মরিয়ম যে খুব বুদ্ধিমতী তা সুলতান খাঁন জানেন। তাই তার কথার কোনো প্রতি উত্তর না করে চুপ করে রইলেন।
.
মাহবুবা মাসুমের কাছ থেকে ফিরে বাসায় ঢুকে দেখল, মা-বাবা কোথায় যেন বেরোচ্ছেন।
আনিস সাহেব মেয়েকে দেখে একটু রাগের সঙ্গে বললেন, সারাদিন কি ক্লাস হয়?
মাহবুবের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় কিছুদিন থেকে মাহবুবার মন খুব খারাপ। আজ আবার মাসুমের কথা শুনে আরো মুষড়ে পড়েছে। এখন বাবা রাগের সঙ্গে কথা বলছে দেখে নিজেকে সামলাতে পারল না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে বলল, তুমি। আমাকে বকছ কেন বাবা? আমি কি এমন অন্যায় করেছি? বরং ইদানিং তুমিই তো আমার খোঁজ কর না।
আনিস সাহেব কয়েক দিন ব্যবসার কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। মেয়ের খোঁজ নিতে পারেননি। আজ এক বন্ধুর পার্টিতে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে কয়েকবার খোঁজ করে পাননি। তাই যাওয়ার সময় তাকে বাইরে থেকে আসতে দেখে রাগের সঙ্গে কথাটা বলে ফেলেছেন। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তুই কোনো দোষ করিস নি। আমিই ভুল করেছি। তোকে নিয়ে একটা পার্টিতে যাব ভেবেছিলাম। না পেয়ে একটু রেগে গেছি। তারপর তার চোখ মুখ মুছে দিয়ে বললেন, তৈরি হয়ে আয় আমরা গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
আনিস সাহেব সচরাচর মেয়েকে কোনো পার্টিতে নিয়ে যান না। আজ নিয়ে যাওয়ার পিছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। সে কথা স্ত্রীকে বলেছেন। উদ্দেশ্যটা হল, বন্ধু নাজিমের ছেলে প্রিন্সের সঙ্গে মাহবুবার পরিচয় করিয়ে দেওয়া। প্রিন্স সম্প্রতি ফরেন। থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে এসে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা ফরছে। সে মা-বাবার একমাত্র সন্তান। সুন্দর স্বাস্থ্যবান যুবক। পার্টিতে গিয়ে আনিস সাহেব সবার সঙ্গে মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় প্রিন্সের সঙ্গেও করালেন।
প্রিন্স মাহবুবাকে দেখে মুগ্ধ হল। একসময়ে বলল, ফরেনের মেয়েদের রঙই শুধু ফর্সা। আপনার সঙ্গে তাদের কোনো তুলনাই হয় না। সত্যি বলতে কি আপনার মতো বিউটিফুল মেয়ে আর কখনো দেখিনি। আপনি অদ্বিতীয়া।
মাহবুবা তোষামোদী মোটেই পছন্দ করে না। প্রিন্সের কথা শুনে বিরক্ত হলেও সৌজন্য রক্ষা করার জন্য মৃদু হেসে বলল, আচ্ছা, ছেলেরা এত হ্যাংলা কেন বলতে পারেন? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার গুণ গাইতে শুরু করে দেয়।
বিদ্রূপটা প্রিন্স গায়ে মাখল না। হেসে উঠে বলল, ছেলেদের কাছ থেকে প্রশংসা শোনার জন্য মেয়েরা উদগ্রীব হয়ে থাকে। রূপের প্রশংসা না করলে, মেয়েরা ছেলেদেরকে আন-কালচার্ড-আন সোশ্যাল বলে গালাগালি করে। চলুন না নিরিবিলিতে বসে একটু আলাপ করি। তারপর একজন বেয়ারাকে দুগ্লাস ব্র্যান্ডি নিয়ে আসতে বলল।
মাহবুবা বুঝতে পারল, প্রিন্স ফরেন থেকে ডিগ্রী নিয়ে আসার সাথে সাথে মদ ও মেয়ে মানুষের নেশা রপ্ত করে এসেছে। বলল, ধন্যবাদ আমি ড্রিঙ্ক করি না। আর আলাপ তো হলই। নিরিবিলিতে আবার কি আলাপ করবেন? কথা শেষ করে তার কাছ। থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে প্রিন্স বলল, দাঁড়ান, যাবেন না। তারপর বলল, আপনার কাছ থেকে এরকম ব্যবহার আশা করিনি।
মাহবুবা অবাক হওয়ার ভান করে বলল, আমি কী আপনার সঙ্গে কোনো রকম খারাপ ব্যবহার কিছু করেছি? শুধু শুধু দোষ দিচ্ছেন কেন? তারপর আর সেখানে। দাঁড়াল না।
পার্টি থেকে বাসায় ফিরে আনিস সাহেব মেয়েকে বললেন, জানিস মা, আমার বন্ধু কয়েকটা ইন্ড্রাস্ট্রির মালিক। গ্রামের বাড়িতেও অনেক জমি জায়গা। প্রিন্সই তার একমাত্র ছেলে। ফরেন থেকে বিজনেস ম্যানেজম্যান্টে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এসে বাবার বিজনেস চালাচ্ছে। খুব হ্যান্ডসাম ও স্মার্ট ছেলে। ওর বাবা-মা তো ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বললেন, প্রিন্স ছয় মাস হল ফরেন থেকে ফিরে এসে ব্যবসাতে লেগেছে। এরই মধ্যে অনেক উন্নতি করেছে। প্রিন্সকে আমার দারুন পছন্দ।
স্বামী থেমে যেতে শামীমা বেগম বললেন, আমারও। তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই কিছু বলছিস না যে?
পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার মতবল মাহবুবা গিয়েই বুঝতে পেরেছিল। বলল, আমার কাছেও সবকিছু ভালো মনে হল। তবে প্রিন্সকে খুব একটা ভালো মনে হয়নি।
শামীমা বেগম বললেন, কেন রে-মা? অমন সুন্দর ছেলেকে তোর ভালো লাগল না কেন?
আমি তো বলিনি সে অসুন্দর। তার সঙ্গে আলাপ করে আমার ভালো লাগেনি, তাই বললাম।
আনিস সাহেব বললেন, একবার আলাপ করে কি আর ভালোমন্দ বুঝবি? ভাবছি, প্রিন্সকে বাসায় আসতে বলব। ভালো করে আলাপ কর। দেখবি আমার কথা সত্য কি না।
না বাবা আসতে বলো না। একবার আলাপ করে তার চরিত্র জানা হয়ে গেছে। আর আলাপ করার দরকার নেই। মাহবুবের কথা তোমাদেরকে বলেছি, তারপরও তোমরা কেন এসব কথা বলছ?
কিন্তু মা, তুই ছেলে মানুষ। এখনো সবকিছু বুঝতে শিখিসনি। তোর ছেলেমানুষি কথা শুনে আমরা তো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। একটা কথা জানিস না, সমানে সমানে না হলে যেমন আত্মীয়তা মানায় না, তেমনি সাংসারিক জীবনও সুখের হয় না। প্রিন্সকে তোর পছন্দ হয়নি তো কি হয়েছে আমরা অন্য ছেলের সন্ধান করব।
শোন বাবা, তোমাদেরকে বলেছি মাহবুবকে আমি ভালবাসি। তাকে আমাদের সমাজের মতো করে বিয়ে করব। তারপরও কেন যে তোমরা ওসব কথা বলছ বুঝতে পারছি না। শেষের দিকের কথাগুলো কান্নার মতো শোনাল।