মাহবুব গম্ভীর কণ্ঠে মাসুমকে বলল, খুব হয়েছে। এবার বাজে প্যাচাল বন্ধ করে রান্না কর। কত বেলা হয়েছে খেয়াল করেছিস?
মাসুম বলল, আজ রান্না করব না, হোটেল থেকে বিরানী এনে তিনজনে খাব। তারপর মাহবুবাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি বোধ হয় অনেক্ষণ এসেছেন?
মাহবুবা ঘড়ি দেখে বলল, হ্যাঁ তা প্রায় ঘন্টা দুই হবে।
এতক্ষণে নিশ্চয় গলা শুকিয়ে গেছে। দাঁড়ান, চা তৈরী করি। দোকানের চা উনি খেতে পারেন না বলে মাহবুবকে ঈঙ্গিতে দেখাল।
মাহবুবা বলল, আপনার বন্ধু চা করে খাইয়েছে। এখন আর খেতে ইচ্ছা করছে না। তবে আপনারা খেলে করতে পারেন।
মাসুম বলল, তা হলে থাক। আপনার জন্যই বলেছিলাম। ঠিক আছে, আমি হোটেল থেকে বিরানী নিয়ে আসি। কথা শেষ করে বেরিয়ে গেল।
মাহবুবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার অনুরোধের কথাটা মনে রাখলে খুশি হব।
মাহবুব বলল, আপনি যদি আমারও ঐ একই অনুরোধ রাখেন, তা হলে আমিও খুশি হব।
ঠিক আছে, আমি রাজি
তা হলে আমিও রাজি।
একটা কথা বলব?
বল।
প্রতিদিন এলে কোনো অসুবিধা হবে?
নিশ্চয় হবে। কারন এটা মেস, আর আমাদেরকে আশপাশের সবাই চেনে। তোমাকে প্রতিদিন আসতে দেখলে সবার কাছে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
মাহবুব তুমি করে বলতে শুরু করেছে দেখে, মাহবুবাও শুরু করল। বলল, তোমাকে না দেখে যে থাকতে পারব না।
আর একটু সুস্থ হয়ে কয়েক দিনের মধ্যে ভার্সিটি যাব। তখন দেখা হবে।
তাতো হবেই; কিন্তু যতদিন না যাচ্ছ, ততদিন কি হবে?
কি আবার হবে, ধৈৰ্য্য ধরবে।
পারব না, একদিনও থাকতে পারব না।
গত দুদিন ছিলে কি করে?
বাবার সঙ্গে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম, যা কষ্ট হয়েছে না?
দেখ, ছেলে মানুষি করো না, ধৈৰ্য্য তোমাকে ধরতেই হবে।
মাসুম ফিরে এসে মাহবুবের কথা শুনতে পেয়ে বলল, সবকিছুতে ধৈর্য ধরা গেলেও প্রেমের ব্যাপারে ধরা যায় না। আর একটা ব্যাপারেও ধরা যায় না, সেটা হল পেটের কান্না। এখন সেই কান্না থামাবার উপকরণ হাজির। অতএব দেরি না করে শুরু করা যাক। খালি পেটে প্রেমালাপ জমে না।
মাহবুব বেশ রাগের সঙ্গে বলল মাসুম তুই কিন্তু সীমার বাইরে চলে যাচ্ছিস। পরিনতির কথা চিন্তা করে আর একটা কথাও বলবি না।
দেখেছেন ভাবী, থুড়ি, কি বলে ডাকব বলে দেবেন তো?
কেন, আমার নাম ধরে ডাকবেন।
আপনার নামের অর্থ প্রেমিকা। তাই ঐ নামে মাহবুব ডাকতে পারলেও আমি পারব না। আচ্ছা, আপনার আর কোনো নাম নেই? মানে ডাক নাম।
না নেই। তবে সুলতানা বলে ডাকতে পারেন। আমার পুরো নাম মাহবুবা সুলতানা।
দারুন নাম তো। সুলতানা মানে ম্রাজ্ঞী। ঠিক আছে সুলতানা বলেই ডাকব। কিন্তু শুধু নাম ধরে ডাকা কি ঠিক হবে?
কেন ঠিক হবে না? আপনি সুলতানা বলেই ডাকবেন।
কিরে তুই আবার মাইন্ড করবি না তো বলে মাসুম মাহবুবের দিকে তাকাল। তাকে বড় বড় চোখে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে কাচুমাচু হয়ে বলল, মাফ করেদে দোস্ত, এই চুপ করলাম। তারপর তাদের দুজনকে দুটো বিরানীর প্যাকেট দিয়ে নিজেও একটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিল।
মাহবুব বলল, আমরা খাব আর ড্রাইভার—–।
তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে মাসুম বলল, তার হয়তো এতক্ষণে খাওয়া শেষ।
যাক এতক্ষণ বুদ্ধর মতো কাজ করে শেষ কালে বুদ্ধিমানের পরিচয় দিলি। সে জন্যে আজকের সব অপরাধ মাফ করে দিলাম।
মাসুম খেতে খেতে বলল, ধন্যবাদ।
খাওয়া দাওয়া করে মাহবুবা বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর মাসুম খাটের উপর আরাম করে শুয়ে বলল, একেই বলে ভাগ্য, রাজ কন্যার সাথে রাজ্যও পেয়ে যাবি।
মাহবুব বলল, ভাগ্যের কথা একমাত্র আল্লাহ মালুম। আমি রাজ্য পাওয়ার আশা করিনি। শুধু রাজকন্যাকে পেলেই ভাগ্যবান মনে করব। ব্যাস আর কোনো কথা বলবি না। হয় পড়, নচেৎ চুপ করে শুয়ে থাক। আমি এখন পড়ব। অসুখ করে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
৪. মাহবুব সম্পূর্ণ সুস্থ
০৪.
মাহবুব সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর বাড়ি গেল। অসুখে খুব রোগা হয়ে গিয়েছিল। এই কয়েক দিনে কিছুটা ইম্প্রভ হয়েছে। তবু মরিয়ম খাতুন ছেলের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, অসুখ হয়ে বেশ রোগা হয়ে গেছিস। কিছু দিন থেকে ভালো করে খাওয়া দাওয়া করে স্বাস্থ্য ভালো হলে তারপর যাবি।
সুলতান খাঁন সেখানে ছিলেন। বললেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিক কথা বলেছ।
মাহবুব বলল, অনেক দিন আসিনি, তাই দুএক দিনের জন্য এসেছি।
মরিয়ম খাতুন বললেন, সে কিরে, এতদিন পর এসে মাত্র দুদিন থাকবি? না বাবা না, অন্তত দশ পনের দিন থেকে শরীরটা ভালো হলে তারপর যাবি।–
মাহবুব বলল, এক সপ্তাহের বেশি থাকতে পারব না। অসুখ করে পড়ার অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষারও বেশি দেরি নেই। পড়াশোনা করতে হবে। নচেৎ রেজাল্ট ভালো হবে না।
সুলতান খাঁন বললেন, ঠিক আছে, তুমি যা ভালো বুঝো করো।
মাহবুব ক্লাস করতে না যাওয়া পর্যন্ত মাহবুবা দুতিন দিন অন্তর মেসে এসেছে। তারপর ভার্সিটিতে দেখা করত। তিন চার দিন দেখা না পেয়ে একদিন মেসে গেল।
মাসুম তখনও ফেরেনি। রুমে তালা দেখে ফিরে আসছিল। এমন সময় মাসুমকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।
মাসুম কাছে এসে সালাম বিনিময় করে বলল, রুমে তালা দেখে নিশ্চয় ফিরে যাচ্ছিলেন?
মাহবুবা বলল, হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞেস করল, আপনার বন্ধু নিখোঁজ কেন?