টোপরের কথা শুনে আসলাম বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় দিয়ে বলল, আজ থেকে আমাদের দলে আরো একজন বাড়ল। তারপর বলল, আমাদের দলে থাকতে হলে ওসব আপনি টাপনি বলা যাবে না। তুই তোকারী না হলে বন্ধু কিসের? তা আমার টাকার ব্যবস্থা কি করলি?
টোপর বলল, টাকা তুই সময় মতো পেয়ে যাবি। শোন, আমি সারাদিন তোদের সঙ্গে থাকলেও কয়েকটা দিন সন্ধ্যের পর বাসায় চলে যাব। তারপর এখানেই থাকব।
আসলাম বলল, তোর যা মর্জি। তবে টাকাটা যেন সময় মত পাই।
টোপর বলল, বললাম তো পাবি।
সেদিন থেকে টোপর মাকে ভার্সিটি যাওয়ার কথা বলে তাদের সঙ্গে সারাদিন সন্ত্রাসী করে বেড়ায়। আর সন্ধ্যের পর বাসায় এসে পড়াশোনা করার অভিনয় করতে লাগল। মাঝে মধ্যে বিকেলেও ফিরে এসে বই নিয়ে বসত।
শাফিয়া বেগম ছেলের মতিগতি ভালোর দিকে দেখে খুশি হলেন। তবু একদিন জিজ্ঞেস করলেন, ভার্সিটিতে সারাদিন কি করিস?
টোপর বলল, পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই লাইব্রেরীতে পড়াশোনা করি।
শাফিয়া বেগম ছেলের মতি গতির কথা স্বামীকে একদিন জানালেন।
কাহহার সাহেব মনে মনে খুশি হয়ে বললেন, হাজার হোক আমারই রক্ত তো। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একটু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আরকি?
টোপর বাসায় যতক্ষণ থাকে ততক্ষন ছোট ভাই বোনের পড়াশোনার খবর নিতে লাগল। মায়ের কাছে দশ বিশ টাকার আবদার করে। শাফিয়া বেগম খুশি হয়ে বলেন, দশ বিশ টাকা আবার টাকা? তারপর দুএকশো টাকা দিয়ে বলেন, বুঝে সুঝে খরচ করবি।
টোপরের প্ল্যান মা-বাবার মন জয় করে আলমারীর চাবির খোঁজ করা। সে জানে মায়ের রুমে স্টীলের আলমারীর সিন্দুকের মধ্যে বাবা টাকা রাখে। আর তার চাবি মায়ের কাছে থাকে। চার-পাঁচ দিনের মাথায় সুযোগ পেয়ে গেল। সেদিন রাতে পাশের বাড়ির ছেলের বৌভাত। টোপরদের সবাইয়ের দাওয়াত। কাজের মেয়ে ছাড়া সবাই পাশের বাড়িতে গেছে। টোপরও গিয়েছিল। সে না খেয়ে ফিরে এসে মায়ের ঘরে ঢুকে চাবি খুঁজতে লাগল।
শাফিয়া বেগম চাবির গোছা সব সময় আঁচলে বেঁধে রাখেন। আজ বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য আলমারী খুলে পছন্দ মতো শাড়ী ব্লাউজ ও গহনা বার করে পরে গেছেন। যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করে চাবির গোছা নিতে ভুলে গেছেন। আলমারীতেই লাগান রয়ে গেছে।
টোপর চাবি খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ আলমারীর দিকে নজর পড়তে মুখে হাসি ফুটে উঠল। তারপর আলমারীর সিন্দুক খুলে যা টাকা ছিল সব বার করে বাবার একটা লুংগীতে বাঁধল। তারপর আলমারী বন্ধ করে চাবিটা নিয়ে নিজের রুমে এসে লুংগী সহ টাকাগুলো একটা কাগজে মুড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কাজের মেয়ে দুলারীর সামনে পড়ে গেল।
দুলারী বলল, আপনি বিয়ে বাড়ীতে যান নি?
টোপর বলল, গিয়েছিলাম, তারপর কাগজের প্যাকেটটা দেখিয়ে বলল, প্রেজেন্টেশানটা নিয়ে যাওয়া হয়নি, নিতে এসেছিলাম। কথা শেষ করে বেরিয়ে এল। রাস্তায় এসে একটা স্কুটার নিয়ে ফকিরা পুলে আল হেলাল হোটেলে সিট নিল। তারপর দুহাজার টাকা নিয়ে আসলামের মেসে এসে টাকাটা দিয়ে বলল, আমার কথা আমি রেখেছি।
আসলাম বলল, আজ হঠাৎ টাকাটা পেলি কোথায়?
টোপর বলল, কাল সকালে এসে বলব, এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে। কথা শেষ করে সেখান থেকে হোটেলে ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করল। তারপর দরজা জানালা লাগিয়ে পর্দা টেনে দিয়ে টাকাগুলো গুনে দেখল। এক লাখ আঠাশ হাজার। টাকাগুলো সব পাঁচ শো টাকার নোট। ভাবল, ঢাকায় থাকা ঠিক হবে না। সকালেই চিটাগাং চলে যাবে। ভয়ে সারা রাত ভালো ঘুম হল না। ভোরে উঠে কমলাপুরে এসে এস আলম লাক্সারী কোচের ফাস্ট ট্রিপে চট্টগ্রাম রওয়ানা দিল।
শাফিয়া বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় বারটার সময় ফিরলেন। জামা কাপড় ও গহনা খুলে আলমারীতে তোলার সময় চাবি খুঁজে পেলেন না। হঠাৎ মনে পড়ল, চাবির গোছা ভুলে আলমারীতেই লাগান রয়ে গিয়েছিল। সেখানে নেই দেখে বালিশের তলায়, গদীর নিচে, শোকেসের মাথায় ও অন্যান্য সবখানে খোঁজ করে না পেয়ে দুলারীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ঘরে এসেছিলি?
দুলারী বলল, না বেগম সাহেব আসিনি। আপনি না ডাকলে তো এঘরে কখনো আসিনি। ঘন্টাখানেক আগে বড় ভাইজান এসেছিলেন। তিনি হয়তো এঘরে এসে থাকবেন। কেন বেগম সাহেব কি হয়েছে?
শাফিয়া বেগম বললেন, আলমারীর চাবি খুঁজে পাচ্ছি না। ঠিক আছে তুই যা। ছেলে মেয়েদের ঘুমাতে যেতে বলে চিন্তা করতে লাগলেন, চাবির গোছা গেল কোথায়? টোপরই বা বিয়ে বাড়ী থেকে বাসায় এসেছিল কেন?
কাহহার সাহেব পরিচিতি একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাই কিছুক্ষণ পরে আসছি বলে স্ত্রীকে ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে যেতে বলেছিলেন। প্রায় সাড়ে বারটার সময় বাসায় ফিরে স্ত্রীকে গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে বললেন, কি ব্যাপার, কি ভাবছ?
শাফিয়া বেগম বললেন, ভুলে চাবির গোছা আলমারীতে লাগিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে পাচ্ছি না। আলমারীতেও চাবি দেওয়া।
কাহহার সাহেব বললেন, অন্য কোথাও রেখেছ হয় তো, ভালো করে খুঁজে দেখ।
সব জায়গায় খুঁজেছি, পাইনি।
কাহহার সাহেব কপাল কুঁচকে বললেন, দুলারী এঘরে আসেনি তো?
ওদের সে সাহস হবে না, তবু ডেকে জিজ্ঞেস করেছি। বলল, টোপর নাকি বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে এসেছিল, কখন এসেছিল দেখেনি। বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছে।