টিকলী তাদেরকে জানাল, আপনারা তো জানেন, টোপরকে আমি ছোটবেলা থেকে ভালবাসি। আমরা কবেই বিয়ে করে ফেলতাম। শুধু আম্মার কাছে ওয়াদা করেছিলাম বলে করিনি। তারপর মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি আমার ওয়াদা রক্ষা করেছি। এবার তুমি তোমার ওয়াদা রক্ষা কর।
সাজেদা বেগম বললেন, সে তো আজ চার পাঁচ বছর নিখোঁজ শুনেছি, হিরোইনের নেশা করত। সে কি আর বেঁচে আছে? বেঁচে থাকলে নিশ্চয় তার খোঁজ পাওয়া যেত।
সে বেঁচে আছে কিনা তা আল্লাহ পাককে মালুম। বেঁচে থাক আর না থাক, আজীবন তার জন্য আমি অপেক্ষা করব। তোমরা যদি জোর করে কিছু করতে চাও, তা হলে তার পরিনতি ভালো হবে না। কথা শেষ করে তাদের কাছ থেকে টিকলী নিজের রুমে চলে গেল।
মাজেদা বেগম বললেন, জোর করে কিছু করা ঠিক হবে না তোমরা চেষ্টা চরিত্র করে টোপরের খোঁজ কর।
সাজেদা বেগম বললেন, কি বলছ বুবু তুমি? টোপর কি বেচে আছে যে, তার খোঁজ করব।
মাজেদা বেগম বললেন, বুঝতে পারছিস না কেন? ওদের সম্পর্ক ছোটবেলা থেকে। সারাজীবনে ও তাকে ভুলতে পারবে না। তাই বলছি, সে যে বেঁচে নেই, তার প্রমাণ ওকে জানাতে হবে। তা যদি পারিস, তা হলে হয়তো বিয়েতে রাজি হতে পারে।
মাজেদা বেগমের স্বামী রহমান সাহেব বললেন, তুমি ঠিক কথা বলেছ। বাল্যপ্রেম কেউ ভুলতে পারে না, তারপর ভাইরাকে বললেন, মাজেদা যা বলল, তা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
দুতিন দিন থেকে হালিম সাহেব ও সাজেদা বেগম ঢাকা ফিরে এলেন।
টিকলী একদিন পেপারে কক্সবাজারে একটা প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তী দেখে খালা খালুকে না বলে গোপনে কক্সবাজার চলে এল।
হাসপাতালের মালিক হামিদ সাহেব টিকলীর আচার-আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে সুপারিন্টেনডেন্ট পদে নিয়োগ করেন এবং দুতিন মাসের মধ্যে হাসপাতালের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেন। একবছর হতে চলল টিকলী এখানে তার আসল নামে (ডাঃ মাহবুবা)। কাজ করছে। আজ পর্যন্ত মা-বাবা বা খালা খালুকে জানায়নি। তবে এখানে আসার মাস দুয়েক পর জিনিয়াকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, সে দেশেরই কোনো এক হাসপাতালে চাকরী করছে। মা-বাবা ও ভাইয়াকে আমার জন্য দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করবি। বলবি আমি ভাল আছি। তারা যেন আমার খোঁজ না করে। আমি মাঝে মাঝে চিঠি দেব। খামের উপর ঠিকানা না দিয়ে, চিঠিটা হাসপাতালের একজন অফিস স্টাফের হাতে দিয়ে ঢাকাতে পোষ্ট করে দিতে বলেছিল। অফিসের ডাকে তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন।
যে দিন টিকলী কক্সবাজার রওয়ানা দেয়, সে দিন সন্ধ্যে পর্যন্ত বাসায় না আসায় মাজেদা বেগম স্বামীকে বললেন, তুমি মেডিক্যালে ফোন করে দেখ, টিকলী কেন এখনো আসছে না।
রহমান সাহেব ফোন করে জানতে পারলেন টিকলী আজ ডিউটিতে আসেনি।
সে কথা মাজেদা বেগম শুনে খুব চিন্তিত হলেন। বললেন, এখন কি হবে তা হলে।
রহমান সাহেবও খুব চিন্তিত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কখন বাসা থেকে বেরিয়েছে?
তা জানি না। বেলা আটটা বেজে যাওয়ার পর নাস্তা খেতে আসছে না দেখে বুয়াকে বললাম, দেখতো টিকলী ঘরে কি করছে?
বুয়া বলল, আপাকে তো ফজরের নামাজ পড়ে সুটকেস হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখেছি। তারপর বলল, ঢাকা গেল কিনা ফোন করলে হত না?
আজ করার দরকার নেই। রাতটা দেখা যাক, না ফিরলে কাল করা যাবে।
পরের দিন বেলা নটার সময় মাজেদা বেগম ঢাকায় ফোন করে বললেন, টিকলী কি ওখানে গেছে।
সাজেদা বেগম বললেন, না তো। কেন তোমরা কি ওকে তেমন কিছু বলেছ?
সাজেদা বেগম বললেন না। কাল সকালে সুটকেস হাতে করে বেরিয়ে যেতে আমাদের কাজের বুয়া দেখেছে। আমরা মনে করেছি, ঢাকা গেছে।
সাজেদা বেগম বললেন, ওকি আসার কথা দুএকদিন আগে বলেছিল?
মাজেদা বেগম বললেন, না।
সাজেদা বেগম আতঙ্কিত স্বরে বললেন, তা হলে কোনো বিপদে পড়ে নি তো?
কি করে বলব? তোর দুলাভাই এখানকার সব ক্লিনিকে খোঁজ নিয়েছে তারা ওর বান্ধবীদের বাসায় খোঁজ নে। আমরাও এখানে ভালো করে খোঁজ নিচ্ছি।
ঠিক আছে, রাতে ফোন করে জানাব; এখন রাখি তাহলে?
রাখ বলে মাজেদা বেগম ফোন ছেড়ে দিলেন।
সাজেদা বেগম কথাটা ছেলে ও স্বামীকে জানিয়ে খোঁজ নিতে বললেন।
আলি বলল, তা নিচ্ছি; কিন্তু আমার মনে হয়, তোমরা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছ বলে কোনো হাসপাতালে চাকরি নিয়ে চলে গেছে।
সাজেদা বেগম বললেন, তোর যেমন কথা, কোথাও চাকরি নিয়ে গেলে আমাদেরকে নিশ্চয় জানাত। তুই ওর বান্ধবীদের বাসায় খোজঁ কর। না পেলে তোর মামাদের বাসায় যাবি। সেখানে অনেক দিন থেকে যাবে যাবে করছিল।
হালিম সাহেব ছেলেকে বললেন, তোমার মা যা বলল, তাই কর।
সব জায়গায় খোঁজ নিয়েও টিকলীকে পাওয়া গেল না। হালিম সাহেব বিজ্ঞপ্তী দিলেন,
মা টিকলী, তুমি যেখানেই থাক ফিরে এস। তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা কিছু করব না। যদি কোথাও চাকরি নিয়ে নিয়ে থাক, অতি সত্বর পত্র দিয়ে জানাবে। আমরা তোমার জন্য খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
–তোমার মা ও বাবা
বিজ্ঞপ্তী দেওয়ার প্রায় দেড় মাস পর জিনিয়া টিকলীর চিঠি পেল মা-বাবাকে সে কথা জানিয়ে আলিকে অফিসে ফোন করে বলল, টিকলী আমাকে চিঠি দিয়েছে, তুমি তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় এস।
আলি বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে জিনিয়াদের বাসায় এল।