সুলতান খাঁন কয়েক দিন পরে আলাউদ্দিন মীরকে দলিল রেজিষ্ট্রি করে দিলেন।
.
চার বছর হতে চলল, আলাউদ্দিন মীরের টকায় সুলতান খাঁন ছেলেকে পড়াচ্ছেন। মাহবুব এসব ব্যাপার কিছুই জানে না। সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অবসর সময়ে সুইমিং পুলে গিয়ে সাঁতার কাটে। ভোরে উঠে একা একা কুংফু কারাত প্র্যাকটিস করে। যখন টাকার দরকার হয় আব্বাকে চিঠি লিখে। সময় মতো পেয়ে যায়। ভার্সিটি বন্ধ থাকলে বাড়ি যায়।
আজ সুলতান খাঁন মসজিদ থেকে যোহরের নামায পড়ে ফেরার পথে পিয়ন একটা চিঠি দিল। ঠিকানা দেখে বুঝতে পারলেন মাহবুবের চিঠি। বাড়িতে এসে পড়ে স্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন, মাহবুব সামনের মাসে আসবে লিখেছে, নাও পড়।
মরিয়ম খাতুন পড়তে লাগলেন,
শ্রদ্ধেয় আব্বা ও আম্মা,
বহুৎ বহুৎ সালাম পাক কদমে পৌঁছে। আশা করি আল্লাহ পাকের অপার করুনায় আপনারা ভালো আছেন। আমিও তারই করুনায় ও আপনাদের নেক দোয়ার বরকতে ভালো আছি। বাদ আরজ এই যে, দীর্ঘ চার মাস আপনাদেরকে না দেখে মন বড় উতলা হয়ে উঠেছে। এই নাদান ছেলেকে এতদিন না দেখে আপনাদেরও যে মন উতলা হয়ে আছে তা জাণি। পড়ার চাপে বাড়ী আসতে পারিনি। আশা করি সামনের মাসের সাত আট তারিখে ইনশাআল্লাহ আসব। আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন আমাকে সহি সালামতে আপনাদের মোবারক কদমে সালাম করার তওফিক দেন। আপনারা শরীরের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। আমার জন্য কোন দুঃচিন্তা করবেন না। আল্লাহর রহমত এবং আপনাদের দোয়া আমার এক মাত্র কাম্য। আমি যেন আল্লাহ ও তার রসুলের (দঃ) বিধান মোতাবেক চলতে পারি সেই দোয়া করবেন। আল্লাহ পাকের দরবারে আপনাদের সহি সালামত কামনা করে এবং আপনাদের মোবারক কদমে আর একবার সালাম জানিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি আপনাদের নালায়েক সন্তান
মাহবুব।
চিঠি পড়তে পড়তে মরিয়ম খাতুনের চোখে পানি এসে গেল। আজ চার মাস কলিজার টুকরাকে দেখেন নি। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে দুহাত তুলে দোয়া করলেন, আল্লাহ গো, তুমি আমাদের লালকে সহিসালামতে রেখ। তার মনের বাসনা পূরণ করো।
সুলতান খাঁনেরও একই অবস্থা। স্ত্রী থেমে যেতে ভিজে গলায় বললেন, আমিন।
মরিয়ম খাতুন আঁচলে চোখ মুছে বললেন, চলুন খাবেন।
৩. মাহবুব মাহবুবা
০৩.
মাহবুব মাহবুবাদের বাসা থেকে মেসে ফিরে এলে মাসুম জিজ্ঞেস করল, কিরে এতক্ষণ কোথায় ছিলি? তোর জন্য অপেক্ষা করে করে এই একটু আগে খেলাম।
মাহবুব বলল, পরে শুনিস, এখন খিদেয় পেট চো চো করছে।
নামায পড়েছিস? না তাও পড়িস নি।
কাপড় পাল্টাতে পাল্টাতে মাহবুব বলল, নামায জামাতেই পড়েছি। আর কোনো কথা বলবি না, ভীষণ রেগে আছি। তারপর কলতলা থেকে হাত মুখ ধূয়ে এসে খেতে বসল।
মাসুম চৌকিতে পা ঝুলিয়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখল, গোগ্রাসে গিলছে। বলল, একটু আস্তে খা, গলায় আটকে যাবে তো।
মাহবুব কোনো রা না করে খাওয়া শেষ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। তারপর বিছানায় বসে বলল, জানিস, ক্লাস শেষে বেরিয়েই আজ সেই মেয়েটির সঙ্গে মুখোমুখি দেখা।
কার সঙ্গে দেখা?
আরে ঐ যে সাঁতার প্রতিযোগিতার দিন যে মেয়েটা আমাদেরকে লিফট দিতে চেয়েছিল।
মাসুম তড়াক করে উঠে বসে বলল, তাই নাকি? তা তারপর কি হল বলবি তো?
কি আর হবে? আজও লিফট দিতে চাইল। আমি রাজি হলাম না। শেষে অনেক জেদা- জেদির পর গাড়িতে উঠলাম।
তা হলে তো অনেক আগেই ফেরার কথা।
আমাকে শেষ করতে দে, তারপর প্রশ্ন করিস। গাড়িতে উঠার পর মেয়েটা ড্রাইভারকে তাদের বাসায় যেতে বলল। শুনে আমি খুব রেগে গেলাম। ড্রাইভারকে বললাম, গাড়ি থামান, আমি নেমে যাব। মেয়েটা ড্রাইভারকে নিষেধ করে আমাকে বলল, ভয় পাচ্ছেন কেন? কীডন্যাপ করলেও মুক্তিপণ চাইব না। তারপর যা কিছু ঘটেছে সব খুলে বলে বলল, আমার কি মনে হয় জানিস মেয়েটার মাথায় একটু গোলমাল আছে।
মাসুম হেসে উঠে বলল, আমার কিন্তু ঠিক উল্টো মনে হচ্ছে।
মাহবুব অবাক কণ্ঠে বলল, মানে?
মানে পরে বলছি, তার আগে আমার কথার উত্তর দে। মেয়েটির বাবা নিশ্চয় ভীষণ বড় লোক?
সবকিছু দেখে তো তাই মনে হল।
নিশ্চয় মেয়েটি মা-বাবার এক মাত্র সন্তান?
ঠিক বলতে পারছি না তবে মনে হয় তোর কথা ঠিক।
এবার মানেটা বলছি শোন, এমনি বড় লোকের ছেলেমেয়েরা খুব এক রোখা হয়। তার উপর ঐ মেয়েটি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তাই একটু বেশি একরোখা ও জেদি। এই রকম ছেলেমেয়েরা যা পেতে চাই, তা যেমন করে হোক পাওয়ার চেষ্টা করে।
কি জানি, তোর কথা হয়তো ঠিক। তুইওতো বড়লোকের ছেলে, কই তোর তো একরোখা স্বভাব না?
আর তুই বুঝি গরিবের ছেলে? আসলে কি জানিস, আমরা হলাম গ্রামের বড় লোকের ছেলে। তা ছাড়া আমাদের ভাই-বোন আছে। আমি কিন্তু শহরের বড় লোকের ছেলে মেয়েদের কথা বলছি।
তুই যাই বলিস, আমি কিন্তু জানি জোর করে অথবা টাকার জোরে সব কিছু পাওয়া গেলেও মন পাওয়া যায় না।
আর এটা জানিস না, মনকে প্রেম-ভালবাসা দিয়ে জয় করা যায়?
জানি, তবে মনের মতো মন হতে হবে।
তাতো নিশ্চয়, তুই কি মেয়েটার মনের খবর জানতে পারিস নি?
একদম যে পারিনি তা নয়। কিন্তু যা শুধু অসম্ভব নয় অবাস্তবও। তাকে নিয়ে চিন্তা করাও পাপ।