মাহবুব হাসান।
দেশের বাড়ী?
রং পুর—-
কে কে আছেন?
শুধু মা-বাবা। এক বোন ছিল তার বিয়ে হয়ে গেছে।
পড়াশোনা শেষ করার পর কি করবেন ভেবেছেন?
গ্রামের অবহেলিত দরিদ্র জনসাধারনের উন্নতি করাই আমার জীবনের লক্ষ্য।
নিজের উন্নতির কথা চিন্তা করেন না।
যারা দশের চিন্তা করে, আল্লাহ পাক তাদের উন্নতির পথ করে দেন।
আল্লাহ তো মানুষকে চেষ্টা করতে বলেছেন।
দেখুন উন্নতি বলতে আপনারা ব্যবসা-বানিজ্য, বাড়ি-গাড়ি ও ভোগ-বিলাস বোঝেন। আর এ জন্য দেশ ও দশের সার্থের দিকে না তাকিয়ে শুধু নিজের সার্থ সিদ্ধির জন্য যে কোনো অন্যায়ের প্রশ্রয়ও নিয়ে থাকেন। আমি কিন্তু বুঝি, মানুষের অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং অশিক্ষিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া। আর এটা করাই প্রত্যেক শিক্ষিত ও সামর্থবানদের উচিত বলে আমি মনে করি।
আনিস সাহেব অসন্তুষ্ট হলেও মুখে প্রসন্ন ভাব বজায় রেখে বললেন, আপনার কথাগুলো খুব ভালো, তবে তা শুধু বই পুস্তকের পাতাতেই মানায়। বাস্তবে এর কোনো নজীর আছে বলে মনে হয় না। এ কথাটা বোধ হয় চিন্তা করেন নি, ব্যবসায়ীরা ও মিল মালিকেরা তাদের প্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে চাকরী দিয়ে তাদের জিবীকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন, এটা করে তারা কি দেশের ও দশের উপকার করছেন না?
মাহবুব বলল, নিশ্চয় করছেন, তবে তা শহর ভিত্তিক ও শিক্ষিত মানুষের জন্য। শহরের চেয়ে গ্রামে অধীক মানুষ বাস করে। তারা দরিদ্র ও অশিক্ষিত। তাদের জন্যও তো কিছু করা উচিত।
তা উচিত, তবে সে জন্যে প্রচুর অর্থের দরকার। আপনার কী তা আছে?
গ্রামের সাধারন মানুষের যা থাকে আল্লাহর রহমতে আমারও তাই আছে। একটু আগে বললাম না, এ সব কাজে যারা অগ্রসর হয়, তাদেরকে আল্লাহ সব দিক থেকে সাহায্য করেন।
শুনেছি গ্রামের ভীলেজ পলিটিকস খুব প্রখর। তাদের ফাঁদে পড়ে অনেক ভালো ভালো লোক সর্বশান্ত হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বসবাস করছে।
আপনি ঠিক কথা, বলেছেন। পলিটিকস সবখানে আছে। তবে গ্রামের সহজ সরল ও সাধারন মানুষকে কিছু সংখ্যক লোক হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছে। তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। ধনীরা তাদের রক্ত চুষে নিচ্ছে। আমি তাদেরকে উদ্ধার করতে চাই।
আটষট্টি হাজার গ্রামের কয়টা মানুষকে আপনি উদ্ধার করবেন?
তা জানি না, তবে নিজের গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে জন্ম সার্থক হয়েছে মনে করব।
মাহবুবার সঙ্গে আপনার পরিচয় কত দিনের?
কত দিনের মানে? এখনো ভালোভাবে পরিচয়ই হয়নি।
একটা অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে তাদের বাসায় এলেন কি করে?
মাহবুব সাঁতার প্রতিযোগীতার দিনের ও আজকের ঘটনার কথা বলে ঘড়ি দেখে বলল, মাফ করবেন, এবার আমাকে উঠতে হবে। এই কথা বলে দাঁড়িয়ে পড়ল।
আনিস সাহেব ও শামীমা বেগম এক সঙ্গে বলে উঠলেন, সে কি? না খেয়ে যাবেন? না না তা হতে পারে না। আপনি এসেছেন শুনে আমরা না খেয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ করতে এলাম। আমাদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবেন।
মাফ করবেন তা সম্ভব নয়। তার পর বলল, আপনাদের মেয়ের মাথায় একটু গোলমাল আছে। বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। কথা শেষ করে সালাম দিয়ে চলে গেল।
মাহবুবা তার পিছনে যেতে যেতে বলল, প্লীজ মাহবুব সাহেব, যাবেন না, দাঁড়ান।
আনিস সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ওকে যেতে দে।
মাহবুবা মা-বাবার কথা কোনো দিন অমান্য করেনি। আজও করল না। ফিরে এসে ছল ছল চোখে ভিজে গলায় বলল, ওঁর এখনো খাওয়া হয়নি বাবা। ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে ধরে এনেছিলাম।
আনিস সাহেব মেয়েকে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তাতে কি হয়েছে মা? বাসায় গিয়ে খাবেন। আমরাওতো এখনো খাইনি। ছেলেটা ঠিকই বলে গেল, তোকে বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াই উচিত। তারপর স্ত্রীকে বললেন, চল। খেতে দেবে।
খেতে বসে মাহবুবা যে সামান্য খেয়ে উঠে গেল, তা আনিস সাহেব দেখেও দেখলেন না। শামীমা বেগম মেয়েকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন আনিস সাহেব ইশারা করে থামিয়ে দিলেন।
মেয়ে চলে যাওয়ার পর বললেন, ছেলেটা না খেয়ে চলে গেছে তাই মাহবুবা খেতে পারল না, এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝতে পারলে না?
তা আর পারিনি। কিন্তু তাই বলে মেয়েকে খাওয়ার কথা বলব না? তারপর সামান্য খেয়ে তিনিও উঠে পড়লেন।
আনিস সাহেব গাড়ি ও গাড়ির পার্ডসের ইম্পোর্টের ব্যবসা করেন, দেশের বিভিন্ন শহরে অফিস ও শোরুম। মতিঝিলে হেড অফিস, মাহবুবাই তার এক মাত্র সন্তান। তিনি এমন একটা ছেলের সন্ধানে আছেন, যাকে জামাই করে এই ব্যবসার দায়িত্ব দেবেন। তাই মেয়ে মাহবুবের মতো সুন্দর ছেলেকে পছন্দ করেছে জেনে প্রথমে খুব খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে যখন জানতে পারলেন, সে আদর্শবান ও ধামকি তখন খুব চিন্তিত হলেন। খাওয়া দাওয়ার পর অফিসে এসে চিন্তা করতে লাগলেন, মাহবুবা যাকে পছন্দ করেছে তাকে ডিনাই করা কিছুতেই চলবে না। কিন্তু ঐ ছেলে কি আমাদের কথা মতো চলবে? বিয়ে করে মাহবুবাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে। মাহবুবা কি সেখানে থাকতে পারবে? তার চেয়ে গালিবই ভালো।
গালিব ম্যানেজারের ছেলে। বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারীং পাশ করে ফিরেছে। দেখতে খুব সুন্দর। স্বাস্থ্যও ভালো। খুব স্মার্ট ছেলে। আনিস সাহেব তাকে খুলনা অফিসের ম্যানেজার পদে নিয়োগ করেছেন। ভেবে রাখলেন, গালিবের কথা বলে মেয়ের মন তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবেন।