কাহহার সাহেব চিন্তিত মুখে বললেন, সে আলমারী খুলে টাকা নেয়নি তো? ও ফিরেছে কিনা দেখেছ?
না বলে শাফিয়া বেগম নিজেই টোপরের রুমে গিয়ে ফিরে এসে বললেন, মা এখনো ফেরেনি।
কাহহার সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, সে আর ফিরবে না।
কি বলছ তুমি?
হ্যাঁ, যা বলছি এখন না বুঝতে পারলেও পরে পারবে।
তুমি কি বলতে চাচ্ছ, টোপর টাকা নিয়ে আলমারী বন্ধ করে চাবি নিয়ে পালিয়ে গেছে?
হ্যাঁ তাই। তারপর চিৎকার করে বললেন, শুনে রাখ টোপরের মা, আমার অনুমান যদি সত্য হয়, তা হলে ওকে আমি আস্ত রাখব না।
অত জোরে কথা বলছ কেন? আশে পাশের লোকজন শুনলে কি ভাববে। উত্তেজিত না হয়ে আগে আলমারী খোলার ব্যবস্থা কর।
চাবি ছাড়া আলমারী খোলা গেলেও সিন্দুক তো আর ভোলা যাবে না। আচ্ছা সব চাবির তো দুসেট করে ছিল। আর এক সেট কোথায়?
আলমারীর ভিতরের ড্রয়ারে।
তুমি তো আচ্ছা বোকা। ডবল চাবি থাকে, একটা হারিয়ে গেলে অন্যটা কাজে লাগাবার জন্য। অন্য কোথাও রাখলে এই অবস্থায় পড়তে হত না।
তোমার কথা ঠিক, তবে অন্যে সে কথা জেনে গেলে কি হত ভেবে দেখ।
তাও ঠিক বলে কাহহার সাহেব পায়চারী করতে লাগলেন।
শাফিয়া বেগম বললেন, এখন কাপড় চোপড় পাল্টে ঘুমাও। কাল সকালে বাজার থেকে চাবি সারানওয়ালাকে ডেকে এনো।
পরের দিন বেলা নয়টার দিকে চাবি সারানওয়ালা এনে আলমারী খুলিয়ে বিদায়। দিলেন।
শাফিয়া বেগম ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে সিন্দুক খুলে দেখলেন, একটা টাকাও নেই।
কাহহার সাহেব দেখে মাথায় হ্রাত দিয়ে বসে পড়লেন। তারপর টোপর তোকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করব না বলে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন।
শাফিয়া বেগম আগেই চিন্তা করেছিলেন, টোপর যদি টাকা নিয়ে যায়, তা হলে তার বাবা কি করতে না কি করে বসে। এখন অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখে দুলারীকে ডেকে মাথায় পানি ঢাকার ব্যবস্থা করলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পানি ঢালার পর কাহহার সাহেবের জ্ঞান ফিরল।
শাফিয়া বেগম দুলারীকে বালতি বদনা নিয়ে চলে যেতে বলে মাথা মুছিয়ে দেওয়ার সময় বললেন, বেশি দুশ্চিন্তা করো না। নিজের ছেলে নিয়েছে। ওকে ফরেনে পাঠালে তো এর চেয়ে বেশি টাকা লাগত।
কাহহার সাহেব কিছু বললেন না। চুপচাপ নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে গেলেন।
কাহহার সাহেবের ছোট ছেলে শাহিনের সবকিছু বোঝার মতো বয়স হয়েছে। ভাইয়া যে, আলমারী থেকে বাবার অনেক টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে তা বুঝতে পারল। তাই মা-বাবার মন খারাপ দেখেও কোন কিছু জিজ্ঞেস করল না।
আর নিশাত ছেলে মানুষ বলে এসব কথা বুঝতে পারল না।
কয়েক দিন পর শাহিন মাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা ভাইয়ার খোঁজ করেনি?
শাফিয়া বেগম বললেন, তোর বাবা পুলিশ লাগিয়ে খুঁজে বার করতে চেয়েছিল। আমি করতে দিইনি। থানা পুলিশ করলে অনেক টাকা লাগবে, তা ছাড়া আমাদের মান সম্মানের হানি হবে। এইসব বলে বুঝিয়েছি।
শাহীন বলল, জান মা, ভাইয়া আগে কত ভালো ছিল। আমাদেরকে কত আদর করত। জেল থেকে ফিরে ভাইয়া যেন কেমন হয়ে গিয়েছিল।
শাফিয়া বেগম বললেন, তোর ভাইয়া খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশে খারাপ হয়ে গেছে। তুই কিন্তু কোন খারাপ ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবি না। আর তোর ভাইয়ার কথা কারো সঙ্গে আলাপ করবি না। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবি, সে আমেরিকায় পড়তে গেছে।
শাহিন বলল, তাই হবে মা।
এদিকে টিকলীর দুমাস পরে ফাষ্ট ইয়ারের পরীক্ষা। তাই রাজশাহী ফিরে যাওয়ার জন্য মনে তাগিদ অনুভব করলেও টোপরের সঙ্গে দেখা না করে যেতে পারছে না। কয়েক দিন রাস্তার মোড়ে সকাল থেকে বেলা দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার দেখা পেল না। তিন দিনের দিন টোপরের ছোট ভাই শাহিনকে স্কুলে যেতে দেখে ডেকে জিজ্ঞেস করল, তোমার ভাইয়া বাসায় আছে? শাহিন জানে ওদের সঙ্গে তাদের মনোমালিন্য। আরো জানে প্রায় বছর খানেক আগে ভাইয়া টিকলীকে বিয়ে করতে চেয়েছিল বলে বাবা রাগারাগি করেছিল। তাই মায়ের শেখান কথা বলল, ভাইয়া দুদিন হল আমেরিকায় পড়তে চলে গেছে। তারপর সে হাঁটতে শুরু করল।
কথাটা শুনে টিকলী অবাক হলেও বিশ্বাস করতে পারল না। তাকে চলে যেতে। দেখে দ্রুত হেঁটে এসে তার পথ আগলে বলল, কথাটা কি সত্য বললে?
শুধু শুধু মিথ্যা বলব কেন? তারপর পাশ কাটিয়ে শাহিন চলে গেল।
টিকলী তবু বিশ্বাস করতে পারল না। চিন্তা করল, যদি সত্যি হয়, তা হলে সাগর ভাই নিশ্চয় জানবে। তার সঙ্গে দেখা করার মনস্থ করে একটা স্কুটার নিয়ে রওয়ানা দিল। ফকিরাপুলে এসে ট্রাফিক জ্যামে পড়ল।
স্কুটার ড্রাইভার বলল, এই জ্যাম ছাড়তে এক ঘন্টা লাগবে। রাজারবাগ দিয়ে ঘুরে যাই আপা?
টিকলী বলল তাই চল।
রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি পার হয়ে এসেছে, এমন সময় সাগর ভাইকে একটা ছেলের সঙ্গে রিকশায় করে সামনের দিক থেকে আসতে দেখে ড্রাইভারকে বলল, স্কুটার ঘুরিয়ে নাও, কমলাপুর যাব না।
ড্রাইভার স্কুটার ঘুরিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, যেখান থেকে এসেছেন সেখানেই যাবেন?
টিকলী হাত বাড়িয়ে বলল, ঐ রিকশাটার পাশে চল। স্কুটার রিকশার পাশে এলে টিকলী বলল, সাগর ভাই, আপনার কাছে যাচ্ছিলাম।
সাগর টিকলীকে চিনতে পেরে রিকশাওয়ালাকে থামতে বলল।
টিকলীও স্কুটার ড্রাইভারকে সাইড নিয়ে দাঁড়াতে বলল।