টোপরের মুখে টিকলী ডাক শুনে তার অন্তরে শীতল বাতাসের পরশ বয়ে গেল। ভিজে গলায় বলল, হায়াত মউত আল্লাহ পাকের হাতে। আমি তোমাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ইনশাআল্লাহ ফিরিয়ে আনবোই। সে জন্য যদি জীবন দিতে হয়, তাও দেব।
অনেক দেরী হয়ে গেছে টিকলী; আমি আর বেশি দিন বাঁচব না। আমার জন্য জীবনটা নষ্ট করো না।
এ জীবন শুধু তোমার জন্য আগে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। ডাঃ সারওয়ার ফরেন থেকে সাইকিয়াট্রিস্টে ডিগ্রী নিয়ে এসেছেন। তিনি তোমার চিকিৎসা করছেন। তার হাতে তোমার মতো অনেক মাদকে আসক্ত রুগী ভালো হয়েছে। তুমি কোনো দুঃশ্চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ তিনি তোমাকে খুব শিঘ্রী ভালো করে তুলবেন। এবার বল, তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ?
টিকলীর কথা শুনতে শুনতে টোপরের বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রবল হল। বলল, তোমার প্রতি অবিচার আমিও কম করিনি। তুমি আগে বল আমাকে ক্ষমা করেছ?
টিকলী কেঁদে ফেলে বলল, আল্লাহ আমাদের দুজনকে মাফ করুক।
টোপর বলল, সত্যি করে বল তো টিকলী, আমি কি বাঁচব?
টিকলী বলল, ইনশাআল্লাহ নিশ্চয় বাঁচবে। যদি তোমার হায়াত না থাকে, তবে আমি আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে আমার অর্ধেক হায়াত দিয়ে তোমাকে বাঁচাবার ফরিয়াদ করব।
টোপর তাকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, তোমার মতো আল্লাহর নেক বান্দীর কথা না শুনে যে অন্যায় করেছি, আল্লাহ কি ক্ষমা করবেন? কথা বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।
টিকলী তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, আল্লাহ বহুৎ দয়াবান ও ক্ষমাশীল। কোনো বান্দা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা না করে থাকতে পারেন না। তারপর বলল, আমি ঢাকায় ফোন করে তোমার কথা আমাদের ও তোমাদের বাসায় জানিয়ে সবাইকে আসতে বলেছি। আজ কালের মধ্যে হয়তো এসে পড়বে। আসার পরপরই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলব ঠিক করেছি। আশা করি, ইনশাল্লাহ এবার আমাদের ও তোমাদের বহুদিনের পারিবারিক মনোমালিন্যে অবসান হবে।
টোপর চমকে উঠে বলল, সত্যি বলছ?
আমি কখনো মিথ্যা বলি না। তা ছাড়া এতবড় সুসংবাদ কেউ কি মিথ্যা করে বলতে পারে?
কিন্তু আমি তো বেশি দিন বাঁচব না। আবার বলছি, এতবড় ভুল করো না টিকলী।
টিকলী তার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, ওরকম কথা আর কখনো বলবে না। জান না, তুমি না বাঁচলে আমিও বাঁচব না? এত বছর সবর করে তোমাকে পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ করেছি। তিনি যখন ফরিয়াদ কবুল করে তোমাকে পাইয়েছেন তখন তিনিই তোমাকে সুস্থ করে আমাদের জোড়া কবুল করবেন।
টোপর ভিজে গলায় বলল, এই পাপী বান্দার দোওয়া আল্লাহ কবুল করবেন কিনা জানি না; তবু করছি, তিনি যেন তোমার বাসনা পূরণ করেন।
টিকলী কান্না মুখে মৃদু হেসে বলল, উঁহু, হল না, আল্লাহ যেন আমাদের দুজনেরই মনের বাসনা পূরণ করেন। তারপর দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠল, আমিন।
এমন সময় হাসপাতালের মসজিদ থেকে ফজরের সুমধুর আযান ভেসে এল, আল্লাহু আকবার– আল্লাহু আকবার।