বারে আমি একা খাব নাকি?
মাহবুবা দুপিস খেয়ে বলল, চা খাওয়ার ইচ্ছা করছে।
আমারও, দাঁড়ান বানাচ্ছি।
না না, আপনাকে বানাতে হবে না, আমি বানাব।
তা হলে সেটা খাওয়াতো দুরের কথা মুখেও দেওয়া যাবে না।
কেন?
আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর আপনি কখনো রান্না ঘরের ধারে কাছেও যাননি।
মাহবুবা কোটিপতির একমাত্র মেয়ে। চা বানিয়ে খাওয়া কল্পনাও করা যায় না। মাহবুব অসুস্থ, তাই কথা প্রসঙ্গে বলে ফেলেছে। মাহবুবের কথা শুনে বলল, আপনার কথা ঠিক, তবে চেস্টা করতে বাধা কোথায়?
মাহবুব বলল, বাধা নিশ্চয় আছে, কারণ ষ্টোভ ধরাতে গিয়ে বিপদ ঘটাতে পারেন। তার চেয়ে আপনি বসুন আমি বানাচ্ছি। তারপর দুকাপ চা বানিয়ে মাহবুবাকে এক কাপ দিয়ে নিজেও এক কাপ নিল।
চায়ে চুমুক দিয়ে মাহবুবা বলল, বাহ, বেশ সুন্দর বানিয়েছেন তো? তারপর জিজ্ঞেস করল রান্না-বান্না কে করে দেয়?
কে আবার? দুবন্ধুতে মিলে মিশে করি। কাজের বুয়ার হাতের রান্না আমরা খেতে পারি না।
তা হলে আপনারা বেশ কষ্ট স্বীকার করে লেখাপড়া করছেন?
কষ্ট আবার কি? ফরেনে নারী পুরুষ অফিসে কাজ করার পর বাসায় ফিরে মিলে মিশে সব কাজ করে। এখন ওসব কথা থাক, কয়েক দিন থেকে আপনাকে একটা কথা বলব ভাবছিলাম।
মাহবুবা মনে করল, মাহবুব নিশ্চয় বলবে, আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। তাই আনন্দিত স্বরে বলল, বেশতো বলুন।
আমার পিছনে লেগেছেন কেন?
মাহবুবা মনে হোঁচট খেয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
কিছু বলছেন না যে?
কেন লেগেছি বুঝতে পারেননি?
সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা পেরেছি।
যতটুকু পেরেছেন, যদি বলি সেটাই সম্পূর্ণ।
মাহবুব আর কিছু না বলে চুপ করে রইল।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মাহবুবা বলল, কি হল চুপ করে আছেন কেন?
আপনার মা-বাবা জানেন?
হ্যাঁ, জানেন। তাই তারা তোমার, সরি আপনার অসুখের কথা শুনে ক্লিনিকে কয়েক বার দেখতে গেছেন।
কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে না।
কেন?
অনেক কারন আছে, কয়টা বলব।
কারন যতই থাকুক আমি শুধু একটাই শুনতে চাই, আপনি কোনো মেয়েকে ভালবাসেন কিনা বা আপনার কোন বাধা আছে কিনা?
আমি এসব ব্যাপার নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি, তবে বলে থেমে গেল।
কি হল, তবেটা শেষ না করে থেমে গেলেন কেন?
মাহবুব তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কিছুদিন হল একটা মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু মেয়েটার সব কিছু জানার পর নিরাশ হয়েছি।
মেয়েটা কি জানে, আপনি তাকে ভালবাসেন?
আমিতো ভালবাসার কথা বলিনি, বলেছি পছন্দ হয়েছে।
ঠিক আছে ঐ কথাটাই সে জানে কিনা?
তা আমি কি করে বলব? তবে তার আচার আচরন দেখে কিছুটা বুঝতে পেরেছি।
কথাটা তাকে জানান নি কেন?
উচিত নয় বলে?
এখানে আবার উচিত অনুচিতের কথা থাকবে কেন? আসলে আপনি খুব চাপা। কোনো কথা খোলাখুলি বলতে পারেন না?
পারি। বলছি শুনুন, মেয়েটা কোটিপতির একমাত্র সন্তান। আমি হলাম পল্লী গ্রামের এক মধ্যবিত্ত লোকের ছেলে। আপনিই বলুন, মেয়েটার দিকে কি এগোনো আমার উচিত?
মাহবুবের পছন্দ করা মেয়েটা যে সে, তা মাহবুবা বুঝতে পেরে বলল, কিন্তু মেয়েটা ও তার মা-বাবা যদি আপনাকে পছন্দ করে সানন্দে গ্রহন করতে চায়, তা হলে কী করবেন?
তবু আমার অনেক বাধা আছে।
যেমন?
প্রথম বাধা হল, সমাজ, শহরের সমাজ আর গ্রামের সমাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। দ্বিতীয় বাধা হল, মেয়েটা ভোগ বিলাসে মানুষ হয়েছে। অপর পক্ষে আমি পল্লী গ্রামে সংযমী ও রক্ষণশীল পরিবারে মানুষ হয়েছি। তৃতীয় বাধা হল, মেয়েটা নিশ্চয় শহরের পরিবেশ ছেড়ে গ্রামের পরিবেশে যেতে চাইবে না। আবেগের বসে গেলেও বেশি দিন টিকতে পারবে না। চতুর্থ বাধা হল, গ্রামের খাওয়া-দাওয়া পোশাক-পরিচ্ছদ তার নিশ্চয় পছন্দ। হবে না। অবশ্য না হওয়াটাই স্বাভাবিক। সব থেকে বড় বাধা, আমি ও আমাদের ফ্যামিলীর সবাই ধর্মীয় বিধি নিষেধ যথা সম্ভব মেনে চলি। মেয়েটা শহরের উচ্চ ফ্যামিলীর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তার পক্ষে সেসব মেনে চলা কী সম্ভব? এরকম আরো অনেক বাধা আছে কয়টা আর তোমাকে, সরি আপনাকে বলব। এখন আপনিই বলুন, আপনাকে যদি কোনো পল্লী গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে পছন্দ করে,তা হলে আপনি কী করবেন?
করব কী, করেইতো ফেলেছি।
মানে?
মানেটা বলতে হবে?
মাহবুব বুঝতে পেরেও ভনিতা করে বলল, না বললে বুঝব কী করে?
আপনি স্কলার ছাত্র হলে কি হবে, বড় বোকা।
তাই বুঝি?
শুধু তাই নও, ভীতুও। নচেৎ নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করতে এতো ভনিতা করতে না।
বাস, শুধু বোকা ও ভীতু? আর কিছু নই?
মাহবুবা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে চিন্তার ভান করে বলল, আপাততঃ কিছু দেখছি।, তবে বিয়ের পর সবকিছু বলতে পারব।
মাহবুব চমকে উঠে বলল, বিয়ের পর?
কথাটা হঠাৎ মাহবুবার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।
মাহবুব অনেক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার সব কিছু না জেনে এতটা এগোনো তোমার, সরি আপনার উচিত হয়নি।
মাহবুবা চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে বলল, আমি এগোইনি, মন এগিয়েছে। এবার একটা অনুরোধ করি?
করুন।
এখন থেকে আমাকে তুমি করে বলবেন, সরি বলে সংসোধন করতে হবে না।
তার আগে আমার সবকিছু শোনা আপনার দরকার। বলছি শুনুন।
তাকে বাধা দিয়ে মাহবুবা বলল, সেদিন মা-বাবার কাছে ও ক্লিনিকে আমার কাছে যতটুকু বলেছেন, তার বেশি শোনার আমার দরকার নেই। আমি আপনার কোন কিছু না জেনেই ভালবেসেছি। আপনি যদি গরিব ঘরের ছেলেও হতেন, তবু ভালবাসা কমতো না। আর মা-বাবাও আপনাকে ভীষণ পছন্দ করে। সে কথা তো আগেই বলেছি।