পিয়ন বলল, ঠিক আছে সাহেব তাই হবে।
হালিম সাহেবও চিঠি পড়ে মেয়ের উপর খুব রেগে গেলেন।
সাজেদা বেগম চা-নাস্তা নিয়ে এসে স্বামীর মুখ গম্ভীর দেখে বললেন, কি ব্যাপার কিছু হয়েছে না কি?
হালিম সাহেব চিঠিটা তার হাতে দিয়ে বললেন, পড়ে দেখ তোমার মেয়ের কান্ড। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে সোফায় বসে স্ত্রীর দিকে রাগের সঙ্গে তাকিয়ে রইলেন।
সাজেদা বেগম চিঠি পড়ে যেমন অবাক হলেন তেমনি রেগেও গেলেন। তিনিও প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতা রাখতে চাননি; কিন্তু তাই বলে তাদের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন একথা কখনো চিন্তা করেন নি। স্বামীকে ঐভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাগ সামলালেন, তারপর চিঠিটা খামে ভরে বুকসেলফে রেখে বললেন, টিকলী ছেলেমানুষি বুদ্ধিতে যে ভুল করছে, তা আমাদেরকে কৌশলে সংশোধন করে দিতে হবে। রাগের বশে কিছু করা ঠিক হবে না। মেয়ে বড় হয়েছে, লেখাপড়া করছে। আমরা বাধা দিলে ওরা অন্য পথ বেছে নেবে। এখন নাস্তা খেয়ে নাও। পরে ভেবে চিন্তে যা হয় করা যাবে।
হালিম সাহেব খেতে শুরু করে বললেন, আমার মাথায় তো, কিছু আসছে না। টিকলী চিঠিতে লিখেছে কয়েক দিনের মধ্যে আবার টোপরকে দেবে। চিঠি পেয়ে টোপর গিয়ে যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলে, তা হলে কি হবে?
সাজেদা বেগম বললেন, আমি আলীকে নিয়ে দুএক দিনের মধ্যে টিকলীর সঙ্গে দেখা করে যা বলার তাকে বুঝিয়ে বলব।
আলীকে নিয়ে যাবে কেন? আমিই তোমার সঙ্গে যাব।
তুমি পরে এক সময় যেও। এবারে আলীকে নিয়ে যাব। আমি বুবু ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে ওকে বোঝাব।
ঠিক আছে, তা হলে কালই তোমরা যাও।
ঐদিন রাত্রে সাজেদা বেগম রাজশাহীতে বোনকে ফোন করলেন। সাজেদা বেগমের বড় বোনের নাম মাজেদা বেগম। আর দুলাভাইয়ের নাম রহমান সাহেব। তিনি নাটোরের লোক। কন্ট্রাকটারী করেন। রাজশাহী টাউনে বাড়ি করেছেন। বেশ ধনী ব্যক্তি। গাড়িও আছে। ওঁদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে বড়। বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে ইকবাল আমেরিকায় বৌ ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে।
মাজেদা বেগম এশার নামায পড়ে উঠেছেন, এমন সময় ফোন বাজতে ধরে বললেন, হ্যালো, কে বলছেন?
বুবু আমি ঢাকা থেকে সাজেদা বলছি।
সাজেদা, কি খরব রে? তোরা সব ভালো আছিস?
সাজেদা বেগম সালাম দিয়ে বললেন, হ্যাঁ বুবু আমরা সবাই ভালো। তোমরা কেমন আছ?
মাজেদা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, আমরা ও ভালো। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ফোন করেছিস কেন?
আমি আলীকে নিয়ে কাল আসছি। দুলাভাই নেই?
না, এখনো ফেরেনি। হঠাৎ আসছিস যে। এইতো কয়েক দিন আগে টিকলীকে নিয়ে হালিম এসেছিল?
তোমাদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করার জন্য যাব। এখন রাখি তা হলে?
টিকলীর সঙ্গে কথা বলবি না?
না, কাল তো আসছি।
পরামর্শ করার জন্য আসবি বললি, হালিমকে না নিয়ে আলীকে নিয়ে আসছিস কেন?
সে কথা কাল গিয়ে বলব। এখন রাখছি। তারপর সালাম বিনিময় করে সাজেদা বেগম ফোন ছেড়ে দিলেন।
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর মাজেদা বেগম স্বামীকে বললেন, কিছুক্ষণ আগে সাজেদা ফোন করেছিল। কাল আলীকে নিয়ে আসছে।
রহমান সাহেব বললেন, তিন চার বছরেও যার আসার সময় হয় না, সে কিনা মেয়ে আসতে না আসতেই আসছে। কেন আসছে কিছু বলেছে?
মাজেদা বেগম বললেন, আমাদের সঙ্গে কি ব্যাপারে যেন পরামর্শ করবে।
পরের দিন সাজেদা বেগম আলীকে নিয়ে নিজেদের গাড়িতে করে এলেও ফেরীর গোলমালের জন্য রাজশাহী পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেল।
টিকলী মাগরিবের নামায পড়ার জন্য অজু করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে মা ও ভাইয়া এসেছে দেখে বেশ অবাক হলেও আতঙ্কিত হল। তা প্রকাশ না করে সালাম দিয়ে মাকে কদমবুসি করে বলল, তোমরা হঠাৎ এলে যে?
সাজেদা বেগম জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো খেয়ে দোওয়া করে বললেন, পরে শুনিস। এখন নামাযের সময় হয়ে গেছে, নামায পড়ে নিই চল।
নামাযের পর চা-নাস্তা খাওয়ার সময় সাজেদা বেগম মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোকে ছেড়ে কখনো থাকিনি, তাই হঠাৎ চলে এলাম।
টিকলী মায়ের কথা বিশ্বাস করতে পারল না। ভাইয়াকে তার রুমে আসার জন্য ঈশারা করে মাকে বলল, তোমরা গল্প কর, আমার পড়া আছে বলে চলে গেল।
একটু পরে টিকলীর রুমে যাচ্ছি বলে আলী ও চলে গেল।
এমন সময় রহমান সাহেব বাসায় ফিরলেন।
সাজেদা বেগম সালাম দিয়ে বললেন, দুলাভাই কেমন আছেন?
রহমান সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তবু যা হোক, মেয়েটার অছিলায় শ্যালিকা এসে দুলাভাইয়ের খোঁজ খরব নিচ্ছে। তা ভাইরা ভাইয়ের খবর কি?
ভালো আছে।
এল না কেন?
কয়েক দিন আগে টিকলীকে নিয়ে যখন এসেছিল তখন আমাকে আনেনি। তাই আমিও তাকে আনিনি।
এই কথায় তিন জনেই হেসে উঠল।
মাজেদা বেগম স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি জামা কাপড় পাল্টে হাত মুখ ধুয়ে এস, আমি চা নাস্তা নিয়ে আসছি।
নাস্তা খেয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে রহমান সাহেব শ্যালিকাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হঠাৎ আগমনের কারণটা শুনিয়ে এ্যাংজাইটি দুর কর।
সাজেদা বেগম বললেন, আপনাদের রুমে চলুন, কথাটা গোপনীয়।
মাজেদা বেগম বললেন, তা হলে তাই চল।
রুমে এসে সাজেদা বেগম চিঠিটা মাজেদা বেগমের হাতে দিয়ে বলল, বুবু তুমি পড়ে দুলাভাইকে দাও।