কিন্তু আমি যে মা-বাবার কথার অবাধ্য কোনো দিন হইনি। তাদের মতামত না নিয়ে কখনো কিছু করিনি?
বেশতো, মা-বাবাকে জানাবেন। প্রয়োজনে তাদেরকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবেন।
আমি মা-বাবাকে চিনি, তারা কোটিপতির মেয়েকে পূত্রবধু করতে কিছুতেই রাজি হবে না। যে সমস্ত বাধার কথা বললাম, তারাও তাই বলবেন।
আপনি বোধ হয় জানেন, আগের যুগে অনেক রাজকন্যা রাজ প্রসাদ ছেড়ে প্রেমিককে বিয়ে করে তার পর্ণকুটীরে বাস করেছে।
তখনকার প্রেমের সঙ্গে আজকালের প্রেমের কোনো তুলনাই হয় না। এখনকার প্রেম, ভোগ-বিলাস আর আনন্দ ফুর্তি করার জন্য। যেখানে ঐশ্বৰ্য্য সেখানেই প্রেম। ঐশ্বৰ্য নেই প্রেমও নেই। ঐ যে প্রবাদ বাক্য আছে সংসারে অভাব প্রবেশ করলে, প্রেম জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। তা ছাড়া এযুগের মেয়েরা বলে থাকে, সহধর্মিনীর যুগ চলে গেছে। এখন সখিত্বের যুগ। আমি সখীত্ব চাইনা, সহধর্মিনী চাই।
আপনার কথা অস্বীকার করব না, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঐ রকম হলেও এখনো কিছু কিছু আগের যুগের মতো প্রেমের ঘটনা যে আছে, তা অস্বীকার করতে পারবেন? আর সহধর্মিনীর কথা যে বললেন, এখনও অনেক মেয়ে সহধর্মিনী হতে চায়।
তবে তাদের সংখ্যা খুব নগন্য।
আমি যদি সেই নগন্যদের একজন হই?
এটা আবেগের কথা, বাস্তবে প্রবেশ করলে আবেগ কর্পূরের মতো উড়ে যাবে। অবাস্তব কোনো দিন বাস্তব হয় না।
আপনার কথাটা বাস্তব। আমি ঐ নগন্যদের দলে, তাই অবাস্তবকে বাস্তব করে দেখাব। অবশ্য সব কিছু নির্ভর করছে আপনার উপর।
আমার উপর মানে?
মানে আপনার প্রেম ভালবাসা ও সহযোগীতা পেলে আমি অবাস্তবকে বাস্তবে পরিনত করতে পারব।
ঠিক আছে, এবারে বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করব। তারপর জিজ্ঞেস করল, আপনি কিসে পড়ছেন?
বাংলায় অনার্স করছি।
সেদিন আপনাদের বাসায় কথা বলার সময় আপনার মা-বাবা যে আমার আদর্শকে মেনে নিতে পারেন নি, তা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন?
তা পারব না কেন?
তাদের মতামতের বাইরে কিছু করতে পারবেন?
আপনার মতো আমিও মা-বাবার কথার অবাধ্য কখনো হইনি। তাদের মতামত না নিয়ে কোনো কিছু করিনিও।
তা হলে?
তা হলে আবার কি? আপনি কি ভেবেছেন, তাদের মতামত না নিয়েই এতটা অগ্রসর হয়েছি? যদি তাই ভেবে থাকেন, তা হলে ভুল করেছেন। আপনি চলে আসার পর তাদের মতামত আদায় করে ছেড়েছি। তাই তারা কয়েকবার আপনাকে ক্লিনীকে দেখতে গেছেন।
সবকিছু শুনে মাহবুবের বাকশক্তি রহিত হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
মাহবুবাও তার মুখের দিকে তাকিয়েছিল। বলল, কী বিশ্বাস হচ্ছেনা?
আনন্দে চোখে পানি এসে যেতে মাহবুব মাথা নিচু করে নিল।
মাহবুবা বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে বলল, আমি কখনো মিথ্যা বলি না। এবার নিশ্চয় আমার অনুরোধটা রাখবেন?
মাসুমের দুটো ক্লাস ছিল, ক্লাস করে ফেরার সময় বড় রাস্তায় গাড়ি দেখে বুঝতে পারল, মাহবুবা এসেছে। রুমে ঢুকে মাহবুবার অনুরোধের কথা শুনে সালাম দিয়ে বলল, রাখবে না মানে, নিশ্চয় রাখবে। ও না রাখলেও আমি জোর করে রাখাব। বলুন কি অনুরোধ করছেন।
মাসুমের গলা পেয়ে মাহবুব চোখ মুছে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, তুই আবার আমাদের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছিস কেন? তাড়াতাড়ি রান্নার ব্যবস্থা কর।
মাসুম মাহবুবার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখলেন ভাবী, তারপর জিবকেটে বলল, সরি, কথাটা হঠাৎ বেরিয়ে গেছে। মাফ করে দিন।
মাহবুবা লজ্জা পেলেও হাসতে হাসতে বলল, ঠিক আছে, কি বলছিলেন বলুন।
মাসুম বলল, ওর সঙ্গে কোনো ব্যাপারেই পেরে উঠি না। সব সময় আমাকে বিয়ে করা বৌ এর মতো হুকুম করে।
মাহবুবা হাসতে হাসতেই বলল, তাই নাকি? তা হলে তো খুব বিপদে আছেন?
বিপদ মানে মহাবিপদে দিন কাটাচ্ছি। পড়তে পড়তে যখন তখন বলবে, দোস্ত এক কাপ চা খাওয়া। শুধু কি তাই, বলছি শুনুন, এক ঝড় বৃষ্টির রাত্রে দুজনে পড়ছিলাম। রাত দুটোর সময় বলল, দোস্ত খিচুড়ী রান্না কর, খেতে বড় ইচ্ছা করছে। কি আর করি খিচুড়ী রান্না করলাম।
মাহবুব একটু রাগের সঙ্গে বলল, আর আমি যে তোকে সহযোগীতা করি তা বললি না যে?
তাতো করিস; কিন্তু প্রথমে যে ভাবে হুকুম করিস, সেটা সহ্য করতে পারি না।
মাহবুব কিছু বলার আগে মাহবুবা বলল, আপনি ওঁর হুকুম মানেন কেন?
ওরে বাবা, তা হলেই হয়েছে। এক সপ্তাহ কথা বলা বন্ধ করে দেবে। আমাকে কিছুই করতে দেবে না, একা একা রান্না করবে। অবশ্য দুজনের জন্যই করবে। একমাত্র আপনিই আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন।
কি করে?
ভাবী হয়ে।
মাহবুবা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। কিছু বলতে পারল না।
মাহবুব রাগের সঙ্গে মাসুমকে বলল, তুই কিন্তু ভীষণ বাড়াবাড়ি করছিস, শাস্তির কথা মনে রাখিস।
মাহবুবের দিকে তাকিয়ে মাহবুবা বলল, ওমা ওনাকে মারেনও নাকি?
সেটা ওকেই জিজ্ঞেস করুন।
মাহবুবা জিজ্ঞেস করার আগেই মাসুম বলল, মারার থেকে বেশি।
ঐ যে বললাম না, এক সপ্তাহ কথা বন্ধ করে দিয়ে একা একা সবকিছু করবে।
এখন উনি অসুস্থ, ওসব করতে পারবেন না।
আপনি ওকে চেনেন না, ও সব পারে। একবার দুজনেরই ভীষণ সর্দিজ্বর হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার থেকে ওর বেশি হয়েছিল। সে সময় বললাম, কয়েক দিনের জন্য না হয় কাজের বুয়া ঠিকেয় রাখি। বলল, না। তুই শুয়ে থাকবি, আমি সব কিছু করব। করলও তাই। আমি কিছু করতে গেলে তাড়িয়ে দিয়েছে।