ডাঃ মাহবুবা বললেন, তা জানার আপনার দরকার নেই। আপনি ওষুধ খাচ্ছেন না কেন?
টোপর চিৎকার করে বলল, আমি ওষুধ খাব না, আমাকে হিরোইন দিন। তারপর বলল, আমি এখানে কেন? শালা কায়সার নিশ্চয় এখানে নিয়ে এসেছে। শালাকে পেয়ে নিই একবার, মজা দেখাব।
ডাঃ মাহবুবা বললেন, তা পরে দেখাবেন, এখন ওষুধ খেয়ে নেন।
টোপর নরমস্বরে বলল, আগে আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিন।
উঁহু, আগে ওষুধ খেয়ে নিন, তারপর খুলে দেব।
ওষুধ খাইয়ে আমাকে ভালো করতে চান? কিন্তু আমি তো বাঁচতে চাই না। প্লীজ, হয় আমাকে ছেড়ে দিন, নচেৎ হিরোইন দিন।
আমার কথা না শুনলে, আমিও আপনার কথা শুনব না। তারপর দুটো ট্যাবলেট ও এক গ্লাস পানি এনে বলল, নিন হাঁ করুন।
না, আমি খাব না। আমাকে হিরোইন দিন।
এটা হাসপাতাল, এখানে চিকিৎসা করে রুগীদের ভালো করা হয়। ইনশাআল্লাহ আপনিও ভালো হয়ে যাবেন।
আমার চিকিৎসা করার দরকার নেই। আমি ভালো হতে চাই না।
কেন চান না বলুন তো?
সে কথা শুনে আপনার কি লাভ?
লাভ আছে বলেই জিজ্ঞেস করছি।
বলার পর হিরোইন দেবেন বলুন।
হাসপাতালে তো হিরোইন থাকে না, দেব কি করে?
তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন প্লীজ, আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না।
ডাঃ মাহবুবা একটু চিন্তা করে বললেন, ঠিক আছে, বাইরে থেকে আনিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। এবার বলুন, কেন আপনি এই মরণনেশায় আসক্ত হলেন?
সে কথা বলতে আমার খুব কষ্ট হবে। সে সময় হিরোইন না পেলে আমি পাগল হয়ে যাব। আগে ব্যবস্থা করে আসুন।
ডাঃ মাহবুবা চালাকি করে বাইরে থেকে ঘুরে আসার জন্য কেবিন থেকে বেরিয়ে ইয়াসমীনকে একা আসতে দেখলেন। কাছে এলে জিজ্ঞেস করলেন, ডাঃ সারওয়ার এলেন না?
উনি একটা রুগী নিয়ে খুব ব্যস্ত আছেন। বললেন, কিছুক্ষণ পরে আসবেন।
আপনি সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করুন। রুগী দেখা হয়ে গেলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন।
ইয়াসমীন জ্বী ম্যাডাম বলে চলে গেল।
ডাঃ মাহবুবা বেরিয়ে যাওয়ার পর টোপরের হঠাৎ মনে হল, এই মহিলা ডাক্তারের গলার স্বর ঠিক টিকলীর মতো। ভাবল, সে নয় তো? সে নিশ্চয় এতদিনে ডাক্তার হয়ে। গেছে। আবার ভাবল, ডাক্তার হলে ও এখানে আসবে কেন? ঠিক করল, ফিরে এলে পরিচয় জানতে চাইবে।
ডাঃ মাহবুবা মিনিট পাঁচেক পর ফিরে এসে বললেন, ব্যবস্থা করে এলাম, এবার বলুন।
তার আগে আপনার পরিচয় বলুন।
আমি এখানকার ডাক্তার।
তাতো বুঝেছি, আপনার বায়োডাটা বলুন।
আগে আপনার কথা শেষ করুন, তারপর বলব।
তাহলে আপনার মুখের নেকাবটা খুলুন।
ডাঃ মাহবুবা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, আপনি কিন্তু ভদ্রতা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্লীজ, রাগ করবেন না। একটা মৃত্যু পথযাত্রির অনুরোধ রক্ষা করুন।
ডাঃ মাহবুবা এতক্ষণ সামলে থাকতে পারলেও আর পারলেন না। মুখের নেকাব সরিয়ে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগল।
টোপর চমকে উঠে রাগ ও ঘৃনাপূর্ণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর হাত পায়ের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে হাপরের মতো ফুসতে ফুসতে বলল, আমি আর একদন্ড এখানে থাকব না। কে কোথায় আছ, আমার বাঁধন খুলে দাও।
ডাঃ মাহবুবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, প্লীজ টোপর, একটু শান্ত হও। তোমার টিকলীর কথা আগে শোন, তারপর যা ইচ্ছা তাই করো।
কে টোপর? কে টিকলী? কাউকেই আমি চিনি না। আমি হাসান। আমি কিছুই শুনতে চাই না। তারপর নিজেকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করতে লাগল।
ডাঃ মাহবুবার মনে হল, হার্টফেল করতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমের ইনজেকশন রেডি করে পুশ করতে এলেন।
টোপর চিৎকার করে উঠল, কে কোথায় আছেন, আমাকে বাঁচান। ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছেন?
এমন সময় ডাঃ সারওয়ার ও ইয়াসমীন কেবিনে ঢুকলেন।
তাদের দেখে টোপর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, আপনারা ঐ পিশাচীনির হাত থাকে আমাকে বাঁচান। আমাকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছেন। ওঁকে এখান থেকে চলে যেতে বলুন। ওঁর মুখ আমি দেখতে চাই না।
ডাঃ মাহবুবা ডাঃ সারওয়ারকে বললেন, উনি হিরোইনের জন্য খুব অস্থির হয়ে উঠে ছিলেন। তাই এই ইনজেশন দিতে চাচ্ছি বলে চিৎকার করছেন।
ডাঃ সারওয়ার মাস চারেক হল, এখানে এসেছেন। ডাঃ মাহবুবাই যে এখানকার সর্বেসর্বা তা জানেন। ওঁর মুখ কোনো দিন দেখেন নি। আজ দেখে কিছু একটা অনুমান করলেন। বললেন, আপনি চলে যান, আমি দেখছি।
ডাঃ মাহবুবা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ নার্সের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইরে এসে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
ডাঃ সারওয়ার টোপরকে বললেন, ভয় নেই উনি আপনার কাছে আসবেন না। তারপর তার একটা হাত শক্ত করে ধরে নার্সকে ইনজেকশন পুশ করতে বললেন।
টোপর বলল, প্লীজ ইনজেকশন দেবেন না, আমাকে ছেড়ে দিন।
নার্স ইনজেকশন পুশ করার পর ডাঃ সারওয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে বললেন, আগে ঠিক মতো ওষুধ পত্র খান, আমাদের কথা মতো চলুন। ভালো হয়ে গেলে আমরাই আপনাকে রাখব না। তারপর নার্সকে বললেন, এখানে সব সময় একজন থাকবেন। প্রয়োজনে আমাকে খবর দেবেন। কথা শেষ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে ডাঃ মাহবুবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে।
বেশ তো চলুন বলে ডাঃ মাহবুবা এগোলেন। কোয়ার্টারের বারান্দায় এসে দুজন দুটো চেয়ারে বসে ডাঃ মাহবুবা বললেন, কি আলাপ করতে চান বলুন।