তবে তুই কি করে বললি, মেয়েটার মাথায় গোলমাল আছে?
কারণ মেয়েটি অসম্ভব ও অবাস্তব জিনিসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
আমার মনে হয় মেয়েটা তোকে ভীষণ পছন্দ করে এবং ভীষণ ভালবেসে ফেলেছে। আর ভালবাসা অসম্ভব ও অবাস্তবকে সম্ভব ও বাস্তবে পরিণত করে।
তোর যত উদ্ভট কথা। বাদ দে এসব প্রসঙ্গ।
আমি বাদ দিলে কি হবে, মেয়েটি তোকে কিন্তু ছাড়বে না, কথাটা মনে রাখিস।
মনে রাখতে আমার বয়েই গেছে। তোর যদি এতই গরজ, তুই তার পেছনে লাইন লাগাতে পারিস। তুই আমার চেয়ে বড় লোকের ছেলে। তোদের মধ্যে আত্মীয়তা মিলবে ভালো।
দেখ, বারবার বড় লোক বড় লোক বলবি না বলছি। তুইও কম কিসে?
মাহবুব হেসে উঠে বলল, বনে শিয়াল রাজার গল্প পড়েছিস।
ক্লাস টুয়ের বই এ পড়েছি। তুই যাই বলিস না কেন? তোদের সব কিছু আমার জানতে বাকি নেই।
জেনেছিস ভালো করেছিস। এখন বকবকানি থামাবি, না রুম থেকে বেরিয়ে যাব।
ঠিক আছে, আর একটা কথা বলে চুপ করব। আমার দৃঢ় ধারণা কয়েক দিনের মধ্যে তোর সঙ্গে দেখা না হলে, মেয়েটি এখানে এসে পড়বে। মাহবুবকে রেগে যেতে দেখে দুহাত জোড়ো করে বলল, রাগ করিস আর যাই করিস, কয়েক দিনের মধ্যে আমার কথার প্রমাণ পেয়ে যাবি।
এমন সময় আসরের আযান শুনে মাহবুব বলল, এখন প্রমাণ রেখে নামায পড়ে আসি চল।
মাসুম বলল, তাতো যাবই। তার আগে বল, মেয়েটাকে তোর পছন্দ হয় কিনা?
তোর কি মনে হয়?
আমার তো মনে হচ্ছে হয়েছে। তা না হলে সেদিন হ্যাংলার মতো তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতিস না।
.
মাহবুবা নাম মাত্র দুএক লোকমা খেয়ে নিজের রুমে এসে চিন্তা করল, ছিঃ ছিঃ কাজটা ভালো করিনি। এরপর মাহবুবের কাছে মুখ দেখাব কি করে? ভেবে রাখল, কাল দেখা করে মাফ চেয়ে নেবে।
পরের দিন খোঁজ করেও মাহবুবের দেখা পেল না। তারপর আরো চার পাঁচ দিন দেখা না পেয়ে একদিন তার মেসে রওয়ানা দিল।
বঙ্গোপসাগরে লঘু চাপের ফলে আবহাওয়া দুদিন পর্যন্ত গুমোট ছিল। আজ ভোরে এক পশলা বৃষ্টি হলেও গুমোট কাটেনি। আকাশে মেঘ রয়েছে। যে কোন সময়ে আবার বৃষ্টি হতে পারে। সারা আকাশ মেঘে ঢাকা। চার পাঁচ দিন থেকে মাহবুবের খুব জ্বর। মাসুম ডাক্তার এনে দেখিয়ে চিকিৎসা করছে। গত রাত থেকে মাহবুবের জ্ঞান নেই। মাসুম আজ সকালেও ডাক্তার এনেছিল। উনি পরীক্ষা করে বলেছেন, মনে হয়। টাইফয়েডের দিকে টার্ন নিয়েছে। মাথায় বরফ দিতে হবে। ভালো শুশ্রূষা দরকার। আপনি তা পারবেন না। মেডিকেলে অথবা কোনো ক্লিনিকে ভর্তি করে দিন।
মাসুম ডাক্তারকে বিদায় করে মেডিকেলে এম্বুলেন্সের জন্য যেন করেছিল। তারা জানিয়েছে ঘন্টা দুই দেরি হবে। তাই মাহবুবের মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে অপেক্ষা করতে লাগল।
ওদের মেসটা গলির মধ্যে। সেখানে গাড়ি যেতে পারে না। তবে বড় রাস্তা থেকে অল্প ভিতরে। ড্রাইভার গলির পাশে গাড়ি পার্ক করে মাহবুবাকে বলল, ঠিকানাটা আমাকে দিন খুঁজে দেখি।
মাহবুবা বলল, আপনি গাড়িতেই থাকুন আমি দেখছি। তারপর গাড়ি থেকে নেমে গলির মুখের পাশে একটা ওষুধের দোকানে গিয়ে একজন সেলসম্যানকে ঠিকানা লেখা কাগজটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা কোথায় বলতে পারেন?
সেলসম্যান মাসুম ও মাহবুবকে চেনে। বললেন, গলির ভিতরে আমাদের বিল্ডিং এর তিনটে বিল্ডিং পরে একতলা বিল্ডিংটা। মাহবুব সাহেবের কয়েকদিন যাবৎ খুব জ্বর। গতরাত থেকে জ্ঞান নেই। কিছুক্ষণ আগে ওঁর রুমমেট মাসুম সাহেব মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের এখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করে গেলেন।
শুনে মাহবুবা চমকে উঠলেও সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিল। তারপর ধন্যবাদ জানিয়ে গলির ভিতর ঢুকে পড়ল। গেটের কাছে এসে নাম্বার মিলিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখল শেষ মাথার রুম ছাড়া সব রুমে তালা ঝুলছে। খোলা রুমটার দরজার কাছে এসে দেখল একজন খাটে শুয়ে আছে অন্যজন তার মাথায় পানি ঢালছে। ভিতরে ঢুকে কয়েক সেকেণ্ড মাহবুবের পাণ্ডুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর মাসুমের দিকে চেয়ে চিনতে পারল। সাঁতার প্রতিযোগীতার দিন এই ছেলেটাই মাহবুবের সঙ্গে ছিল। সালাম দিয়ে বলল, চিনতে পারছেন?
মাসুমের দরজার দিকে পিঠ ছিল। তাই মাহবুবার আগমন টের পায়নি। মেয়েলী কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে তার দিকে তাকিয়ে চিনতে পেরে সালামের উত্তর দিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল, আপনি?
চিনতে পেরেছেন তা হলে?
আপনার মতো মেয়েদের একবার দেখলেই চেনা যায়।
তাই নাকি? তা হলে পানি ঢালা বন্ধ করে ওঁকে তাড়াতাড়ি ক্লিনিকে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন, আমার গাড়ি আছে।
কিন্তু আমি যে মেডিকেলে এ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে————–।
তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মাহবুবা বলল, আবার ফোন করে নিষেধ করে দিলেই হবে। নিন তাড়াতাড়ি করুন, হ্যারি আপ। তারপর আলনায় ঝাড়ন দেখতে পেয়ে সেটা নিয়ে নিজেই মাহবুবের মাথা মুছিয়ে দেওয়ার সময় বলল, গলির মুখে ওষুধের দোকানে বাসার লোকেশ্যান জানতে গিয়ে সব কিছু শুনেছি। তারপর ঝাড়নটা তার হাতে দিয়ে বলল, গলিতে গাড়ি ঢুকবে না। আপনি তৈরী হয়ে নিন, আমি ড্রাইভারকে ডেকে নিয়ে আসছি। কথা শেষ করে মাসুমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল।