কেন? সে আবার দোষ কি করল, যে জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না?
আসলে তুই শুধু বোকা নস, নীরেট বোকা। আরে নীরেট বোকা গাধা, আমার এখন দুটো সাধনা। একটা হল, রেজাল্ট ভালো করা। আর অন্যটা হল, আব্বার ঋন পরিশোধ করা। এর মধ্যে মাহবুবার সঙ্গে যোগাযোগ, রাখার সময় কোথায়? যদি আল্লাহ পাকের দয়ায় এই দুটো সাধনায় সফল হতে পারি, তখন যোগাযোগ করার চেষ্টা করব।
আমি যত বড়ই নিরেট বোকা গাধা হইনা কেন; আমার তো মনে হচ্ছে তুই তার থেকে আরো বেশি। কারণ আমি মাহবুবাকে যতটুকু জেনেছি তাতে হলফ করে বলতে পারি তুই যদি তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখিস, সে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে।
আরে না, আত্মহত্যা কি এতই সোজা। মাহবুবা আমাকে ভীষণ ভালবাসে তা জানি। তাই বলে এরকম কাজ সে কিছুতেই করতে পারবে না। আর আমার জানা যদি সত্য হয়, তবে আজীবন অপেক্ষা করবে।
মাসুম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কিন্তু সে তো আমাকে খেয়ে ফেলবে। অন্ততঃ ঠিকানাটা দে।
মাহবুব হেসে উঠে বলল, খেয়ে ফেললে তো ভালই। সে আর জ্বালাতন করতে পারবে না। আর ঠিকানাই যদি দেব তা হলে ঠিকানা বদলাচ্ছি কেন?
তোর মতলব যে কি কিছুই বুঝতে পারছি না।
তোকে কিছু বুঝতে হবে না। তুই রান্নার কাজটা সেরে ফেল, আমি সব কিছু বেঁধে হেঁদে রেডি করি। খেয়ে তারপর যাব।
ঐ রাতেই দশটার সময় মাহবুব একটা রিকশাভ্যানে করে আজিমপুর মেসে চলে গেল। যাওয়ার সময় মাসুমকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, তোকে অনেক জ্বালিয়েছি মাফ করে দে। তারপর বলল, তুই চিন্তা করিস না, মাঝে মাঝে আসব। আর শোন, মাহবুবাকে বলিস, আমি খুব বাজে ছেলে। সামান্য ব্যাপারে তোর সঙ্গে রাগারাগি করে চলে গেছি। তাকে ভুলে যাওয়াই আপনার উচিত।
মাসুম বিশ্বাসই করতে পারল না, মাহবুব সত্যি সত্যি চলে যাবে। তাই কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল।
মাহবুব চলে যাওয়ার পর দুটো কারণে বেশ কয়েক দিন মাসুম সকালে পান্তা খেয়ে বেরিয়ে যায়। ফিরে মাগরিবের নামাযের পর। প্রথম কারণ হল, চার বছর দুজনে এক সঙ্গে ছিল। একা একা থাকতে মন চাইত না। দ্বিতীয় কারণ হল, মাহবুবা এসে মাহবুবের কথা জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবে।
এর মধ্যে মাহবুবা দুদিন এসে রুমে তালা দেখে ফিরে গেছে। তৃতীয় দিন এসেও তাই দেখে গলির মোড়ের ওষুধের দোকানের একজন সেলসম্যানকে জিজ্ঞেস করল, মাহবুব সাহেব ও মাসুম সাহেব কি আর এখানে থাকেন না?
সেলসম্যান বললেন, মাসুম সাহেবকে প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যেতে দেখি। ফেরেন সন্ধ্যের পর। ওঁর মুখেই শুনেছি, মাহবুব সাহেব কিছু দিন আগে এখান থেকে। চলে গেছেন।
ধন্যবাদ জানিয়ে মাহবুবা ফেরার সময় চিন্তা করল মাহবুব কেনই বা তার সঙ্গে দেখা করছে না, কেনই বা এখান থেকে চলে গেল? মাসুম ভাই-ই বা সারাদিন বাইরে থাকেন কেন? কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিল, আজ সন্ধ্যার পর আবার আসবে। বাসায় পৌঁছে ড্রাইভারকে বলল, এখন যেখান থেকে এলাম সন্ধ্যার পর সেখানে আবার যাব।
মসজিদে মাগরিবের নামায পড়ে মাসুম যখন গলির মুখে এল তখন ওষুধের দোকানের সেই সেলসম্যান তাকে ডেকে বললেন, যে মেয়েটি আপনাদের কাছে আসেন, তিনি দু তিন দিন এসে আপনাকে না পেয়ে ফিরে গেছেন। আজও এসেছিলেন। ফিরে যাওয়ার সময় আপনাদের কথা জিজ্ঞেস করে গেলেন।
মাহবুবা যে আসবে তা মাসুম জানে। তাই ঠিক আছে বলে রুমে এসে পড়তে বসল। কিছুক্ষণ পরে মেয়েলি কণ্ঠ শুনতে পেল, মাসুম ভাই আসতে পারি?
মাসুম গলা চিনতে পেরে চমকে উঠে পরমহুর্তে সামলে নিয়ে বলল, আসুন।
মাহবুবা সালাম দিয়ে ভিতরে এল।
মাসুম সালামের উত্তর দিয়ে বলল, খাটেই বসুন।
বসতে আসিনি মাসুম ভাই, শুধু জানতে এসেছি, আমি কি এমন অপরাধ করেছি, যে জন্য মাহবুব এখান থেকে পালাল। আর আপনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এরকম পরিস্থিতিতে একদিন না একদিন পড়তে হবে তা মাসুম জানত। তাই কি বল ব ভেবে রেখেছে। কিন্তু রাত্রে মাহবুবা আসবে এবং এত তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতিতে পড়বে ভাবেনি। বলল, আপনি আগে বসুন তো।
না বসব না। এটা মেস, এমনি দিনে আসি বলে মেসের লোকজন যে সব কমেন্ট করেন, তার কিছু কিছু আমার মনে পড়ে। আজ রাতে এসেছি, সেজন্য হয় তো আরো কিছু বলবেন। আমার প্রশ্নের উত্তর পেলেই চলে যাব।
মাসুম মাহবুবের শেখান কথাগুলো বলে বলল, ও যে এত নীচ তা কল্পনাও করিনি। আর বন্ধুর নীচতার কথা কী করে আপনাকে বলব, সে কথা ভেবে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
– শুধু শুধু মিথ্যে বলে নিজেকে ছোট করবেন না মাসুম ভাই। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না সরাসরি বললেই পারতেন। যাক, আপনাকে আর বিরক্ত করতে কখনো আসব না। আপনাকে পালিয়েও বেড়াতে হবে না। মাহবুবের ঠিকানা দিলে বাধিত হতাম।
মাসুম মাথা নিচু করে বলল, ঠিকানা চেয়েছিলাম দেয়নি।
মাহবুবা বলল, এই কথাটা অবশ্য সত্যি বলেছেন। তারপর কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বলল, ওর গ্রামের ঠিকানা জানেন?
মাসুম জানে। বলবে কিনা চিন্তা করতে লাগল।
কি হল? চুপ করে আছেন কেন? জানা থাকলে লিখে দিন। ঢাকার ঠিকানা জানাতে নিষেধ করলেও গ্রামেরটা দিতেতো নিষেধ করেনি?
মাসুম একটা কাগজে লিখে তার হাতে দিল।
চলি বলে সালাম দিয়ে মাহবুবা বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠল।