আমার কিন্তু অন্য কথা মনে হচ্ছে।
কি কথা শুনি।
তোর সঙ্গে দেখা করার জন্য।
তুই বড় ফালতু কথা বলিস।
দেখিস আমার ফালতু কথাটাই একদিন তোর কাছে দামি হয়ে দাঁড়াবে।
যখনকার কথা তখন ভাবা যাবে এবার তুই থাম, সেই কখন থেকে বক বক করছিস।
.
পরের দিন কাগজে কষ্টিউম পরা ও মেডেল গলায় মাহবুবের ফটো ছাপা হয়েছে। মাহবুবা অনেক্ষণ ফটোর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বাবার রুমে গেল।
আনিস সাহেব অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলেন। শামীমা বেগম স্বামীর গায়ে কোট পরিয়ে দিচ্ছিলেন। মেয়েকে দেখে বললেন, কিছু বলবি?
মাহবুবা কাগজটা খুলে তাদের সামনে ধরে বলল, যে ছেলেটার কথা তোমাদের সঙ্গে প্রায় আলাপ করি, এই সেই ছেলে। জান বাবা, সাঁতারে তিনটে স্বর্ণ পদক পেয়েছে।
আনিস সাহেব কাগজটা নিয়ে মাহবুবের ছবির দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন, ছেলেটাতো দেখতে দারুন। তা ওকে একদিন বাসায় নিয়ে আয় আলাপ করা যাবে।
শামীমা বেগম স্বামীর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ভালো করে দেখে বললেন, বাহ, খুব সুন্দর ছেলেতো, হ্যাঁ, তাই নিয়ে আসিস।
কি যে বল না তোমরা, ওর সঙ্গে এখনো ভালভাবে পরিচয়ই হয়নি, নিয়ে আসব কি করে?
পরিচয় করিসনি কেন?
ওর পাত্তাই পাওয়া যায় না।
তুই তো বলেছিলি ও ভার্সিটিতে পড়ে, তা হলে পাত্তা পাচ্ছিসনা কেন?
ভার্সিটিতে কত হাজার হাজার ছেলে মেয়ে পড়ে তাদের মধ্যে একজনের পাত্তা পাওয়া কঠিন নই কি?
তা কঠিন, তবে চেষ্টার দ্বারা কঠিনকে সহজ করা যায়।
চেষ্টার ত্রুটি করছি না। কাল চান্সও পেয়েছিলাম; কিন্তু সফল হতে পারিনি।
কেন?
মাহবুবা কালকের ঘটনাটা বলল।
আনিস সাহেব বললেন, ছবি দেখেই মনে হচ্ছে ছেলেটার একটা ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট রয়েছে। এই ধরনের ছেলেরা খুব সেন্টিমেন্টাল হয়। এখন যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে এলেন।
শামীমা বেগমও ব্রীফকেসটা হাতে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। বারান্দায় বয়স্ক ড্রাইবার দাঁড়িয়েছিল। বেগম সাহেবের হাত থেকে ব্রীফকেসটা নিয়ে আগে আগে চলে গেল। শামীমা বেগম বললেন, ছেলেটা কিন্তু দারুন, মাহবুবার সঙ্গে যা মানাবে না?
আনিস সাহেব মৃদু হেসে বললেন, তোমার সঙ্গে আমিও একমত। তবে আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, অল দ্যাট গীটার ইজ নট গোল্ড।
তাতো বটেই। আমরা যাচাই করেই এগোবো। তারপর স্বামী গাড়িতে উঠে বসার পর বিদায় সম্ভাসন জানালেন। গাড়ি গেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফিরে এলেন।
মাহবুবাও তাদের পিছনে বেরিয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মা-বাবার দিকে তাকিয়েছিল। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে, প্রতিদিন মা বাবাকে গাড়িতে তুলে বিদায় দেওয়ার দৃশ্য। কখনো মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া, কথা কাটা-কাটি তো দুরের কথা, মাকে অভিমান করতেও দেখেনি। তার মনে হল মা-বাবার মতো সুখী দম্পত্তি বোধ হয়। সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
শামীমা বেগম ফিরে এসে মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, কিরে কি ভাবছিস? চল ঘরে চল। তারপর যেতে যেতে বললেন, ছেলেটার খোঁজ খবর নিয়ে পরিচয় কর। তারপর একদিন নিয়ে আসবি।
চেষ্টার ত্রুটি করব না বলে মাহবুবা নিজের রুমে চলে গেল।
.
রাত্রে ঘুমোবার সময় মাহবুবের হঠাৎ রিকশায় ওঠার সময় যে মেয়েটা অটোগ্রাফ নিয়ে লিফট অফার করেছিল, তার কথা মনে পড়ল। ফেরার পথে রিকশায় মাসুমের কথা শুনে বিরক্ত ভাব দেখালেও মনে মনে খুশি হয়েছিল। এখন সেই সব কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল। ভোরের দিকে স্বপ্ন দেখল, সে ক্লাস শেষে বাস ধরবে বলে ফুটপাত ধরে হেঁটে নীলক্ষেতে যাচ্ছিল। এমন সময় একটা প্রাইভেট কার তার সামনে ফুটপাত ঘেঁসে দাঁড়াল। মাহবুব সে দিকে না তাকিয়ে চলে যেতে লাগল। গাড়িটা ক্রস করে যাওয়ার সময় শুনতে পেল, মাহবুব সাহেব একটু দাঁড়ান।
মাহবুব অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটছিল বলে গলার স্বর চিনতে পারল না। চার বছর ভার্সিটিতে পড়ছে, কোনো মেয়ের সঙ্গে পরিচয় নেই। তাই আজ হঠাৎ কোনো মেয়েকে তার নাম ধরে ডাকতে শুনে অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়াল।
মাহবুবা ততক্ষনে গাড়ি থেকে নেমে মাহবুবের সামনে এসে বলল, চিনতে পারছেন?
মাহবুব তার মুখের দিকে তাকিয়ে চিনতে পেরে ঘাড় নেড়ে সায় দিল।
কোথায় যাবেন? আসুন না আপনাকে পৌঁছে দিই।
ধন্যবাদ বলে মাহবুব হাঁটতে শুরু করল।
মাহবুবা পথ আগলে বলল, আপনি আচ্ছা ছেলে তো, আমি আপনাকে লিফট দিতে চাইলাম, আর আপনি কিছু না বলে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে চলে যাচ্ছেন?
মাহবুব থমকে দাঁড়িয়ে বলল, এভাবে কতজনকে লিফট দিয়েছেন?
মাহবুবা মাহবুবের মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ছল ছল চোখে বলল, বললে বিশ্বাস করবেন?
সেটা আমার ব্যাপার, বলেই দেখুন।
আপনাকেই প্রথম।
এমন সময় ফজরের আযান শুনে মাহবুবের ঘুম ভেঙ্গে গেল। স্বপ্নের আমেজ নিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকল। তারপর উঠে বাথরুমের কাজ সেরে মাসুমকে জাগিয়ে নামাজের কথা বলে মসজিদে গেল।
.
বেশ কিছু দিন পরের ঘটনা মেয়েটির কথা মাহবুব এক রকম ভুলেই গিয়েছিল। আজ ভার্সিটিতে ক্লাস করে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে আসার সময় মুখোমুখি দেখা।
কয়েক সেকেণ্ড একে অপরের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রথমে মাহবুবা সালাম দিয়ে। বলল, চিনতে পারছেন?