মাহবুবের তখন স্বপ্নের কথা মনে পড়ল। সালামের উত্তর দিয়ে বলল, হ্যাঁ পারছি।
আর বোধ হয় ক্লাস নেই?
এবারে মাহবুব ঘাড় নেড়ে না সূচক সায় দিল।
আমারও নেই। চলুন আপনাকে পৌঁছে দিই।
ধন্যবাদ বলে মাহবুব হাঁটতে শুরু করল।
মাহবুবা পথ আগলে বলল, আপনি আচ্ছা ছেলেতো, আমি আপনাকে লিফট দিতে চাইলাম, আর আপনি কিছু না বলে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে চলে যাচ্ছেন?
মাহবুব থমকে দাঁড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, এর আগে কতজনকে লিফট দিয়েছেন?
মাহবুবাও তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেইভাবে আরো কয়েক সেকেন্ড থেকে ছল ছল চোখে বলল, বললে বিশ্বাস করবেন?
সেটা আমার ব্যাপার, বলেই দেখুন।
আপনাকেই প্রথম। তারপর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে জিজ্ঞেস করল বিশ্বাস হল কিনা বলবেন না?
গত রাতের স্বপ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে যেতে দেখে মাহবুব আরো বেশি অবাক হল। চোখে পানি দেখে বুঝতে পারল, মেয়েটা সত্য বলেছে। বলল, হয়েছে।
তা হলে লিফটা নিশ্চয় গ্রহণ করবেন?
মাহবুব চলতে শুরু করে বলল, কিন্তু আমি তো এখন বাসায় যাব না।
মাহবুবাও তার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, যেখানে যাবেন সেখানেই লিফট দেব। আমাকে লিফট দিয়ে আপনার কি লাভ? তা ছাড়া আপনি বললেই যে আমি গ্রহন করব, তা ভাবলেন কি করে?
গ্রহন করা না করা আপনার ব্যাপার, আর লাভের কথা যে বললেন, তা জানতে হলে আপনাকে আমার প্রস্তাব গ্রহন করতে হবে।
মাহবুব ক্ষণকাল চিন্তা করে বলল, একজন অপরিচিতকে গাড়িতে তোলা কী ঠিক হবে?
সেটা আমার ব্যাপার। এভাবে কথা না বলে গাড়িতে যেতে যেতে বললে ভালো হত না? আমি তো আর সন্ত্রাসী নই যে, আপনাকে কীডন্যাপ করব।
মাহবুবার কথাবার্তায় মাহবুব অভিভূত হল। জিজ্ঞেস করল, আমার পরিচয় জানেন?
না, জানার জন্যই তো চেষ্টা করছি।
কেন জিজ্ঞেস করতে পারি?
আগে গাড়িতে উঠুন তারপর বলব।
যদি বলি না?
মাহবুবা ম্লান মুখে বলল, তাহলে বুঝব আমার দুর্ভাগ্য।
তার ম্লান মুখ দেখে মাহবুবের দিলটা মোচড় দিয়ে উঠল। বলল, ঠিক আছে চলুন।
মালিক কন্যার সাথে একজনকে আসতে দেখে ড্রাইভার নেমে পিছনের গেট খুলে দিল। মাহবুব বসার পর বন্ধ করে অন্য পাশের গেট খুলে দিল। মাহবুবা বসে ড্রাইভারকে বলল, বাসায় চলুন।
মাহবুব অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, বাসায় মানে?
মাহবুবা মৃদু হেসে বলল, বাসায় মানে আমাদের বাসায়। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কীড ন্যাপ করলেও মুক্তিপণ দাবি করব না।
মাহবুব রেগে গিয়ে গম্ভীর হয়ে রইল।
মাহবুবা তা বুঝতে পেরে বলল, প্লীজ আমাকে ভুল বুঝে রাগ করবেন না।
আমার জায়গায় আপনি হলে কি করতেন?
অনেক কিছুই করতাম, কারণ আমি মেয়ে। আর আপনি——-
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে মাহবুব বলল,থাক আর বলতে হবে না। তারপর বলল, এখন পর্যন্ত নামটাও বললেন না।
ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিন। মাহবুবা সুলতানা। সবাই মাহবুবা বলে ডাকে।
নাম শুনে মাহবুবের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠল, জিজ্ঞেস করল, নামের অর্থ জানেন।
না।
এ কেমন কথা, নিজের নামের অর্থ জানেন না।
আপনার জানা থাকলে প্লীজ বলে দিন না।
মাহবুবার অর্থ প্রেমিকা বা প্রীয়া, আর সুলতানার অর্থ সম্রাজ্ঞী।
আপনার পুরো নামটা বলুন। সেদিন অটোগ্রাফ দেখে ঠিক বুঝতে পারিনি।
মাহবুব হাসান।
কি বললেন।
মাহবুব হাসান।
সত্যি বললেন, না জোক করছেন?
আমি কখনো মিথ্যা বলি না। এমন কি মিথ্যা জোকও করি না। কারণ মিথ্যা বলা মহাপাপ। মুসলমানদের জন্য হারাম।
ঠিক আছে রাগ করবেন না। নামের অর্থ বলুন।
মাহবুব অর্থ প্রেমাষ্পদ বা প্রেমিক, আর হাসান অর্থ সুন্দর।
মাহবুবা নামের অর্থ শুনে আনন্দিত হলেও লজ্জা পেয়ে আর কিছু না বলে চুপ করে রইল।
মাহবুব সামনে একটা মসজিদ দেখতে পেয়ে হাত ঘড়িতে টাইম দেখে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল, ঐ মসজিদের কাছে গাড়ি থামাবেন।
ড্রাইভার থামাবার পর গাড়ি থেকে নেমে মাহবুবার দিকে তাকিয়ে নামায পড়ে আসছি বলে চলে গেল।
মাহবুবা মাহবুবকে নিয়ে যখন বাসায় পৌঁছাল তখন প্রায় আড়াইটা। বাবা যে লাঞ্চ খেতে ফিরেছে তার গাড়ি দেখে বুঝতে পারল। মাহবুবকে ড্রইংরুমে বসিয়ে এক্ষুণী আসছি বলে মাহবুবা ভিতরে চলে গেল।
মাহবুব অনুমান করেছিল, মাহবুবা ধনী কন্যা। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি ও বাড়ির চার পাশের পরিবেশ ও ড্রইং রুমের আসবাব পত্র দেখে মনে হল শুধু ধনী নয়, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ধনীদের অন্যতম। ড্রইংরুমটা বেশ বড়। চার পাশের দেওয়ালে শ্রেষ্ঠ মনিষিদের তৈল চিত্র আর বেশ কিছু বিদেশের সিন-সিনারী।
মাহবুবা বাবার ঘরে গিয়ে দেখল, বাবা ড্রেস চেঞ্জ করছে, আর মা পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
শামীমা বেগম মেয়েকে দেখে বললেন, তুই ফিরেছিস, যা কাপড় পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে আয়। বাবার সঙ্গে খেয়ে নিবি।
মাহবুবা বলল, চেঞ্জ পরে করব। আগে ড্রইংরুমে চল। তোমাদেরকে যে ছেলেটার কথা বলেছিলাম, তাকে নিয়ে এসেছি।
আনিস সাহেব বললেন, তাই নাকি? তার খোঁজ পেলি কি ভাবে?
সে কথা পরে শোনো, এখন ড্রইংরুমে চলো, পরিচয় করিয়ে দিই। তারপর খাওয়া দাওয়া করা যাবে।
মিনিট পাঁচেক পরে মাহবুবা মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ড্রইংরুমে এল।
মাহবুব দাঁড়িয়ে সালাম দিল।
আনিস সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বলে নিজেরাও বসলেন। তারপর মাহবুবের থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে চিন্তা করলেন, এরকম ছেলেই এ বাড়ির জামাই হওয়ার উপযুক্ত। বললেন, আমরা মাহবুবার মা-বাবা। তারপর জিজ্ঞেস করলেন কি নাম আপনার?