কিন্তু তোকে আদর করতে আমার যে খুব ইচ্ছা করে। তোর করে না?
হ্যাঁ করে। তাই বলে যা গোনাহ, তা করা কারো উচিত নয়। তোকে কতবার বলেছি, অবসর সময়ে কিছু কিছু ধর্মীয় বই পড়বি, তুই আমার কথা শুনলে এরকম করতে পারতিস না।
টোপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, বিয়ের আগে যদি ধর্মে এসব নিষেধ থাকে, তবে কালই কাজী অফিস গিয়ে বিয়ে করে ফেলি চল।
টিকলী কান্না মুখে হেসে ফেলে বলল, বিয়ে কি দোকানের সদাই, মনে কইল আর কিনে ফেললাম।
দেখ টিকলী কথা ঘোরাবিনা। যা বললাম রাজি আছিস কিনা বল!
টিকলী থমথমে গলায় বলল, রাজি হব কিনা তুই জানিস না? জিজ্ঞেস করছিস কেন?
তা হলে শোন, কাল বেলা এগারটার সময় শান্তিনগরের মোড়ে থাকবি। আমি এসে কাজি অফিসে নিয়ে যাব।
এর পরিণতির কথা ভেবেছিস?
পরিণতির কথা ভেবে আমি কোনো কাজ করিনি।
শিক্ষিত ছেলে হয়ে এরকম কথা বলতে পারলি?
দেখ, আমাকে, রাগাবি না বলছি। যা বললাম, তা করবি কিনা বল।
টিকলী টোপরকে রেগে যেতে দেখে হা না কিছু বলতে না পেরে চুপ করে রইল।
কিরে কিছু বলছিস না যে? তা হলে কি ভাববো, তুই আমাকে শুধু মুখেই ভালবাসিস।
টিকলী চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, এ কথা বলতে পারলি?
তা না হলে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিস না কেন?
অরাজির কথা কখন বললাম, আমি তো পরিণতির কথা চিন্তা করতে বলেছি।
পরিণতির যা হয় হবে, কালই কাজি অফিসে আমাদের বিয়ে হবে। আমার বন্ধুরা প্রেমিকাদের কত আদর করে। আমি এমনই হতভাগা, তোকে একটু আদরও করতে পারি না। বিয়ের পর তো আর কোনো বাধা থাকবে না। তখন তোকে ইচ্ছামত আদর করব। তুইও আমাকে আদর করবি। বল, কাল এগারটার সময় আসবি?
টিকলী বুঝতে পারল, বন্ধুদের সাথে মিশে টোপর নষ্ট হওয়ার পথে এগোচ্ছে। বিয়ে করলে শুধু আদর নয় আরো কিছু করতে চাইবে। বলল, তুই তা হলে শুধু আদর করার জন্য বিয়ে করতে চাচ্ছিস, ভালবেসে নয়?
ভালবাসি কিনা জানিস না?
জানি; কিন্তু সে ভালবাসা তো আদর করার জন্য বিয়ে করে না।
কি করে তা হলে?
ভালবাসা হল পবিত্র জিনিস, তা পাওয়ার জন্য ধৈর্য্য ধরতে হয়, উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এখনো আমাদের সেই সময় আসেনি। তুই পড়াশোনা শেষ করে উপার্জন কর। আমিও ততদিন পড়াশোনা শেষ করি। তারপর বিয়ে। বিয়ের পর দুজন ভালবাসার সাগরে হাবুডুবু খাব।
টোপর রেগে উঠে বলল, তুই কিন্তু ভালবাসার দর্শন আওড়াচ্ছিস। দর্শন আমি বুঝি না। বুঝতে চাইও না। তুই কাল কাজি অফিসে বিয়ে করতে রাজি আছিস কিনা স্পষ্ট করে বল।
টিকলী মিনতি স্বরে বলল, তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? যে কোনো কাজ করার আগে ভেবে চিন্তে করতে হয়। আমাদের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। ভালোমন্দ বিবেচনা করার জ্ঞানও তেমন হয় নি। তুই বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা ছেড়ে দে। পার্টিও ছেড়ে দে। ধর্মীয় বইপত্র পড়। দেখবি, যা করতে চাচ্ছিস, তা ঠিক নয়।
টোপর আরো রেগে গিয়ে বলল, তোর ধর্মের বুলি শোনার মত মন মানসিকতা আমার নেই। আমার কথার উত্তর দে।
তুই বার বার একই কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন? এখন আমাদের পড়াশোনা করার সময়। বিয়ে করলে তা হবে না। শুধু আমি কেন, এই পরিস্থিতিতে কোনো মেয়েই বিয়ে করতে চাইবে না। তোকে আমি নিজের থেকে বেশি ভালবাসি। তোর সর্বনাশ আমি করতে পারি না। তুই আমার কথাগুলো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখ।
থাক, তোকে আর উপদেশ দিতে হবে না, আজ থেকে তোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক শেষ। কথা শেষ করে টোপর হন হন করে পার্কের গেটের দিকে হাঁটতে লাগল।
টিকলী তার পিছনে আসতে আসতে বলল, টোপর রাগ করে চলে যাসনি। আমার ভালবাসার কসম লাগে, দাঁড়া বলছি।
টোপর দাঁড়াল না। রাগে ফুলতে ফুলতে গেটের বাইরে এসে একটা রিকশায় উঠে চলে গেল।
টিকলী দ্রুত হেঁটে এসেও তাকে ধরতে পারল না। কিছুক্ষণ তার রিকশার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলল। তারপর সেও একটা রিকশায় উঠে বাসার ঠিকানা বলল।
এরপর প্রায় পনের দিন টোপর টিকলীর সঙ্গে দেখা করল না। একদিন নিউমার্কেট থেকে একটা বই কিনে গেটের কাছে এসেছে এমন সময় টিকলীকে হকারের কাছে চুলের ক্লীপ কিনতে দেখে পাশ কেটে চলে যাচ্ছিল।
টিকলী দেখতে পেয়ে ক্লীপ না কিনে তাড়াতাড়ি তার পিছনে আসতে আসতে বলল, টোপর, এই টোপর, দাঁড়া বলছি।
টোপর গেটের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল।
টিকলী কাছে এসে ভিজে গলায় বলল, আজ পনের দিন আমার সঙ্গে দেখা করিসনি। এখন আবার দেখেও চলে যাচ্ছিস।
কেন যাচ্ছি জেনেও জিজ্ঞেস করছিস কেন? কথা শেষ করে টোপর গাড়ির দিকে এগোল।
টিকলীও তার সঙ্গে গাড়ির কাছে এসে বলল, তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।
টোপর গাড়িতে উঠবে বলে গেট খুলেছিল, বন্ধ করে বলল, বল কি বলবি।
তুই তা হলে এখনো আমার উপর খুব রেগে আছিস?
আর কিছু বলবি?
টিকলী ছল ছল চোখে ভিজে গলায় বলল, আমার কথাগুলো চিন্তা করলে এতদিনে তোর রাগ পড়ে যেত। বিশ্বাস কর, তোর ভালোর জন্য আমি বিয়েতে রাজি হইনি। আমার জন্য তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাক, তা আমি চাই না। তুই আমাকে ভুল বুঝিস না। কোনো জিনিসই গোপন থাকে না। একদিন না একদিন তোর আর আমার মা-বাবা জানতে পারবেই। তখন কি হবে ভেবে দেখ। তা ছাড়া আমি মেয়ে আর তুই পুরুষ। পুরুষরা যা পারে মেয়েরা কি তা পারে?