়ে খারাপ দিকটাই অনুকরণ করে আমরা যেন “কাকের ময়ুর হওয়ার মত মেতে উঠেছি।
অথচ আল্লাহ তায়ালা কোরআন পাকে বলিয়াছেন-”তোমরা (মুসলমানরা) উত্তম সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়কে প্রকাশ করা হইয়াছে মানবমণ্ডলীর জন্য। তোমরা নেক কাজের আদেশ কর এবং মন্দ কাজ হইতে নিবৃত্ত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ।” (সূরা-আল ইমরান, ১১০ নং আয়াত, পারা-৪)।
আর এখন আল্লাহপাকের কথিত সেই মুসলমানেরা কোরআন ও হাদিসের আদর্শ ত্যাগ করে দুনিয়ার মধ্যে সব থেকে নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছে। তাই তারা পৃথিবীর সকল দেশেই উৎপীড়িত ও লাঞ্ছিত।
আমরা যদি আল্লাহর ও রাসূলের (দঃ) বাণীকে অনুকরণ ও অনুস্বরণ করে চলি, তা হলে নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের রহমতে আবার আমরা আমাদের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস তৈরি করতে পারব।
যদি এই বাস্তবধর্মী উপন্যাসটি পড়ে বর্তমান যুব সমাজ সামান্যতমও জ্ঞান লাভ করে সেইমতো চলার প্রেরণা পায়, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।
আমার এই প্রাণ প্রিয় উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৮৬ইং সালে এবং প্রথম সংস্করণেই বাংলাদেশ ও ভারতের পাঠক সমাজে আশাতীতভাবে সমাদৃত হয়। এ জন্য আমি আল্লাহপাকের দরবারে শতকোটি শুকরিয়া আদায় করছি এবং সেই সংগে আমার প্রিয় পাঠকবর্গের কাছে অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ওয়াস সালাম
কাসেম বিন আবুবাকার
২০ই পৌষ- ১৪০৩ বাংলা
২৩শে শাবান- ১৪১৭ হিজরী
৩রা জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং
০১.
রিষ্ট ওয়াচের দিকে চেয়ে লাইলী চমকে উঠল। তারপর বই খাতা নিয়ে ইতিহাসের ক্লাস করার জন্য পা বাড়াল। সে লাইব্রেরীতে বসে একটা নোট লিখছিল। তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে এসে সিঁড়িতে উঠার সময় সেলিমের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তার হাত থেকে বই-খাতাগুলো নিচে পড়ল।
ইয়া আল্লাহ একি হল বলে লাইলী কি করবে ভেবে ঠিক করতে না পেরে সেলিমের দীর্ঘ বলিষ্ঠ স্বাস্থ্য ও পৌরষদীপ্ত চেহারার দিকে লজ্জামিশ্ৰিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব কিছু ভুলে গেল।
আর সেলিমও তার দিকে চেয়ে খুব অবাক হল। এতরূপ যে কোনো মেয়ের থাকতে পারে, সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। লাইলীর টকটকে ফর্সা গোলগাল মুখটা শুধু দেখা যাচ্ছে। কারণ সে বোরখা পরে রয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর লাইলী নিজেকে সামলে নিয়ে বই-খাতা কুড়াতে লাগল।
এতক্ষণে সেলিমের খেয়াল হল, তারও তো অন্যায় হয়েছে। সে তখন তাড়াতাড়ি করে দু-একটা বই তুলে তার হাতে দিতে গেলে আবার চোখা-চোখ হয়ে গেল, আর দু’জনের অজান্তে হাতে হাত ঠেকে গেল।
লাইলী চমকে উঠে ‘হায় আল্লাহ’ বলে বইসহ নিজের হাতটা টেনে নিল।
সেলিম মৃদুকণ্ঠে বলল, অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য মাফ চাইছি।
লাইলী তার দিকে কয়েক সেকেণ্ড চেয়ে থেকে সিঁড়িতে উঠতে আরম্ভ করল।
সেলিম বলল, শুনুন।
লাইলী যেতে যেতে ঘুরে শুধু একবার তাকিয়ে দ্রুত চলে গেল।
সেলিম তার চলে যাওয়া দেখল। তারপর চিন্তিত মনে লাইব্রেরীতে ঢুকে চেয়ারে সে এতদিন ভার্সিটিতে পড়ছে, কই এই মেয়েটিকে তো এর আগে বলে মনে হচ্ছে না? অবশ্য সে বোরখাপরা মেয়েদের মোটেই পছন্দ করে না। সেইজন্য হয়তো ওকে দেখেনি। ওদের সোসাইটিতে কত সুন্দরী আছে। তাদের সঙ্গে এই মেয়ের কোনো তুলনা হয় না। এত নিখুঁত সুন্দরী এই প্রথম সে দেখল। সেলিমের মনে হল, মেয়েটি যেন একটা ফুটন্ত গোলাপ। লম্বা পটলচেরা চোখের উপর মিশমিশে কালো ভ্রূ-দু’টো ঠিক একজোড়া ভ্রমর, কম্পিত পাপড়িগুলো তাদের ডানা। ওর মায়াবী চোখের কথা মনে করে সেলিম র হারিয়ে ফেলল। কতক্ষণ কেটে গেছে তার খেয়াল নেই। বন্ধু যখন বলল, কিরে একটা বই আনতে এত দেরি হয় বুঝি? তারপর ভালো করে তাকিয়ে আবার বলল, তুই বসে বসে এত গভীরভাবে কি ভাবছিস বলতো।
সেলিম নিজেকে ফিরে পেয়ে বলল, একটা এ্যাকসিডেন্ট করে ফেলেছি।
এ্যাকসিডেন্ট করেছিস? কই দেখি কোথায় লেগেছে? কি করে করলি?
ইচ্ছা করে করিনি, হঠাৎ হয়ে গেছে। তবে শরীরের কোনো জায়গায় ব্যথা পাইনি, পেয়েছি এখানে বলে নিজের বুকে হাত রাখল।