আপনার বুবুও তাহলে আপনার মতো ডেঞ্জারেস?
সাঁতার কাটলে কেউ ডেঞ্জারেস হয় না। বরং সাঁতার কাটা শরীরের জন্য খুব। উপকারী। তাই তো ইংরেজীতে একটা কথা আছে, সুইমীং ইজ দা বেষ্ট এক্সাসাইজ গুড ফর হেলথ। যাকগে, এবার ওসব কথা থাক। খেতে দেন, প্রায় তিনটে বাজে। আপনিতো আবার না খেয়ে আছেন। আমাকে খাইয়ে বাসায় গিয়ে খাবেন।
মাহবুবকে খাইয়ে মাহবুবা সাড়ে তিনটের সময় বাসায় ফিরল।
এই কয়েক দিনের মধ্যে মাসুমের সঙ্গে মাহবুবার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ক্লিনিকে মাহবুবকে আনার পর দুতিন দিন মাসুম সব সময় ছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থা কেটে যাওয়ার পর মাঝে মাঝে বাসায় গিয়ে গোসল ও খাওয়া দাওয়া করে এসেছে। এক সপ্তাহ পর থেকে ক্লাসও করছে।
মাহবুবাও এক সপ্তাহ ক্লাস করেনি। সারাদিন মাহবুবের কাছে থেকেছে।
মেয়ের মুখে মাহবুবের অসুখের কথা শোনার পর আনিস সাহেব প্রতিদিন একবার এসে দেখে গেছেন। মাঝে মাঝে শামীমা বেগমও এসে দেখে গেছেন।
মাহবুব প্রায় পনের দিন ক্লিনিকে থেকে সুস্থ হয়ে আজ তিন দিন হল মেসে ফিরে এসেছে। সুস্থ হলেও সম্পূর্ণ হয়নি। বেশি হাঁটা চলা করতে পারে না। মেসের কাজের বেটিদের হাতের রান্না খেতে পারে না। তাই নিজেরা রান্না করে খায়। সকালে মাসুম নাস্তা বানিয়ে দুজনে এক সঙ্গে খেয়ে ভার্সিটি যাওয়ার সময় বলল, ক্লাস করে এসে রান্না করব, তুই যেন আবার কিছু করতে যাস না।
মাসুম চলে যাওয়ার পর মাহবুব বই নিয়ে বসল। পড়তে পড়তে হঠাৎ মনে হল, বাড়িতে চিঠি দেওয়া দরকার। এই মাসে যাবে বলে চিঠি দিয়েছিল। অসুখ হওয়ায় যেতে পারেনি। মা-বাবা নিশ্চয় দুশ্চিন্তায় আছে। বই বন্ধ করে এক পাশে রেখে চিঠি লিখছিল।
এমন সময় মাহবুবা এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল, আসতে পারি?
ক্লিনিক থেকে ফেরার পর প্রতিদিন মাহবুব তাকে আশা করেছে। আসেনি দেখে ভেবেছে, নিশ্চয় কিছু কারণ আছে। নচেৎ যে নাকি অক্লান্ত সেবা যত্ন করে তাকে বাঁচাল, সে না এসে থাকতে পারে না। মাহবুবার গলার শব্দ শুনে মাহবুবের সারা শরীরে আনন্দের শিহরণ বইতে শুরু করল। কলম থামিয়ে সালামের উত্তর দিল। তারপর তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারল না। এতদিন যে মাহবুবাকে দেখেছে আজকের মাহবুবা যেন সে নয়। সাদা ধপধপে শ্যালওয়ার কামিজ পরনে, চিকন ওড়না কাঁধের দুপাশ দিয়ে বক্ষযুগল ঢাকা। পিনোন্নত বক্ষ যুগল ওড়নাকে ঠেলে রেখেছে। ঠোঁটে মেরুন রং এর হালকা লিপিস্টিক। একটা গোলাপ চুলের খোঁপাতে গোঁজা। বাম হাতে এক গুচ্ছ রজনী গন্ধা আর ডান হাতে একটা লাল গোলাপ। মাহবুব সব কিছু ভুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
মাহবুবা এতদিন লক্ষ্য করেছে, মাহবুব কথা বলার সময় তার মুখের দিকে তাকালেও সব সময় তার দৃষ্টিতে যেন অচেনা ভাব। সে জন্যে খুব কষ্ট পেত। তবু তার প্রতি অসন্তুষ্ট হতে পারেনি। মনে হত মাহবুব তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। ক্লিনিকে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেও তার কাছ থেকে সাড়া পাইনি। আজ তাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে লজ্জিত স্বরে বলল, বি ব্যাপার ওভাবে কি দেখছেন? আসার অনুমতিও দিচ্ছেন না?
মাহবুব এতক্ষণ বাস্তবে ছিল না, তার কথা শুনে বাস্তবে ফিরে এসে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল, অনুমতি চাচ্ছেন কেন? প্রথম দিনতো নেননি? ঠিক আছে আসুন।
মাহবুবা ভিতরে ঢুকে বলল, সেদিন আপনার জ্ঞান ছিল না। নচেৎ নিশ্চয় নিতাম, তারপর বলল, কেমন আছেন?
আল্লাহর রহমতে ভালো। আপনি?
আমিও ভালো। কিছু লিখছিলেন মনে হচ্ছে?
হ্যাঁ, মা-বাবাকে চিঠি লিখছিলাম।
পলিথিন ব্যাগে মাহবুবা দুতিন পদের ফল ও বিস্কুট নিয়ে এসেছে, সেগুলো খাটের উপর রেখে বলল, ছুরি আছে?
ছুরি কি হবে?
ভয় নেই খুন করব না।
মাহবুর ড্রয়ার থেকে একটা বড় চাকু বের করে দিল।
ওমা, এযে দেখছি মানুষ খুন করার ছুরি।
মাহবুব মৃদু হেসে বলল,হ্যাঁ, প্রয়োজন হতে পারে ভেবেই এটা সব সময় কাছে রাখি।
মাহবুবা অনেক চেষ্টা করেও খুলতে না পেরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল, এর ভিতরে অনেক রকমের ফলা রয়েছে। খুলেন কি করে?
মাহবুব তার হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে বলল, এতে দুপাশে বারটা ফলা আছে, তারপর এক একটা খুলে তার কার্যকারীতা বলে জিজ্ঞেস করল, আপনার কোনটা দরকার?
মাহবুবা বলল, কিছু কাটার জন্য।
মাহবুব সেই ফলাটা রেখে অন্য গুলো ঢুকিয়ে দিয়ে তার হাতে দিল।
মাহবুবা আপেল কেটে তাকে খেতে দিয়ে বিস্কুটের প্যাকেট বের করে বলল, এগুলো কোথায় রাখব বলুন।
মাহবুব কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, আর কত অপমান করবেন?
মাহবুবা অবাক কণ্ঠে বলল, অপমান করছি মানে?
দেখুন কিছু মনে করবেন না, এতদিন যা কিছু করেছেন একজন বিপন্ন রুগীর জন্য করেছেন; কিন্তু এখন অপমান করা হচ্ছে না?
কখনই নয়, যে কেউ কোনো রুগীকে দেখতে গেলে কিছু না কিছু নিয়ে যায়।
কিন্তু আমি তো এখন সুস্থ।
সুস্থ হলেও সম্পূর্ণ নন। তর্ক বাদ দিয়ে বলুন না কোথায় রাখব?
এটাই কিন্তু লাস্ট বলে মাহবুব খাটের নিচে ইঙ্গিত করে বলল, ওখানে একটা পাঁচ পাউন্ডের ডানো দুধের ডিবে আছে।
মাহবুবা বিস্কুট গুলো ডিবেয় রেখে বলল, এবার ফলগুলো খেয়ে নিন।